বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার হে
রাগ: বৃহন্নট-কেদারা, তাল: একতাল
দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার হে!
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে, যাত্রীরা হুঁশিয়ার॥
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ —
ছিঁড়িয়াছে পাল কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মত।
কে আছো জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যত,
এ তুফান ভারি, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার॥
তিমির রাত্রি, মাতৃ-মন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান!
যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান।
ফেনাইয়া ওঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান,
ইহাদের পথে নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার॥
অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরণ,
কাণ্ডারি, আজি দেখিব তোমার মাতৃ-মুক্তি-পণ।
'হিন্দু না ওরা মুসলিম' — ওই জিজ্ঞাসে কোন্ জন,
কাণ্ডারি, বল, ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা'র॥
গিরি-সঙ্কট, ভীরু যাত্রীরা, গুরু গরজায় বাজ —
পশ্চাৎ পথ যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ।
কাণ্ডারি, তুমি ভুলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ মাঝ?
করে হানাহানি, তবু চল টানি' — নিয়েছ যে মহাভার॥
ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান —
আসি' অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন্ বলিদান !
আজি পরীক্ষা জাতির অথবা জাতের করিবে ত্রাণ,
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, কাণ্ডারি হুঁশিয়ার॥
নজরুল স্বরলিপি, পঞ্চদশ খণ্ড, (হরফ প্রকাশনী, পৌষ
১৪১৩। জানুয়ারি ২০০৭) খণ্ডে গানটির সুরান্তর পাওয়া যায়। নজরুলের মূল রচনায়
অতিরিক্ত একটি স্তবক রয়েছে। এই স্তবকটি হলো-
কাণ্ডারী ! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর
বাঙালীর খুনে লাল হ'ল যেথা ক্লাইবের খঞ্জর।*
ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায় ভারতের দিবাকর।
উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়ে পুনর্বার।
- রচনাকাল ও স্থান: ২ এপ্রিল ১৯২৬ থেকে ১৮ই মে ১৯২৬ পর্যন্ত কলকাতায় যে দাঙ্গা হয়, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এবং সতর্কবার্তা-স্বরূপ 'কাণ্ডারী হুঁসিয়ার' শিরোনামে কবি এই গান রচনা করেছিলেন। ১৩৩৩ বঙ্গাব্দে গানটি নজরুলের প্রকাশিত 'সর্বহারা' নামক কাব্যগ্রন্থে স্থান পেয়েছিল। গানটির নিচে রচনার সময় এবং স্থান উল্লেখ আছে- কৃষ্ণনগর, ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৩
(বৃহস্পতিবার ২০ মে ১৯২৬)। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ২৬ বৎসর
১১ মাস।
- গ্রন্থ
- সর্বহারা
- প্রথম সংস্করণ
[কার্তিক ১৩৩৩। শিরোনাম '
কাণ্ডারী হুঁশিয়ারী']
- নজরুল-রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ফাল্গুন ১৪১৩। ফেব্রুয়ারি ২০০৭। সর্বহারা। শিরোনাম 'কাণ্ডারী হুঁশিয়ার'। পৃষ্ঠা: ১২২-১২৩।]
-
নজরুল গীতিকা
- প্রথম সংস্করণ [ভাদ্র ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ ১৩৩১ বঙ্গাব্দ। ২ সেপ্টেম্বর ১৯৩০। জাতীয় সঙ্গীত ১। গান ১৭।
বৃহন্নট-কেদারা-একতালা। পৃষ্ঠা ১৭-১৮]
- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। তৃতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী,
ঢাকা ফাল্গুন ১৪১৩/মার্চ ২০০৭] জাতীয় সঙ্গীত ১। গান ১৭। বৃহন্নট-কেদারা-একতালা। পৃষ্ঠা: ১৮০-১৮১]
- পরিবেশনা:
- ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের
২৭শে জুন
(রবিবার ১৪ আষাঢ় ১৩৩৩) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম ছাত্রাবাসে মুসলিম সাহিত্য-সমাজের চতুর্থ
বর্ষের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে নজরুল দৃঢ়তার সাথে হিন্দু-মুসলমানের ঐক্য
রক্ষার কথা বলেন এবং ''কাণ্ডারী হুঁশিয়ারী'
'ছাত্রদলের গান' এবং '
কৃষাণের গান' পরিবেশন
করেন।
-
পত্রিকা
- ভারতী [৫০ বর্ষ ২য় সংখ্যা, জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৩ বঙ্গাব্দ। সাময়িক প্রসঙ্গ, কাজী নজরুল ইসলাম। কাণ্ডারী হুসিয়ার। পৃষ্ঠা: ৩৬৬]
[নমুনা]
- বঙ্গবাণী পত্রিকা। ৫ম বর্ষ প্রথমার্ধ ৪র্থ সংখ্যা। জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৩ বঙ্গাব্দ। শিরোনাম: কাণ্ডারী হুঁশিয়ার'। পাদটীকা: কৃষ্ণনগর প্রাদেশিক সম্মিলনীতে গীত। পৃষ্ঠা ৪৭৫- ৪৭৬।
- কালি-কলম পত্রিকা। আশ্বিন ১৩৩৩ বঙ্গাব্দ। নজরুল ইসলাম-কৃত স্বরলিপি-সহ প্রকাশিত হয়েছিল।
- রেকর্ড: এইচএমভি [এপ্রিল ১৯৪৭ (চৈত্র ১৪৫৩-বৈশাখ ৩৫৪)। এন ২৭৬৬৬। শিল্পী: সত্য চৌধুরী। সুর: নিতাই ঘটক]
- সুরকার:
- কাজী নজরুল ইসলাম। [সুর-মুকুর। আশ্বিন ১৩৪১ বঙ্গাব্দ। ডি.এম. লাইব্রেরী।
- নিতাই ঘটক। এইচ.এম.ভি. রেকর্ড।
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
- নলিনীকান্ত সরকার। [সুর-মুকুর, (ডি. এম. লাইব্রেরী, জ্যৈষ্ঠ ১৪০৬। মে ১৯৯৯) -এর ১ম গান। পৃষ্ঠা: ৫-৮]।
[নমুনা]
- শ্যামাপ্রসাদ
মুখোপাধ্যায়। [নজরুল স্বরলিপি,
পঞ্চদশ খণ্ড, (হরফ প্রকাশনী, পৌষ ১৪১৩। জানুয়ারি ২০০৭) -এর
৫৮ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৯৬-৯৯]।
- রশিদুন নবী। [নজরুল সুরলিপি,
দশম খণ্ড, (নজরুল একাডেমী, ডিসেম্বর ১৯৮৬) -এর ১৮
সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৬৫-৭০।
- ড. রশিদুন্ নবী।
নজরুল -সংগীত স্বরলিপি (৩৯তম খণ্ড)। নজরুল
ইন্সটিটিউট। ঢাকা। জ্যৈষ্ঠ ১৪২৩/জুন ২০১৬। গান সংখ্যা ১৪। পৃষ্ঠা: ৬৯-৭৪
[নমুনা]
- পর্যায়: উদ্দীপনামূলক
- সুরাঙ্গ: রাগাশ্রয়ী
- রাগ:
বৃহন্নট-কেদারা।
- তাল:
একতাল।
- গ্রহস্বর:
- নর্সা।
[সুর-মুকুর,
(ডি. এম. লাইব্রেরী, জ্যৈষ্ঠ ১৪০৬।
মে ১৯৯৯) -এর
১ম গান। পৃষ্ঠা: ৫-৮]।
- মা। [নজরুল
স্বরলিপি, পঞ্চদশ খণ্ড, (হরফ প্রকাশনী, পৌষ ১৪১৩।
জানুয়ারি ২০০৭) -এর ৫৮ সংখ্যক গান।
পৃষ্ঠা: ৯৬-৯৯]।
- সা। [নজরুল সুরলিপি, দশম খণ্ড,
(নজরুল একাডেমী, ডিসেম্বর ১৯৮৬) -এর ১৮ সংখ্যক গান।
পৃষ্ঠা: ৬৫-৭০]।