বিষয়: নজরুলসঙ্গীত
শিরোনাম: মুসাফির! মোছ্ রে আঁখি-জল
রাগ : বারোয়াঁ, তাল : কাহারবা
মুসাফির! মোছ্ রে আঁখি-জল
ফিরে চল্ আপ্নারে নিয়া
আপনি ফুটেছিল ফুল
গিয়াছে আপ্নি ঝরিয়া॥
রে পাগল! একি দুরাশা,
জলে তুই বাঁধ্বি রে বাসা!
মেটে না হেথায় পিয়াসা
হেথা নাই তৃষ্ণা-দরিয়া॥
বরষায় ফুটলো না বকুল
পউষে ফুট্বে কি সে ফুল (রে)
এ পথে ঝরে সদা ভুল
নিরাশার কানন ভরিয়া॥
রে কবি! কতই দেয়ালি
জ্বালিলি তোর আলো জ্বালি'
এলো না তোর বনমালী
আধাঁর আজ তোরই দুনিয়া॥
- ভাবার্থ: পারশ্যের সুফিবাদী গজলের আদর্শে এই গানটি রচিত। এই গানে
কবির আত্ম-মর্ম-দর্শন উপস্থাপিত হয়েছে। স্থায়ীর 'মুসাফির' কবির অন্তরাত্মা। কবি
সান্ত্বনা দেওয়ার ছলে অন্তরাত্মাকে বলছেন- এই পার্থিব জগতে সে একজন মুসাফির (বিদেশ
থেকে আগত পথিক) মাত্র। নিরন্তর প্রত্যাশা ও তৃষ্ণা নিয়ে এই মরণশীল জগতের পথিকের
পথ চলা। কবি আশাহীন, অস্থির। কারণ তাঁর চলার পথের পুষ্পিত প্রত্যাশা চলার
পথেই তা ঝরে পড়েছে। কবি নিজেকে প্রবোধ দেন যে, এখন এ নিয়ে আর আক্ষেপ করার কিছু
নেই। তিনি নিজের লক্ষ্যকে ভিন্ন পথে সঞ্চালিত করতে উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। তিনি
ভাবেন ফেলে যাওয়া পথের আনন্দ-বেদনাকে পিছনে ফেলে এখন আপনার ঘরে (অমৃত মানবজীবন)
ফিরে যেতে হবে।
প্রথম অন্তরাতে কবি বলছেন- চলার পথের যা হারিয়ে যায়, তাকে ফিরে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা
'দুরাশা' মাত্র। তৃষ্ণার সাগরে স্থায়ী আবাস গড়া যায় না, কারণ আকাঙ্ক্ষার শেষ
নেই। তাঁর অনির্বাণ তৃষ্ণা নিবারণের উপযোগী এমন কোনো সাগর। তাই পথিক-কবির
আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা লক্ষ্য দুরাশায় পরিণত হয়।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় অন্তরাতে পাওয়া যায় আগের ভাবনার সম্প্রসারিত রূপ। সকল চেষ্টা
করেও যথাসময়ে যে প্রত্যাশার ফুল ফোটে নি, অসময়ে সেই ফুল ফুটবে, এমন আশা করাটাই
ভুল। আশার প্রদীপ জ্বেলে দুদিনের এই জগতকে সত্য মেনে কতভাবে নিজেকে
বর্ণিল করার চেষ্টা করেছেন কবি। জীবন সায়াহ্নে এসে কবি উপলব্ধি করেন যে, সে সবই
ছিল বৃথা। শতরূপ শতচেষ্টাতেও বনমালী-রূপী পরম প্রেমিক পরমাত্মা ধরা দেয় নি। তাই
কবির জ্বালানো আলোর দেয়ালীর অন্তরালে অন্তরাত্মা অন্ধকারেই রয়ে গেছে। তাই
মুসাফির কবি. পথের নেশা ত্যাগ করে আপনার ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান করছেন। মরণশীল
এই জগতের পথ চলা শেষ করে অমৃতের সন্তান, অমৃতের ঘরে ফিরে যাবার এই আহ্বান। এই
অমোঘ বোধ থেকে কবি গেয়ে উঠেছেন- 'ফিরে চল্ আপ্নারে নিয়া'।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৩৩৫ বঙ্গাব্দের চৈত্র মাসে প্রকাশিত হয়েছিল 'বুলবুল' নামক সঙ্গীত-সংকলনের দ্বিতীয় সংস্করণ। এই সংস্করণে নতুন গান হিসেবে এই গানটি যুক্ত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ২৯ বৎসর ১০ মাস।
- গ্রন্থ:
- বুলবুল
- দ্বিতীয় সংস্করণ চৈত্র
১৩৩৫ (মার্চ ১৯২৯)। নতুন সংযোজন ৬। বাঁরোয়া-কাহারবা]
- নজরুল-রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ফাল্গুন ১৪১৩। ফেব্রুয়ারি ২০০৭। বুলবুল। গান ৪৮। বাঁরোয়া-কাহারবা।
পৃষ্ঠা ১৮৬-১৮৭]
-
নজরুল গীতিকা
- প্রথম সংস্করণ [ভাদ্র ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ ১৩৩১ বঙ্গাব্দ। ২ সেপ্টেম্বর ১৯৩০।
গজল । বাঁরোয়া-কাহারবা। পৃষ্ঠা ৮৩]
- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। তৃতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ঢাকা জুন ২০১২। নজরুল গীতিকা।
৬৯। গজল। বাঁরোয়া-কাহারবা। পৃষ্ঠা:
২১৭-২১৮]
- নজরুল-সংগীত সংগ্রহ [রশিদুন্ নবী সম্পাদিত। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। তৃতীয়
সংস্করণ দ্বিতীয় মুদ্রণ, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ২০১৮। গান সংখ্যা ১৮৬। পৃষ্ঠা: ৫৯]
- রেকর্ড:
এইচএমভি।
জানুয়ারি ১৯৩১ (পৌষ-মাঘ ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ)। পি ১১৬৮৭। শিল্পী
কাশেম মল্লিক।
- সঙ্গীতবিষয়ক তথ্যাবলি:
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: মরমী
- সুরাঙ্গ: গজল
- রাগ:
বারোয়া