হরেন্দ্রনাথ দত্ত
সঙ্গীতশিল্পী।

হরেন্দ্রনাথের শৈশবকাল সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। তাঁর পিতা মহেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন বিহার ও উড়িষ্যা প্রদেশের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার। এঁদের আদি নিবাস ছিল- পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার রামকৃষ্ণপুর।

শৈশব থেকে তাঁর সঙ্গীতের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ লক্ষ্য করে, মহেন্দ্রনাথ  তাঁর জন্য সঙ্গীত শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। সেই সময়ে রাঁচীর মোরাবাদী পাহাড়ের কাছে মহেন্দ্রবাবু দুটি বাড়ি করেন।। এর অদুরেই ছিল জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'শান্তিধাম' নিবাস । তাই দত্ত পরিবারের সাথে শান্তিধামের যোগাযোগ ও ঘনিষ্টতা তৈরী হয়েছিলো বেশ আগে থেকেই। এই সূত্রে তাঁর ঠাকুর বাড়ির গানের সাথে পরিচয় ঘটেছিল।

জ্যোতিরিন্দ্রনাথের এই শান্তিধামে ঠাকুর বাড়িতে আসতেন। এই বাড়িতে হরেন্দ্রনাথ এঁদের গান শুনেছেন এবং শিখেছেন। এই সময় তিনি ইন্দিরাদেবী চৌধুরাণী'-সহ অনেকের কাছেই ব্রহ্মসঙ্গীত, জ্যোতিরিন্দ্রনাথের গান এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত শেখার সৌভাগ্য হয়েছিল।  এই সুবাদে রাচীতে অনুষ্ঠিত জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের কয়েকটি নাটকেও তিনি অংশ নেন।

১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে রাচি থেকে কলকাতায় আসেন এবং চিতপুরস্থ ওরিয়েন্টাল সেমিনারী স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি হন।

১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় এনি বেসান্তের সভানেত্রীত্বে কলকাতায় কংগ্রেসের কংগ্রেসর ৩৩তম অধিবেশনে অমলা দাশের খালি গলায় 'বন্দে মাতরম' গান শুনে হরেন্দ্রনাথ উজ্জ্বীবিত হন। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশন বসে। ৪ থেকে ৯ সেপ্টেম্বর কলকাতায় এই অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এই অধিবেশনের সভাপতিত্ব করেছিলেন লালা লাজপৎ রায়। এই অধিবেশনে অংশগ্রহণ করেছিলেন মহাত্মা গান্ধীজহরলাল নেহেরু। এই সভায় ইন্দিরাদেবী চৌধুরাণী' পরিচালনায় সম্মিলিত যে গান পরিবেশিত হয়েছিল, তাতে হরেন্দ্রনাথ যোগ দিয়েছিলেন।

১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে অসহযোগ আন্দোলন বাংলার স্বদেশীরা ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করে। এই সময় হরেন্দ্রনাথ গান্ধীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে খদ্দর পরা শুরু করেন এবং অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। এই সময় তিনি নিজের হাতে চরকাও কাটেন।

১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে
এইচএমভি তাঁর গান রেকর্ড করার জন্য আমন্ত্রন জানান। ওই বছরের শারদীয় পুজায়- তাঁর প্রথম রেকর্ডের গান ' বন্দেমাতরম্‌' এবং রবীন্দ্রনাথের 'দেশ দেশ নন্দিত করি‌'‌ প্রকাশিত হয়। গানটি রেকর্ড নম্বর ছিল P 5182। এই রেকর্ড প্রকাশ উপলক্ষে এইচএমভির প্রচার পুস্তিকায় লেখা হয়েছিল-
'কি শুভ ক্ষণে বঙ্কিমবাবু 'বন্দেমাতরম' গানখানি রচনা করিয়াছিলেন। আজ তাহার রচিত এই গান সমগ্র ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকার করিয়াছে। এইজন্য আমরা বহু যত্নে কলিকাতা ইউনিভারসিটি ইন্সটিটিউটের সহকারী সেক্রেটারী শ্রীযুক্ত হরেন্দ্রনাথ দত্ত( বি. এ.) মহাশয়ের দ্বারা এই গানগুলি রেকর্ড করাইয়া বাহির করিলাম। অপরদিকে কবিন্দ্র রবীন্দ্রনাথের 'দেশ দেশ নন্দিত করি  -এই  অমর গানখানি উক্ত হরেন্দ্রবাবু ভক্তির সহিত গাহিয়াছেন। এই রেকর্ডখানি প্রত্যেক ঘরে থাকিয়া লোকের মনে দেশের প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা জাগরূপ রাখিবে।"

১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে নজরুলের গানের প্রথম গ্রামোফোন রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। গানটি হলো-‌'জাতের নামে বজ্জাতি'। রেকর্ড নম্বর P 6945।  এই রেকর্ডের অপর পৃষ্ঠায় ছিল- রজনীকান্ত সেনের 'তাই ভালো মোদের মায়ের ঘরের শুধু ভাত..।

হরেন্দ্রনাথের গাওয়া রেকর্ডের তালিকা

রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: