ছায়ানট
কাজী নজরুল ইসলাম
অমর-কানন
অমর কানন
মোদের অমর-কানন!
বন কে বলে রে ভাই, আমাদের তপোবন,
আমাদের তপোবন।
এর দক্ষিণে ‘শালী’ নদী কুলুকুলু বয়,
তার কূলে কূলে শালবীথি ফুলে ফুল-ময়,
হেথা ভেসে আসে জলে-ভেজা দখিনা মলয়,
হেথা মহুয়ার মউ খেয়ে মন উচাটন॥
দূর প্রান্তর-ঘেরা আমাদের বাস,
দুধ-হাসি হাসে হেথা কচি দুব-ঘাস,
উপরে মায়ের মতো চাহিয়া আকাশ,
বেণু-বাজা মাঠে হেথা চরে ধেনুগণ॥
মোরা নিজ হাতে মাটি কাটি, নিজে ধরি হাল,
সদা খুশিভরা বুক হেথা হাসিভরা গাল,
মোরা বাতাস করি গো ভেঙে হরিতকি-ডাল,
হেথা শাখায় শাখায় শাখী, গানের মাতন॥
প্রহরী মোদের ভাই ‘পুরবি’ পাহাড়,
‘শুশুনিয়া’ আগুলিয়া পশ্চিমি দ্বার,
ওড়ে উত্তরে উত্তরি কাননবিথার,
দূরে ক্ষণে ক্ষণে হাতছানি দেয় তালী-বন॥
হেথা খেত-ভরা ধান নিয়ে আসে অঘ্রান,
হেথা প্রাণে ফোটে ফুল, হেথা ফুলে ফোটে প্রাণ,
ওরে রাখাল সাজিয়া হেথা আসে ভগবান,
মোরা নারায়ণ-সাথে খেলা খেলি অনুখন॥
মোরা বটের ছায়ায় বসি করি গীতাপাঠ,
আমাদের পাঠশালা চাষি-ভরা মাঠ,
গাঁয়ে গাঁয়ে আমাদের মায়েদের হাট,
ঘরে ঘরে ভাইবোন বন্ধুস্বজন।
গঙ্গাজলঘাটি,
বাঁকুড়া আষাঢ় ১৩৩২
'বাঁকুড়া জেলার গঙ্গাঘাটী জাতীয় বিদ্যালয়টা নদী পাহাড় বন ও মাঠঘেরা একটী প্রান্তরে। এর নাম অমর কানন। এই বিদ্যালয় অমর নামক একটী তরুণের তপস্যার ফল। সে আজ স্বর্গে। এই গানটি বিদ্যালয়ের ছেলেদের জন্য লিখিত।উল্লেখ্য, ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই জুলাই (সোমবার ২৯ আষাঢ় ১৩৩২) নজরুল 'বাঁকুড়া যুব ও ছাত্র সমাজ' এবং 'গঙ্গাজল ঘাটী জাতীয় বিদ্যালয়' থেকে আমন্ত্রণ পেয়ে বাঁকুড়া সফরে যান। স্থানীয় অমর নামক এক স্বেচ্ছাসেবকের অক্লান্ত পরিশ্রমে এই স্কুলটি গড়ে উঠেছিল। স্কুল প্রতিষ্ঠার পর তিনি বিদ্যালয়ের আশ্রমেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। প্রতিষ্ঠাতা অমরের নামানুযায়ী বিদ্যালয়টির নাম হয় 'অমর কানন'। বীর অমরের কীর্তিকলাপ শুনে কবি খুবই অনুপ্রাণিত এবং অভিভূত হয়ে পড়েন। এই বিদ্যালয়ের উদ্বোধন-সঙ্গীত হিসেবে নজরুল রচনা করেছিলেন 'অমর কানন মোদের অমর কানন' গানটি। তিনি এই অনুষ্ঠানে গানটি নিজেই গেয়েছিল।