সন্ধ্যা
হরগাছা।
২৮ শে নভেম্বর (বুধবার ১৩ অগ্রহায়ণ ১৩৩৫)। সওগাত পত্রিকার 'অগ্রহায়ণ ১৩৩৫'
সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। পাদটীকায় উল্লেখ ছিল-"নিখিল-বঙ্গ
মুসলিম-যুবক সম্মিলনের উদ্বোধনী সঙ্গীত"।
কাজী নজরুল ইসলাম
ভোরের পাখি
ওরে ও ভোরের পাখি!
আমি চলিলাম তোদের কণ্ঠে আমার কণ্ঠ রাখি।
তোদের কিশোর তরুণ গলার সতেজ দৃপ্ত সুরে
বাঁধিলাম বীণা, নিলাম সে সুর আমার কণ্ঠে পুরে।
উপলে নুড়িতে চুড়ে-কিঙ্কিণি বাজায়ে তোদের নদী
যে গান গাহিয়া অকূলে চাহিয়া চলিয়াছে নিরবধি –
তারই সে গতির নূপুর বাঁধিয়া লইলাম মম পায়ে,
এরই তালে মম ছন্দ-হরিণী নাচিবে তমাল-ছায়ে।
যে-গান গাহিলি তোরা,
তারই সুর লয়ে ঝরিবে আমার গানের পাগল-ঝোরা।
তোদের যে-গান শুনিয়া রাতের বনানী জাগিয়া ওঠে,
শিশু অরুণেরে কোলে করে উষা দাঁড়ায় গগন-তটে,
গোঠে আনে ধেনু বাজাইয়া বেণু রাখাল-বালক জাগি,
জল নিতে যায় নব আনন্দে নিশীথের হতভাগি,
শিখিয়া গেলাম তোদের সে গান! তোদের পাখার খুশি –
যাহার আবেগে ছুটে আসে জেগে পুব-আঙিনায় উষী,
যাহার রণনে কুঞ্জে কাননে বিকাশে কুসুম-কুঁড়ি,
পলাইয়া যায় গহন-গুহায় আঁধার নিশীথ-বুড়ি,
সে খুশির ভাগ আমি লইলাম। অমনি পক্ষ মেলি
গাহিব ঊর্ধ্বে, ফুটিবে নিম্নে আবেশে চম্পা বেলি!
তোদের প্রভাতি ভিড়ে
ভিড়িলাম আমি, নিলাম আশ্রয় তোদের ক্ষণিক নীড়ে।
ওরে ও নবীন যুবা!
তোদের প্রভাত-স্তবের সুরে রে বাজে মম দিলরুবা।
তোদের চোখের যে জ্যোতি-দীপ্তি রাঙায় রাতের সীমা,
রবির ললাট হতে মুছে নেয় গোধূলির মলিনিমা,
যে-আলোক লভি দেউলে দেউলে মঙ্গল-দীপ জ্বলে,
অকম্প যার শিখা সন্ধ্যার ম্লান অঞ্চলতলে,
তোদের সে-আলো আমার আশ্রু-কুহেলি-মলিন চোখে
লইলাম পুরি! জাগে ‘সুন্দর’ আমার ধেয়ান-লোকে!