নলিনীকান্ত সরকার
১৮৮৯-১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দ
সাহিত্যিক, সাংবাদিক, কবি, গায়ক, স্বরলিপিকার

১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৮শে সেপ্টেম্বর (শনিবার ১৩ আশ্বিন ১২৯৬) মালদহ জেলার কালিয়াচকে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম  নিকুঞ্জবিহারী সরকার। তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে মুর্শিদাবাদের নিমতিতা এলাকার জগতাই গ্রামের মাতুলালয়ে শৈশব ও কৈশোর কাটে।

তরুণ বয়সে তিনি তৎকালীন ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়েছিলেন। তবে অন্যান্য বিপ্লবীদের মতো সশস্ত্র বিল্পবে অংশগ্রহণ করেন নি।

প্রথম জীবনে তিনি হাসির গান গেয়ে ‘রসরাজ’ আখ্যায় ভূষিত হয়েছিলেন। তার গাওয়া ‘মরি হায় রে কলকাতা কেবল ভুলে ভরা’ গানটি এককালে খুব জনপ্রিয় ছিল। এছাড়া তিনি ধ্রুপদ, খেয়াল, টপ্পা, কীর্তন ইত্যাদি গানের জন্যও খ্যাতি লাভ করেছিলেন। 

১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বন্যার্তদের জন্য দলবল নিয়ে স্বরচিত গান গেয়ে চাঁদা তুলে বেড়াচ্ছিলেন। এই সময় এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানির সাথে যোগাযোগ ঘটে। এইচএমভি তাঁর কণ্ঠে ৬টি গানের রেকর্ড প্রকাশ করেছিল।  

১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে মুর্শিদাবাদের আঞ্চলিক ভাষায় একটি ফুটবল কাপ প্রতিযোগিতার বিবরণমূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। বইটির নাম ছিল 'কাঞ্চনতলার কাপ'।

১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে ভারতবর্ষ পত্রিকার 'আষাঢ় ১৩২৬। সপ্তম বর্ষ-প্রথম খণ্ড-প্রথম সংখ্যায় তাঁর রচিত 'সাহিত্য-সংস্কার' নামক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। এই রচনাটি প্রকাশিত হয়েছিল 'শ্রীনিবিড়ানন্দ নকলনবীশ' ছদ্ম নামে।

১৯২০ পত্রিকাটি ছিল চলচ্চিত্র বিষয়ক বিজলী পত্রিকা প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটির প্রকাশের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। এই পত্রিকার ১৯২০-১৯২৫ বর্ষের সম্পাদক ছিলেন তিনি।

১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে আগষ্ট (বৃহস্পতিবার, ৯ ভাদ্র ১৩৩৩), অল ইন্ডিয়া রেডিও কলকাতা কেন্দ্র চালু হয়। এই সময় নলিনীকান্ত গায়ক হিসাবে যোগদান করেন দেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং ভারতবর্ষ পত্রিকার সম্পাদক জলধর সেনের তিনি ছিলেন বিশেষ স্নেহভাজন। কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন তাঁর অনুজ প্রতিম। বিপদে আপদে নজরুল  তাঁর উপর একান্ত নির্ভর করতেন।

১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ২০ জানুয়ারি (শনিবার ৬ মাঘ ১৩২৯) রঘুনাথগঞ্জের ছাপাখানা থেকেই শরৎচন্দ্র পণ্ডিতের সম্পাদিত ‘বিদূষক’ নামক সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রকাশনা শুরু হয়। এই ছাপাখানা থেকেই প্রকাশিত হয়েছিল ‌'জঙ্গীপুরে সংবাদ' নামক পত্রিকা। 'জঙ্গীপুর সংবাদ পত্রিকার শুরু থেকেই তিনি শরৎচন্দ্র পণ্ডিতের সহকারী হিসেবে যুক্ত ছিলেন।

১৯৩০/৩১-৪৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি 'বেতার জগৎ' পত্রিকা সম্পাদনা করেন। এছাড়া বিচিত্রা, 'ভারতী' ও 'শনিবারের চিঠি' পত্রিকা-গোষ্ঠীর সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। যুগান্তর পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। যুগান্তরের 'রোজ নামতা' চালু হলে পণ্ডিচেরি থেকে ছড়া লিখে পাঠান।

১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে সপরিবারে পণ্ডিচেরি আশ্রমবাসী হন। সেখানেই ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই মে (বুধবার ৫ বৈশাখ ১৩৯১) মৃত্যবরণ করেন।
সূত্র: