ঝিঙেফুল 
					 
 
কাজী নজরুল ইসলাম
			
				
					               
					খোকার বুদ্ধি
	
										চুন করে মুখ প্রাচীর পরে বসে শ্রীযুত খোকা,
					
					কেননা তার মা বলেছেন সে এক নিরেট বোকা।
					ডানপিটে সে খোকা এখন মস্ত একটা বীর,
					হুংকারে তাঁর হাঁস মুরগির ছানার চক্ষুস্থির!
					সাত লাঠিতে ফড়িং মারেন এমনই পালোয়ান!
					দাঁত দিয়ে সে ছিঁড়লে সেদিন আস্ত আলোয়ান!
					ন্যাংটা-পুঁটো দিগম্বরের দলে তিনিই রাজা,
					তাঁরে কিনা বোকা বলা? কী এর উচিত সাজা?
					ভাবতে ভাবতে খোকার হঠাৎ চিন্তা গেল থেমে,
					দে দৌড় চোঁ-চাঁ আঁধমহলে পাঁচিল হতে নেমে!
					বুকের ভেতর ছপাই নপাই ধুকপুকুনির চোটে,
					বাইরে কিন্তু চতুর খোকা ঘাবড়ালেন না মোটে।
					হাঁপিয়ে এসে মায়ের কাছে বললে, 'ওগো মা!
					
					আমি নাকি বোক-চন্দর? বুদ্ধি দেখে যা!
					ওই না একটা মটকু বানর দিব্যি মাচায় বসে
					লাউ খাচ্ছে? কেউ দেখেনি, দেখি আমিই তো সে।
					দিদিদেরও চোখ ছিল তো, কেউ কি দেখেছেন?
					তবে আমায় বোকা কও যে! এ্যাঁ-এ্যাঁ, হাস ক্যান্?
					কী কও? 'একী বুদ্ধি হল?' দেখবে তবে? হাঁ,
					
					বুদ্ধি আমার ... ভোলা! তু-উ-উ! লৌ-হা হা-হা-হা!'
					বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকার 'কার্তিক ১৩২৮' সংখ্যায় 
					প্রকাশিত হয়েছিল।