২৬ বৎসর অতিক্রান্ত বয়স
নজরুল  ইসলামের ২৬ বৎসর অতিক্রান্ত বয়স শুরু হয়েছিল ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩২ বঙ্গাব্দ (সোমবার ২৫ মে ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দ) থেকে। শেষ হয়েছিল ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৩ (সোমবার, ২৪ মে ১৯২৬) ।


এই বছরের শুরু থেকেই নজরুল হুগলীতে সপরিবারে অবস্থান করছিলেন। অন্যান্য রচনার পাশাপাশি এই সময় তিনি গানও রচনা করেছেন। এ সকল গানের পিছনে ছিল নানা ধরণের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক পরিস্থিতি। এ ছাড়া ছিল তাঁর কিছু শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিবর্গের উদ্দেশ্য রচিত শ্রদ্ধার্ঘ। এ গানগুলোর উপলক্ষ ছিল, মহাত্মা গান্ধীর হুগলি আগমন উপলক্ষে রচিত গান, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস মৃত্যুর পর তাঁর স্মরণে রচিত গান, অমর নামক এক স্বেচ্ছাসেবকের স্মরণে রচিত গান।এছাড়া ছিল কৃষকদের জন্য গান, হিন্দু-মুসলামানের জাতি-ভেদের উপর গান। এই বছরেই তাঁর গান প্রথম গ্রামোফোন রেকর্ডে প্রকাশিত হয়। প্রকাশক ছিল এইচএমভি। গানটির শিল্পী ছিলেন হরেন্দ্রনাথ দত্ত।

এই বছরের বছরের মাঝামাঝি সময়ে নজরুলের সাথে চারণকবি মুকুন্দদাসের সাক্ষাৎ হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে প্রাণতোষ চট্টোপাধ্যায় তাঁর কাজী নজরুল গ্রন্থে [ন্যাশনাল বুক এজেন্সী প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা-১২, ১১ই জ্যৈষ্ঠ ১৩৭৩, পৃষ্ঠা: ৭৯-৮০]
'১৯২৫ সালের মাঝামঝি হুগলিতে বিদ্যামন্দিরের বিপ্লবী যুবকদের চেষ্টায় "মুকুন্দদাসের যাত্রা" অভিনয়ের ব্যবস্থা হয়েছিল, চকবাজারের বারোয়ারী তলায়। যাত্রা হয় একাদিক্রমে প্রায় সাত দিন। এই সময় নজরুল ছিলেন তাঁর চকবাজারের বাড়িতে, সেই সময় মুকুন্দদাশের সাঙ্গের তাঁর শিষ্য কালীকৃষ্ণ য়ট্টও অভিনয় করতেন'।

নজরুলের সাঙ্গে মুকুন্দদাসের এই সময় দেখা হয়। নজরুল তাঁদের বিরাট দলবলদের একদিন নিমন্ত্রণ করেছিলেন। যে কয়দিন মুকুন্দদাস হুগলীতে ছিলেন, সে কয়দিনই তিনি প্রত্যহ সকাল বেলা নজরুলের বাড়িতে গিয়ে কবির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে নানা বিষয়ে আলোচনা করতে করতে করতে মশগুল হয়ে যেতেন।'
এই গ্রন্থ থেকে জানা যায়, নজরুল মুকুন্দদাসের অনুরোধে, তাঁর রচিত 'পল্লীসেবা' যাত্রাপালায় দুটি গান গাইবার অনুরোধ করেছিলেন। নজরুল তাতে সম্মতিও দিয়েছিলেন। নজরুলের পূর্ব-রচিত- গান দুটি ছিল-

উল্লেখ্য এই দুটি গান মুকুন্দদাসের রচিত 'পল্লীসেবা' যাত্রাপালার মুদ্রিত পাঠে পাওয়া যায়।
   দ্রষ্টব্য:
        চারণ কবি মুকুন্দ দাস (রচনা সম্ভার সহ)। জয় গোস্বামী।
        মুকুন্দদাসে গ্রন্থাবলী। বসুমতী সাহিত্য মন্দির

মুকুন্দদাসের অনুরোধে তাঁর যাত্রাপালায় নজরুল তাঁর রচিত কয়েকটি বৈপ্লবিক গান পরিবেশন করে দর্শক শ্রোতাদের  মাতিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি যাত্রা আসরে গান গাইতে নেমেছিলেন- গেরুয়া রঙের জামা, পাগড়ী পড়ে।

২৫-৩১  মে ১৯২৫ (১১- ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩২)
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, নজরুলের ২৫ বৎসর অতিক্রান্ত বয়সের শেষের দিকে গান্ধীজি বঙ্গদেশে আসেন। গান্ধীজির কালানুক্রমিক জীবনী থেকে জানা যায়, এই বছরের মে-জুন মাস পর্যন্ত তিনি বোম্বে এবং আহমেদাবাদ অঞ্চলে ছিলেন। গান্ধীজি কলকাতায় এসেছিলেন ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে মে মাসের ১ তারিখে (শুক্রবার ১৮ বৈশাখ ১৩৩২)। এরপর ২ মে (শনিবার ১৯ বৈশাখ ১৩৩২) বৈশাখ তারিখে তিনি চলে যান ফরিদপুরে। সে সময়ে ফরিদপুরের অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় কংগ্রেস অধিবেশনে যোগদান করেন। সময়টা ছিল মে মাসের ২-৩ তারিখে (শনিবার-রবিবার ১৯-২০ বৈশাখ ১৩৩১ বঙ্গাব্দ)। সেখান থেকে ৫ মে (মঙ্গলবার ২২  বৈশাখ ১৩৩২) আবার কলকাতায় ফিরে আসেন। এরপর বঙ্গদেশের বিভিন্ন অঞ্চল পরিদর্শনের জন্য ৮ মে (শুক্রবার ২৫  বৈশাখ ১৩৩২) কলকাতা ত্যাগ করে মালিকান্দা যান। দীর্ঘ পরিভ্রমণ শেষে তিনি কলকাতা ফিরে আসেন ২৪ মে (রবিবার ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩২) তারিখে।
[সূত্র: Gandhi 1915-1948/A Detailed of Choronlogy/compiled by C.B.Dalal. First Edition 1971]

৬শে মে (মঙ্গলবার ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩২), গান্ধীজি হুগলি ভ্রমণ করবেন এমন সিদ্ধান্তের কথা কংগ্রেস কর্মীদের জানানো হয়েছিল। গান্ধীজির আগমন উপলক্ষে হুগলীর স্থানীয় কংগ্রেস কমিটি, একটি অভ্যর্থনা কমিটি গঠন করে। সে সময়ে হুগলী কংগ্রেস কমিটির সম্পাদক ছিলেন নগেন্দ্র মুখার্জী। তিনি গান্ধীজির আগমন উপলক্ষে গঠিত অভ্যর্থনা কমিটির সম্পাদক নির্বাচিত হন।

৫শে মে (সোমবার ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩২) ছিল নজরুলের ২৭তম জন্মদিন। এদিন তিনি গান্ধীজির আগমন উপলক্ষে নানা কাজে ব্যস্ত ছিলেন। ইতিমধ্যে নজরুল কলকাতা থেকে আগত তাঁর পরিচিত জনদের তাঁর বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন এবং এ কথা  তাঁদের জানিয়ে রেখেছিলেন। কলকাতা থেকে আগত অতিথিরা ২৫মে বিকাল বেলা রেলযোগে হুগলীতে আসেন এবং নজরুলের বাড়িতে ওঠেন। এই সময় এই দলে ছিলেন মাহফুজুর রহমান খান। তিনি তাঁর ‌'কুড়িগ্রামে কবি নজরুল ও নজরুলের সন্নিধানে' প্রবন্ধে  লিখেছেন- নজরুল ২৬ মে সকাল বেলায় গান্ধীজির হুগলি আগমন উলক্ষে একটি গান রচনা করেছিলেন। এই গানটি হলো-

হুগলির গঙ্গাচরায় একটি সভা করেছিলেন। এই সভায় নজরুলের সাথে গান্ধীজির দ্বিতীয়বার দেখা হয়। নজরুল এই অনুষ্ঠানে গানটি হারমোনিয়াম সহযোগে গানটি পরিবেশন করেছিলেন। মাহফুজুর রহমান খান তিনি তাঁর ‌'কুড়িগ্রামে কবি নজরুল ও নজরুলের সন্নিধানে' প্রবন্ধে  লিখেছেন-

‌'....আজ    না-চাওয়া পথ দিয়ে কে এলে,
     ঐ কংস কারার দ্বার ঠেলে।

গান শেষ হইবার সঙ্গে সঙ্গে জনগণের মধ্য হইতে তুমুল ধ্বনি উঠিল। কবি তাঁহার ‌‌"চরকার গান"টি গাহিতে শুরু করিলেনঃ
            "ঘোর-
            ঘোর্‌ রে ঘোর্ ঘোর্ রে আমার সাধের চর্‌কা ঘোর।
       ঐ   স্বরাজ রথের আগমনী শুনি চাকার শব্দে তোর॥
'চরকার গান' গাহিবার সময় আনন্দে আতিশয্যে দুই তিনবার গান্ধী কবির পিঠ চাপড়াইয়া দিলেন।...'

[সূত্র: ‌'কুড়িগ্রামে কবি নজরুল ও নজরুলের সন্নিধানে'। মাহফুজুর রহমান খান। নজরুল স্মৃতিচারণ। নজরুল একাডেমী ঢাকা। ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪০২। পৃষ্ঠা: ১৯৩]

জুন ১৯২৫ (১৮ জ্যৈষ্ঠ-১৬ আষাঢ় ১৩৩২)
জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ অব্দি নজরুল হুগলিতেই ছিলেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ১৩৩২ বঙ্গাব্দের ২রা আষাঢ় (মঙ্গলবার, ১৬ জুন ১৯২৫) দার্জিলিঙে মৃত্যুবরণ করেন। চিত্তরঞ্জন দাসের মৃত্যুতে তিনি অত্যন্ত আঘাত পেয়েছিলেন। তাঁর এই বেদনার প্রকাশ ঘটেছিল আষাঢ় মাসে রচিত ৩টি গান ও দুটি কবিতায়। এগুলো হলো-

চিত্তরঞ্জন দাশের স্মরণে এই মাসের শেষ কবিতা ছিল সান্ত্বনা। এর একদিন পর, জুলাই মাসের ১ তারিখে (রবিবার ১৭ আষাঢ়) রচনা করেছিলেন শেষ গান।

জুলাই ১৯২৫ (১৭ আষাঢ়- ১৫ শ্রাবণ)
এই মাসে বঙ্গবাণী পত্রিকার 'শ্রাবণ ১৩৩২' সংখ্যা 'অকালসন্ধ্যা' নামে প্রকাশিত হয়েছিলূর্বে রচিত গান-
  • খোলো মা দুয়ার খোলো [তথ্য]
    শিরোনামের নিচে বন্ধনীর মধ্যে ছিল 'জয়জয়ন্তী কীর্ত্তন-একতালা'। আর পাদটিকায় লেখা ছিল- 'স্বর্গীয় দেশবন্ধুর শোকযাত্রার গান'।

এই মাসের প্রথম দিনেই চিত্তরঞ্জন দাশের স্মরণে শেষ গান রচনা করেছিলেন। গানটি হলো-

  • কোন্ ঘর ছাড়া বিবাগীর [তথ্য]
    চিত্তনামা প্রথম সংস্করণে [৪ নভেম্বর ১৯২৫ (১৮ কর্তিক ১৩৩২) অন্তর্ভুক্ত এই কবিতার সাথে রচনার স্থান ও তারিখ উল্লেখ আছে- 'আরিয়াদহ/১৭ই আষাঢ় ১৩৩২। শিরোনাম: রাজ-ভিখারি
১৮ আষাঢ় (বৃহস্পতিবার ২ জুলাই ১৯২৫),চুঁচূড়া এবং হুগলিবাসীরা একত্রে চিত্তরঞ্জন দাশের মৃত্যু উপলক্ষে একটি বৃহৎ শোকসভার আয়োজন করেন। এই সভার প্রধান উৎসাহদাতা ছিলেন- রমেশচন্দ্র মণ্ডল। আর যুগ্ম আহ্বায়ক  ছিলেন ইমামবাড়ির মুতত্তলী ও মহম্মদ জাফরী। শোকসভার ব্যবস্থা  করা হয়েছিল চুঁচুড়ার কৈরী টকী হাউসে। অনুষ্ঠানের সভাপতি হয়েছিলেন রমেশচন্দ্র মণ্ডল এবং প্রধান অতিথি ছিলেন মুতত্তলী। প্রাণতোষ চট্টোপাধ্যায় তাঁর 'কাজী নজরুল' গ্রন্থে লিখেছেন যে, এই অনুষ্ঠানের জন্য নজরুল ১১ই আষাঢ় ১৩৩২ বঙ্গাব্দে (বৃহস্পতিবার ২৫ জুন ১৯২৫) এই ইন্দ্রপতন' কবিতা রচনা করেছিলেন। এ্ছাড়া ' রাজ-ভিখারি' শিরোনামের গানটিও ১৭ই আষাঢ় (বুধবার, ১ জুলাই ১৯২৫) রচনা করেছিলেন। নজরুলের স্বকণ্ঠে ' ইন্দ্রপতন' কবিতা পাঠের মধ্য দিয়ে এই অনুষ্ঠানের সূচনা হয়েছিল। এরপর কয়েকজন বক্তৃতা দেওয়ার পর, নজরুল পরিবেশন করেছিলেন ' রাজ-ভিখারি' শিরোনামের গানটি।

চুঁচূড়া এবং হুগলির হিন্দু-মুসলমানের সমবেত প্রচাষ্টায়   চিত্তরঞ্জন দাশের শোকসভা পালন চলছিল, সেই সময় কলকাতায় শুরু হয়েছিল হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গা। হুগলি থেকে এই সংবাদ শুনে নজরুল সংবাদ শুনে অত্যন্ত মর্মাহত হন।

১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই জুলাই (সোমবার ২৯ আষাঢ় ১৩৩২) নজরুল 'বাঁকুড়া যুব ও ছাত্র সমাজ' এবং 'গঙ্গাজল ঘাটী জাতীয় বিদ্যালয়' থেকে আমন্ত্রণ পেয়ে বাঁকুড়া সফরে যান। এই সফরে তাঁর সঙ্গী ছিলেন প্রাণতোষ চট্টোপাধ্যায়। বাঁকুড়া রেলস্টেশনে তাঁকে সম্বর্ধনার জন্য এসেছিলেন, বাঁকুড়া কলেজের অধ্যক্ষ মি. ব্রাউন এবং তাঁর স্ত্রী। এই সম্বর্ধনায় অংশ নিয়েছিলেন বাঁকুড়ার স্থানীয় মানুষ। এ বিষয়ে একটি চমৎকার বিবরণ পাওয়া যায় প্রাণতোষ চট্টোপাধ্যায়ের 'কাজী নজরুল' গ্রন্থে। তিনি লিখেছেন-
'নজরুল নির্দিষ্ট দিনে রওনা হন। তিনি তাঁর সঙ্গে আমাকে (প্রাণতোষ চট্টোপাধ্যায়) নিয়ে গিয়েছিলেন। দ্বিতীয় শ্রেণীর কামরায় আমরা যাত্রা করি। সারারাত কবি গানে গানে মাতিয়ে রাখেন যাত্রীদের। বাঁকুড়া স্টেশনে যখন গাড়ি আসে তখন বেলা প্রায় আটটা। সারিবদ্ধ তরুণ সৈনিক মালকোছা মারা, প্রত্যেকের হাতে বড় লাঠি। ছাত্রদের সামনে সৌম্যমূর্তি ব্রাউন ও তাঁর স্ত্রী দাঁড়িয়ে আছেন। কবি যখন স্টেশনে পদার্পণ করলেন তখন প্রথমেই ব্রাউন দম্পতি হাত জোড় করে তাঁকে নমস্কার জানালেন। ব্রাউন সাহেবের পিছনে জাতীয় পতাকা হাতে বাহিনীর নেতা ছবির মত দাঁড়িয়ে ছিলেন। ব্রাউন সাহেব হাসিমুখে কবির হাতে হাত দিয়ে অভ্যর্থনা জানাতেই পতাকা বাহক পতাকা উর্ধে তুলে বন্দেমাতরম ধ্বনি করলেন, সারিবদ্ধ বাহিনী হাতের লাঠি তুলে কাঁধের উপর রেখে দুপা এগিয়ে এসে বন্দেমাতরম ধ্বনির সঙ্গে কবিকে স্বাগত করল। কবির মুখের দিকে চেয়ে দেখলাম বড় বড় চোখ দুটি চক চক করছে আর মুখখানি রক্তাভা ধারণ করেছে।
    ব্রাউন সাহেবের হাতে বাজেয়াপ্ত গ্রন্থ 'বিষের বাঁশী' খানা দেখলাম। আর শ্রীমতী ব্রাউনের হাতে ছিল বাজেয়াপ্ত 'ভাঙ্গার গান'।'

...এরপর কবিকে স্টেশনের বিশ্রামাগারে নিয়ে গিয়ে জলযোগের ব্যবস্থা করা হয়। ভিতর থেকে শুনতে পাওয়া গেল বাইরে মন্ত্র গুঞ্জরনের মতো স্বেচ্ছাসৈনিকেরা বারে বারে আবৃত্তি
করছে-
                "ঐ ক্ষেপেছে পাগলী মায়ের
                 দামাল ছেলে কামাল ভাই।"
প্রাণতোষ চট্টোপাধ্যায়ের এই রচনা থেকে জানা যায়, নজরুল এক সময় ভাবাবেগে উত্তেজিত হয়ে, এই আবৃত্তিতে যোগদান করেন। এরপর মাতৃসমা এক মহিলা তাঁকে রক্তচন্দনের ফোঁটা দেন এবং একজন তরুণ তাঁকে জবা ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেন। যদিও নজরুলে স্টেশন থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্রাউন সাহেব মোটর গাড়ির ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু স্থানীয় যুবকেরা তাঁদের লাঠি দিয়ে মাচান তৈরি করে, তার উপর নজরুলকে বসিয়ে- 'ঐ ক্ষেপেছে পাগলী মায়ের' আবৃত্তি করতে করতে রওনা দেন। এই ভাবে প্রায় ১ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে এঁরা সবাই ছাত্রাবাসে পৌঁছান।

বাঁকুড়ায় নজরুল পরিচিত হন রাজবন্দী নরেন সরকার এবং দেবেন সরকার। এই সময় প্রাণতোষ চট্টোপাধ্যায় সরকারকৃত নজরুলের বাজেয়াপ্ত গ
্রন্থ 'বিষের বাঁশী' ও 'ভাঙার গান' নিয়ে গিয়েছিলেন। উভয় গ্রন্থের প্রায় আট শ কপি এখানে বিক্রয় হয়েছিল।

নজরুল প্রথমে গঙ্গাজল ঘাটি জাতীয় বিদ্যালয়টির উদ্বোধন করেন। এই বিদ্যালয়টি গড়ে উঠেছিল স্থানীয় অমর নামক এক স্বেচ্ছাসেবকের অক্লান্ত পরিশ্রমে। স্কুল প্রতিষ্ঠার পর তিনি বিদ্যালয়ের আশ্রমেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। প্রতিষ্ঠাতা অমরের নামানুযায়ী বিদ্যালয়টির নাম হয় 'অমর কানন'। বীর অমরের কীর্তিকলাপ শুনে কবি খুবই অনুপ্রাণিত এবং অভিভূত হয়ে পড়েন। এই বিদ্যালয়ের উদ্বোধন-সঙ্গীত হিসেবে নজরুল রচনা করেছিলেন 'অমর কানন মোদের অমর কানন' গানটি। তিনি এই অনুষ্ঠানে গানটি নিজেই গেয়েছিল।
  • অমর কানন মোদের অমর কানন [তথ্য]
    ছায়ানট প্রথম সংস্করণে [২২ সেপ্টেম্বর ১৯২৫, ৬ আশ্বিন ১৩৩২] গানটির সাথে রচনার স্থান ও কাল উল্লেখ আছে 'গঙ্গাজলঘাটী, বাঁকুড়া/আষাঢ় ১৩৩২'। শিরোনাম অমর-কাননগানটির পাদটীকায় উল্লেখ ছিল-'বাঁকুড়া জেলার গঙ্গাঘাটী জাতীয় বিদ্যালয়টা নদী পাহাড় বন ও মাঠঘেরা একটী প্রান্তরে। এর নাম অমর কানন। এই বিদ্যালয় অমর নামক একটী তরুণের তপস্যার ফল। সে আজ স্বর্গে। এই গানটি বিদ্যালয়ের ছেলেদের জন্য লিখিত। পরে বিজলী পত্রিকার শ্রাবণ ১৩৩২ সংখ্যায় গানটি প্রকাশিত হয়েছিল।
এরপর নজরুল এবং প্রাণতোষ বাঁকুড়া ছাত্র ও যুব সম্মেলনে যোগদান করেন। এখানেও 'বিষের বাঁশী' ও 'ভাঙার গান'-এর অনেক কপি বিক্রয় হয়েছিল। সম্মেলন শেষে নজরুল বিষ্ণুপুর মল্লরাজের রাজবাড়ি পরিদর্শন করেন। এখানে নজরুল রাজবাড়ির সামনে রাখা 'দলমাদল' কামান আলিঙ্গন করেন এবং এই কামানের গায়ে হেলান দিয়ে ছবি তোলেন। এই ছবিটি পরে 'চিত্তনামা' কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।

বিষ্ণুপুরের রাজা নজরুলকে সম্বর্ধনা দেন। এখানে নজরুল গান ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন।

১৫ই জুলাই (বুধবার ৩১ আষাঢ় ১৩৩২) নই ১৯২৫) সংখ্যায় গানটি প্রকাশিত হয়েছিল। ১৫ই জুলাই (বুধবার ৩১ আষাঢ় ১৩৩২) নজরুল বাঁকুড়া থেকে হুগলি ফিরে আসেন। এ সংবাদ পাওয়া যায় ১৬ই জুলাই (বৃহস্পতিবার ৩২ আষাঢ় ১৩৩২) নজরুল হুগলি থেকে কুড়িগ্রামের মাহফুজুর রহমানকে লিখিত পত্রি থেকে। এই চিঠি থেকে জানা যায়, এই সময় নজরুল অর্থ কষ্টে ছিলেন। নজরুলের রচিত কিছু বই বিক্রয়ের জন্য মাহফুজুর রহমান নিয়েছিলেন। সে সকল বইয়ের বিক্রয়লব্ধ অর্থের জন্য নজরুল পত্র-মারফত এই তাগাদা দিয়েছিলেন।
  • দ্রষ্টব্য: ১৬ই জুলাই (বৃহস্পতিবার ৩২ আষাঢ় ১৩৩২) হুগলি থেকে কুড়িগ্রামের মাহফুজুর রহমানকে লিখিত পত্র। [পত্র]
১৭ই জুলাই (শুক্রবার ১ শ্রাবণ ১৩৩২) রসা থিয়েটারে চিত্তরঞ্জন মেমোরিয়াল ফান্ডের জন্য আয়োজিত বিচিত্রানুষ্ঠানে নজরুল গান গেয়েছিলেন। এই অনুষ্ঠানের অন্যান্য শিল্পী ছিলেন দিলীপ রায় এবং নলিনী সরকার। অনুষ্ঠানে কবিতা নির্মলেন্দু লাহিড়ী 'সীতা' নাটক থেকে অংশবিশেষ পাঠ করেছিলেন।

২০শে জুলাই (সোমবার ৪ শ্রাবণ ১৩৩২) তিনি কুড়িগ্রামের মাহফুজুর রহমানকে আবার একটি চিঠি লিখেছিলেন। উল্লেখ্য ১৬ই জুলাই নজরুল পত্র-মারফত মাহফুজুর রহমানকে বই বিক্রয়ের টাকা পাঠানোর যে তাগিদ দিয়েছিলেন। মাহফুজুর রহমান সে পত্রের জবাব দিয়েছিলেন। ২০শে জুলাইতে লিখিত এই পত্রটি ছিল তার জবাব।
  • দ্রষ্টব্য: ২০শে জুলাই (সোমবার ৪ শ্রাবণ ১৩৩২) হুগলি থেকে কুড়িগ্রামের মাহফুজুর রহমানকে লিখিত পত্র। [পত্র]
এ্‌ই পত্রের শেষ বাক্য ছিল 'বীরভূম যাচ্ছি ৪/৫ দিনের জন্যে'। কিন্তু নজরুলের বীরভূমে যাওয়ার কোন বৃত্তান্ত পাওয়া যায় না।

আগষ্ট
১৯২৫ (১৬ শ্রাবণ-১৫ ভাদ্র ১৩৩২)
এই মাসে নজরুল হুগলিতে কাটান। ৩১শে শ্রাবণ (রবিবার ১৬ই আগষ্ট)  নজরুল, শক্তি পত্রিকার সম্পাদক বলাই দেবশর্মা-কে একটি চিঠি লিখেছিলেন। এই চিঠিতে জানা যায় যে, পুনরায় ধূমকেতু প্রকাশের ইচ্ছে তার ছিল। চিঠিতে লিখেছিলেন- 
'ধূমকেতু'তে চড়ে আমার আর একবার বাংলার পিলে চমকে দেওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু গোবরমন্ত (সরকার) সাহেব পেছনে ভীষণ লেগেছে। কোনো ক্রমেই একে উঠতে দেবে না।'
  • দ্রষ্টব্য: ২০শে জুলাই (সোমবার ৪ শ্রাবণ ১৩৩২) হুগলি থেকে বলাই দেবশর্মা-কে  লিখিত পত্র। [পত্র]
এই মাসে নজরুলের রচিত কোনো রচনার সন্ধান পাওয়া যায় না। এছাড়া পূর্বে রচিত কোনো  রচনাও প্রকাশিত হয় নি।

সেপ্টেম্বর ১৯২৫ (১৬ ভাদ্র-১৪ আশ্বিন ১৩৩২)

এই মাসের উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল- নজরুলের গান প্রথম রেকর্ডে প্রকাশিত হয়েছিল। এছাড়া প্রকাশিত হয়েছিল নজরুলের ষষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ 'ছায়ানট' প্রকাশিত হয়েছিল। এছাড়া পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হয়েছিল ৩টি নতুন কবিতা।
  • গ্রামোফোন রেকর্ডে নজরুলের গানের প্রথম রেকর্ড প্রকাশ
    • 'জাতের নামে বজ্জাতি' [তথ্য]
      রচনার কালানুক্রমের বিচারে গানটি ছিল ৪৫ সংখ্যক গান। গানটি ছিল পূর্বে রচিত। রেকর্ডে প্রকাশিত  নজরুলের গানের  হিসেবে ছিল এটি প্রথম। ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৩২ বঙ্গাব্দ) নজরুলের প্রথম গান গ্রামোফোন রেকর্ডে ধারণ করা হয় (রেকর্ড নম্বর P 6945) । শিল্পী ছিলেন হরেন্দ্রনাথ দ্ত্ত। এই রেকর্ডে গীতিকার ও সুরকারের নাম ছিল না। এই রেকর্ডের অপর পৃষ্ঠায় ছিল- রজনীকান্ত সেনের গান-
            তাই ভালো, মোদের [তথ্য]..।
       
  • ছায়ানট
    এই মাসে প্রকাশিত হয় তাঁর ষষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ ' ছায়ানট'। প্রথম সংস্করণে প্রকাশকাল মুদ্রিত হয় নি। বেঙ্গল লাইব্রেরির তালিকা থেকে জানা যায় গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছিল- ২২ সেপ্টেম্বর ১৯২৫। বঙ্গাব্দের হিসেবে দাঁড়ায় ৬ আশ্বিন ১৩৩২, সোমবার। প্রকাশক শ্রীব্রজবিহারী বর্ম্মণ রায়/বর্ম্মণ পাবলিশিং হাউস/১৩৯ কর্ণওয়ালিশ ষ্ট্রীট-কলিকাতা। গ্রন্থটি প্রিন্টার হিসেবে উল্লেখ ছিল-' শ্রীশশিভূষণ পাল-মেট্‌কাফ্-প্রেস্ ১৫ নং নয়নচাঁদ দত্তের ষ্ট্রীট, কলিকাতা'। মূল্য ছিল পাঁচ সিকা। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১০০। গ্রন্থটিতে মোট ৫০টি কবিতা ও স্থান পেয়েছিল।

    এই গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত গান ও কবিতার তালিকা
    1. আশ্বিন ১৩২৭। বরিশাল। আশা মোসলেম ভারত পত্রিকার'পৌষ ১৩২৭' (ডিসেম্বর ১৯২০-জানুয়ারি ১৯২১) সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল]
    2. আশ্বিন ১৩২৭। বরিশাল। দূরের বন্ধু।  কবিতা হিসেবে- প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল মোসলেম ভারত পত্রিকার 'কার্তিক ১৩২৭' (অক্টোবর-নভেম্বর ১৯২০) সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল]
    3. আশ্বিন  ১৩২৭। বরিশাল। মরমীমোসলেম ভারত পত্রিকার 'ফাল্গুন ১৩২৭' (ফেব্রুয়ারি ১৯২১)।  কল্লোল পত্রিকা [অগ্রহায়ণ ১৩৩০ (নভেম্বর ১৯২৩)]
    4. কার্তিক ১৩২৭। কলিকাতা। সন্ধ্যাতারা
    5. পৌষ ১৩২৭। দেওঘর। অ-কেজোর গান
    6. পৌষ ১৩২৭। দেওঘর। ছল-কুমারী
    7. পৌষ ১৩২৭। দেওঘর।  মুক্তি-বার
    8. পৌষ ১৩২৭। দেওঘর। স্নেহ-ভীতু। গানটি মোহিনী সেনগুপ্তা-কৃত স্বরলিপি-সহ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল  ' মোসলেম ভারত' পত্রিকার ফাল্গুন ১৩২৭ (ফেব্রুয়ারি-মার্চ ১৯২১) সংখ্যায়।]
    9.  মাঘ ১৩২৭। দেওঘর। প্রতিবেশিনী। সওগাত পত্রিকার মাঘ ১৩২৭  সংখ্যায় 'বেদন-হারা' শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল।
    10. ফাল্গুন ১৩২৭। কলিকাতা। চিরশিশু
    11. ফাল্গুন ১৩২৭। কলিকাতা। দুপুর অভিসার
    12. ফাল্গুন ১৩২৭। কলিকাতা। ব্যথা-নিশীথ
    13. চৈত্র ১৩২৭। কলিকাতা। নিরুদ্দেশের যাত্রী
    14. চৈত্র ১৩২৭। কলিকাতা। দহন-মালা। নারায়ণ পত্রিকার বৈশাখ ১৩২৮ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। শিরোনাম ছিল দহন-মালা। পৃষ্ঠা: ৬৬২।
    15. চৈত্র ১৩২৭। ট্রেনে কুমিল্লার পথে। নীল-পরী
    16. ভারতী পত্রিকার 'বৈশাখ ১৩২৮ ' সংখ্যার ৭০ পৃষ্ঠায় মুদ্রিত হয়েছিল। ধারণা করা যায়, ছায়ানট কাব্যগ্রন্থে উল্লিখিত তারিখটি ভুলক্রমে লেখা হয়েছিল- 'শ্রাবণ, ১৩২৮। কলিকাতা'। পলাতকা
    17. বৈশাখ ১৩২৮ দৌলতপুর, কুমিল্লা। অনাদৃতা। নারায়ণ পত্রিকার 'ভাদ্র ১৩২৮' সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। পৃষ্ঠা: ১০১৭]
    18. বৈশাখ ১৩২৮ দৌলতপুর, কুমিল্লা। অবেলায়
    19. বৈশাখ ১৩২৮ দৌলতপুর, কুমিল্লা। পাপড়ি খোলা
    20. বৈশাখ ১৩২৮ দৌলতপুর, কুমিল্লা। হার-মানা-হার
    21. বৈশাখ ১৩২৮ দৌলতপুর, কুমিল্লা। বিদায়-বেলায়
    22. জ্যৈষ্ঠ  ১৩২৮ দৌলতপুর, কুমিল্লা। বিধুরা পথিক-প্রিয়া
    23. জ্যৈষ্ঠ  ১৩২৮ দৌলতপুর, কুমিল্লা। বেদনা-অভিমান
    24. জ্যৈষ্ঠ  ১৩২৮ দৌলতপুর, কুমিল্লা।  মানস-বধূ
    25. জ্যৈষ্ঠ  ১৩২৮ দৌলতপুর, কুমিল্লা। হারা-মণি। নারায়ণ পত্রিকার 'কার্তিক ১৩২৮ ' সংখ্যায় কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। পৃষ্ঠা: ১২১৬-১২১৭।]
    26. আষাঢ় ১৩২৮। কুমিল্লা। পরশ-পূজা
    27. আষাঢ় ১৩২৮। কুমিল্লা।মনের মানুষ
    28. শ্রাবণ ১৩২৮। কলিকাত। অরুণ পিয়া
    29. শ্রাবণ, ১৩২৮। কলিকাতা। বাদল-দিনে
    30. শ্রাবণ, ১৩২৮। কলিকাতা। শেষের গান
    31. ভাদ্র ১৩২৮। কলিকাতা। চিরন্তনী প্রিয়া। মানসী ও মর্ম্মমাণী পত্রিকায় 'কার্তিক ১৩২৮ সংখ্যায় কবিতাটি প্রকাশিত হয়েছিল]
    32. ভাদ্র ১৩২৮। কলিকাতা।  বেদনা-মণি। মানসী ও মর্ম্মমাণী পত্রিকায় 'ভাদ্র ১৩২৯ সংখ্যায় কবিতাটি প্রকাশিত হয়েছিল।]
    33. ভাদ্র ১৩২৮। কলিকাতা। লক্ষ্মীছাড়া। উপাসনা পত্রিকার ভাদ্র ১৩২৮ সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল]
    34. অগ্রহায়ণ ১৩২৮। কুমিল্লা। নিশীথ-প্রীতম্
    35. অগ্রহায়ণ  ১৩২৮। কুমিল্লা। বিজয়িনী
    36. ফাল্গুন ১৩২৮। কুমিল্লা। প্রিয়ার রূপ
    37. চৈত্র ১৩২৮। কলিকাতা। কার বাঁশি বাজিল
    38. জ্যৈষ্ঠ ১৩২৯। কুমিল্লা। চির-চেনা
    39. জ্যৈষ্ঠ ১৩২৯। কুমিল্লা। শায়ক-বেঁধা পাখী। বঙ্গবাণী পত্রিকার 'আষাঢ় ১৩২৯' সংখ্যায় কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।]
    40. আষাঢ় ১৩২৯। কুমিল্লা। স্তব্ধ বাদল
    41. ফাল্গুন ১৩৩০। সমস্তিপুরের ট্রেন-পথে। রৌদ্র-দগ্ধের গান
    42. আষাঢ় ১৩৩১। কলিকাতা। আপন পিয়াসী
    43. আষাঢ় ১৩৩১। হুগলি। বিবাগিনী
    44. আষাঢ় ১৩৩১। হুগলি। পাহাড়ি গান
    45. আষাঢ় ১৩৩১। হুগলি। পূবের হাওয়া
    46. আশ্বিন ১৩৩১। কলিকাতা। কমল কাঁটা
    47. অগ্রহায়ণ ১৩৩১। বহরমপুর জেল। আলতা-স্মৃতি।  ছায়ানট কাব্যে অন্তর্ভুক্ত এই কবিতাটির সাথে রচনার স্থান ও তারিখ উল্লেখ আছে 'বহরমপুর জেল/অগ্রহায়ণ ১৩৩১'। সম্ভবত তারিখটি হবে অগ্রহায়ণ/১৩৩০। কারণ 'অগ্রহায়ণ/১৩৩০'-এ নজরুল বহরমপুর জেল-এ ছিলেন।]
    48. ফাল্গুন ১৩৩১। হুগলি। চাঁদ-মুকুর
    49. চৈত্র ১৩৩১। হুগলি। চৈতী হাওয়া
    50. আষাঢ় ১৩৩২। গঙ্গাজলঘাটি, বাঁকুড়া। অমর-কাননবিজলী পত্রিকার শ্রাবণ ১৩৩২ সংখ্যায় গানটি প্রকাশিত হয়েছিল।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত ৩টি কবিতা
  • সংগ্রামী। অগ্রন্থিত কবিতা। কবিতাটির সাথে রচনার স্থান ও তারিখ উল্লেখ আছে- 'কলিকাতা
    ২৬শে ভাদ্র ১৩৩২' (শুক্রবার ১১ সেপ্টেম্বর ১৯২৫)। এই কবিতাটি নজরুল তরুণ কবি সতীশ মিত্রের আশীর্বাদ হিসেবে লিখেছিলেন।
  • ফরিয়াদসর্বহারা কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত এই কবিতার সাথে রচনার স্থান ও তারিখ উল্লেখ আছে- 'হুগলি। ৭ আশ্বিন ১৩৩২' (বুধবার ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯২৫)
  • আমার কৈফিয়ৎ। বিজলী পত্রিকার ৫ম বর্ষ ৪১ সংখ্যায় (আশ্বিন ১৩৩২) প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। সর্বহারা কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। সে সময়ের হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে ধর্ম-ভিত্তিক দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল। এছাড়া রাজনৈতিক দর্শন, নারী-প্রীতি নিয়ে কটাক্ষের অন্ত ছিল না। নিতান্তই অভিমানী কবি এই কবিতাটি রচনা করেছিলেন। মুজাফ্ফর আহমদের 'কাজী নজরুল ইস্‌লাম স্মৃতিকথা' গ্রন্থ থেকে জানা যায়-

    'রবীন্দ্রনাথ, একবার নজরুলকে তলওয়ার দিয়ে দাড়ি চাঁছার কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন তিনি সত্যই, কিন্তু কথাটা নানান জনে নানান ভাবে লিখেছেন। সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুরও এক জায়গায় কথাটা লিখেছেন। আমি নজরুলের মুখে যা শুনেছিলেম তা হচ্ছে এই যে সাক্ষাতের প্রথম দিনেই রবীন্দ্রনাথ কথাটা নজরুলকে বলেছিলেন। তখনও তিনি ভাবেন নি যে নজরুল গভীর ভাবে রাজনীতিক সংগ্রামে বিশ্বাসী। নজরুল কবি, কাবাচর্চাই তার পেশা হওয়া উচিত, তার মানে রাজনীতিতে তার যাওয়া, উচিত নয়, -এই সব ভেবেই তিনি তলওয়ার দিয়ে দাড়ি চাঁছার কথাটা বলেছিলেন। অন্তত, নজরুল তাই বুঝেছিল। রবীন্দ্রনাথ শুধু ওই কথা বলেই চুপ করে যান নি। তিনি তার সঙ্গে একটি প্রস্তাবও দিয়েছিলেন; বলেছিলেন, নজরুল শান্তিনিকেতনে চলুক। সেখানে সে ছেলেদের কিছু কিছু ড্রিল শেখাবে আর গান শিখবে দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে।'

এই মাসের শুরুর দিকে নজরুল ভয়ানক অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে এক রকম বিছানাতেই কাটাতে বাধ্য হন।

অক্টোবর ১৯২৫ (১৫ আশ্বিন-১৪ কার্তিক ১৩৩২)

গত মাসের অসুস্থতা আরও বৃদ্ধি পায়। ৬ই অক্টোবরে হবীবুল্লাহ বাহারকে লেখা চিঠি থেকে এই অসুখের কারণ এবং তার শেষ অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়।  
'...বাহার! তোমার দুখানা চিঠি পেলাম আজকেরটা নিয়ে। উত্তর দিতে পারিনি 'তার কারণ আমি বারো তেরো দিন হতে বড্ড অসুস্থ। দেশ-উদ্ধার-কল্পে পাড়া-গাঁয়ে গাঁয়ে ঘুরে পচা পাটের জল আর মশার কামড় খেয়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ে বাড়ি ফিরি। মধ্যে একদিন অবস্থা যায়-যায় হয়ে উঠেছিল, একদিন ভীষণ রক্তবমন হতে থাকে হঠাৎ, সে দিন সাত-আট আগে।

রক্তবমন বন্ধ হয়েছে, কিন্তু বড়ো দুর্বল- এখনও শয্যাগত। জ্বর আসছিল রোজ, আজ ছেড়েছে। এত রক্ত পড়ত এক একবার, যে নালা দিয়ে জলের মতো বয়ে যেত, যাক, বিপদের ক্ষণ কেটে গেছে। তাছাড়া আমিও এত সহজে  'বিছানায় শুয়ে মরতে রাজি নই।...'

[দ্রষ্টব্য: ৬ অক্টোবর, ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দ (২০ অক্টোবর ১৯২৫), হবীবুল্লাহ বাহার-কে লেখা পত্র। [পত্র]

এই মাসে প্রকাশিত হয় নজরুলের সপ্তম কাব্যগ্রন্থ পূবের হাওয়া

  • পূবের হাওয়া
    প্রথম প্রকাশকাল আশ্বিন ১৩৩২ বঙ্গাব্দ (অক্টোবর ১৯২৫)। প্রকাশক মজিবল হক, বি,কম্, ভোলা বরিশাল। প্রিন্টার্স: মজিবল হক, বি,কম্। ওরিয়েন্টাল প্রিন্টার্স লিমিটেড, ২৬/৯/১এ, হ্যারিসন রোড, কলিকাতা।  পৃষ্ঠা: ৮+৫০। দাম পাঁচ সিকা।

    পূবের হওয়ার প্রথম সংস্করণের মোট ৩৭টি কবিতা ও গান অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এর ভিতরে ২৬টি কবিতা ছায়ানট কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত আগেই প্রকাশিত হয়েছিল।
এই মাসে রচিত নতুন কবিতা
  • সব্যসাচী ফণী মনসা প্রথম সংস্করণ [শ্রাবণ ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ (জুলাই ১৯২৭)] কবিতাটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এর সাথে কবিতাটির রচনার স্থান ও কাল উল্লেখ আছে- 'হুগলি কার্তিক ১৩৩২'। লাঙল পত্রিকা পত্রিকার প্রথম খণ্ড তৃতীয় সংখ্যা (বৃহস্পতিবার, ২৩ পৌষ, ১৩৩২। ৭ জানুয়ারি ১৯২৬) কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।  পৃষ্ঠা: ৩-৪]।
     
  • পথের দেখা এ নহে গো বন্ধু [তথ্য]
     বিদায়-স্মরণেসিন্ধু-হিন্দোল অন্তর্ভুক্ত এই কবিতাটির রচনার স্থান ও কাল উল্লেখ আছে- 'হুগলি কার্তিক ১৩৩২'।
নভেম্বর ১৯২৫  (১৫ কার্তিক-১৪ অগ্রহায়ণ ১৩৩২)
নভেম্বর মাসে তিনি রাজনীতির সাথে  জড়িয়ে পড়েন। এই মাসের ১০ তারিখে (সোমবার, ২৪ কার্তিক ১৩৩১) হেমন্তকুমার সরকার, আব্দুল হালিম, কুতুবউদ্দিন আহমদ, শামসুদ্দীন হোসয়ন এবং নজরুলের উদ্যোগে ভারতীয় জাতীয় মহাসমিতির অন্তর্ভুক্ত 'শ্রমিক স্বরাজ পার্টি'র
(The Labour Sawraj Party of the Indian National Congress) নাম ঘোষিত হয়। এই দলের ইস্তাহার রচনা করেছিলেন নজরুল। নজরুলের নামে ও স্বাক্ষরে এই ইস্তাহার ঘোষিত ও প্রকাশিত হয়েছিল। এই দলের যোগদানে ইচ্ছুকদের নজরুলের সাথে যোগাযোগ করার কথাও ঘোষিত হয়েছিল।

এই সময় তিনি এই দলের জন্য গ্রামের কৃষকদের সংগঠিত করার জন্য সক্রিয় ছিলেন। সব মিলিয়ে সাহিত্য-রচনার চেয়ে রাজনীতিতে তিনি বেশি সময় দিতে থাকেন। স্বরাজ দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কুতুবউদ্দিন আহমদ, নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বশিরহাটের উপনির্বাচনের প্রার্থী হন। এই নিরবাচনে নজরুল, আব্দুল হালিম এবং শামসুদ্দীন হাসয়ন নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটান। এই সময় নজরুল একটি কবিতা রচনা করেছিলেন কল্লোল পত্রিকার অন্যতম সংগঠক ও সহ-সম্পাদক গোকুলচন্দ্র নাগের স্মরণে।
  • গোকুল নাগ সর্বহারা কাব্যে গানটির রচনাকাল উল্লেখ আছে- হুগলি, ৩০শে কার্তিক ১৩৩২ (সোমবার, ১৬ নভেম্বর ১৯২৫)। উল্লেখ্য. ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে ২৪ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার, ৮ আশ্বিন ১৩৩২) কল্লোল পত্রিকার অন্যতম সংগঠক ও সহ-সম্পাদক গোকুলচন্দ্র নাগ, দার্জিলিং-এ মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুতে নজরুল শোকাহত হন এবং তাঁর স্মরণে 'গোকুল নাগ' নামক কবিতাটি রচনা করেন। কবিতাটি কল্লোল পত্রিকার 'অগ্রহায়ণ ১৩৩২' সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।
শরীরের প্রতি অবহেলায় নজরুল রক্ত আমাশয়ে আক্রান্ত হন। পরে দেখা যায় তিনি ম্যালেরিয়া'তে আক্রান্ত হয়েছেন। এর ফলে শারীরীকভাবে তিনি অত্যন্ত কাহিল হয়ে পড়েন। এরই ভিতরে তিনি শ্রমিক স্বরাজ পার্টি'র মুখপত্র হিসেবে ' লাঙল পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেন। তাঁর অসুস্থতা এবং লাঙল পত্রিকার প্রকাশের উদ্যোগের কথা জানা যায় কালিকলম পত্রিকার অন্যতম সম্পাদক মুরলীধর বসুকে ২৫ নভেম্বর (বুধবার ৯ অগ্রহায়ণ ১৩৩২) লেখা একটি চিঠি থেকে।
  • [দ্রষ্টব্য:১৫ নভেম্বর ১৯২৫ (বুধবার ৯ অগ্রহায়ণ ১৩৩২)  মুরলীধর বসুকে লেখা পত্র। [পত্র]
মুরলীধর বসুকে লেখা চিঠি থেকে জানা যায় যে, 'লাঙল পত্রিকা'র জন্য '
কৃষাণের গান (ওঠ্‌ রে চাষী, জগদ্বাসী)’ নামক একটি গান রচনা করেছিলেন। চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন-
...'লাঙল'-এর ফাল আমার হাতে- 'লাঙল'-এর শুধু বা কাঠেরটাই বেরোয় প্রথমবার। শুধু একটা 'কৃষাণের গান’ দিয়েছি।'

গান:
ওঠ্‌ রে চাষী, জগদ্বাসী, ধর্‌ কষে লাঙল [তথ্য]
শিরোনাম: কৃষাণের গান। যদিও মুরলীধর বসুকে লেখা চিঠির সূত্রে ধারণা করা যায়, গানটি ' লাঙল পত্রিকা'র প্রথম সংখ্যার জন্য লিখেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল- গানটি প্রকাশিত হয়েছিল- উক্ত পত্রিকার দ্বিতীয় সংখ্যায় ['বুধবার, ৮ই পৌষ ১৩৩২। কৃষাণের গান। পৃষ্ঠা ৪।] সর্বহারা- কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত গানের সাথে রচনার স্থান ও তারিখ উল্লেখ আছে 'হুগলি/অগ্রহায়ণ ১৩৩২'।
এই মাসে আরও নজরুল একটি কবিতা রচনা করেছিলেন। কবিতাটি হলো-
  • নকীব জিঞ্জীর কাব্যে অন্তর্ভুক্ত কবিতার সাথে রচনার স্থান ও কাল উল্লেখ আছে- ' হুগলি,  ১৩ অগ্রহায়ণ, ১৩৩২ [রবিবার, ২৯ নভেম্বর ১৯২৫]। বরিশালের পাক্ষিক পত্রিকা 'নকীব' পত্রিকার বিশেষ সংখ্যায় (মাঘ ১৩৩২ বঙ্গাব্দ) কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।
ডিসেম্বর ১৯২৫ (১৫ অগ্রহায়ণ-১৬ পৌষ ১৩৩২)
এই মাসে রোগ থেকে কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন। এই মাসের ৯ ডিসেম্বর (বুধবার ২৩ অগ্রহায়ণ ১৩৩২), আন্‌ওয়ার হোসেন খানকে হুগলি থেকে একটি চিঠি লেখেন।
[ আন্‌ওয়ার হোসেন খানকে লেখা পত্র। [পত্র]
১লা পৌষ (১৬ ডিসেম্বর) থেকে 'শ্রমিক-প্রজা-স্বরাজ-সম্প্রদায়ের মুখপত্র' হিসেবে ' লাঙল ' নামক একটি সাপ্তাহিক প্রত্রিকা প্রকাশনা শুরু হয় ।এছাড়া সাম্যবাদী কাব্যগ্রন্থ এই মাসে প্রকাশিত হয়। সাপ্তাহিক 'লাঙল'-এর প্রকাশ
এই মাসে নজরুল 'শ্রমিক-প্রজা-স্বরাজ-সম্প্রদায়ের মুখপত্র' হিসেবে 'লাঙল' নামক একটি সাপ্তাহিক প্রত্রিকা প্রকাশ শুরু করেন। দ্বাদশ সংখ্যায় মুখপত্রের পরিচয় দেওয়া হয়- 'বঙ্গীয় কৃষক ও শ্রমিক-দলের সাপ্তাহিক মুখপত্র'।

পত্রিকাটি নজরুলের সম্পাদনায় প্রকাশিত হলেও সম্পাদকের নাম ছিল-শ্রীমণিভূষণ মুখোপাধ্যায়। আর প্রধান পরিচালক হিসেবে নাম ছাপা হতো- নজরুল ইসলাম। ত্রয়োদশ সংখ্যা থেকে নতুন সম্পাদকের নাম পাওয়া যায়- শ্রীগঙ্গাধর বিশ্বাস।

প্রকাশকের ঠিকানা ছিল- ১৫নং নয়ানচাঁদ দত্তের ষ্ট্রীট-মেট্‌কাফ প্রেসে মুদ্রিত এবং ৩৭নং হ্যারিসন রোড্ হইতে প্রকাশিত। মূদ্রাকর ও প্রকাশক- শ্রীমণিভূষণ মুখোপাধ্যায়।

পত্রিকটির প্রথম সংখ্যার প্রকাশের তারিখ ছিল- ১৩৩২ বঙ্গাব্দের ১লা পৌষ (বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে)। এটি বিশেষ সংখ্যা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। ১৩৩৩ বঙ্গাব্দের ২রা বৈশাখ (বৃহস্পতিবার ১৫ এপ্রিল ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দ) পত্রিকাটির পঞ্চদশ সংখ্যা প্রকাশিত হওয়ার পর এর প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। মূলত ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই আগস্ট থেকে মুজাফ্ফর আহমেদ গণবাণী নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। এই সময় 'লাঙল' এই পত্রিকার সাথে একীভূত হয়ে যায়।

প্রথম দিকে পত্রিকার প্রথম পাতায় গরু ও লাঙলের সাহায্যে ভূমি চাষ করছেন, এমন একজন কৃষকের ছবি বৃত্তাকার ব্লকে আবদ্ধ ছবি ছাপা হতো। এর নিচে চণ্ডীদাসের একটি কাব্য-উক্তি মুদ্রিত হতো- 'শুনহ মানুষ ভাই-/সবার উপরে মানুষ সত্য/তাহার উপরে নাই।' এর পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল ১৬। পত্রিকাটির দশম সংখ্যা থেকে পূর্বের কৃষকের ছবিটির পরিবর্তে নতুন ছবি ব্যবহৃত হয়ে। দ্বাদশ সংখ্যা থেকে কৃষকের ছবি বাদ দেওয়া হয়েছিল।
  • লাঙল। প্রথম খণ্ড। বিশেষ সংখ্যা (প্রথম সংখ্যা)।  ১ পৌষ ১৩৩২ বঙ্গাব্দ (বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দ)।
    • লাঙল। সম্পাদকীয়। পৃষ্ঠা: ৩-৪। প্রধান পরিচালক হিসেবে এটি রচনা করেছিলেন নজরুল ইসলাম।
    • সাম্যবাদী। [কবিতাগুচ্ছ]
    • ভারতীয় জাতীয় মহাসমিতির শ্রমিক-প্রজা-স্বরাজ-সম্প্রদায়- উদ্দেশ্য ও নিয়মাবলী। গঠনতন্ত্র। পৃষ্ঠা: ১১-১৩। এর শেষে উল্লেখ আছে- 'এই দলে যোগ দিতে ইচ্ছুক ব্যক্তিগণ নিম্নলিখিত ঠিকানা পত্র দিবেন:- নজরুল ইসলাম, ৩৭ নং হ্যারিসন রোড, কলিকাতা। উপরের এই নিয়মাবলী সমবেত মতামতের ভিত্তিতে গঠিত হলেও- এর চূড়ান্ত পাঠ তৈরি করেছিলেন- নজরুল ইসলাম।
    • নজরুলের নতুন বইয়ের বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়েছিল ১৬ পৃষ্ঠায়। এই নতুন বইগুলো ছিল-
      • চিত্তনামা। মূল্য ১ টাকা। (পাঠক ইহারই মধ্যে কবির অমর কবিতা "ইন্দ্র পতন" ও "সান্ত্বনা" পাইবেন। অন্য পরিচয় অনাবশ্যক)
      • পুবের হাওয়া। মূল্য ১ টাকা চার আনা । (কবির সুন্দর ছবিসহ সুন্দর বাঁধাই)
      • অগ্নিবীণা। মূল্য ১ টাকা চার আনা । (৩য় সংস্করণ, সংস্কৃত, পরিবর্ধিত এবং কবির বর্তমান ফটোসহ)
      • রিক্তের বেদন (গদ্যকাব্য)। মূল্য দেড় টাকা।
      • ব্যথার দান (২য় সংস্করণ)। মূল্য দেড় টাকা। (সৈনিকবেশী ফটোসহ)
      • দোলন চাঁপা । মূল্য দেড় টাকা। (যাহার পূজারিণী কবিতারাজ্যে চিরপূজা)
      • রাজবন্দীর জবানবন্দী। মূল্য চার আনা। ইহা পাঠে পাঠক কবির নির্ভীকতার যথার্থ পরিচয় পাইবেন।
      • কবির তিনখানা পুস্তক যন্ত্রস্থ:
        • ঝিঙেফুল
        • বাঁধন হারা
        • ফণী মনসা
           
  • লাঙল। প্রথম খণ্ড। দ্বিতীয় সংখ্যা।  ৮ পৌষ ১৩৩২ বঙ্গাব্দ (বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দ)।
    • গান: ওঠ্‌ রে চাষী, জগদ্বাসী, ধর্‌ কষে লাঙল [তথ্য]
      শিরোনাম: কৃষাণের গান। যদিও মুরলীধর বসুকে লেখা চিঠির সূত্রে ধারণা করা যায়, গানটি ' লাঙল পত্রিকা'র প্রথম সংখ্যার জন্য লিখেছিলেন। সর্বহারা- কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত গানের সাথে রচনার স্থান ও তারিখ উল্লেখ আছে 'হুগলি/অগ্রহায়ণ ১৩৩২'।
    • ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর পর্যন্ত নজরুল হুগলির বাসিন্দা ছিলেন। লাঙল পত্রিকার দ্বিতীয় সংখ্যায় [৮ পৌষ ১৩৩২, ২৩ ডিসেম্বর ১৯২৫] 'খড়কুটো' অংশে (পৃষ্ঠা ১১) এ বিষয়ে একটি সংবাদ ছাপা হয়েছিল- 'কবি নজরুল এখন অসুস্থ। তাঁর শরীরটা একটু সারলেই তিনি কাউন্সিলের প্রজাদলের সম্পাদক শ্রীযুক্ত হেমন্তকুমার সরকারের সহযোগে প্রজা আন্দোলন উপলক্ষে মফস্বলে ঘুরবেন।'
    • নজরুলের নতুন বইয়ের বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়েছিল ১৬ পৃষ্ঠায়। বিজ্ঞাপনটি- লাঙ্গল। প্রথম খণ্ড। বিশেষ সংখ্যায় (প্রথম সংখ্যা) প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের অনুরূপ।

সাম্যবাদী কাব্যগ্রন্থ
১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ ডিসেম্বর (শুক্রবার ১০ পৌষ ১৩৩২) সাম্যবাদী কাব্যগ্রন্থটি পুস্তিকাকের প্রকাশিত হয়েছিল। প্রকাশক মৌলভী শামসুদ্দীন হুসেন, বেঙ্গল পাবলিশিং হোম, ৫ নূর মহম্মদ লেন, কলিকাতা। ১৫ নম্বর নয়ান চাঁদ [দত্ত] স্ট্রিট, কলিকাতা, মেটকাফ প্রেসে শ্রীমণিভূষণ মুখার্জী কর্তৃক মুদ্রিত। উল্লেখ্য, ১৩৩২ বঙ্গাব্দের ১ পৌষ (বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দ), 'শ্রমিক-প্রজা-স্বরাজ-সম্প্রদায়ের মুখপত্র' হিসেবে 'লাঙল' নামক একটি সাপ্তাহিক প্রত্রিকা প্রকাশ শুরু হয়। এর প্রথম খণ্ড। বিশেষ সংখ্যায় (প্রথম সংখ্যা) 'সাম্যবাদী' কবিতাগুচ্ছ প্রকাশিত হয়েছিল। পৃষ্ঠা: ৫-১০। পরে এসব কবিতার সংকলন হিসেবে 'সাম্যবাদী' গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছিল। ইতিমধ্যে এই গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত কবিতাগুলো উল্লেখ করা হয়েছে।

জানুয়ারি ১৯২৬ (১৬ পৌষ-১৭ মাঘ ১৩৩২)
জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখে (রবিবার ১৯ পৌষ ১৩৩২) নজরুল ইসলাম হুগলী থেকে বসবাসের জন্য কৃষ্ণনগরে চলে আসেন। উল্লেখ্য, হুগলীতে থাকার সময় নজরুলের আর্থিক কষ্ট চরমে পৌঁছেছিল। এই সময় তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন হেমন্তকুমার সরকার। তিনি 'রায় চাঁদ প্রেম চাঁদ' বৃত্তি পাওয়া সুশিক্ষিত মানুষ। এছাড়া সুভাষ বসুর সহপাঠী ও সহকর্মী হিসেবে অনেকের প্রিয়ভাজন ছিলেন। এক সময় চিত্তরঞ্জন দাশের কর্মসচিব হিসেবে কাজ করেছেন। হুগলীতে নজরুলের প্রচুর দেনা হয়েছিল। তিনি সেসব পরিশোধ করে, নজরুলকে কৃষ্ণনগরে নিয়ে আসেন। কৃষ্ণনগরে আসার পর হেমন্ত সরকারে মা নীরদবরণী দেবী মায়ের মতো করে নজরুলকে অভ্যর্থনা করে ঘরে বরণ করেণ করেছিলেন। পরে গোয়ালপাটি মহল্লার মদন সরকারের বাড়িতে নজরুলের সপরিবারে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। তিনি নজরুলকে আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন- তোমার লেখার ভাবনা, সংসারের ভাবনা ভাবতে হবে না। সে ভাবনা আমার'। এই সময় নজরুলকে বাসা ভাড়া দিতে হত না। এমন কি নজরুল ও তাঁর পরিবারের জন্য খাবারে খরচও হেমন্ত সরকার দিতেন।

৫ই জানুয়ারি রচনা করেন মুক্তিকাম কবিতা।

  • মুক্তিকাম ফণী মনসা কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত এই কবিতাটির সাথে রচনার স্থান ও কাল ‌উল্লেখ আছে- 'হুগলি, ২০ পৌষ, ১৩৩১' (সোমবার, ৪ জানুয়ারি ১৯২৫)।

৭ই জানুয়ারি প্রকাশিত হয়েছিল 'লাঙল' পত্রিকার প্রথম খণ্ড, তৃতীয় সংখ্যা।

  • লাঙল। প্রথম খণ্ড। তৃতীয় সংখ্যা। ২৩ পৌষ ১৩৩২ বঙ্গাব্দ (বৃহস্পতিবার, ৭ জানুয়ারি ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দ)।
    • সব্যসাচী পূর্বে রচিত কবিতা। [পৃষ্ঠা: ৩-৪]। ফণী মনসা প্রথম সংস্করণ [শ্রাবণ ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ (জুলাই ১৯২৭)] কবিতাটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এর সাথে কবিতাটির রচনার স্থান ও কাল উল্লেখ আছে- 'হুগলি কার্তিক ১৩৩২'।
    • পোলিটিকাল তুবড়ি বাজি । সম্পাদকীয়। পৃষ্ঠা: ৫-৬। প্রধান পরিচালক হিসেবে এটি রচনা করেছিলেন নজরুল ইসলাম।
    • ১৭-১৮ জানুয়ারিতে (রবিবার-সোমবার, ৩-৪ মাঘ ১৩৩২) অনুষ্ঠিত ময়মনসিংহ শহরে জেলা কৃষক ও শ্রমিক কনফারেন্সে যোগ দেওয়ার জন্য নজরুল ও হেমন্তকুমার সরকার আমন্ত্রিত হন। সংবাদটি  এই সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুল অসুস্থ ছিলেন। তাই পত্রিকার ১৪ পৃষ্ঠায় খড়কুটো বিভাগে লেখা হয়েছিল- 'কাজি সাহেব সুস্থ থাকলে হেমন্ত বাবুর সঙ্গে নিশ্চয়ই উপস্থিত হবেন।
    • নজরুলের নতুন বইয়ের বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়েছিল ১৬ পৃষ্ঠায়। বিজ্ঞাপনটি- লাঙ্গল। প্রথম খণ্ড। বিশেষ সংখ্যায় (প্রথম সংখ্যা) প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের অনুরূপ। তবে ১৫ পৃষ্ঠায় 'ছায়ানট' প্রকাশের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।
  • লাঙল। প্রথম খণ্ড। চতুর্থ সংখ্যা। ৩০ পৌষ ১৩৩২ বঙ্গাব্দ (বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দ)।
    • ১৭-১৮ জানুয়ারিতে (রবিবার-সোমবার, ৩-৪ মাঘ ১৩৩২) অনুষ্ঠিত ময়মনসিংহ শহরে জেলা কৃষক ও শ্রমিক কনফারেন্সে যোগ দেওয়ার জন্য নজরুল ও হেমন্তকুমার সরকার প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য যেতে পারেন নি। এই সংখ্যার ১২ পৃষ্ঠায় 'খড়কুটো' বিভাগে খবরটি ছাপা হয়েছিল এই ভাবে-

      'কবি নজরুল ইসলাম পীড়িত অবস্থায় কৃষ্ণনগরে আছেন। তাঁর ঠিকানা- কৃষ্ণনগর, নদীয়া।'

  • লাঙল। প্রথম খণ্ড। পঞ্চম সংখ্যা। ৭ মাঘ ১৩৩২ বঙ্গাব্দ (বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারি ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দ)।
    • নজরুল ইসলামের পত্র। অসুস্থতার জন্য ময়মনসিংহ শহরে জেলা কৃষক ও শ্রমিক কনফারেন্সে নজরুল যোগদান করতে পারেন নি। তারই কৈফিয়ত হিসেবে তিনি ময়মনসিংহ জেলা কৃষক ও শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে এই পত্রটি প্রকাশ করেছিলেন। এই বিষয়ে লাঙল পত্রিকার প্রথম খণ্ড, ষষ্ঠ সংখ্যায় 'ময়মনসিংহ জেলা কৃষক  শ্রমিক সম্মিলন' শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, মণিভূষণ মুখোপাধ্যায় নজরুলের কয়েকটি পরিবেশন করেছিলেন। এছাড়া হেমন্তকুমার সরকার নজরুলের লিখিত একটি পত্র ও কবিতা পাঠ করেন। এই পত্রটিই লাঙলের এই সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।
         [ নজরুলের লিখিত পত্র]
       
  • লাঙল। প্রথম খণ্ড। ষষ্ঠ সংখ্যা। ১৪ মাঘ ১৩৩২ বঙ্গাব্দ (বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দ)
    • 'নিখিল বঙ্গীয় প্রজা সম্মেলন' শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। এই সম্মিলনের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছিল ২৩-২৪ মাঘ (৬-৭ ফেব্রুয়ারি)। স্থান ছিল কৃষ্ণনগর। যেহেতু নজরুল এই সময় কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা ছিলেন। তাই এই অধিবেশনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন নজরুল।

নিখিল বঙ্গীয় প্রজা সম্মেলন সুষ্ঠভাবে যাতে সম্পন্ন হ্য়, সে জন্য একটি সুশৃঙ্খল স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করেন। এবং এই মাসের শেষের দিকে তিনি এঁদের প্রশিক্ষণ দেন। এই বাহিনীর প্রধান অধিনায়ক ছিলেন নজরুল এবং সহ-অধিনায়ক ছিলেন প্রমোদরঞ্জন সেনগুপ্ত।

ফেব্রুয়ারি ১৯২৬ (১৭ মাঘ-১৬ ফাল্গুন ১৩৩২)
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে নজরুল কৃষ্ণনগরে অনুষ্ঠিত নিখিল বঙ্গীয় প্রজা সম্মেলনের কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। তিনি অনুষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রধান ছিলেন এবং স্বেচ্ছাসেবকদের কুচকাওয়াজের প্রশিক্ষণ দেন। উল্লেখ্য, এই অনুষ্ঠানটি হয়েছিল ৬-৭ ফেব্রুয়ারি (২৩-২৪ মাঘ ১৩৩২)। উক্ত অনুষ্ঠানে নজরুল স্বরচিত দুটি গান পরিবেশন করেন। এর ভিতরে
এর ভিতরে 'ওঠ্‌ রে চাষী, জগদ্বাসী, ধর্‌ কষে লাঙল' গানটি পূর্বেই রচিত হয়েছিল।  এই অনুষ্ঠানের জন্য রচনা নিম্নোক্ত গানটি রচনা করেছিলেন। গানটি হলো-

  • ওরে ধ্বংস-পথের যাত্রী-দল] [তথ্য
    সর্বহারা কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত এই গানটিত সাথে রচনার স্থান ও তারিখ উল্লেখ আছে- কৃষ্ণনগর ২০শে মাঘ ১৩৩২।

এই মাসের শুরুতে প্রকাশিত হয়েছিল লাঙল পত্রিকার সপ্তম সংখ্যা

  • লাঙল। প্রথম খণ্ড। সপ্তম সংখ্যা। ২১ মাঘ ১৩৩২ বঙ্গাব্দ (বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দ)
    • অশ্বিনীকুমার। কবিতা। [পৃষ্ঠা: ৩-৫] ফণি-মনসা প্রথম সংস্করণ [শ্রাবণ ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ (জুলাই ১৯২৭)] কবিতাটি 'অশ্বিনীকুমার' শিরোনামে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এর সাথে কবিতাটির রচনার স্থান ও কাল উল্লেখ আছে- 'হুগলি/মাঘ ১৩৩২'। উল্লেখ্য অশ্বিনীকুমার দত্তের নজরুল এই কবিতাটি রচনা করেছিলেন। কবিতাটি 'লাঙ্গল' পত্রিকার প্রথম খণ্ড সপ্তম সংখ্যায় (বৃহস্পতিবার, ২১শে মাঘ ১৩৩২)কবিতাটি প্রকাশিত হয়েছিল। [পৃষ্ঠা: ৩-৫]। শিরোনাম: অশ্বিনীকুমার।
    • 'নিখিল বঙ্গীয় প্রজাসম্মিলনী' শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে ৬ ও ৭ ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠান সূচী প্রকাশিত হয়েছিল অভ্যর্থনা সমিতির সম্পাদক হেমন্তকুমার সরকারের নামে।
১০ই ফেব্রুয়ারি (বুধবার, ২৭ মাঘ ১৩৩২) বাবুগঞ্জের শচীন করকে একটি চিঠি লেখেন। [পত্র]

এর একদিন পর প্রকাশিত হয়েছিল লাঙল পত্রিকার অষ্টম সংখ্যা।
  • লাঙল। প্রথম খণ্ড। অষ্টম সংখ্যা। ২৮ মাঘ ১৩৩২ বঙ্গাব্দ (বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দ)
    • এই সংখ্যায় নিখিল বঙ্গীয় প্রজা-সম্মিলনী'র দ্বিতীয় অধিবেশনের প্রথম দিনে (৬ই ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত হয়েছিল, সভাপতি ডাক্তার নরেশচন্দ্র সেনগুপ্তের অভিভাষণ। এছাড়া শ্রীকুমার চক্রবর্তীর 'চীনের নবজন্ম' রচনা প্রকাশিত হয়েছিল।
  • লাঙল। প্রথম খণ্ড। নবম সংখ্যা। ৬ ফাল্গুন ১৩৩২ বঙ্গাব্দ (বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দ)
    • শ্রমিকের গান [ওরে ধ্বংস-পথের যাত্রী-দল] [তথ্য
      সর্বহারা কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত এই কবিতার সাথে রচনার স্থান ও তারিখ উল্লেখ আছে- কৃষ্ণনগর ২০শে মাঘ ১৩৩২।
    • নিখিল বঙ্গীয় প্রজা-সম্মিলনী'র দ্বিতীয় অধিবেশনের ৬-৭ ফেব্রুয়ারি সম্পর্কিত বিবরণ প্রকাশিত হয়েছিল। [পৃষ্ঠা: ৯-১৪]। এই বিবরণীর 'উপস্থিত দাবী' অংশের ৪ সংখ্যক দাবিতে 'লাঙল' 'জাগরণ' এবং 'প্রজাবাহিণী' পত্রিকাকে  কৃষক ও শ্রমিক দলের মুখপত্ররূপে আপতত গ্রহণ করা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

      ৪. 'কবি নজরুল ইসলাম পরিচালিত -"লাঙল" পত্রিকাকে কৃষক ও শ্রমিক দলের মুখপত্ররূপে আপতত গ্রহণ করা হউক এবং শ্রীযুত হেমন্তকুমার সরকার সম্পাদিত নদীয়ার "জাগরণ" পত্রিকা ও মৌলবী রজুবুদ্দীন তরফদার প্রতিষ্ঠিত বগুড়ার "প্রজাবাহিণী" নিখিল বঙ্গীয় প্রজাসম্মিলনীর মুখপত্ররূপে গণ্য হউক।'
                  প্রস্তাবক: বিজয়কান্ত রায় চৌধুরী (নদীয়া)
                  সমর্থক: আফতাব হোসেন জোয়ার্দার (নদীয়া)

    • এই সংখ্যার 'খড়কুটো' বিভাগের নজরুলের সাথে পত্র-যোগাযোগের বিষয়ে বলা হয়-

      'কাজী নজরুল ইসলাম সাহেব কৃষ্ণনগরেই থাকেন। ব্যক্তিগতভাবে চিঠি-পত্র  তাঁকে [পোঃ কৃষ্ণনগর জিলা নদীয়া ঠিকানাতেই লিখতে হবে। "লাঙল"- অফিসের ঠিকানায় তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে পত্র লিখলে সে পত্র সময় মত তিনি পাবেন না।

  • লাঙল। প্রথম খণ্ড। দশম সংখ্যা। ১৩ ফাল্গুন ১৩৩২ বঙ্গাব্দ (বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দ)
    • এই সংখ্যায় নজরুলের কোনো প্রকাশিত হয় নি।

এ ছাড়া এই মাসে রচিত একটি কবিতার সন্ধান পাওয়া যায়। কবিতাটি হলো-

মার্চ ১৯২৬ (১৭ ফাল্গুন-১৭ চৈত্র ১৩৩২)
এই মাসে 'লাঙল' পত্রিকা পরিচালনার পাশাপাশি বিভিন্ন সম্মিলনীতে অংশগ্রহণ করেন। মার্চ মাসের ১ তারিখে (সোমবার ১৭ ফাল্গুন ১৩৩২) আন্‌ওয়ার হোসেনকে লেখা চিঠি থেকে জানা যায়- তিনি ৬ মার্চ (শনিবার ২২ ফাল্গুন ১৩৩২) দিনাজপুরে যাবেন।  [আন্‌ওয়ার হোসেনকে লেখা পত্র [পত্র]

এরই ভিতরে রচনা করেছিলেন গান ও কবিতা। এই মাসের শুরু হয়েছিলে লাঙল পত্রিকার একাদশ সংখ্যা প্রকাশের মধ্য দিয়ে।
  • লাঙল। প্রথম খণ্ড। একাদশ সংখ্যা। ২০ ফাল্গুন ১৩৩২ বঙ্গাব্দ (বৃহস্পতিবার, ৪ মার্চ ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দ)
    এই সংখ্যায় নজরুলের কোনো রচনা প্রকাশিত হয় নি।
এই পত্রিকা প্রকাশের দুদিন পর, ৬ই মার্চ (শনিবার, ২২ ফাল্গুন ১৩৩২) নজরুল দিনাজপুর প্রজা সম্মিলনীতে অংশগ্রহণের জন্য দিনাজপুর যান। উল্লেখ্য দুই দিন ব্যাপী (৯-১০ মার্চ। মঙ্গল-বুধ, ২৫-২৬ ফাল্গুন ১৩৩২)  অনুষ্ঠিত এই সম্মিলনে তিনি উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শেষে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।

১০ই মার্চ (বুধবার ২৬ ফাল্গুন ১৩৩২), অসুস্থ অবস্থায় তিনি দিনাজপুর থেকে মাদারীপুরে আয়োজিত "নিখিল বঙ্গীয় ও আসাম প্রদেশীয় মৎসজীবী সম্মিলনী'-এ যোগদানের জন্য মাদারীপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।  মাদারীপুরে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১১-১২ মার্চ (বৃ্হস্পতিবার-শুক্রবার ২৭-২৮ ফাল্গুন ১৩৩২)। এই সম্মেলনে বিভিন্ন জেলা থেকে পাঁচশ জন প্রতিনিধি যোগ দেন। সভাপতিত্ব করেন হেমন্ত কুমার সরকার । এই সম্মেলন সম্পর্কে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল- লাঙল পত্রিকার দ্বাদশ সংখ্যায়। শিরোনাম ছিল 'নিখিল বঙ্গীয় ও আসাম প্রদেশীয় মৎস্যজীবী সম্মিলনী'।
'গত ১১ই ও ১২ই মার্চ্চ তারিখে ফরিদপুর জেলার মাদারিপুর সহরে মৎস্যজীবী সম্মিলনীর তৃতীয় অধিবেশন হয়। ১০ই মার্চ্চ সন্ধ্যায় সভাপতি শ্রীযুত হেমন্তকুমার সরকার মহাশয় ষ্টীমার যোগে আসেন। তাঁর সঙ্গে কাজী নজরুল ইসলাম শ্রীযুত বসন্তকুমার মজুমদার ও শ্রীমতী হেমপ্রভা মজুমদার ছিলেন। ষ্টীমার ঘাটে অভ্যর্থনার জন্য প্রায় ৫ হাজার লোক উপস্থিত হইয়াছিলেন। ... কাজী সাহেবের গানে সকলেই মুগ্ধ হয়েছিলেন। এই গানটি ছিল-
  • গান: আমরা নীচে প'ড়ে রইব না আর  [তথ্য]
    লাঙল [৪ঠা চৈত্র, ১৩৩২ বঙ্গাব্দ। শিরোনাম─জেলেদের গান। পাদটীকায় মুদ্রিত─"মাদারীপুরে নিখিল বঙ্গীয় ও আসাম প্রদেশীয় মৎসজীবী সম্মিলনীয় তৃতীয় অধিবেশনের উদ্বোধনী সঙ্গীত।" গানটির সাথে রচনার স্থান ও কাল উল্লেখ ছিল-'কৃষ্ণনগর/২৪শে ফাল্গুন ১৩৩২ [৮ মার্চ ১৯২৬]। পরে সর্বহারা কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত প্রথম সংস্করণ [২৫ অক্টোবর ১৯২৬ (৮ কার্তিক ১৩৩৩) গানটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। শিরোনাম ' ধীবরের গান']
মাদারিপুরে অবস্থানকালে তিনি আরও একটি গান রচনা করেছিলেন। গানটি হলো-
  • কোন্ অতীতের আঁধার ভেদিয়া [তথ্য]
    ফণি-মনসা প্রথম সংস্করণ [শ্রাবণ ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ (জুলাই ১৯২৭)] কবিতাটি ' হেমপ্রভা' শিরোনামে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এর সাথে কবিতাটির রচনার স্থান ও কাল উল্লেখ আছে- ''মাদারিপুর/২৯শে ফাল্গুন ১৩৩২'। উল্লেখ্য, ২৯ শে ফাল্গুন [শনিবার, ১৩ই মার্চ ১৩৩২] মাদারিপুরে অবস্থানকালে, নজরুল কুমিল্লার রাজনৈতিক নেতা বসন্তকুমারের স্ত্রী হেমপ্রভা মজুমদারের উদ্দেশ্যে এই গানটি রচনা করেছিলেন। এই গানটিতে তিনি কবি হেমপ্রভা'-কে জ্যোতির্ময়ী মাতৃরূপে বন্দনা করেছেন। এই গানে কবির এই প্রত্যাশা রেখেছেন- হেমপ্রভা যেন চাঁদ সুলতানার মতো আবির্ভূত হয়ে স্বদেশকে মুক্ত করেন।
     
  • লাঙল। প্রথম খণ্ড। দ্বাদশ সংখ্যা। ৪ঠা চৈত্র ১৩৩২ বঙ্গাব্দ (বৃহস্পতিবার, ১৮ মার্চ ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দ)
    • এই সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল, পূর্বে রচিত একটি গান। গানটি হলো-
      আমরা নীচে প'ড়ে রইব না আর [তথ্য]

       
    • এই সংখ্যায় খড়কুটো বিভাগে, 'নজরুলের নিখিল বঙ্গীয় ও আসাম প্রদেশীয় মৎস্যজীবী সম্মিলন'-এর সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।
       
  • লাঙল। প্রথম খণ্ড। ১৩শ সংখ্যা। ১১ চৈত্র ১৩৩২ বঙ্গাব্দ (বৃহস্পতিবার, ২৫ মার্চ ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে)
    এই সংখ্যায় নজরুলের কোনো রচনা প্রকাশিত হয় নি।
এপ্রিল ১৯২৬ (১৮ চৈত্র-১৭ বৈশাখ ১৩৩৩)
এই মাসে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে। যার প্রভাব পড়েছিল তাঁর তৎকালীন রচনাতে। এর ভিতরে উল্লেখযোগ্য এবং বেদনাদায়ক ঘটনা ছিল ২রা এপ্রিলে ঘটে যাওয়া কলকাতায় হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা। এছাড়া ছিল তাঁর পরিচালনায় প্রকাশিত 'লাঙল' পত্রিকার চতুর্দশ ও পঞ্চদশ সংখ্যা প্রকাশনার ব্যস্ততা। সেই সাথে চলছিল- এই পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে নতুন ভাবে 'গণবাণী' নামে শুরু করা। এরই ভিতরে এচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে দুটি গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল এবং প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর শিশুতোষ কাব্যগ্রন্থ 'ঝিঙেফুল'।

এই সময় নজরুল এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানির এক্সক্লুসিভ কম্পাজার ছিলেন। এই মাসে কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিকে লেখা একটি চিঠি থেকে জানা যায়। চিঠির উপরে তারিখ উল্লেখ আছে ৬-৪-২৬। [সূত্র: শিক্ষক কবি কুমুদরঞ্জন ও ছাত্র কবি নজরুল/এম. আব্দুর রহমান। নজরুল ইন্সটিটউট পত্রিকা: বিশেষ সংখ্যা। পৃষ্ঠা: ১৮-১৯]

কলকাতায় দাঙ্গা
১৩৩২ বঙ্গাব্দের ১৯শে চৈত্র (শুক্রবার, ২ এপ্রিল ১৯২৬), কলকাতায় আর্যসমাজীরা রাজরাজেশ্বরী দেবীর মিছিল বের হয়। এদিন ছিল মুসলমানদের জুম্মার দিন। রাজরাজেশ্বরী পূজা বঙ্গদেশে প্রায় অচল। এই সময় স্থানীয় আর্যসমাজীদের তালিকায় উল্লেখযোগ্য পূজা না থাকায়, অপ্রচলিত এই পূজা এবং সেই সাথে মিছিল করেছিল শুধু দাঙ্গা বাধানোর জন্য। আর্যসমাজীরা পূর্বের পরিকল্পনা অনুসারে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, শুক্রবারে জুমার নামাজের সময় তাঁরা শাঁখ এবং ঢাক-ঢোল বাজিয়ে রাজরাজেশ্বরী দেবীর মিছিল নিয়ে মসজিদের পাশ দিয়ে যাবে। এই সংবাদ মুসলমানরা আগে থেকেই জানতে পেরে লাঠি-সোটা নিয়ে প্রস্তুত থাকে। বাধা আসতে পারে এই বিবেচনায় হিন্দু  ফলে রাজরাজেশ্বরী দেবীর মিছিল অগ্রসর হলে, দাঙ্গার সূত্রপাত হয়। উল্লেখ্য এই দাঙ্গা প্রথমে শুরু হয়েছিল আর্যসমাজীদের উগ্রপন্থী এবং অবাঙালি মুসলমানদের ভিতরে। পরে অন্যান্য হিন্দু এবং বাঙালি মুসলমাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

জুমার নামাজের পর, প্রাথমিকভাবে হিন্দু-মুসলমানের মধ্য বাকবিতণ্ডা হয়েছিল। কিন্তু উভয় পক্ষের উস্কানিতে তা দাঙ্গায় রূপ লাভ করেছিল পৌনে চারটার দিকে। এতে প্রায় শতাধিক লোক আহত হন এবং ৫ জন নিহত হন। এ বিষয়ে বিস্তারিত সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল ' The Bengalee ' পত্রিকার ৩ এপ্রিল ১৯২৬ সংখ্যায়। নজরুল-পরিচালিত গঙ্গাধর সম্পাদিত 'লাঙল' পত্রিকার প্রথম খণ্ড, ১৪শ সংখ্যায় (২৫ শে চৈত্র ১৩৩২, ৮ই এপ্রিল ১৯২৬) 'কলকাতায় দাঙ্গা' শিরোনামে এই সম্পর্কে মোটামুটি বিস্তারিত তথ্য জানা যায়।।।

  • লাঙল। প্রথম খণ্ড। ১৪ শ সংখ্যা। ২৫ চৈত্র ১৩৩২ বঙ্গাব্দ (বৃহস্পতিবার, ৮ এপ্রিল ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দ)
    • সর্বহারা। [পৃষ্ঠা: ৭]। সর্বহারা কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত এই কবিতার সাথে রচনার স্থান ও তারিখ উল্লেখ আছে- লাঙল অফিস, কলিকাতা ২৪শে চৈত্র ১৩৩২।

কলকাতায় এই ঘটনা ঘটার সময়, সম্ভবত ১০ই এপ্রিলের (শনিবার ২৭ চৈত্র ১৩৩২) আগেই নজরুল মাদারীপুর থেকে কৃষ্ণনগরে ফিরে আসেন। এই দিন কালিকলম পত্রিকার অন্যতম সম্পাদক শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়কে একটি চিঠি লেখেন। এই চিঠি থেকে শ্রীহট্ট যুব সম্মিলনীতে নজরুলের যোগদানের ইচ্ছার কথা জানা যায়।
  [শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়কে লেখা পত্র [পত্র]

এই চিঠি থেকে জানা যায় 'মাধবী-প্রলাপ' নামে  শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়কে একটি কবিতা পাঠিয়েছিলেন।
  • মাধবী প্রলাপ। শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের কাছে লেখা পত্র অনুসারে অনুমান করা যায়- কবিতাটি তিনি ১০ই এপ্রিলের (শনিবার ২৭ চৈত্র ১৩৩২) কিছু আগে বা ঐ দিনই রচনা করেছিলেন।  কবিতাটি 'কালি ও কলম' পত্রিকার 'জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৩' সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। উল্লেখ্য ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম দিকে কল্লোল পত্রিকা'র সাথে সম্পর্কিত কল্লোল সাহিত্য গোষ্ঠীর দীনেশরঞ্জন দাশ ও মুরলীধর বসুর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। এই সূত্রে অনেকেই কল্লোল গোষ্ঠী থেকে বেরিয়ে এসে 'কালিকলম' নূতন পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেন। পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের ‌এপ্রিল মাসে। প্রথম বছরে সম্পাদক ছিলেন মুরলীধর বসু, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় এবং প্রেমেন্দ্র মিত্র। পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল ১৩৩০ বঙ্গাব্দের ১লা বৈশাখে (এপ্রিল ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দ)।

    মাধবী প্রলাপ। কবিতাটি পরে সিন্ধু-হিন্দোল কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
সম্ভবত ১৩ এপ্রিলের পরে কংগ্রেস দলের হরেন্দ্রকুমার চৌধুরীর আমন্ত্রণে নজরুল বরাক উপত্যাকা, লামডিং, গোহাটি, বদরপুর ও চাঁদপুরে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে যোগদান করেছিলেন। এই যাত্রার প্রাক্কালে কৃষ্ণনগরে তিনি একটি কবিতা রচনা করেন। কবিতাটি হলো-

প্রবর্তকের ঘুর-চাকায় ফণি-মনসা প্রথম সংস্করণ [শ্রাবণ ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ (জুলাই ১৯২৭)] কবিতাটি 'প্রবর্তকের ঘুর-চাকায়' শিরোনামে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। কবিতাটির সাথে রচনার স্থান ও কাল উল্লেখ আছে- 'কৃষ্ণনগর, ৩০শে চৈত্র ১৩৩২' (মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল ১৯২৬) 

সিলেটে অবস্থানকালে জিন্দাবাজারের দক্ষিণ সীমায় কংগ্রেস আয়োজিত সভায় অতিথি হিসেবে যোগদান করেন। এই সভায় তিনি কংগ্রসের স্বপক্ষে ভাষণ দেন। এই সভার কয়েকদিন পর তিনি বসন্ত রোগে আক্রান্ত হন এবং রমণীমোহনের দাসের বাড়িতে অবস্থান করেন। ফলে এই সময় তিনি এখানকার অন্য কোনো সভা-সমিতির অনুষ্ঠানে আর যোগ দিতে পারেন নি।

অসুস্থ নজরুলকে বিশেষ সেবা যত্নের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন চৌহাট্টার সুধীরেন্দ্র নারায়ণ সিংহ মজুমদার ও বলাকা পত্রিকার সম্পাদক কালীপ্রসন্ন দাশ। এই সময় নজরুল ভক্ত দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ ও দেওয়ান একলিমুর রাজা নজরুলের সাথে সাক্ষাৎ। উল্লেখ্য পরবর্তী সময়ে দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ অতীত জীবনের স্মৃতি গ্রন্থে নজরুল সম্পরজকে মূল্যবান তথ্য লিপিবদ্ধ করেছিলেন।

এই অসুস্থতার মধ্যে তিনি সুধীরেন্দ্র নারায়ণ সিংহ মজুমদারের ভ্রাতুষ্পুত্রী লীলাবতী সিংহ মজুমদারকে তিনি গানের তালিম দেন। সম্ভবত ২৬শে এপ্রিল (১৩ বৈশাখ ১৩৩৩) পর্যন্ত তিনি সিলেটে ছিলেন। নজরুল কিছুটা সুস্থ হলে তাঁকে সিলেট রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে তুলে দিয়েছিলেন উবেদউল্লাহ।

এর ভিতরে প্রকাশিত হয়েছিল নবম  ও প্রথম কিশোর কাব্য 'ঝিঙেফুল'।

  • ঝিঙেফুল:
    বেঙ্গল লাইব্রেরির তালিকা অনুসারে, ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে প্রকাশিত হয়, নজরুলের রচিত শিশুতোষ কাব্যগ্রন্থ। প্রকাশক: গোপাল দাস মজুমদার. ডি.এম, লাইব্রেরি। ৬১ কর্নওয়ালিশ স্ট্রিট কলকাতা। পৃষ্ঠা ২+৪। মূল্য ছিল বার আনা। এই গ্রন্থে কোনো গান সংকলিত হয় নি।

গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছিল- বীর বাদলকে'। এই গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত কবিতাগুলো হলো-

এই মাসেই লাঙল পত্রিকার শেষ এবং ১৫শ সংখ্যা।

  • লাঙল। প্রথম খণ্ড। ১৫ শ সংখ্যা। ২ বৈশাখ ১৩৩৩ বঙ্গাব্দ (বৃহস্পতিবার, ১৫ এপ্রিল ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে)
    এই সংখ্যায় নজরুলের কোনো রচনা প্রকাশিত হয় নি।
২৭শে এপ্রিল (মঙ্গল ১৪ বৈশাখ ১৩৩৩) সিলেট থেকে রেলযোগে কৃষ্ণনগরে ফিরে আসেন।

এই মাসে রেকর্ড নজরুলের রচিত দুটি গান প্রকাশিত হয়েছিল। গান দুটি হলো-

১-২৪মে ১৯২৬ (১৮ বৈশাখ- ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৩)
১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের ২২ ও ২৩ মে (৭ ও ৮ জ্যৈষ্ঠ) তারিখে নদীয়ার কৃষ্ণনগরে অনুষ্ঠিত হয় বঙ্গীয় প্রদেশিক কংগ্রেসর বার্ষিক সম্মেলন। এই সম্মেলনের সভাপতি ছিলেন যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত। অনুষ্ঠানটি হয়েছেল কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির নাটমন্দিরে। নজরুল এই সম্মেলন সুসম্পন্ন করার জন্য নজরুল সম্পৃক্ত হন। এই অনুষ্ঠানের ১৯শে মে (বুধবার ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৩) এই অনুষ্ঠান তিনি দুটি নতুন গান পরিবেশন করেন। গান দুটি হলো-
 

  • আমরা শক্তি আমরা বল [তথ্য]
    সর্বহারা কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত 'ছাত্রদলের গান' শিরোনামের এই গানটির সাথে রচনার স্থান ও তারিখ উল্লেখ আছে- 'কৃষ্ণনগর ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৩'। উল্লেখ্য, মে মাসে নদীয়ার কৃষ্ণনগরে 'ছাত্র ও যুব-সম্মলেনের' অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী সঙ্গীত হিসেবে কবি স্বকণ্ঠে এই গানটি পরিবেশন করেন। ধারণা করা হয়, 'ছাত্র ও যুব-সম্মলেনের' জন্য কবি এই গানটি রচনা করেছিলেন।
  • দুর্গম গিরি কান্তার মরু [তথ্য]
    সর্বহারা কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত 'কাণ্ডারী হুঁশিয়ারী ' শিরোনামের এই গানটির সাথে রচনার স্থান ও তারিখ উল্লেখ আছে- 'কৃষ্ণনগর ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৩' [বৃহস্পতিবার, ২০ মে ১৯২৬ ]। উল্লেখ্য, কলকাতায় সংঘটিত হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গায় শঙ্কিত হয়ে এবং এর কুফল নিয়ে কাণ্ডারী হুঁসিয়ারী শিরোনামে এই গানটি রচনা করেছিলেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়- মুজফ্‌ফর আহমেদের রচিত 'কাজী নজরুল প্রসঙ্গ', প্রাণতোষ চট্টোপাধ্যায়ের 'কাজী নজরুল' সৌমেন্দ্র ঠাকুরের 'যাত্রী' গ্রন্থে।

    উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নজরুল 'কাণ্ডারী হুঁশিয়ার' গানটি পরিবেশন করেছিলেন।

    গানটি ভারতী পত্রিকার '৫০ বর্ষ ২য় সংখ্যা'য় (জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৩ বঙ্গাব্দ) [পৃষ্ঠা: ৩৬৬] প্রকাশিত হয়েছিল। এই পত্রিকার ৫ম বর্ষ প্রথমার্ধ ৪র্থ সংখ্যা (জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৩ বঙ্গাব্দ) কাণ্ডারী হুঁশিয়ার' শিরোনামে পুনরায় প্রকাশিত হয়েছিল। গানটির  পাদটীকায় উল্লেখ ছিল  'কৃষ্ণনগর প্রাদেশিক সম্মিলনীতে গীত।' [পৃষ্ঠা ৪৭৫- ৪৭৬]। এরপর কালি ও কলম পত্রিকা'র 'আশ্বিন ১৩৩৩ বঙ্গাব্দ' সংখ্যায় নজরুল ইসলাম-কৃত স্বরলিপি-সহ গানটি প্রকাশিত হয়েছিল।

    উল্লেখ্য, নজরুলের মূল রচনায় অতিরিক্ত একটি স্তবক রয়েছে। এই স্তবকটি হলো-
        কাণ্ডারী ! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর
        বাঙালীর খুনে লাল হ'ল যেথা ক্লাইবের খঞ্জর।*
        ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায় ভারতের দিবাকর।
        উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়ে পুনর্বার।

    এই স্তবকটি নজরুল রচনাবলী ও সুর-মুকুর, (ডি. এম. লাইব্রেরী, জ্যৈষ্ঠ ১৪০৬। মে ১৯৯৯)-এ আছে। কিন্তু নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ, (নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২) -এর পাঠে এই স্তবকটি বাদ দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে।

তাঁর ২৭তম জন্মদিন পালিত হয়েছিল কৃষ্ণনগরে।
সূত্র:
  • অন্তরঙ্গ আলোকে নজরুল ও প্রমীলা। আসাদুল হক। শোভা প্রকাশ, ঢাকা। ২০০৯।
  • আত্মস্মৃতি (প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় খণ্ড একত্রে)। সজনীকান্ত দাস। সুবর্ণরেখা। ৭৩ মহাত্মা গান্ধি রোড। কলিকাতা ৯। ৭ অগ্রহায়ণ ১৩৬৩।
  • কাজী নজরুল। প্রাণতোষ ভট্টাচার্য। ন্যাশনাল বুক এজেন্সী প্রাইভেট লিমিটেড। কলকাতা-১২। ১৩৭৩ বঙ্গাব্দ
  • কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতিকথা। মুজফ্‌ফর আহমদ। ন্যাশনাল বুক এজেন্সি প্রাইভেট লিমিটেড। ১২ বঙ্কিম চ্যাটার্জী স্ট্রীট, কলিকাতা-১২। প্রথম সংস্করণ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫।
  • নজরুল-জীবনী। রফিকুল ইসলাম। নজরুল ইন্সটিটউট, ঢাকা। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ।
  • নজরুল তারিখ অভিধান। মাহবুবুল হক। বাংলা একাডেমী, ঢাকা। জুন ২০১‌০ খ্রিষ্টাব্দ।
  • নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। প্রথম-দ্বাদশ খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ঢাকা]
  • নজরুল সঙ্গীত নির্দেশিকা। ব্রহ্মমোহন ঠাকুর [কবি নজরুল ইনস্টিটিউট। আষাঢ় ১৪২৫/জুন ২০১৮]
  • নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ (নজরুল ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২)।
  • বিদ্রোহী-রণক্লান্ত, নজরুল জীবনী। গোলাম মুরশিদ। প্রথমা, ঢাকা। ফেব্রুয়ারি ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ।