সাম্যবাদী
কাজী নজরুল ইসলাম
সাম্য
গাহি সাম্যের গান –
বুকে বুকে হেথা তাজা সুখ ফোটে, মুখে মুখে তাজা-প্রাণ!
বন্ধু, এখানে রাজা-প্রজা নাই, নাই দরিদ্র-ধনী,
হেথা পায় নাকো কেহ খুদ-ঘাঁটা, কেহ দুধ-সর-ননী।
অশ্ব-চরণে মোটর-চাকায় প্রণমে না হেথা কেহ,
ঘৃণা জাগে নাকো সাদাদের মনে দেখে হেথা কালা-দেহ।
সাম্যবাদী-স্থান
নাইকো এখানে কালা ও ধলার আলাদা গোরস্থান।
নাইকো এখানে কালা ও ধলার আলাদা গির্জা-ঘর,
নাইকো পাইক-বরকন্দাজ নাই পুলিশের ডর।
এই সে স্বর্গ, এই সে বেহেশ্ত, এখানে বিভেদ নাই,
যত হাতাহাতি হাতে হাত রেখে মিলিয়াছে ভাই ভাই!
নেইকো এখানে ধর্মের ভেদ শাস্ত্রের কোলাহল,
পাদরি-পুরুত-মোল্লা-ভিক্ষু এক গ্লাসে খায় জল।
হেথা স্রষ্টার ভজনা-আলয় এই দেহ এই মন,
হেথা মানুষের বেদনায় তাঁর দুখের সিংহাসন!
সাড়া দেন তিনি এখানে তাঁহারে যে-নামে যে-কেহ ডাকে,
যেমন ডাকিয়া সাড়া পায় শিশু যে-নামে ডাকে সে মাকে!
পায়জামা প্যান্ট ধুতি নিয়া হেথা হয় নাকো ঘুষাঘুষি,
ধুলায় মলিন দুখের পোশাকে এখানে সকলে খুশী।
লাঙল। লাঙল। প্রথম খণ্ড। বিশেষ সংখ্যা। ১ পৌষ ১৩৩২ বঙ্গাব্দ (বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে)।