ফণিমনসা
ফণি-মনসা
প্রথম সংস্করণ [শ্রাবণ ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ (জুলাই ১৯২৭)] কবিতাটি 'বাংলায় মহাত্মা'
শিরোনামে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এর সাথে কবিতাটির রচনার স্থান ও কাল উল্লেখ আছে-
'হুগলি/জ্যৈষ্ঠ ১৩৩১'। বিজলী পত্রিকার ৫ম বর্ষ ২৬ সংখ্যা (জ্যৈষ্ঠ
১৩৩২) গানটি প্রকাশিত হয়েছিল। তবে বিভিন্ন তথ্যানুসন্ধানের সূত্রে জানা যায় গানটির
প্রকৃত রচনাকাল 'জ্যৈষ্ঠ ১৩৩২'। সম্ভবত ১৩৩২ বঙ্গাব্দ এর
পরিবর্তে এই তারিখটি ভুলক্রমে ১৩৩১ লেখা হয়েছে। তবে ভুল তারিখটির সমর্থনে
দু'একটি সূত্রও পাওয়া যায়। যেমন-
কাজী নজরুল ইসলাম
বাংলায় মহাত্মা
(গান)
আজ
না-চাওয়া পথ দিয়ে কে এলে,
ঐ
কংস-কারার দ্বার ঠেলে।
আজ
শব-শ্মশানে শিব নাচে ওই ফুল-ফুটানো পা ফেলে॥
আজ
প্রেম-দ্বারকায় ডেকেছে বান
মরুভূমে জাগল তুফান,
দিগ্বিদিকে উপচে পড়ে প্রাণ রে!
তুমি
জীবন-দুলাল সব লালে-লাল করলে প্রাণের রং ঢেলে॥
ঐ
শ্রাবন্তি-ঢল আসল নেমে
আজ ভারতের জেরুজালেমে
মুক্তি-পাগল এই প্রেমিকের প্রেমে রে!
ওরে
আজ নদীয়ার শ্যাম নিকুঞ্জে রক্ষ-অরি রাম খেলে॥
ঐ
চরকা-চাকায় ঘর্ঘর-ঘর
শুনি কাহার আসার খবর,
ঢেউ-দোলাতে দোলে সপ্ত সাগর রে!
ঐ
পথের ধুলা ডেকেছে আজ সপ্ত কোটি প্রাণ মেলে।
আজ
জাত-বিজাতের বিভেদ ঘুচি,
এক হল ভাই বামুন-মুচি,
প্রেম-গঙ্গায় সবাই হল শুচি রে!
আয়
এই যমুনায় ঝাঁপ দিবি কে বন্দেমাতরম বলে-
ওরে
সব মায়ায় আগুন জ্বেলে॥
হুগলি
জ্যৈষ্ঠ ১৩৩১
১. মুজফ্ফর আহমদের 'কাজী নজরুল ইসলাম/স্মৃতিকথা' গ্রন্থে লিখেছেন '১৯২৪ সালে
হুগলীতেই প্রথম গান্ধীজীর সঙ্গে নজরুলের মুখোমুখী পরিচয় হয়েছিল। তাঁর আগমন উপলক্ষে
সে গান ও কবিতা রচনা করেছিলেন।' [ন্যাশনাল বুক এজেন্সি প্রাইভেট লিমিটেড,
সেপ্টেম্বর ২০০৯। পৃষ্ঠা: ১৯০]
২. অরুণকুমার বসু তাঁর 'নজরুল জীবনী' গ্রন্থে লিখেছেন- '১৯২৪ -এর মাঝামাঝি
মোহনদাস গান্ধজি সময়ে কি কারণে যেন হুগলিতে এসেছিলেন। চাঁদনী ঘাটের সভায় তাঁকে
বিপুল সংবর্ধনা দেওয়া হলো। সে সভায় নজরুলের সদ্যরচিত গান স্বয়ং কবিকণ্ঠে
পরিবেশিত হয়েছিল: আজ না-চাওয়ার পথ দিয়ে কে এলে...।'
[পশ্চিম বাংলা আকাদেমি, জানুয়ারি ২০০০। পৃষ্ঠা ১৩৩] সম্ভবত এই সূত্র ধরেই-
ব্রহ্মমোহন ঠাকুর তাঁর 'নজরুল সঙ্গীত
নির্দেশিকা গ্রন্থে' গানটির উপলক্ষ হিসেবে লিখেছেন- 'মহাত্মা গান্ধীর হুগলী আগমন'।
'হুগলি/জ্যৈষ্ঠ ১৩৩১' -এর খ্রিষ্টাব্দ দাঁড়ায় মে-জুন ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দ। গান্ধীজির
কালানুক্রমিক জীবনী থেকে জানা যায়, এই বছরের মে-জুন মাস পর্যন্ত তিনি বোম্বে এবং
আহমেদাবাদ অঞ্চলে ছিলেন। মূলত গান্ধীজি কলকাতায় এসেছিলেন ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে মে
মাসের ১ তারিখে। এরপর ২ তারিখে তিনি চলে যান ফরিদপুরে। সেখান থেকে ৫ তারিখে আবার
কলকাতায় ফিরে আসেন। এরপর বঙ্গদেশের বিভিন্ন অঞ্চল পরিদর্শনের জন্য ৮ তারিখে কলকাতা
ত্যাগ করে মালিকান্দা যান। দীর্ঘ পরিভ্রমণ শেষে তিনি কলকাতা ফিরে আসেন ২৪ তারিখে।
[সূত্র:
Gandhi
1915-1948/A Detailed of Choronlogy/compiled by C.B.Dalal. First Edition 1971]