চিত্তনামা
কাজী নজরুল ইসলাম


                অকাল-সন্ধ্যা
                [জয়জয়ন্তী কীর্তন]

খোলো মা        দুয়ার খোলো
প্রভাতেই         সন্ধ্যা হল
দুপুরেই           ডুবল দিবাকর গো।
সমরে             শয়ান ওই
সুত তোর         বিশ্বজয়ী
কাঁদনের          উঠছে তুফান ঝড় গো॥
সবারে            বিলিয়ে সুধা,
সে নিল           মৃত্যু-ক্ষুধা,
কুসুম ফেলে     নিল খঞ্জর গো।
তাহারই          অস্থি চিরে
দেবতা            বজ্র গড়ে
নাশে ওই        অসুর অসুন্দর গো।
ওই মা            যায় সে হেসে।
দেবতার          উপরে সে,
ধরা নয়,          স্বর্গ তাহার ঘর গো॥
যাও বীর          যাও গো চলে
চরণে              মরণ দলে
করুক প্রণাম     বিশ্ব-চরাচর গো।
তোমার ওই      চিত্ত জ্বেলে
ভাঙ্গালে           ঘুম ভাঙ্গালে
নিজে হায়         নিবলে চিতার পর গো।
বেদনার            শ্মশান-দহে
পুড়ালে             আপন দেহে,
হেথা কি            নাচবে না শংকর গো॥

আরিয়াদহ
৬ আষাঢ়, ১৩৩২

গানটির রচনার স্থান ও কাল  'হুগলি/৩রা আষাঢ় ১৩৩২'। চিত্তরঞ্জন দাশের মৃত্য সংবাদ শুনে নজরুল গানটি রচনা করেছিলেন। এই সম্পর্কে প্রাণতোষ চট্টোপাধ্যায় তাঁর 'কাজী নজরুল' গ্রন্থে লিখেছেন- [পৃষ্ঠা: ৬৯]

'দেশবন্ধু যখন মারা যান তখন কবি এই বাড়িতেই ছিলেন। দেশবন্ধুর মৃত্যু সংবাদ শুনে কৰি কয়েক মুহূর্ত নিশ্চল থেকে দশ মিনিটের মধ্যে একটা 'অর্ঘ্য' বলে গান লিখে সুর দিয়ে বিদ্যামন্দিরে এলেন-
    গানটি এই-
            "হায় চির ভোলা; হিমালয় হতে
                    অমৃত আনিতে গিয়া..."

... এই গানটি লেখেন ১৩৩২ সালের ৩রা আষাঢ়। দেশবন্ধুর শবাধারে রচনাটি মালার সঙ্গে অর্ঘ্যস্বরূপ জুড়ে দেওয়া হয়েছিল নৈহাটি স্টেশনে।'