২৩ বৎসর অতিক্রান্ত বয়স
জুন ১৯২২ (১৮ জ্যৈষ্ঠ- ১৬ আষাঢ় ১৩২৯) এই মাসে পত্রিকায় প্রকাশিত কবিতা এই মাসে পত্রিকায় প্রকাশিত কবিতা ও গান।
নজরুল ইসলামের ২৩ বৎসর অতিক্রান্ত
বয়সের শুরু হয়েছিল - ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩২৯ বঙ্গাব্দ (২৫ মে ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দ) থেকে। শেষ
হয়েছিল ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩০ বঙ্গাব্দ (বৃহস্পতিবার ২৪শে মে ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দ)।
নজরুল ইসলামের ২৩তম জন্মদিন পালিত হয়েছিল
কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে। কান্দিরপাড়ে বীরেন্দ্র সেনগুপ্তের বাড়িতে অতিথি
থাকার সূত্রে নজরুলের সাথে
আশালতা'র ঘনিষ্টতা বৃদ্ধি পায়। এ নিয়ে স্থানীয় রক্ষণশীল হিন্দু সমাজ
ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এই অবস্থায় জুন মাসের শেষের দিকে নজরুল কুমিল্লা থেকে
কলকাতায় চলে আসেন।
কলকাতায় ফিরে
মাওলানা
আকরাম খাঁ-এর সম্পাদিত দৈনিক সেবক
পত্রিকায় যুক্ত হন এবং কিছুদিনের ভিতরে এই পত্রিকার চাকরি ছেড়ে
দেন। এছাড়া এই বছরেই নজরুল সম্পাদিত '
ধূমকেতু পত্রিকা' প্রকাশিত হয়। ব্রিটিশ বিরোধী রচনা প্রকাশের জন্য, পত্রিকা বাজেয়াপ্ত হয় এবং তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। নজরুল গ্রেফতার এড়ানোর জন্য
কুমিল্লা চলে যান। পরে সেখান থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসের অর্ধেক সময় তিনি কারাগারে কাটান। কারাগারের নির্যাতনের প্রতিবাদ স্বরূপ তিনি অনশন শুরু করেন। এর ফলে তিনি প্রায় মরণাপন্ন দশায় চলে যান। পরে ১০ জ্যৈষ্ঠ (২৩শে মে) বিরজাসুন্দরী দেবী এসে নজরুলের অনশন ভঙ্গ করিয়েছিলেন। অবশিষ্ট সময়ে নজরুল হুগলি জেলেই ছিলেন। এই সময়ের ভিতরে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'অগ্নিবীণা' প্রকাশিত হয়েছিল।
২৫মে -৩১ মে ১৯২২ (১১ জ্যৈষ্ঠ-১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৩২৯)
নজরুল ইসলামের ২৩তম জন্মদিন পালিত হয়েছিল
কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে।
বিদ্রোহী কবিতার সূত্রে নজরুলের যে বিপুল খ্যাতি সারা
বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, সংগত কারণে
কুমিল্লাতেও তাঁর ছোঁয়া লেগেছিল। জ্যৈষ্ঠ মাসের
শেষ কয়েকটি দিন ছিল নজরুলকে নিয়ে কান্দিরপাড়ের
বীরেন্দ্র সেনগুপ্তের বাড়িতে উৎসাহের অন্ত ছিল না। এই সময় নজরুলের সাথে
আশালতার
ঘনিষ্টতা বৃদ্ধি পায়। এই সময় নজরুল একটি গান রচনা করেছিলেন।
গানটি হলো-
ছায়ানট
প্রথম সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত এই গানের নিচে
রচনার স্থান ও সময় উল্লেখ আছে- কুমিল্লা/জ্যৈষ্ঠ ১৩২৯।
নজরুলের সাথে
আশালতার
ঘনিষ্টতা বৃদ্ধির সূত্রে বিষয়টি প্রণয়ের পর্যয়ে চলে যায়। প্রথম দিকে সকলের কাছে এঁদের মেলামেশা স্বাভাবিক মনে হয়েছিল। কিন্তু যখন কেউ কেউ এঁদের এই মেলমেশাকে প্রণয়ের সম্পরক হিসেবে ভাবতে শুরু করলেন, তখন শুরু হলো গুঞ্জন। নজরুল ও
আশালতার আচরণ সে ভাবনাকে অনেকটা উসকে দিয়েছিল। ধীরে ধীরে ঘটনাটি কান্দিরপাড়ের স্থানীয় মানুষের কাছে এটি একটি প্রাত্যহিক আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছিল। বিষয়টি রক্ষণশীল হিন্দু সমাজ সহজভাবে মেনে নিতে পারলেন না। তাঁদের বাদ-প্রতিবাদে অচিরেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নজরুল-বিদ্বেষী উঠেছিল। ফলে তাঁর পক্ষে কুমিল্লায় থাকাটাই মুসকিল হয়ে উঠেছিল। এই অবস্থায় তিনি জুন মাসের শেষের দিকে
কুমিল্লা থেকে
কলকাতায়
চলে আসেন। তাঁর কলকাতায় প্রত্যাবর্তনের সঠিক তারিখ জানা যায়
না। তবে ২৬ জুন (সোমাবার ১২ আষাঢ়),
কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের স্টুডেন্টস হলে, সদ্য-প্রয়াত কবি
সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের স্মরণসভায় নজরুল উপস্থিত ছিলেন। তাই ধারণা করা যায়, নজরুল
কলকাতায় ফিরেছিলেন ২৫শে জুনে বা তার আগে। অন্যদিকে কুমিল্লার
স্থানীয় লোকদের সমালোচনার মুখে,
আশালতার
মা গিরিবালা
কুমিল্লার কান্দিরপাড় থেকে সমস্তিপুরে তাঁর পিতার বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন।
কলকাতায় ফিরে আসার আগে নজরুলের রচিত একটি গানের সন্ধান পাওয়া যায়, তা হলো-
সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের মহাপ্রয়াণ ও নজরুল
ছায়ানট
প্রথম সংস্করণের গানটির সাথে রচনার স্থান ও তারিখ উল্লেখ
ছিল-
কুমিল্লা/আষাঢ় ১৩২৯। শিরোনাম:
স্তব্ধ বাদল।
১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের
২৫শে জুন (রবিবার ১১ আষাঢ়) কবি
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত মাত্র ৪০ বৎসর বয়সে
ব্রঙ্কাইটিস রোগে মৃত্যুবরণ করেন।
এই ঘটনায় নজরুল গভীরভাবে শোকাহত হন। তাঁর স্মরণে নজরুল
একটি গান রচনা করেন। গানটি
হলো-
দৈনিক
সেবক পত্রিকায় নজরুল
১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জুন (সোমবার ১২ আষাঢ় ১৩২৯ বঙ্গাব্দ) কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের
স্টুডেন্টস হলে
সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের স্মরণে একটি শোকসভার আয়োজন করা হয়। ওই সভার
সভাপতিত্ব করেছিলেন
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। শোকসভায় নজরুল সদ্য রচিত এই গানটি
পরিবেশন করেছিলেন।
মাসিক
বসুমতী পত্রিকা'র 'শ্রাবণ ১৩২৯' সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। শিরোনাম '."সত্য"-প্রয়াণ-গীতি'।
শিরোনামের নিচে ছিল '(বাউলের সুর)। পৃষ্ঠা: ৫৩৮।
ফণি-মনসা
প্রথম সংস্করণ [শ্রাবণ ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ (জুলাই ১৯২৭)
সত্যেন্দ্র-প্রয়াণ-গীতি'
শিরোনামে অন্তর্ভুক্ত গানটির সাথে রচনার স্থান ও কাল
উল্লেখ আছে 'কলিকাতা, শ্রাবণ ১৩২৯'। সম্ভবত
ফণি-মনসায় তারিখটি ভুলক্রেমে 'শ্রাবণ ১৩২৯' মুদ্রিত হয়েছিল।
খেলাফত আন্দোলন এবং
অসহযোগ আন্দোলন-কে
বেগবান করার উদ্দেশ্যে
মাওলানা আকরাম খাঁ দৈনিক জামানা ও দৈনিক
সেবক নামক দুটি পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন। ১৯২১
খ্রিষ্টাব্দের ১ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার ১৫ অগ্রহায়ণ ১৩২৮) দৈনিক
সেবক
প্রকাশিত হয়। সরকার বিরোধী সম্পাদকীয় রচনার জন্য ১০ ডিসেম্বর (শনিবার, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৩২৮)
সেবক
বাজেয়াপ্ত হয়
এবং আকরাম খাঁকে
গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর,
মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলীকে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক করে সাপ্তাহিক মোহাম্মদীর দৈনিক সংস্করণ
হিসেবে দৈনিক
মোহাম্মদী প্রকাশ করা হয়। এ সময় মাওলানা আকরাম খাঁ কারাগারে থেকে
পত্রিকা পরিচালনার ব্যাপারে মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন।
ইতোমধ্যে দৈনিক সেবকের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে দৈনিক
মোহাম্মদীর স্থলে
পুনরায় দৈনিক
সেবক প্রকাশ করা হয়।
১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে
মহাত্মা গান্ধী
এই আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিলে, পত্রিকা দুটির জনপ্রিয়তা হারায়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য,
আকরাম খাঁ
নজরুল ইসলামকে
সেবক সম্পাদকীয়
বিভাগে যোগদানের জন্য অনুরোধ করে চিঠি লিখেছিলেন ১৪ চৈত্র (২৮ মার্চ
১৯২২) তারিখে। সেবার নজরুল এই অনুরোধ রক্ষা করেন নি।
আকরাম খাঁ
কারাগারে থাকাবস্থায় মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলীকে সেবকে যোগদানের জন্য কুমিল্লায় চিঠি পাঠিয়েছিলেন। এজন্য নজরুলে
সম্মানী ধার্য করা হয়েছিল মাসিক ১০০ টাকা। এদিকে কুমিল্লায়
আশালতার সাথে নজরুল ঘনিষ্টতা বৃদ্ধি
এবং এই কারণে সৃষ্ঠ সামাজিক প্রতিবন্ধকতায় তিনি মানসিক অশান্তিতে ছিলেন। এর
সাথে ছিল আর্থিক অভাব। এই অবস্থায় ওয়াজেদ আলী'র
চিঠি নজরুলকে কলকাতায় ফিরে আসার জন্য উদবুদ্ধ
করেছিল। অবশেষে জুন মাসের শেষে নজরুল কলকাতায় ফিরে
আসেন এবং সেবক পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগে যোগ দিয়েছিলেন।
এই সময় তিনি ৩২ নম্বর কলেজ স্ট্রিটে
আফজাল-উল হকের বাসায় এসে
উঠেছিলেন।
কবি
সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের মৃত্যুর পর, তাঁর স্মরণে নজরুল
সেবকের পত্রিকায় একটি সম্পাদকীয় রচনা করেন। ওই পত্রিকায় কর্মরত মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী ও
আবুল কালাম শামসুদ্দীন এই রচনাটি নিজেদের মতো পরিমার্জিত করে প্রকাশ করেন। নজরুল এতে
অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন এবং ডাকযোগে পদত্যাগ পত্র পাঠান। এর ভিতর দিয়ে নজরুলের সাথে
সেবক পত্রিকার সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটে।
জুলাই ১৯২২ (১৭ আষাঢ়-১৫ শ্রাবণ ১৩২৯)
উল্লেখ্য কবিতাটি ১৩২৮ বঙ্গাব্দের জ্যৈষ্ঠ মাসে (মে-জুন ১৯২২) কুমিল্লায় রচিত
হয়েছিল।
এই সময় কলকাতার
বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠনগুলোতে
সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের মহাপ্রয়াণ-কেন্দ্রিক নানা আলোচনা সভা। নজরুল এরূপ ২টি
সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের স্মরণে
আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগদান করেন এবং নিজের রচিত কবিতা ও গান পরিবেশন করেন।
ধূমকেতু
ও নজরুল
সহচর। শ্রাবণ ১৩২৯। শিরোনাম: শেষের গান। উপরে 'গান'
উল্লেখ ছিল। উল্লেখ্য গানটি
ছায়ানট
কাব্যগ্রন্থে গানটি প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এর সাথে রচনার তারিখ উল্লেখ আছে-'কলিকাতা, শ্রাবণ
১৩২৮'।
মাসিক বসুমতী। শ্রাবণ ১৩২৯। শিরোনাম: মানস-বধূ। পৃষ্ঠা: ৪২৯
[নমুনা]
চল চঞ্চল বাণীর দুলাল
[তথ্য]
মাসিক বসুমতী।
শ্রাবণ ১৩২৯। শিরোনাম: "সত্য"-প্রয়াণ-গীতি (বাউলের সুর) [নমুনা]
মাসিক ভারতী।
শ্রাবণ ১৩২৯। শিরোনাম: কবি সত্যেন্দ্র।
পৃষ্ঠা: ৩১৩-৩১৪ [নমুনা]
দৈনিক
সেবক পত্রিকায় কর্মরত অবস্থায়, নজরুল মোটামুটি কিছুটা
আর্থিকভাব স্বস্তি লাভ করেছিল। আবার এই পত্রিকার কাছে ছেড়ে দিয়ে তিনি আবার
আর্থক টানপোড়নে পরে যান। এরই ভিতরে চট্টগ্রামের হাফিজ মাসউদ আহমদ একটি রাজনৈতিক সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশের
জন্য মুজাফ্ফর আহমদকে অনুরোধ করেন এবং সেই সাথে ২৫০ টাকা মূলধন প্রদানের অঙ্গীকার করেন।
এত অল্প টাকায় পত্রিকা প্রকাশের ভাবনাকে তিনি হটকারিতা বিবেচনা করে, হাফিজ মাসউদের
প্রস্তাব গ্রহণ করলেন না। পরে তিনি নজরুলের কাছে পত্রিকা প্রকাশের প্রস্তাব
রাখেন। নজরুল এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। শুধু তাই নয় নতুন পত্রিকা প্রকাশের
জন্য তাঁর বন্ধু-বান্ধবদের কাছে সাহায্য-সহযোগিতার প্রার্থনাও করেন।
নজরুল পত্রিকাটির নাম রাখেন 'ধূমকেতু'।
সেকালের সরকারি নিয়মানুসারে
আফজাল-উল হক
চিফ প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত থেকে পত্রিকা প্রকাশের অনুমতি গ্রহণ করেন। সে সময় পত্রিকা প্রকাশের জন্য
কোনো জামানত জমা দিতে হতো না। ফলে পত্রিকা প্রকাশের প্রাথমিক উদ্যোগে অর্থ কোনো
সমস্যা হয় নি। পত্রিকার ঠিকানা দেওয়া হয়েছিল ৩২ নম্বর কলেজ স্ট্রিট।
উল্লেখ্য সে সময়ে এই বাসায়
আফজাল-উল হক এবং নজরুল বাস করতেন। এরপর জুলাই মাসের পুরো সময় জুড়ে
ধূমকেতু
প্রকাশের করমকাণ্ডে নজরুল ব্যস্ত সময় কাটান।
আগষ্ট ১৯২২ (১৬ শ্রাবণ-১৪ ভাদ্র ১৩২৯)
শেষ পর্যন্ত ৩২ নম্বর কলেজ স্ট্রিট থেকে,
ধূমকেতু পত্রিকাটির
প্রকাশনা শুরু হয়েছিল
'১৩২৯
বঙ্গাব্দের ২৬ শ্রাবণ (শুক্রবার ১১ আগষ্ট ১৯২২
খ্রিষ্টাব্দ)। এর সারথী (সম্পাদক) ও স্বত্বাধিকারী ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম।
কর্মসচিব (ম্যানেজার) ছিলেন শান্তিপদ সিংহ। প্রকাশক ও মুদ্রাকর ছিলেন
আফজাল-উল হক। পত্রিকার প্রথম পাতায় গ্রহ-নক্ষত্রে জগতে পৃথিবীর ছবি ছিল এবং
পৃথিবীর আকাশে গতিময় ধূমকেতুর আবির্ভাব ঘটেছে। হাতে আঁকা এই ছবির নিচে ছিল
পত্রিকা প্রকাশের সময়ের উল্লেখ ছিল- 'সপ্তাহে দুইবার করিয়া বাহির হইবে।'
পত্রিকাটির দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছিল ৮ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির অভিনন্দনবার্তা।
এই ব্যক্তিবর্গের মধ্যে ছিলেন-
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সরোজিনী,
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়,
বারীন,
যতীন্দ্রমোহন বাগচী, পরিসুন্দরী ঘোষ, উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও
বিরজাসুন্দরী দেবী। এর ভিতরে
রবীন্দ্রনাথ ও
যতীন্দ্রমোহন অভিনন্দন জানিয়েছিলেন কবিতায়।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর অভিনন্দন-পত্রে লিখেছিলেন-
অমঙ্গলের মঙ্গল ঘট
পত্রিকাটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল ৮, পৃষ্ঠার মাপ ছিল ক্রাউন ১৫"x১০"। এর
প্রতি সংখ্যার মূল্য ছিল ১ আনা। এবং বাৎসরিক চাঁদা ছিল ৫
টাকা।
কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষু
আয় চলে আয়, রে ধূমকেতু,
আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু,
দুর্দিনের এই দুর্গশিরে
উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।
অলক্ষণের তিলক রেখা,
রাতের ভালে হোক্ না লেখা
জাগিয়ে দেরে চমক্ মেরে'
আছে যারা অর্দ্ধচেতন।
২৪ শ্রাবণ
২৩২৯
শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আগেই উল্লেখ করেছি যে. ধূমকেতু প্রকাশের জন্য হাফিজ মাসউদের ২৫০ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দিয়েছিলেন ২০০ টাকা। হাফিজ মাসউদ ছিলেন
পুলিশের চর। পত্রিকার বিষয়ে সংবাদ পাওয়ার জন্য পুলিশ
তাঁকে ২৫০ টাকা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু পুলিশ ২০০ টাকা দেওয়ার পর বাকি টাকা দেয় নি।
ধূমকেতু
। প্রথম বর্ষ। প্রথম সংখ্যা
১১ আগষ্ট ১৯২২ (শুক্রবার, ২৬ শ্রাবণ ১৩২৯)
ধূমকেতু
। প্রথমবর্ষ। দ্বিতীয় সংখ্যা
গান: কে বলে মোদেরে ল্যাডাগ্যাপচার
[তথ্য]
ধূমকেতুর এই সংখ্যায় গানটি প্রকাশিত হওয়ার পরে, এটি
ভাঙার গান গ্রন্থের
প্রথম সংস্করণে [শ্রাবণ ১৩৩১ বঙ্গাব্দ। আগষ্ট ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দ] "ল্যাবেন্ডিশ বাহিনীর বিজাতীয় সঙ্গীত"
শিরোনামে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল
৩০ শ্রাবণ ১৩২৯, মঙ্গলবার, ১৫
আগষ্ট ১৯২২।
ধূমকেতু
। প্রথমবর্ষ। তৃতীয় সংখ্যা
[পৃষ্ঠা: ৩] গানটি ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের
নভেম্বর মাসে (অগ্রহায়ণ ১৩২৮) নজরুল কুমিল্লায় যান এবং কান্দি পাড়ায় বীরেন সেনের
বাসায় এই গানটি রচনা করেছিলেন।
১লা ভাদ্র ১৩২৯, শুক্রবার ১৮ আগষ্ট ১৯২২
ধূমকেতু।
প্রথমবর্ষ। চতুর্থ সংখ্যা
৫ ভাদ্র ১৩২৯, মঙ্গলবার ২২ আগষ্ট ১৯২২
ধূমকেতু।
প্রথম বর্ষ। পঞ্চম সংখ্যা
'গত মঙ্গলবার হুগলী জাতীয় বিদ্যামন্দিরের বার্ষিক
পারিতোষিক বিতরণ সভা হয়েছিল । কলকাতা থেকে যান শ্রীযুক্তা মোহিনী
দেবী, তাঁর তৃতীয় মেয়ে, ছোট মেয়ে আর এক নাতনী, এবং কাঁজী নজরুল
ইসলাম ও দুটি কাপড়ের বোঁচকা। বিপুল সমাদরের সঙ্গে তাঁদের অভ্যর্থনা
করেন হুগলী কংগ্রেস-কর্ম্মীগণ। স্কুলের ছেলেরা রক্ত-রাঙ্গা খদ্দর পরে এক
অভিনব চোখ-জুড়ানো দৃশ্যের সৃজন করেছিল। সে এক দেখবার মত জিনিস, ওখানের
জাতীয় বিদ্যামন্দিরের কর্ম্মিগণের মত উৎসাহ্ বাঙলা অন্য কোথাও দেখা যায়
না। সাধারণতঃ ছেলেদের দেশকে ভালোবাসা "শিক্ষার বই উপহার দেওয়া হয়। ছেলেদের গান - আবৃত্তি হয়। কাজী নজরুল ইস্লাম সভায় প্রথমে ও শেষে
কয়েকটী গান করেন। শ্রীযুত অতুল সেন তাঁর অপূর্ব্ব কৌতুক অভিনয় দেখিয়ে "মধুরেণ সমাপয়েৎ করেন। হাঁ বলতে ভুলে গেছি, মধ্যে কয়েকজন বক্তার
বক্তিমের গরমে লোক একেবারে ভেপ্সে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। দেশ-মাতার প্রতি
শ্রদ্ধায়-ভক্তিতে অনেক বক্তাই স্বরভঙ্গ দোষ-দুষ্ট হয়ে পড়লেন, কিন্ত দেশের
জন্য তাঁদের কাছে ভিক্ষা চাওয়ায় তারা মাসিক গোটাই একটা ক'রে টাকা দেবেন
ব'লে দিব্যি ক'রে বসলেন। কিন্তু বলেই তাদের প্রাণ আই ঢাই করতে লাগ্ল ব'লে
বাড়ীমুখো হয়ে দে ছুট । এই সব বাক্যি সার রায় বাহাদুরের গোষ্ঠীকে কেনই বা
'বিব্রত' করা হয়েছিল আর কেনই যে এমন হীন ভিক্ষা নেওয়া হয়েছিল, তা বুঝে
উঠ্তে পারিনি আর পার্বও না। এ, একটা ক'রে টাকা তাদের মুখের ওপর ছুঁড়ে
ফেলে দিলে তবে কখনো ইয়ে হ'ত। সভানেত্রী মাতা মোহিনী দেবী সুন্দর কয়েকটা কথা
বলার পর সভা ভিসমিস।
৮ ভাদ্র ১৩২৯, শুক্রবার ২৫ আগষ্ট ১৯২২
ধূমকেতু
।
প্রথম বর্ষ। ষষ্ঠ সংখ্যা
১২ ভাদ্র ১৩২৯, মঙ্গলবার ২৯ আগষ্ট ১৯২২
ধূমকেতু
।
প্রথম বর্ষ। সপ্তম সংখ্যা। মোহরম সংখ্যা
১২ ভাদ্র ১৩২৯, মঙ্গলবার ২৯ আগষ্ট ১৯২২
ধূমকেতুর প্রথম বর্ষ ষষ্ঠ ও সপ্তম সংখ্যা একই দিনে প্রকাশিত হয়েছিল। মূলত সপ্তম সংখ্যা ছিল মোহরেমের বিশেষ সংখ্যা। এই সংখ্যায় নজরুলের
রচিত যে সকল রচনা প্রকাশিত হয়েছিল, সেগুলো হলো-
সেপ্টেম্বর ১৯২২ (১৫ ভাদ্র- ১৩ আশ্বিন ১৩২৯)
ধূমকেতু
পত্রিকায় নজরুলের ব্রিটিশ বিরোধী বক্তব্য প্রকাশের জন্য, সরকারে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছিল
৩২ নম্বর কলেজ স্ট্রিটের বাড়িটির উপর।
ধূমকেতু
প্রকাশের কারণে বড় ধরনের পুলিশি হাঙ্গামা আশঙ্কায় ঐ বাড়ির মূল মালিক শীল ভ্রাতৃদ্বয় শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। তাঁরা এই বাড়ি থেকে
ধূমকেতু প্রকাশের ক্ষেত্রে আপত্তি তোলেন।
অবশ্য এর আগে থেকেই নজরুল পত্রিকা প্রকাশের জন্য পৃথক একটি বাড়ি খুঁজছিলেন। ইতিমধ্যে বালিয়া জেলার জনৈক দুবে একটি বাড়ির সন্ধান পেয়েছিলেন,
তাই নজরুল বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার কথা বাড়ির মালিককে জানিয়ে দেন। অবশেষে ২ সেপ্টেম্বর (শনিবার ১৬ ভাদ্র ১৩২৯), ধূমকেতু
পত্রিকার অফিস ৭ প্রতাপ চাটুজ্যে লেনের দোতলায় স্থানান্তরিত হয়।
ধূমকেতু
।
প্রথম বর্ষ। অষ্টম সংখ্যা
২৬ ভাদ্র ১৩২৯, মঙ্গলবার ১২ সেপ্টেম্বর ১৯২২
ধূমকেতু। প্রথম বর্ষ। ঊনবিংশ সংখ্যাধূমকেতুর প্রথম বর্ষ বিংশ সংখ্যা প্রকাশের পরের দিন [৮ ই নভেম্বর (মঙ্গলবার ২২ কার্তিক ১৩২৯)] রাজদ্রোহিতার অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪ ধারায়, পত্রিকার সম্পাদক নজরুল ইসলাম এবং মুদ্রাকর প্রকাশক আফজাল-উল হকের বিরুদ্ধে গ্রফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এই সময় ৩২ কলেজ স্ট্রিট থেকে আফজাল-উল হককে গ্রেফতার করা হয়। নজরুল গ্রেফতার এড়ানোর জন্য সমস্তিপুরে চলে যান। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, ১৯২২ ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে তিনি কুমিল্লায় যান। এটা ছিল নজরুলের তৃতীয়বার কুমিল্লা ভ্রমণ। এই সময় নজরুলের সাথে আশালতার ঘনিষ্টতা বৃদ্ধির সূত্র বিষয়টি প্রণয়ের পর্যয়ে চলে যায়। এ নিয়ে কুমিল্লায় ব্যাপক গুঞ্জন শুরু হলে, নজরুল জুন মাসের দিকে কুমিল্লা থেকে কলকাতায় ফিরে আসেন। অন্যদিকে কুমিল্লার স্থানীয় লোকদের সমালোচনার মুখে, আশালতার মা গিরিবালা আশলতাকে সাথে নিয়ে সমস্তিপুরে তাঁর পিতার বাড়িতে চলে যান। নজরুল গ্রেফতার এড়ানোর জন্য সমস্তিপুরে এসের গিরিবালার আশ্রয়ে এসে উঠেছিলেন।
১৭ কার্তিক ১৩২৯, শুক্রবার ৩ নভেম্বর ১৯২২ধূমকেতু। প্রথম বর্ষ। বিংশ সংখ্যা
- সম্পাদকীয়: নিশান-বরদার পতাকা-বাহী। [পৃষ্ঠা: ৩]। অগ্রন্থিত প্রবন্ধ
২১ কার্তিক ১৩২৯, মঙ্গলবার ৭ নভেম্বর ১৯২২
- সম্পাদকীয়: ভিক্ষা দাও [পৃষ্ঠা: ৩] অগ্রন্থিত প্রবন্ধ
ধূমকেতু। প্রথম বর্ষ। একবিংশ সংখ্যা২২শে নভেম্বর (বুধবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৩২৯) নজরুল বিহারের সমস্তিপুর থেকে গিরিবালা দেবী ও আশালতা দেবীকে নিয়ে কুমিল্লার পথে রওনা দেন। পথিমধ্যে বেলুরে এক বন্ধুর বাড়িতে দু'দিন ছিলেন। এখানে তিনি আর্য পাবলিশিং হাউসের শরচ্চন্দ্র গুহের কাছ থেকে কিছু টাকা সংগ্রহ করেন। এরপর তিনি গিরিবালা দেবী ও আশালতাকে নিয়ে কুমিল্লা চলে যান। এই সময় তিনি ধূমকেতু পত্রিকার স্বত্ব বিরজাসুন্দরীর নামে লিখে দেন।
২৪ কার্তিক ১৩২৯, শুক্রবার ১০ নভেম্বর ১৯২২
এই সংখ্যার সারথি ছিলেন অমরেশ কাঞ্জিলাল। পত্রিকা প্রকাশের সময় নজরুল সমস্তিপুর ছিলেন।ধূমকেতু। প্রথম বর্ষ। দ্বাবিংশ সংখ্যা
- তোমার পণ কি [সম্পাদকীয় পৃষ্ঠা: ৩] অগ্রন্থিত প্রবন্ধ
১ অগ্রহায়ণ ১৩২৯, শুক্রবার ১৭ নভেম্বর ১৯২২
এই সংখ্যার সারথি ছিলেন অমরেশ কাঞ্জিলাল। পত্রিকা প্রকাশের সময় নজরুল সমস্তিপুর ছিলেন। এই সংখ্যায় ধূমকেতু অফিসে পুলিশের তল্লাসি চালানোর খবরটি প্রকাশিত হয়েছিল এই ভাবে-'গত ৮ই নভেম্বর সকাল বেলা, লালবাজারের গ্রহ ধূমকেতু কেন্দ্রে উদয় হয়েছিলেন। একই সময়ে আর একদল প্রেসেও দেখা দিয়াছিলেন। তারা কাজী নজরুল ইসলাম চাইলেন। কিন্তু তিনি অনুপস্থিত থাকায় দেওয়ালী (১৫শ) এবং আগমনী (১২শ) সংখ্যার সব কাগজ, চিঠিপত্র ও হিসেব ইত্যাদি নিয়ে যান। সবে 'গ্রহণ' লাগা শুরু হোল।'এই সংখ্যায় প্রকাশিত নজরুলের রচনা
- সম্পাদকীয়। আমার ধর্ম [পৃষ্ঠা: ৩] অগ্রন্থিত প্রবন্ধ
- অদর্শনের কৈফিয়ত। অগ্রন্থিত কবিতা
ধূমকেতু। প্রথম বর্ষ। ষড়্বিংশ সংখ্যাপ্রেসিডেন্সি জেলে যাওয়ার পর এই মাসে প্রকাশিত ধুমকেতু পত্রিকায় নজরুলের রচনা প্রকাশিত হয় নি। তবে প্রবাসী পত্রিকায় তাঁর রচিত ১টি কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল। কবিতাটি হলো-
২৬ অগ্রহায়ণ ১৩২৯, মঙ্গলবার ১২ ডিসেম্বর ১৯২২।
এই সংখ্যার সারথি হিসেবে নাম মুদ্রিত হয়-অমরেশ কাঞ্জিলাল। সহকারী সম্পাদক ছিলেন জিতেন্দ্রনাথ লাহিড়ি।ধূমকেতু। প্রথম বর্ষ। সপ্তবিংশ সংখ্যা
- তরুণের বিদ্রাহ [সম্পাদকীয়] [পৃষ্ঠা ৩]
- মন বুঝানো [কবিতা। রচনা সারথী। নজরুলের কবিতা কিনা সংশয় আছে]
- বহ্ন্যুৎসব। পৃষ্ঠা: ৭। [রচয়িতার নাম নেই]
- নপুংসকের ন্যাকামি ৭-৮। [রচয়িতার নাম নেই]
২৯ অগ্রহায়ণ ১৩২৯, শুক্রবার ১৫ ডিসেম্বর ১৯২২।
এই সংখ্যার সারথি হিসেবে নাম মুদ্রিত হয়-অমরেশ কাঞ্জিলাল। এই সংখ্যায় সহকারী সম্পাদক ছিলেন জিতেন্দ্রনাথ লাহিড়ি'র নাম মুদ্রিত হয় নি। এই সংখ্যায় পত্রিকা র প্রকাশের দিন পাল্টানোর কথা লেখা হয়। লেখাটি ছিল- 'প্রেসের সুবিধার জন্য সামনের সংখ্যা থেকে ধূমকেতু প্রতি বুধবার ও শনিবারে দেখা দেবে।' পত্রিকায় নামবিহীন সম্পাদকীয়। পৃষ্ঠা ৩-৪।
ধূমকেতু। প্রথম বর্ষ। অষ্টবিংশ সংখ্যা
৫ পৌষ ১৩২৯, বুধবার ২০ ডিসেম্বর ১৯২২]
প্রতিষ্ঠাতা: কাজী নজরুল ইসলাম
সারথি: অমরেশ কাঞ্জিলাল
সম্পাদকীয় [লাঞ্ছিত। পৃষ্ঠা: ৩]
ধূমকেতু। প্রথম বর্ষ। ঊনত্রিংশ সংখ্যা
৮ পৌষ ১৩২৯, শনিবার ২৩ ডিসেম্বর ১৯২২]
প্রতিষ্ঠাতা: কাজী নজরুল ইসলাম
সারথি: অমরেশ কাঞ্জিলাল
সম্পাদকীয় [ভাববার কথা। পৃষ্ঠা: ৩] ধূমকেতু।
প্রথম বর্ষ। ত্রিংশ সংখ্যা। কংগ্রেস সংখ্যা
১২ পৌষ ১৩২৯, বুধবার ২৭ ডিসেম্বর ১৯২২]
প্রতিষ্ঠাতা: কাজী নজরুল ইসলাম
সারথি: অমরেশ কাঞ্জিলাল
ধূমকেতু। প্রথম বর্ষ। দ্বাত্রিংশ সংখ্যা। নজরুল সংখ্যাধূমকেতু পত্রিকা ছাড়া এই মাসে প্রবাসী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল 'পউষ' নামক কবিতা।
১৩ মাঘ ১৩২৯, শনিবার ২৭ জানুয়রি ১৯২৩।
- আত্মকথা। কবিতা। অগ্রন্থিত কবিতা
- রাজবন্দীর জবানবন্দী। প্রবন্ধ। ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ জানুয়ারি (২৩ পৌষ ১৩২৯), প্রেসিডেন্সি জেলে এই প্রবন্ধটি রচনা করেছিলেন। ধূমকেতু পত্রিকার এই সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এরপর উপাসনা ও সহচর পত্রিকায় ফাল্গুন ১৩২৯ (ফেব্রুয়ারি ১৯২৩) সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।
'১৯২২ সালে ডিসেম্বর মাসে তাঁর "পৌষ" কবিতাটি রচনা করেছিল। তখন সে প্রেসিডেন্সী জেলে বিচারাধীন বন্দী। তখনকার দিনে কিছু সংখ্যক বিচারাধীন বন্দীকে জেলের সামনে সিবিল প্রিজনারদের ছোট্ট জেলে রাখা হতো। নজরুলকেও সেখানে রাখা হয়েছিল। একদিন অবনী চৌধুরী ও আমি এক সঙ্গে প্রেসিডেন্দী জেলের গেটে গিয়ে কবির সঙ্গে মুলাকাত করার ইচ্ছা জানালাম। তখন তাকে সিবিল প্রিজনার্স জেল হতে জেলের আফিসে আনা হলো। মুলাকাত হলো জানালার জালের এপার-ওপার থেকে। আমরা বাইরে 'দাঁড়িয়েছিলেম। কথা বলার সময়ে কবি একখানা ছোট্ট কাগজ পাকিয়ে জানালার জালের বড় ছিদ্রের ভিতর দিয়ে অবনী চৌধুরীর হাতে দেয়। ফিরে আসার সময়ে পথে অবনী চৌধুরী কাগজখানা আমার হাতে দিয়ে বলল-'কবির বড় শীত লেগেছে'। দেখলাম 'পউষ' কবিতাটি তাতে লেখা রয়েছে। শ্রীপবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়ের মারফতে 'পউষ' 'প্রবাসী'তে ছাপা হয়েছিল।'
গান: তোমারি জেলে পালিছ ঠেলে [তথ্য]হুগলি জেলে থাকাকালে জেল কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থা, অপমানমূলক আচরণ ও নির্যাতনের পরিমাণ এতটাই তীব্রতর হয়ে উঠেছিল যে, শেষ পর্যন্ত ১৫ই এপ্রিল (রবিবার, ২ রা বৈশাখ ১৩৩০) থেকে নজরুল-সহ মোট ২১জন রাজবন্দী অনশন শুরু করেন। এর প্রায় ১০ দিন পর এই সংবাদ জনসমক্ষে আসে ২৪শে এপ্রিল (মঙ্গলবার ১১ বৈশাখ) আনন্দবাজার পত্রিকার মাধ্যমে। ব্যথিত রবীন্দ্রনাথ নজরুলকে প্রেসিডেন্সি জেলে একটি টেলিগ্রাম পাঠিয়েছিলেন। এ বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ তাঁর পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন-
গানটির হুগলি জেলে ১৪ই এপ্রিল থেকে ২৫শে এপ্রিলের ভিতরে রচিত হয়েছিল। গানটি পরে ভাঙার গানের প্রথম সংস্করণ [ আগষ্ট ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দ]। শিরোনাম ' সুপার (জেলের) বন্দনা'। শিরোনামে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। গানটির পাদটীকায় উল্লেখ ছিল- 'হুগলি জেলে থাকাকালীন জেলের সকল প্রকার জুলুম আমাদের ওপর দিয়ে পরখ ক'রে নেওয়া হয়েছিল। সেই সময় জেলের মূর্ত্তিমান 'জুলুম' বড়-কর্তাকে দেখে এই গান গেয়ে আমরা অভিনন্দন কর্তাম।
কল্যাণীয়েষু, রথী নজরুল ইসলামকে Presidency Jail 'এর ঠিকানায় টেলিগ্রাম পাঠিয়েছিলুম লিখেছিলুম Give up hunger strike, our literature claims you- জেল থেকে memo এসেচে। The address not found অর্থাৎ ওরা আমার massage ওকে দিতে চায় না- কেননা নজরুল প্রেসিডেন্সি জেলে না থাকলেও ওরা নিশ্চয় [জানে] সে কোথায় আছে- অতএব নজরুল ইস্লামের আত্মহত্যায় ওরা বাধা দিতে চায় না। শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
[সূত্র চিঠিপত্র ২। বিশ্বভারতী। সংস্করণ শ্রাবণ ১৪১৯। পৃষ্ঠা: ৯৯]
বিরজাসুন্দরী |
এই সময়ের ভিতরে কোনো একদিন, নজরুলের মা জাহেদা খাতুন নজরুলের সাথে দেখা করার জন্য, নজরুলের জ্ঞাতি ভাই আব্দুর রহিমের সাথে নিয়ে হুগলি জেলে গিয়েছিলেন। অধিকাংশ নজরুল গবেষকের মতে- নজরুল অজ্ঞাত অভিমানে এঁদের সাথে দেখা করেন নি। প্রাণতোষ ভট্টাচার্য তাঁর 'কাজী নজরুল' গ্রন্থে 'নজরুল ও তার মা' নিবন্ধে প্রসঙ্গক্রমে আব্দুর রহমানের বক্তৃতা ও বেতার উল্লেখ করেছেন।
২৩শে মে
(বুধবার, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩০) বিরজাসুন্দরী জেলে যান
এবং নজরুলকে লেবুর সরবত পান করিয়ে অনশন ভঙ্গ করান। এরপর হুগলি
জেল কর্তৃপক্ষ নজরুলের প্রতি সদয় আচরণ করা শুরু করে।
জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রকাশিত কবিতা ও গান