ধ্রুপদ
ভারতীয় রাগসঙ্গীতের প্রাচীনতম একটি ধারা।  ধ্রুপদ অর্থ হলো ধ্রুব (নিশ্চল ও চিরস্থায়ী) পদ। সে অর্থে একমাত্র ঈশ্বরই ধ্রূব, তাই তাঁর কীর্তনসূচক পদকে বলা হয় ধ্রূবপদ। প্রাচীন গান্ধর্ব গান ক্রমবিবর্তনের ধারায় আধুনিক ধ্রুপদের উৎপত্তি হয়েছে। [দ্রষ্টব্য: ধ্রুপদের ইতিহাস]

বর্তমানে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রধান দুটি ধারার একটি হলো ধ্রুপদ। উল্লেখ্য অপর ধারটির নাম খেয়াল

ধ্রুপদের বৈশিষ্ট্য জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদিত 'সঙ্গীত-প্রকাশিকা' পত্রিকার 'কার্তিক ১৩০৮ সংখ্যা'র ১৬ পৃষ্ঠায় 'ধ্রুপদ কাহাকে বলে' প্রবন্ধে ধ্রুপদের শ্রেণি বিভাজনে ৬টি নাম পাওয়া যায়। এগুলো হলো- গীত, সঙ্গীত, ছন্দ, প্রবন্ধ, যুগল-বন্ধ ও ধারু। এই প্রবন্ধ অনুসারে জানা যায় যে, ছন্দ শব্দের মাঝে মাঝে উল্লেখ করে ছন্দ-ধ্রুপদ পরিবেশন করা হয়। একই ভাবে গোপাল নায়ক কর্তৃক উদ্ভাবিত ধারু শব্দের উল্লেখ করে ধ্রুপদ পরিবেশন করলে তাকে বলা হয় ধারু ধ্রুপদ। কিন্তু প্রবন্ধ এবং যুগলবন্দী সম্পর্কে বিশেষ যে তথ্য জানা যায়, তা হলো - যে ধ্রুপদে নানা প্রকার তাল পরিবর্তন হয়, তাহার নাম প্রবন্ধ। আর যে ধ্রুপদ দুই জন পরিবেশন করেন। এর ভিতরে একজন বাণী অংশ পরিবেশন করেন এবং অপরজন এর সাথে সরগম তাল লয় যোগে সুর পরিবেশন করেন। ধ্রুপদের এই পরিবেশনকে বলা হয়ে যুগলবন্ধ। 

ধ্রুপদের বাণী
ধ্রুপদের বাণী বলতে বুঝায় ভাব ভাষা এবং গায়নশৈলীর ধারা। তানসেনের পরবর্তী সময়ে ধ্রুপদের বাণীগত বিভাজন শুরু হয়েছে। এই বিভাজনের ধারা নানা অঞ্চলে নানাভাবে বিকশিত হয়েছে। এই সকল ধারার ভিতর চারটি ধারাকে প্রধান ধারা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এগুলো হলো- ধ্রুপদের তাল
সংস্কৃত ছন্দে নিবদ্ধ ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের কাল পেরিয়ে- যথার্থ তালগুলো সৃষ্টি হয়েছিল ধ্রুপদের মাধ্যমে। ভারতের নানা প্রান্তে ধ্রুপদের নানা রকম তৈরি হলেও আলাউদ্দীন খিলজি দিল্লীর রাজত্বকালে (১২৯৬-১৩১৬ খ্রিষ্টাব্দ) ধ্রুপদের একটি আদর্শরূপ লাভ করেছিল। সেই সময়ে রচিত ধ্রুপদের যে সকল নমুনা পাওয়া যায়, তাতে যে সকল তালের নাম পাওয়া যায়, তা হলো- আড়াচৌতাল, চৌতাল, ঝাঁপতাল, ঢিমা তেতালা, তেওরা, ধামার, রূপক, বিষ্ণু তাল, ব্রহ্মতাল, সওয়ারী, সুরফাঁকতাল
সূত্র :