২৩ বৎসর অতিক্রান্ত বয়স
নজরুল ইসলামের ২৩ বৎসর অতিক্রান্ত বয়সের শুরু হয়েছিল - ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩২৯ বঙ্গাব্দ (২৫ মে ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দ) থেকে। শেষ হয়েছিল ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩০ বঙ্গাব্দ (বৃহস্পতিবার ২৪শে মে ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দ)।


নজরুল ইসলামের ২৩তম জন্মদিন পালিত হয়েছিল কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে। কান্দিরপাড়ে বীরেন্দ্র সেনগুপ্তের বাড়িতে অতিথি থাকার সূত্রে নজরুলের সাথে  আশালতা'র ঘনিষ্টতা বৃদ্ধি পায়। এ নিয়ে স্থানীয় রক্ষণশীল হিন্দু সমাজ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এই অবস্থায় জুন মাসের শেষের দিকে নজরুল কুমিল্লা থেকে কলকাতায় চলে আসেন। কলকাতায় ফিরে মাওলানা আকরাম খাঁ-এর সম্পাদিত দৈনিক সেবক পত্রিকায় যুক্ত হন এবং কিছুদিনের ভিতরে এই পত্রিকার চাকরি ছেড়ে দেন। এছাড়া এই বছরেই নজরুল সম্পাদিত ' ধূমকেতু পত্রিকা' প্রকাশিত হয়। ব্রিটিশ বিরোধী রচনা প্রকাশের জন্য, পত্রিকা বাজেয়াপ্ত হয় এবং তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। নজরুল গ্রেফতার এড়ানোর জন্য কুমিল্লা চলে যান। পরে সেখান থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসের অর্ধেক সময় তিনি কারাগারে কাটান। কারাগারের নির্যাতনের প্রতিবাদ স্বরূপ তিনি অনশন শুরু করেন। এর ফলে তিনি প্রায় মরণাপন্ন দশায় চলে যান। পরে ১০ জ্যৈষ্ঠ (২৩শে মে) বিরজাসুন্দরী দেবী এসে নজরুলের অনশন ভঙ্গ করিয়েছিলেন। অবশিষ্ট সময়ে নজরুল হুগলি জেলেই ছিলেন। এই সময়ের ভিতরে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'অগ্নিবীণা' প্রকাশিত হয়েছিল।

২৫মে -৩১ মে ১৯২২ (১১ জ্যৈষ্ঠ-১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৩২৯)
নজরুল ইসলামের ২৩তম জন্মদিন পালিত হয়েছিল কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে।  বিদ্রোহী কবিতার সূত্রে নজরুলের যে বিপুল খ্যাতি সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, সংগত কারণে কুমিল্লাতেও তাঁর ছোঁয়া লেগেছিল। জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ কয়েকটি দিন ছিল নজরুলকে নিয়ে  কান্দিরপাড়ের বীরেন্দ্র সেনগুপ্তের বাড়িতে উৎসাহের অন্ত ছিল না। এই সময় নজরুলের সাথে আশালতার ঘনিষ্টতা বৃদ্ধি পায়। এই সময় নজরুল একটি গান রচনা করেছিলেন। গানটি হলো-

জুন ১৯২২ (১৮ জ্যৈষ্ঠ- ১৬ আষাঢ় ১৩২৯)
নজরুলের সাথে আশালতার ঘনিষ্টতা বৃদ্ধির সূত্রে বিষয়টি প্রণয়ের পর্যয়ে চলে যায়। প্রথম দিকে সকলের কাছে এঁদের মেলামেশা স্বাভাবিক মনে হয়েছিল। কিন্তু যখন কেউ কেউ এঁদের এই মেলমেশাকে প্রণয়ের সম্পরক হিসেবে ভাবতে শুরু করলেন, তখন শুরু হলো গুঞ্জন। নজরুল ও আশালতার আচরণ সে ভাবনাকে অনেকটা উসকে দিয়েছিল। ধীরে ধীরে ঘটনাটি কান্দিরপাড়ের স্থানীয় মানুষের কাছে এটি একটি প্রাত্যহিক আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছিল। বিষয়টি রক্ষণশীল হিন্দু সমাজ সহজভাবে মেনে নিতে পারলেন না। তাঁদের বাদ-প্রতিবাদে অচিরেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নজরুল-বিদ্বেষী উঠেছিল। ফলে তাঁর পক্ষে কুমিল্লায় থাকাটাই মুসকিল হয়ে উঠেছিল। এই অবস্থায় তিনি জুন মাসের শেষের দিকে কুমিল্লা থেকে কলকাতায় চলে আসেন। তাঁর কলকাতায় প্রত্যাবর্তনের সঠিক তারিখ জানা যায় না। তবে ২৬ জুন (সোমাবার ১২ আষাঢ়), কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের স্টুডেন্টস হলে, সদ্য-প্রয়াত কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের স্মরণসভায় নজরুল উপস্থিত ছিলেন। তাই ধারণা করা যায়, নজরুল কলকাতায় ফিরেছিলেন ২৫শে জুনে বা তার আগে। অন্যদিকে কুমিল্লার স্থানীয় লোকদের সমালোচনার মুখে, আশালতার মা গিরিবালা কুমিল্লার কান্দিরপাড় থেকে সমস্তিপুরে তাঁর পিতার বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন।

কলকাতায় ফিরে আসার আগে নজরুলের রচিত একটি গানের সন্ধান পাওয়া যায়, তা হলো-

সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের মহাপ্রয়াণ ও নজরুল
১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে জুন (রবিবার ১১ আষাঢ়) কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত মাত্র ৪০ বৎসর বয়সে ব্রঙ্কাইটিস রোগে মৃত্যুবরণ করেন। এই ঘটনায় নজরুল গভীরভাবে শোকাহত হন। তাঁর স্মরণে নজরুল একটি গান রচনা করেন। গানটি হলো- দৈনিক সেবক পত্রিকায় নজরুল
খেলাফত আন্দোলন এবং অসহযোগ আন্দোলন-কে বেগবান করার উদ্দেশ্যে মাওলানা আকরাম খাঁ দৈনিক জামানা ও দৈনিক সেবক নামক দুটি পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন। ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের ১ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার ১৫ অগ্রহায়ণ ১৩২৮) দৈনিক সেবক প্রকাশিত হয়। সরকার বিরোধী সম্পাদকীয় রচনার জন্য ১০ ডিসেম্বর (শনিবার, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৩২৮) সেবক বাজেয়াপ্ত হয় এবং আকরাম খাঁকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর, মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলীকে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক করে সাপ্তাহিক মোহাম্মদীর দৈনিক সংস্করণ হিসেবে দৈনিক মোহাম্মদী  প্রকাশ করা হয়। এ সময়  মাওলানা আকরাম খাঁ কারাগারে থেকে পত্রিকা পরিচালনার ব্যাপারে মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন। ইতোমধ্যে দৈনিক সেবকের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে দৈনিক মোহাম্মদীর স্থলে পুনরায় দৈনিক  সেবক প্রকাশ করা হয়।

১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে মহাত্মা গান্ধী এই আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিলে, পত্রিকা দুটির জনপ্রিয়তা হারায়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য, আকরাম খাঁ নজরুল ইসলামকে সেবক সম্পাদকীয় বিভাগে যোগদানের জন্য অনুরোধ করে চিঠি লিখেছিলেন ১৪ চৈত্র (২৮ মার্চ ১৯২২) তারিখে। সেবার নজরুল এই অনুরোধ রক্ষা করেন নি।  আকরাম খাঁ কারাগারে থাকাবস্থায় মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলীকে সেবকে যোগদানের জন্য কুমিল্লায় চিঠি পাঠিয়েছিলেন। এজন্য নজরুলে সম্মানী ধার্য করা হয়েছিল মাসিক ১০০ টাকা। এদিকে কুমিল্লায় আশালতার সাথে নজরুল ঘনিষ্টতা বৃদ্ধি এবং এই কারণে সৃষ্ঠ সামাজিক প্রতিবন্ধকতায় তিনি মানসিক অশান্তিতে ছিলেন। এর সাথে ছিল আর্থিক অভাব। এই অবস্থায় ওয়াজেদ আলী'র চিঠি নজরুলকে কলকাতায় ফিরে  আসার জন্য উদবুদ্ধ করেছিল। অবশেষে জুন মাসের শেষে নজরুল কলকাতায় ফিরে আসেন এবং সেবক পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগে যোগ দিয়েছিলেন। এই সময় তিনি ৩২ নম্বর কলেজ স্ট্রিটে আফজাল-উল হকের বাসায় এসে উঠেছিলেন।

কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের মৃত্যুর পর, তাঁর স্মরণে নজরুল সেবকের পত্রিকায় একটি সম্পাদকীয় রচনা করেন। ওই পত্রিকায় কর্মরত মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী আবুল কালাম শামসুদ্দীন এই রচনাটি নিজেদের মতো পরিমার্জিত করে প্রকাশ করেন। নজরুল এতে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন এবং ডাকযোগে পদত্যাগ পত্র পাঠান। এর ভিতর দিয়ে নজরুলের সাথে সেবক পত্রিকার সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটে।

এই মাসে পত্রিকায় প্রকাশিত কবিতা

জুলাই ১৯২২ (১৭ আষাঢ়-১৫ শ্রাবণ ১৩২৯)
এই সময় কলকাতার বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠনগুলোতে সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের মহাপ্রয়াণ-কেন্দ্রিক নানা আলোচনা সভা। নজরুল এরূপ ২টি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগদান করেন এবং নিজের রচিত কবিতা ও গান পরিবেশন করেন।

এই মাসে পত্রিকায় প্রকাশিত কবিতা ও গান

  • আমার বিদায়-রথের চাকার ধ্বনি [তথ্য]
    সহচর। শ্রাবণ ১৩২৯। শিরোনাম: শেষের গান। উপরে 'গান' উল্লেখ ছিল। উল্লেখ্য গানটি ছায়ানট কাব্যগ্রন্থে গানটি প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এর সাথে রচনার তারিখ উল্লেখ আছে-'কলিকাতা, শ্রাবণ ১৩২৮'।
  • মানস-বধূ । কবিতা
    মাসিক বসুমতী। শ্রাবণ ১৩২৯। শিরোনাম: মানস-বধূ। পৃষ্ঠা: ৪২৯ [নমুনা]
  • সত্যেন্দ্র-প্রয়াণ-গীতি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের স্মরণে রচিত গান
    চল চঞ্চল বাণীর দুলাল [তথ্য]
    মাসিক বসুমতী। শ্রাবণ ১৩২৯। শিরোনাম: "সত্য"-প্রয়াণ-গীতি (বাউলের সুর) [নমুনা]
  • সত্য-কবি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের স্মরণে রচিত কবিতা।
    মাসিক ভারতী।  শ্রাবণ ১৩২৯। শিরোনাম: কবি সত্যেন্দ্র। পৃষ্ঠা: ৩১৩-৩১৪ [নমুনা]
ধূমকেতু নজরুল
দৈনিক সেবক পত্রিকায় কর্মরত অবস্থায়, নজরুল মোটামুটি কিছুটা আর্থিকভাব স্বস্তি লাভ করেছিল। আবার এই পত্রিকার কাছে ছেড়ে দিয়ে তিনি আবার আর্থক টানপোড়নে পরে যান। এরই ভিতরে চট্টগ্রামের হাফিজ মাসউদ আহমদ একটি রাজনৈতিক সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশের জন্য মুজাফ্ফর আহমদকে অনুরোধ করেন এবং সেই সাথে ২৫০ টাকা মূলধন প্রদানের অঙ্গীকার করেন। এত অল্প টাকায় পত্রিকা প্রকাশের ভাবনাকে তিনি হটকারিতা বিবেচনা করে,  হাফিজ মাসউদের প্রস্তাব গ্রহণ করলেন না। পরে তিনি নজরুলের কাছে পত্রিকা প্রকাশের প্রস্তাব রাখেন। নজরুল এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। শুধু তাই নয় নতুন পত্রিকা প্রকাশের জন্য তাঁর বন্ধু-বান্ধবদের কাছে সাহায্য-সহযোগিতার প্রার্থনাও করেন।

নজরুল পত্রিকাটির নাম রাখেন 'ধূমকেতু'। সেকালের সরকারি নিয়মানুসারে আফজাল-উল হক চিফ প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত থেকে পত্রিকা প্রকাশের অনুমতি গ্রহণ করেন। সে সময় পত্রিকা প্রকাশের জন্য কোনো জামানত জমা দিতে হতো না। ফলে পত্রিকা প্রকাশের প্রাথমিক উদ্যোগে অর্থ কোনো সমস্যা হয় নি। পত্রিকার ঠিকানা দেওয়া হয়েছিল ৩২ নম্বর কলেজ স্ট্রিট। উল্লেখ্য সে সময়ে এই বাসায় আফজাল-উল হক এবং নজরুল বাস করতেন। এরপর জুলাই মাসের পুরো সময় জুড়ে ধূমকেতু প্রকাশের করমকাণ্ডে নজরুল ব্যস্ত সময় কাটান।

আগষ্ট ১৯২২ (১৬ শ্রাবণ-১৪ ভাদ্র ১৩২৯)

শেষ পর্যন্ত ৩২ নম্বর কলেজ স্ট্রিট থেকে, ধূমকেতু পত্রিকাটির প্রকাশনা শুরু হয়েছিল '১৩২৯ বঙ্গাব্দের ২৬ শ্রাবণ (শুক্রবার ১১ আগষ্ট ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দ)। এর সারথী (সম্পাদক) ও স্বত্বাধিকারী ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। কর্মসচিব (ম্যানেজার) ছিলেন শান্তিপদ সিংহ। প্রকাশক ও মুদ্রাকর ছিলেন আফজাল-উল হক। পত্রিকার প্রথম পাতায় গ্রহ-নক্ষত্রে জগতে পৃথিবীর ছবি ছিল এবং পৃথিবীর আকাশে গতিময় ধূমকেতুর আবির্ভাব ঘটেছে। হাতে আঁকা এই ছবির নিচে ছিল পত্রিকা প্রকাশের সময়ের উল্লেখ ছিল- 'সপ্তাহে দুইবার করিয়া বাহির হইবে।'

পত্রিকাটির দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছিল ৮ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির অভিনন্দনবার্তা। এই ব্যক্তিবর্গের মধ্যে ছিলেন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সরোজিনী, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বারীন, যতীন্দ্রমোহন বাগচী, পরিসুন্দরী ঘোষ, উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিরজাসুন্দরী দেবী। এর ভিতরে  রবীন্দ্রনাথ যতীন্দ্রমোহন অভিনন্দন জানিয়েছিলেন কবিতায়। রবীন্দ্রনাথ তাঁর অভিনন্দন-পত্রে লিখেছিলেন-
                অমঙ্গলের মঙ্গল ঘট
কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষু
আয় চলে আয়, রে ধূমকেতু,
আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু,
দুর্দিনের এই দুর্গশিরে
        উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।
অলক্ষণের তিলক রেখা,
রাতের ভালে হোক্ না লেখা
জাগিয়ে দেরে চমক্ মেরে'
        আছে যারা অর্দ্ধচেতন।
২৪ শ্রাবণ
  ২৩২৯                শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
পত্রিকাটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল ৮, পৃষ্ঠার মাপ ছিল ক্রাউন ১৫"x১০"। এর প্রতি সংখ্যার মূল্য ছিল ১ আনা। এবং বাৎসরিক চাঁদা ছিল ৫ টাকা।

আগেই উল্লেখ করেছি যে. ধূমকেতু প্রকাশের জন্য হাফিজ মাসউদের ২৫০ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দিয়েছিলেন ২০০ টাকা। হাফিজ মাসউদ ছিলেন পুলিশের চর। পত্রিকার বিষয়ে সংবাদ পাওয়ার জন্য পুলিশ তাঁকে ২৫০ টাকা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু পুলিশ ২০০ টাকা দেওয়ার পর বাকি টাকা দেয় নি।

ধূমকেতু । প্রথম বর্ষ। প্রথম সংখ্যা
১১ আগষ্ট ১৯২২ (শুক্রবার, ২৬ শ্রাবণ ১৩২৯)
  • সম্পাদকীয়। সারথী পথের খবর। পৃষ্ঠা: ৩-৪। রুদ্র-মঙ্গল প্রবন্ধগ্রন্থে ' আমার পথ' শিরোনামে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
  • ধূমকেতু। পৃষ্ঠা ৪-৫। অগ্নি-বীণা কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
  • বিদ্রোহী। প্রথম সংখ্যা। সানাই-এর পোঁ। এই কবিতার শেষে বলা হয়, 'এই কবিতাটি প্রথমে 'মোসলেম ভারত' পত্রিকায় প্রকাশিত হয় হয়। পরে এটা ' বিজলী প্রবাসী' প্রভৃতি পত্রিকায় উদ্ধৃত হয়।...'।  নজরুলের এই কবিতার অনুকরণে শ্রীপ্রভাতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় 'দীন' নামক একটি কবিতা রচনা করেছিলেন। কবিতাটি এই সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। পৃষ্ঠা: ৯-১১]
     
  • ল্যাবেন্ডিশ বাহিনীর বিজাতীয় সঙ্গীত
    গান: কে বলে মোদেরে ল্যাডাগ্যাপচার  [তথ্য]
    ধূমকেতুর এই সংখ্যায় গানটি প্রকাশিত হওয়ার পরে, এটি ভাঙার গান গ্রন্থের প্রথম সংস্করণে [শ্রাবণ ১৩৩১ বঙ্গাব্দ। আগষ্ট ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দ] "ল্যাবেন্ডিশ বাহিনীর বিজাতীয় সঙ্গীত" শিরোনামে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল
ধূমকেতু । প্রথমবর্ষ। দ্বিতীয় সংখ্যা
৩০ শ্রাবণ  ১৩২৯, মঙ্গলবার, ১৫ আগষ্ট ১৯২২।
  • সম্পাদকীয়: কাণার বোঝা কুঁজোর ঘাড়ে। পৃষ্ঠা: ৩-৪। অগ্রন্থিত প্রবন্ধ
  • ভিক্ষা দাও! ভিক্ষা দাও [তথ্য]
    [পৃষ্ঠা: ৩] গানটি ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে (অগ্রহায়ণ ১৩২৮) নজরুল কুমিল্লায় যান এবং কান্দি পাড়ায় বীরেন সেনের বাসায় এই গানটি রচনা করেছিলেন।
  • জাগরণী [জাগৃহি]। ধূমকেতু পত্রিকার প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা (৩০ শ্রাবণ ১৩২৯, মঙ্গলবার ১৫ আগষ্ট ১৯২২) প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। শিরোনাম ছিল- 'জাগরণী'।  পৃষ্ঠা: ৩। বিষের বাঁশী (১৩৩১ বঙ্গাব্দের ১৬ই শ্রাবণ মাসে (শুক্রবার ১ আগষ্ট ১৯২৪) কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল 'জাগৃহি' শিরোনামে।
ধূমকেতু । প্রথমবর্ষ। তৃতীয় সংখ্যা
১লা ভাদ্র ১৩২৯, শুক্রবার ১৮ আগষ্ট ১৯২২
  • সম্পাদকীয়। রুদ্রমঙ্গল। পৃষ্ঠা ৩। রুদ্র-মঙ্গল প্রবন্ধগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
  • আগ্‌ডুম বাগ্‌ডুম। পৃষ্ঠা: ৩
  • পত্রিকাটির প্রথম বর্ষ চতুর্থ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল ।
ধূমকেতু। প্রথমবর্ষ। চতুর্থ সংখ্যা
৫ ভাদ্র ১৩২৯, মঙ্গলবার ২২ আগষ্ট ১৯২২
  • সম্পাদকীয়। ' মোরা সবাই স্বাধীন মোরা সবাই স্বাধীন মোরা সবাই রাজা' [পৃষ্ঠা ৩] দুর্দিনের যাত্রী (অক্টোবর ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দ) প্রবন্ধগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
  • রক্তাম্বরধারিণী মা কবিতা। পৃষ্ঠা: ৩।  অগ্নি-বীণা গ্রন্থে সংকলিত
  • হুগলীর ডাব-নারকেল শিরোনামে একটি সংবাদ পরিবেশিত হয়। [পৃষ্ঠা ৯]। উক্ত সংবাদ থেকে জানা যায়- 'গত মঙ্গলবার' অর্থাৎ  ৩০ শ্রাবণ ১৩২৯, ১৫ আগ্ষ্ট ১৯২২, তারিখে নজরুল কলকাতা থেকে একটি অনুষ্ঠানে যোগদান করেছিলেন। সংবাদটি বেশ রঙ্গব্যঙ্গে প্রকাশিত হয়েছিল। যেমন-
    'গত মঙ্গলবার হুগলী জাতীয় বিদ্যামন্দিরের বার্ষিক পারিতোষিক বিতরণ সভা হয়েছিল । কলকাতা থেকে যান শ্রীযুক্তা মোহিনী দেবী, তাঁর তৃতীয় মেয়ে, ছোট মেয়ে আর এক নাতনী, এবং কাঁজী নজরুল ইসলাম ও দুটি কাপড়ের বোঁচকা। বিপুল সমাদরের সঙ্গে তাঁদের অভ্যর্থনা করেন হুগলী কংগ্রেস-কর্ম্মীগণ। স্কুলের ছেলেরা রক্ত-রাঙ্গা খদ্দর পরে এক অভিনব চোখ-জুড়ানো দৃশ্যের সৃজন করেছিল। সে এক দেখবার মত জিনিস, ওখানের জাতীয় বিদ্যামন্দিরের কর্ম্মিগণের মত উৎসাহ্‌ বাঙলা অন্য কোথাও দেখা যায় না। সাধারণতঃ  ছেলেদের দেশকে ভালোবাসা "শিক্ষার বই উপহার দেওয়া হয়। ছেলেদের গান - আবৃত্তি হয়। কাজী নজরুল ইস্‌লাম সভায় প্রথমে ও শেষে কয়েকটী গান করেন। শ্রীযুত অতুল সেন তাঁর অপূর্ব্ব কৌতুক অভিনয় দেখিয়ে "মধুরেণ সমাপয়েৎ করেন। হাঁ বলতে ভুলে গেছি, মধ্যে কয়েকজন বক্তার বক্তিমের গরমে লোক একেবারে ভেপ্‌সে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। দেশ-মাতার প্রতি শ্রদ্ধায়-ভক্তিতে অনেক বক্তাই স্বরভঙ্গ দোষ-দুষ্ট হয়ে পড়লেন, কিন্ত দেশের জন্য তাঁদের কাছে ভিক্ষা চাওয়ায় তারা মাসিক গোটাই একটা ক'রে টাকা দেবেন ব'লে দিব্যি ক'রে বসলেন। কিন্তু বলেই তাদের প্রাণ আই ঢাই করতে লাগ্‌ল ব'লে বাড়ীমুখো হয়ে দে ছুট । এই সব বাক্যি সার রায় বাহাদুরের গোষ্ঠীকে কেনই বা 'বিব্রত' করা হয়েছিল আর কেনই যে এমন হীন ভিক্ষা নেওয়া হয়েছিল, তা বুঝে উঠ্‌তে পারিনি আর পার্‌বও না। এ, একটা ক'রে টাকা তাদের মুখের ওপর ছুঁড়ে ফেলে দিলে তবে কখনো ইয়ে হ'ত। সভানেত্রী মাতা মোহিনী দেবী সুন্দর কয়েকটা কথা বলার পর সভা ভিসমিস।
ধূমকেতু। প্রথম বর্ষ। পঞ্চম সংখ্যা
৮ ভাদ্র ১৩২৯, শুক্রবার ২৫ আগষ্ট ১৯২২ ধূমকেতু । প্রথম বর্ষ। ষষ্ঠ সংখ্যা
১২ ভাদ্র ১৩২৯, মঙ্গলবার ২৯ আগষ্ট ১৯২২ ধূমকেতু । প্রথম বর্ষ। সপ্তম সংখ্যা। মোহরম সংখ্যা
১২ ভাদ্র ১৩২৯, মঙ্গলবার ২৯ আগষ্ট ১৯২২
ধূমকেতুর প্রথম বর্ষ ষষ্ঠ ও সপ্তম সংখ্যা একই দিনে প্রকাশিত হয়েছিল। মূলত সপ্তম সংখ্যা ছিল মোহরেমের বিশেষ সংখ্যা। এই সংখ্যায় নজরুলের রচিত যে সকল রচনা প্রকাশিত হয়েছিল, সেগুলো হলো-
সেপ্টেম্বর ১৯২২ (১৫ ভাদ্র- ১৩ আশ্বিন ১৩২৯)
ধূমকেতু পত্রিকায় নজরুলের ব্রিটিশ বিরোধী বক্তব্য প্রকাশের জন্য, সরকারে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছিল ৩২ নম্বর কলেজ স্ট্রিটের বাড়িটির উপর। ধূমকেতু প্রকাশের কারণে বড় ধরনের পুলিশি হাঙ্গামা আশঙ্কায় ঐ বাড়ির মূল মালিক শীল ভ্রাতৃদ্বয় শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। তাঁরা এই বাড়ি থেকে ধূমকেতু প্রকাশের ক্ষেত্রে আপত্তি তোলেন। অবশ্য এর আগে থেকেই নজরুল পত্রিকা প্রকাশের জন্য পৃথক একটি বাড়ি খুঁজছিলেন। ইতিমধ্যে বালিয়া জেলার জনৈক দুবে একটি বাড়ির সন্ধান পেয়েছিলেন, তাই নজরুল বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার কথা বাড়ির মালিককে জানিয়ে দেন। অবশেষে ২ সেপ্টেম্বর (শনিবার ১৬ ভাদ্র ১৩২৯), ধূমকেতু পত্রিকার অফিস ৭ প্রতাপ চাটুজ্যে লেনের দোতলায় স্থানান্তরিত হয়।
ধূমকেতু । প্রথম বর্ষ। অষ্টম সংখ্যা
২৬ ভাদ্র ১৩২৯, মঙ্গলবার ১২ সেপ্টেম্বর ১৯২২

এই সংখ্যা থেকে ধূমকেতুর সারথি হিসেবে নজরুলের নাম পাওয়া যায়। উল্লেখ্য, আগের সংখ্যাতে নজরুলের নাম যুক্ত ছিল সম্পাদক হিসেবে। এই সংখ্যা থেকে ধূমকেতু ৭ নম্বর প্রতাপ চাটুয্যের লেন থেকে পত্রিকাটি প্রকাশিত হতে থাকে।
  • সম্পাদকীয় ' বিষ-বাণী '। [পৃষ্ঠা: ৩-৫]  রুদ্র-মঙ্গল নামক প্রবন্ধ গ্রন্থে স্থান পেয়েছে।
  • কামাল পাশা [কবিতা]। উপাসনা পত্রিকার 'আশ্বিন ১৩২৮' সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।  ধূমকেতু পত্রিকার [২৬ ভাদ্র ১৩২৯, মঙ্গলবার ১২ সেপ্টেম্বর ১৯২২] সংখ্যায় কবিতাটির অংশবিশেষ ছাপা হয়েছিল। পরে অগ্নি-বীণা নামক কাব্যগ্রন্থে স্থান পেয়েছে।
  • 'বাংলার বিপ্লব যুগের প্রথম সেনানায়ক/পুরুষ সিংহ যতীন্দ্রনাথ' প্রবন্ধ।
১৯ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার ২ আশ্বিন ১৩২৯), কামাল আতাতুর্কের বিজয় উৎসব হয় কলকাতায়। এই ঘটনা উপলক্ষে কলকাতার টাউন হলে কলকাতার নাগরিকদের নামে আহুত সভায় মোস্তফা কামাল পাশার বিজয়ে আলোচনা সভা হয়। এরপর একটি বিজয় শোভাযাত্রা বের করা হয়। এই শোভাযাত্রায় নজরুল ঘোড়ায় চড়ে পথ পরিক্রমণ করেন এবং তাঁর রচিত ' কামাল পাশা' কবিতা আবৃত্তি করেন।

ধূমকেতু। প্রথম বর্ষ। নবম সংখ্যা
২৯ ভাদ্র ১৩২৯, শুক্রবার ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯২২ ধূমকেতু। প্রথম বর্ষ। দশম সংখ্যা
২ আশ্বিন ১৩২৯, মঙ্গলবার ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯২২ ধূমকেতু। প্রথম বর্ষ। একাদশ সংখ্যা
৫ আশ্বিন ১৩২৯, শুক্রবার ২২ সেপ্টেম্বর ১৯২২ ধূমকেতু। প্রথম বর্ষ। দ্বাদশ সংখ্যা। আগমনী সংখ্যা
৯ আশ্বিন ১৩২৯, মঙ্গলবার ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯২২
  • আনন্দময়ীর আগমনে [কবিতা] পৃষ্ঠা: ৩-৪] এই কবিতাটি সম্পাদকীয় হিসেব ব্যবহৃত হয়েছিল। উল্লেখ্য এই কবিতাটি তিনি আনন্দবাজার পত্রিকার জন্য লিখেছিলেন। কিন্তু কবিতাটি প্রকাশিত হলে, সরকারের বিরাগভাজন হওয়ার সম্ভবনা আছে, এমন বিবেচনায় কবিতাটি প্রকাশ করে নি। ধূমকেতুতে প্রকাশের পর, সরকার ধূমকেতুর এই সংখ্যা বাজেয়াপ্ত করেছিল।
  • আগমনী । [কবিতা]। উপাসনা পত্রিকার 'আশ্বিন ১৩২৮' সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। ধূমকেতু পত্রিকার ৯ আশ্বিন ১৩২৯ সংখ্যায় কবিতাটি পুনর্মুদ্রিত হয়েছিল।  পরে অগ্নি-বীণা নামক কাব্যগ্রন্থে স্থান পেয়েছে।
এই সংখ্যায় 'অবসর গ্রহণ' শিরোনামে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এই বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়- শারদীয় পূজাপলক্ষে ধূমকেতুর প্রকাশ বন্ধ থাকবে। এই কারণে ১২, ১৬ ও ১৯শে আশ্বিন, পত্রিকটা প্রকাশিত হবে না।

অক্টোবর ১৯২২ (১৩ আশ্বিন- ১৪ কার্তিক ১৩২৯)
এই মাসে ধুমকেতুতে প্রকাশিত বিষয়বস্তু সরকারি মহলে বিশেষভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ২০ অক্টোবর লীলা মিত্রের 'বিদ্রোহের কৈফিয়ত' নামক রচনা প্রকাশের জন্য, ধূমকেতুর ওই সংখ্যা বাজেয়াপ্ত করা হয়।

ধূমকেতু। প্রথম বর্ষ। ত্রয়োদশ সংখ্যা
২৬ আশ্বিন ১৩২৯, শুক্রবার ১৩ অক্টোবর ১৯২২
  • সম্পাদকীয় 'ধূমকেতুর' পথ'  [পৃষ্ঠা: ৩] রুদ্র-মঙ্গল নামক প্রবন্ধ গ্রন্থে স্থান পেয়েছে।
  • কাজী নজরুল ইসলামের রাণীগঞ্জ আগমন উপলক্ষে, গুণমুগ্ধ শুভাকাঙ্ক্ষীগণ 'অভিনন্দন-গীত' নামক একটি কবিতা উৎসর্গ করেন। এছাড়া 'বর্ধমানের পক্ষ থেকে বিদ্রোহী -কবির অভিনন্দন' নামক রচনা এই সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। রচয়িতা শ্রীশক্তিপদ ভট্টাচার্য্য। [পৃষ্ঠা: ১৫]
ধূমকেতু। প্রথম বর্ষ। চতুর্দশ সংখ্যা
৩০ আশ্বিন ১৩২৯, মঙ্গলবার ১৭ অক্টোবর ১৯২২ ধূমকেতু। প্রথম বর্ষ। পঞ্চদশ সংখ্যা। দেওয়ালি সংখ্যা
৩ কার্তিক ১৩২৯, শুক্রবার ২০ অক্টোবর ১৯২২ ধূমকেতু। প্রথম বর্ষ। ষোড়শ সংখ্যা
৭ কার্তিক ১৩২৯, মঙ্গলবার ২৪ অক্টোবর ১৯২২ ধুমকেতু পত্রিকার সপ্তদশ সংখ্যা প্রকাশের আগেই নজরুলের রচিত দুটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। এই গ্রন্থ দুটি হলো- অগ্নিবীণা ও যুগবাণী। ধূমকেতু। প্রথম বর্ষ। সপ্তদশ সংখ্যা
১০ কার্তিক ১৩২৯, শুক্রবার ২৭ অক্টোবর ১৯২২ ধূমকেতু। প্রথম বর্ষ। অষ্টাদশ সংখ্যা
১৪ কার্তিক ১৩২৯, মঙ্গলবার ৩১ অক্টোবর ১৯২২ এই মাসে পূর্বে প্রকাশিত কবিতা
  • হারা-মণি কবিতা
    নারায়ণ। 'কার্তিক ১৩২৮ ' সংখ্যা। পৃষ্ঠা: ১২১৬-১২১৭। [নমুনা]
    উল্লেখ্য, কবিতাটি ১৩২৮ বঙ্গাব্দের জ্যৈষ্ঠ মাসে কুমিল্লায় রচিত হয়েছিল। পরে ছায়ানট  প্রথম সংস্করণে [আশ্বিন ১৩৩২] অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
নভেম্বর ১৯২২ (১৫ কার্তিক- ১৪ অগ্রহায়ণ ১৩২৯)
সরকার বিরোধী বক্তব্যের কারণের ধূমকেতু বাজেয়াপ্তের আয়োজন সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল। এ সংবাদ নজরুল ও ধূমকেতু'র সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা জানতেন। তাই নজরুল একরকম জেলে যাওয়ার জন্য যেন প্রস্তুতই ছিলেন। এই অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছিল ধূমকেতু'র ঊনবিংশ ও বিংশ সংখ্যা।
ধূমকেতু। প্রথম বর্ষ। ঊনবিংশ সংখ্যা
১৭ কার্তিক ১৩২৯, শুক্রবার ৩ নভেম্বর ১৯২২ ধূমকেতু। প্রথম বর্ষ। বিংশ সংখ্যা
২১ কার্তিক ১৩২৯, মঙ্গলবার ৭ নভেম্বর ১৯২২
ধূমকেতুর প্রথম বর্ষ বিংশ সংখ্যা প্রকাশের পরের দিন [৮ ই নভেম্বর (মঙ্গলবার ২২ কার্তিক ১৩২৯)] রাজদ্রোহিতার অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪ ধারায়, পত্রিকার সম্পাদক নজরুল ইসলাম এবং মুদ্রাকর প্রকাশক আফজাল-উল হকের বিরুদ্ধে গ্রফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এই সময় ৩২ কলেজ স্ট্রিট থেকে আফজাল-উল হককে গ্রেফতার করা হয়। নজরুল গ্রেফতার এড়ানোর জন্য সমস্তিপুরে চলে যান। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, ১৯২২ ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে তিনি কুমিল্লায় যান। এটা ছিল নজরুলের তৃতীয়বার কুমিল্লা ভ্রমণ। এই সময় নজরুলের সাথে আশালতার ঘনিষ্টতা বৃদ্ধির সূত্র বিষয়টি প্রণয়ের পর্যয়ে চলে যায়। এ নিয়ে কুমিল্লায় ব্যাপক গুঞ্জন শুরু হলে, নজরুল জুন মাসের দিকে কুমিল্লা থেকে কলকাতায় ফিরে আসেন। অন্যদিকে কুমিল্লার স্থানীয় লোকদের সমালোচনার মুখে, আশালতার মা গিরিবালা আশলতাকে সাথে নিয়ে সমস্তিপুরে তাঁর পিতার বাড়িতে চলে যান। নজরুল গ্রেফতার এড়ানোর জন্য সমস্তিপুরে এসের গিরিবালার আশ্রয়ে এসে উঠেছিলেন।

এই অবস্থায় ধূমকেতু পত্রিকার দায়িত্ব নেন অমরেশ কাঞ্জিলাল। তাঁর তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত হয়েছিল ধূমকেতু। প্রথম বর্ষ। একবিংশ সংখ্যা।
ধূমকেতু। প্রথম বর্ষ। একবিংশ সংখ্যা
২৪ কার্তিক ১৩২৯, শুক্রবার ১০ নভেম্বর ১৯২২
এই সংখ্যার সারথি ছিলেন অমরেশ কাঞ্জিলাল। পত্রিকা প্রকাশের সময় নজরুল সমস্তিপুর ছিলেন। ধূমকেতু। প্রথম বর্ষ। দ্বাবিংশ সংখ্যা
১ অগ্রহায়ণ ১৩২৯, শুক্রবার ১৭ নভেম্বর ১৯২২
এই সংখ্যার সারথি ছিলেন অমরেশ কাঞ্জিলাল। পত্রিকা প্রকাশের সময় নজরুল সমস্তিপুর ছিলেন। এই সংখ্যায় ধূমকেতু অফিসে পুলিশের তল্লাসি চালানোর খবরটি প্রকাশিত হয়েছিল এই ভাবে-
'গত ৮ই নভেম্বর সকাল বেলা, লালবাজারের গ্রহ ধূমকেতু কেন্দ্রে উদয় হয়েছিলেন। একই সময়ে আর একদল প্রেসেও দেখা দিয়াছিলেন। তারা কাজী নজরুল ইসলাম চাইলেন। কিন্তু তিনি অনুপস্থিত থাকায় দেওয়ালী (১৫শ) এবং আগমনী (১২শ) সংখ্যার সব কাগজ, চিঠিপত্র ও হিসেব ইত্যাদি নিয়ে যান। সবে 'গ্রহণ' লাগা শুরু হোল।'
এই সংখ্যায় প্রকাশিত নজরুলের রচনা
২২শে নভেম্বর (বুধবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৩২৯) নজরুল বিহারের সমস্তিপুর থেকে গিরিবালা দেবী ও আশালতা দেবীকে নিয়ে কুমিল্লার পথে রওনা দেন। পথিমধ্যে বেলুরে  এক বন্ধুর বাড়িতে দু'দিন ছিলেন। এখানে তিনি আর্য পাবলিশিং হাউসের শরচ্চন্দ্র গুহের কাছ থেকে কিছু টাকা সংগ্রহ করেন। এরপর তিনি গিরিবালা দেবী ও আশালতাকে নিয়ে কুমিল্লা চলে যান। এই সময় তিনি ধূমকেতু পত্রিকার স্বত্ব বিরজাসুন্দরীর নামে লিখে দেন।

২৩শে নভেম্বর (বৃ্হস্পতিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৩২৯) বেলা ১২টার সময়ে পুলিশ ইন্ডিয়ান পেনালকোড ১২৪-ক ধারায়  কুমিল্লা থেকে নজরুলকে গ্রেফ্তার করে। নজরুলের গ্রেফতারের সংবাদ জানাজানি হয়ে গেলে উৎসুক জনতা তাঁকে দেখার জন্য জড় হতে থাকলে, প্রশাসন নজরুলকে কলকাতায় পাঠানোর ব্যবস্থা করে। একই দিনে 'যুগবাণী বিস্ফোরক উপাদানে পরিপূর্ণ' নামে স্বরাষ্ট্র বিভাগের তদন্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বাংলা সরকার ১৬৬৬১ পি নম্বর গেজেটে বিজ্ঞপ্তি মারফত জানায় যে, রাজদ্রোহমূলক প্রবন্ধ রচনা ও প্রচারণার অভিযোগে ফৌজদারি বিধির ৯৯-এ ধারা অনুসারে নজরুলের যুগবাণী'র নিবন্ধ সংকলন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং এর সমস্ত কপি বাজেয়াপ্ত করে।

২৪শ নভেম্বর (শুক্রবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৩২৯) পুলিশ প্রহরায় চট্টগ্রাম মেলে নজরুলকে কলকাতায় পাঠানো হয়। ট্রেনটি
কলকাতায়
পৌঁছায় সন্ধ্যাবেলায়। তাঁকে বিচারাধীন বন্দি হিসেবে কলকাতা প্রেসিডেন্সি জেলে রাখা হয়।

২৫শে নভেম্বর (শনিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৩২৯) তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়।

২৯শে নভেম্বর (বুধবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৩২৯) ব্যাঙ্কশাল স্ট্রিটের পুলিশ কোর্টের চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাশে হাজির করা হয়। এই দিন রাজাদ্রোহিতার মামলা শুরু হয়। এই মামলায় বিনা পারিশ্রমিকে কবির পক্ষে মামলা চালান আইনজীবী মলিন মুখোপাধ্যায়। এই মামলায় পত্রিকার প্রকাশক আফজাল-উল হককে সরকার পক্ষের সাক্ষী করা হয়েছিল। শুনানি শেষে নজরুলকে প্রেসিডেন্সি জেলে পাঠানো হয়।

নভেম্বর মাসের বাকি ১দিন (৩০ শে নভেম্বর) নজরুল প্রেসিডেন্সি জেলে কাটান। এই  মাসে নজরুলের রচিত বা প্রকাশিত কোনো গানের সন্ধান পাওয়া যায় নি।

ডিসেম্বর ১৯২২ (১৫ অগ্রহায়ণ-১৬ পৌষ ১৩২৯)
ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই নজরুলকে প্রেসিডেন্সি জেলে ছিলেন। এই সময় ধূমকেতু পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল অমরেশ কাঞ্জিলাল এবং জিতেন্দ্রনাথ লাহিড়ি'র তত্ত্বাবধানে।
ধূমকেতু। প্রথম বর্ষ। ষড়্‌বিংশ সংখ্যা
২৬ অগ্রহায়ণ ১৩২৯, মঙ্গলবার ১২ ডিসেম্বর ১৯২২।
এই সংখ্যার সারথি হিসেবে নাম মুদ্রিত হয়-অমরেশ কাঞ্জিলাল। সহকারী সম্পাদক ছিলেন  জিতেন্দ্রনাথ লাহিড়ি।
  • তরুণের বিদ্রাহ [সম্পাদকীয়] [পৃষ্ঠা ৩]
  • মন বুঝানো [কবিতা। রচনা সারথী। নজরুলের কবিতা কিনা সংশয় আছে]
  • বহ্ন্যুৎসব। পৃষ্ঠা: ৭। [রচয়িতার নাম নেই]
  • নপুংসকের ন্যাকামি ৭-৮। [রচয়িতার নাম নেই]
ধূমকেতু। প্রথম বর্ষ। সপ্ত‌বিংশ সংখ্যা
২৯ অগ্রহায়ণ ১৩২৯, শুক্রবার ১৫ ডিসেম্বর ১৯২২।
এই সংখ্যার সারথি হিসেবে নাম মুদ্রিত হয়-অমরেশ কাঞ্জিলাল। এই সংখ্যায় সহকারী সম্পাদক ছিলেন  জিতেন্দ্রনাথ লাহিড়ি'র নাম মুদ্রিত হয় নি। এই সংখ্যায় পত্রিকা র প্রকাশের দিন পাল্টানোর কথা লেখা হয়। লেখাটি ছিল- 'প্রেসের সুবিধার জন্য সামনের সংখ্যা থেকে ধূমকেতু প্রতি বুধবার ও শনিবারে দেখা দেবে।' পত্রিকায় নামবিহীন সম্পাদকীয়। পৃষ্ঠা ৩-৪।

ধূমকেতু। প্রথম বর্ষ। অষ্ট‌বিংশ সংখ্যা
৫ পৌষ ১৩২৯, বুধবার ২০ ডিসেম্বর ১৯২২]
প্রতিষ্ঠাতা: কাজী নজরুল ইসলাম
সারথি: অমরেশ কাঞ্জিলাল
সম্পাদকীয় [লাঞ্ছিত। পৃষ্ঠা: ৩]

ধূমকেতু। প্রথম বর্ষ। ঊনত্রিংশ সংখ্যা
৮ পৌষ ১৩২৯, শনিবার ২৩ ডিসেম্বর ১৯২২]
প্রতিষ্ঠাতা: কাজী নজরুল ইসলাম
সারথি: অমরেশ কাঞ্জিলাল
সম্পাদকীয় [ভাববার কথা। পৃষ্ঠা: ৩] ধূমকেতু

প্রথম বর্ষ। ত্রিংশ সংখ্যা। কংগ্রেস সংখ্যা

১২ পৌষ ১৩২৯, বুধবার ২৭ ডিসেম্বর ১৯২২]
প্রতিষ্ঠাতা: কাজী নজরুল ইসলাম
সারথি: অমরেশ কাঞ্জিলাল

প্রেসিডেন্সি জেলে যাওয়ার পর এই মাসে প্রকাশিত ধুমকেতু পত্রিকায় নজরুলের রচনা প্রকাশিত হয় নি। তবে প্রবাসী পত্রিকায় তাঁর রচিত ১টি কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল। কবিতাটি হলো- জানুয়ারি ১৯২৩ (১৭ পৌষ- ১৭ মাঘ ১৩২৯)
১৬ই জানুয়ারি (মঙ্গলবার ২রা মাঘ ১৩২৯) নজরলকে ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আদালতে তাঁর লিখিত একটি 'জবানবন্দী' দাখিল করা হয়েছিল। তবে এই জবানবন্দীকে উপেক্ষা করেই তাঁকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এই জবানবন্দীটি পরে ধূমকেতু পত্রিকার ৩২তম সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।

১৭ই জানুয়ারি (বুধবার ৩রা মাঘ ১৩২৯) নজরুলকে প্রেসিডেন্সি জেল থেকে আলিপুর কারাগারে রাখা হয়। এই জেলে তাঁকে বিশেষ শ্রেণির বন্দির মর্যদা দেওয়া হয়েছিল। এই জেলে তাঁকে কয়েদিদের বিশেষ পোশাক পড়তে হতো না। তাঁর খাওয়ার ব্যবস্থাও ছিল উন্নততর। এই সময় ওই জেলে ছিলেন মাওলানা আকরাম খাঁ , বাদশা মিঞা, চাঁদ মিঞা, শামসুদ্দিন প্রমুখ। এই জেলে তিনি বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে বেড়াতেন এবং বিকেলের দিকে অন্যান্য রাজবন্দীদের সাথে গানে গল্পে হইহুল্লোড়ে সময় কাটাতেন।

২৭ জানুয়ারি (শনিবার, ১৩ মাঘ ১৩২৯) ধুমকেতু পত্রিকার সর্বশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল। হিসেবে ৩২তম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল।
ধূমকেতু। প্রথম বর্ষ। দ্বাত্রিংশ সংখ্যা। নজরুল সংখ্যা
১৩ মাঘ ১৩২৯, শনিবার ২৭ জানুয়রি ১৯২৩।
  • আত্মকথা। কবিতা। অগ্রন্থিত কবিতা
  • রাজবন্দীর জবানবন্দী। প্রবন্ধ। ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ জানুয়ারি (২৩ পৌষ ১৩২৯), প্রেসিডেন্সি জেলে এই প্রবন্ধটি রচনা করেছিলেন। ধূমকেতু পত্রিকার এই সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এরপর উপাসনা ও সহচর পত্রিকায় ফাল্গুন ১৩২৯ (ফেব্রুয়ারি ১৯২৩) সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।
ধূমকেতু পত্রিকা ছাড়া এই মাসে প্রবাসী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল 'পউষ' নামক কবিতা। এই মাসে প্রকাশিত পূর্বে রচিত রচনা ফেব্রুয়ারি ১৯২৩ (১৮ মাঘ- ১৬ ফাল্গুন ১৩২৯)
এই মাসে নজরুল আলিপুর জেলে কাটান।

২২শে ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার ১০ ফাল্গুন ১৩২৯) রবীন্দ্রনাথ তাঁর সদ্যরচিত বসন্ত নাটকটি নজরুলকে উৎসর্গ করেন। গ্রন্থটির উৎসর্গ পত্রে উল্লেখ আছে- 'উৎসর্গ/শ্রীমান্ কবি নজরুল ইস্‌লাম/স্নেহভাজেনেষু'।

২৫শে ফেব্রুয়ারি (রবিবার ১৩ ফাল্গুন ১৩২৯) রবীন্দ্রনাথ পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়ের মাধ্যমে নজরুলকে বইটি পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন।

এই মাসে নজরুলের রচিত একটি কবিতা/গান প্রবাসী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।  এটি হলো- এই মাসে প্রকাশিত পূর্বে রচিত রচনা মার্চ ১৯২৩ (১৭ ফাল্গুন-১৭ চৈত্র ১৩২৯)
এই মাসে নজরুল আলিপুর জেলে কাটান। এই মাসের শেষে পত্রিকায় ৩টি কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল। কবিতা দুটি হলো- এপ্রিল ১৯২৩ (১৮ চৈত্র ১৩২৯-১৭ বৈশাখ ১৩৩০)
১৩ই এপ্রিল (শুক্রবার ৩০ চৈত্র ১৩২৯), আলিপুর কারাগার নজরুলকে থেকে হুগলী জেল স্থানান্তরিত করা হয়। এই সময় কারা-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল যে, তাঁকে বহরমপুর জেলে পাঠানো হবে। ১৪ই এপ্রিল তাঁকে নৈহাটি রেলস্টেশনে নামানো হয় সাধারণ কয়েদির পোশাকে এবং তাঁকে হুগলি জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। এই সময় রাজবন্দী হিসেবে তাঁর সাথে ছিলেন শামসুদ্দীন, সতীন্দ্রনাথ সেন, কবি খান মুহাম্মাদ মঈনুদ্দীন, সিরাজউদ্দীন, বিজয়লাল চট্টোপাধ্যায়. গোপালচন্দ্র সেন প্রমুখ।

শুরু থেকেই এই জেলে নজরুল-সহ সকল রাজবন্দীদের উপর অকথ্য অত্যাচার করা হয়েছিল। এই অবস্থায় 'জেলের সুপার'-কে ব্যঙ্গ করে নজরুল একটি গান রচনা করেছিলেন। গানটি ছিল মূলত রবীন্দ্রনাথে রচিত 'তোমারি গেহে পালিছ স্নেহে তুমি ধন্য ধন্য হে' গানের প্যারোডি। এই গানটি হলো-
গান:  তোমারি জেলে পালিছ ঠেলে [তথ্য]
গানটির হুগলি জেলে ১৪ই এপ্রিল থেকে ২৫শে এপ্রিলের ভিতরে রচিত হয়েছিল। গানটি পরে ভাঙার গানের প্রথম সংস্করণ [ আগষ্ট ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দ]। শিরোনাম ' সুপার (জেলের) বন্দনা'। শিরোনামে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। গানটির পাদটীকায় উল্লেখ ছিল- 'হুগলি জেলে থাকাকালীন জেলের সকল প্রকার জুলুম আমাদের ওপর দিয়ে পরখ ক'রে নেওয়া হয়েছিল। সেই সময় জেলের মূর্ত্তিমান 'জুলুম' বড়-কর্তাকে দেখে এই গান গেয়ে আমরা অভিনন্দন কর্‌তাম।
হুগলি জেলে থাকাকালে জেল কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থা, অপমানমূলক আচরণ  ও নির্যাতনের পরিমাণ এতটাই তীব্রতর হয়ে উঠেছিল যে, শেষ পর্যন্ত ১৫ই এপ্রিল (রবিবার, ২ রা বৈশাখ ১৩৩০) থেকে নজরুল-সহ মোট ২১জন রাজবন্দী অনশন শুরু করেন। এর প্রায় ১০ দিন পর এই সংবাদ জনসমক্ষে আসে ২৪শে এপ্রিল (মঙ্গলবার ১১ বৈশাখ) আনন্দবাজার পত্রিকার মাধ্যমে। ব্যথিত রবীন্দ্রনাথ নজরুলকে প্রেসিডেন্সি জেলে একটি টেলিগ্রাম পাঠিয়েছিলেন। এ বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ তাঁর পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন-
কল্যাণীয়েষু, রথী নজরুল ইসলামকে Presidency Jail 'এর ঠিকানায় টেলিগ্রাম পাঠিয়েছিলুম লিখেছিলুম Give up hunger strike, our literature claims you-  জেল থেকে memo এসেচে। The address not found অর্থাৎ ওরা আমার massage ওকে দিতে চায় না- কেননা নজরুল প্রেসিডেন্সি জেলে না থাকলেও ওরা নিশ্চয় [জানে] সে কোথায় আছে- অতএব নজরুল ইস্‌লামের আত্মহত্যায় ওরা বাধা দিতে চায় না।  শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
    [সূত্র চিঠিপত্র ২। বিশ্বভারতী। সংস্করণ শ্রাবণ ১৪১৯। পৃষ্ঠা: ৯৯]
১-২৪ মে ১৯২৩ (১৮ বৈশাখ-১০ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩০)
অনশন নজরুলের স্বাস্থ্যের মারাত্মক অবনতি ঘটে। এই অবস্থায় জেল কর্তৃপক্ষ ৮ই মে (মঙ্গলবার, ২৫শে বৈশাখ ১৩৩০) নজরুলের নাকে নল ঢুকিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এই সময় নজরুলের মা জাহেদা খাতুন নজরুল অনশন ভাঙানোর জন্য হুগলি আসেন। তাঁর সাথে এসেছিলে নজরুলের জ্ঞাতি ভাই কাজী আব্দুর রহিম। কিভাবে জেলে নজরুলের সাথে দেখা করা যায়, এঁরা তা জানতেন না। তাই এঁরা হুগলি কংগ্রেসে এসে কংগ্রেস কর্মী হামিদুল হকের সাথে দেখা করেন। উল্লেখ্য এই সময় বিদ্যামন্দির ও কংগ্রেসের অন্যতম কর্মী ছিলেন হামিদুল হক ও বিজয় মোদক। হামিদুল হক জেলে নজরুলের সাথে তাঁর মায়ের দেখা করার ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হয়ে ফিরে গিয়েছিলেন।

জেলে নজরুলের সাথে তাঁর মায়ের দেখা করার বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী সময়ে নানা ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এদের এক দলের মতে- নজরুল পুরানো অভিমান থেকে তাঁর মায়ের সাথে দেখা করেন নি। অন্য মতে জেলে নজরুলের সাথে তাঁর দেখা করেছিলেন। নজরুলকে অনশন ভঙ্গের তিনি অনুরোধ করার পরও, নজরুল ভঙ্গ করে নি। এ বিষায়- ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে নজরুল জন্মজয়ন্তীতে কাজী আব্দুর রহিম যে বক্তৃতা দেন এবং পরবর্তী সময়ে যে বেতার ভাষণ দেন- তাতে তিনি বলেছিলেন- 'হুগলী জেলে কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর মায়ের সাক্ষাৎকার ও কবির অনঠশন জন্য ব্যর্থ প্রয়াস।' তিনি এই ভাষণে নজরুলের সাথে মায়ের কথোপকথন উল্লেখ করেছেন। এই বিষয়টি নিয়ে প্রাণতোষ ভট্টাচার্য তাঁর 'কাজী নজরুল' গ্রন্থে [পৃষ্ঠা: ১৩-২১] 'নজরুল ও তার মা' অধ্যয়ে বলার চেষ্টা করেছেন যে- কাজী আব্দুর রহিমের এই তথ্য যথার্থ নয়। প্রবন্ধকার এই গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন- জেলে নজরুলের সাথে দেখা করার জন্য গিয়েছিলেন- নজরুলের মা জাহেদা খাতুন, কাজী আব্দুর রহিম, হামিদুল হক, সিরাজুল হক, প্রাণতোষ চট্টোপাধ্যায়, বিজয় মোদক প্রমুখ। এঁরা কেউ কাজী আব্দুর রহিমের সাক্ষ্য যথার্থ বিবেচনা করেন নি। লেখকের মতে-  ১৯৬৯  খ্রিষ্টাব্দে চুরুলিয়ার (নজরুল একাডেমির) জন্মজয়ন্তীত রহিম সাহেবের বক্তৃতা এবং বেতার ভাষণ ছিল অনেকাংশেই কল্পনাপ্রসূত।

২১শে মে (সোমবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩০) কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, আইনজীবীরা কলেজ স্কোয়ারে একটি জনসভা করে। এই সভায় নজরুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বেসরকারি জেল পরিদর্শক ডা. আব্দুল্লাহ সোহরাওয়ার্দিকে অনশনরত সকল রাজবন্দীদের অনশন ভঙ্গ করানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

২২শে মে (মঙ্গলবার, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩০) ডা. সোহারাওয়ার্দি হুগলী জেলে যান এবং তিনি রাজ-বন্দীদের উপর সদয় আচরণ করার শর্তে নজরুল অনশন ভঙ্গ করার জন্য অনুরোধ করেন।

বিরজাসুন্দরী

এই সময়ের ভিতরে কোনো একদিন, নজরুলের মা জাহেদা খাতুন নজরুলের সাথে দেখা করার জন্য, নজরুলের জ্ঞাতি ভাই আব্দুর রহিমের সাথে নিয়ে হুগলি জেলে গিয়েছিলেন। অধিকাংশ নজরুল গবেষকের মতে- নজরুল অজ্ঞাত অভিমানে এঁদের সাথে দেখা করেন নি। প্রাণতোষ ভট্টাচার্য তাঁর 'কাজী নজরুল' গ্রন্থে 'নজরুল ও তার মা' নিবন্ধে প্রসঙ্গক্রমে আব্দুর রহমানের বক্তৃতা ও বেতার উল্লেখ করেছেন।

২৩শে মে (বুধবার, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩০) বিরজাসুন্দরী জেলে যান এবং নজরুলকে লেবুর সরবত পান করিয়ে অনশন ভঙ্গ করান। এরপর হুগলি জেল কর্তৃপক্ষ নজরুলের প্রতি সদয় আচরণ করা শুরু করে।

জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রকাশিত কবিতা ও গান

  • কবিতা:
    • অবেলার ডাক প্রবাসী পত্রিকার জ্যৈষ্ঠ ১৩৩০ সংখ্যায় 'অবেলার ডাক' শিরোনামে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। [পৃষ্ঠা: ১৭৯-১৮২] দোলন-চাঁপার প্রথম সংস্করণ [আশ্বিন ১৩৩০ বঙ্গাব্দ (আগষ্ট ১৯২৪) অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
    • আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কল্লোল পত্রিকার 'জ্যৈষ্ঠ ১৩৩০ সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। দোলন-চাঁপার প্রথম সংস্করণে [আশ্বিন ১৩৩০ বঙ্গাব্দ (আগষ্ট ১৯২৪) অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
  • গান
    • এই শিকল পরা ছল  [তথ্য]
      এই গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তারিখে সম্পর্কে কিছু জানা যায় নি। "ব্রহ্মমোহন ঠাকুর" -সম্পাদিত  নজরুল-সঙ্গীত, আদি স্বরলিপি সংগ্রহ' [নজরুল ইনস্টিটিউট, আশ্বিন ১৪০৬। অক্টোবর ১৯৯৯)। পৃষ্ঠা: ৯-১০।] থেকে জানা যায়- "১৯২৩ সালে হুগলী জেলে থাকার সময়ে রচিত এই গানটির স্বরলিপি কবি স্বয়ং করেছিলেন। পরবর্তীকালে প্রকাশিত অন্য স্বরলিপিকারের সুরে ঈষৎ পার্থক্য রয়েছে। কবিকৃত এই স্বরলিপিটির মূল্য ঐতিহাসিক।"

      এই স্বরলিপিটি প্রকাশিত হয়েছিল ভারতী পত্রিকার [৪৮শ বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা। জ্যৈষ্ঠ ১৩৩১ (মে-জুন ১৯২৪)। পত্রিকায় বাণী অংশ মুদ্রিত হয়েছিল  'শিকলপরা' শিরোনামে [পৃষ্ঠা: ১৪৩]। পত্রিকার ১৪৩ পৃষ্ঠায় রবীন্দ্রনাথের 'আমার মন চেয়ে রয় মনে মনে' গানটির দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর-কৃত স্বরলিপি প্রকাশিত হয়েছিল। এরপরে ১৪৫ পৃষ্ঠায় নজরুলের রচিত এই গানটির স্বরলিপি প্রকাশিত হয়েছিল। স্বরলিপির শুরুতে উল্লেখ আছে 'কথা, সুর ও স্বরলিপি:-নজরুল ইসলাম।' রাগ ও তালের উল্লেখ আছে 'খাম্বাজ- দাদরা'। গানটি বিষের বাঁশি প্রথম সংস্করণ [শ্রাবণ ১৩৩১ বঙ্গাব্দ] ' শিকল-পরার গান 'শিরোনামে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
২৩ বৎসর অতিক্রান্ত বয়সের শেষ এসে (বুধবার, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩০) বিরজাসুন্দরী দেবী এসে নজরুলের অনশন ভঙ্গ করালেও ২৩ বৎসর অতিক্রান্ত বয়সের শেষ ১ দিন নজরুল হুগলি জেলেই ছিলেন।
সূত্র:
  • কাজী নজরুল। প্রাণতোষ ভট্টাচার্য। ন্যাশনাল বুক এজেন্সী প্রাইভেট লিমিটেড। কলকাতা-১২। ১৩৭৩ বঙ্গাব্দ
  • । ১
  • কাজী নজরুল ইসলাম। বসুধা চক্রবর্তী। ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট ইন্ডিয়া। নয় দিল্লী। জানুয়ারি ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দ।
  • কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতিকথা। মুজফ্‌ফর আহমদ। ন্যাশনাল বুক এজেন্সি প্রাইভেট লিমিটেড। ১২ বঙ্কিম চ্যাটার্জী স্ট্রীট, কলিকাতা-১২। প্রথম সংস্করণ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫।
  • ধূমকেতু পত্রিকার বিভিন্ন সংখ্যা।
  • নজরুল ইসলাম ও বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি। মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন। নজরুল-স্মৃতিচারণ। রফিকুল ইসলাম সম্পাদিত। নজরুল একাডেমী, ঢাকা। ২৫ মে, ১৯৯৫।
  • নজরুল-জীবনী। রফিকুল ইসলাম। নজরুল ইন্সটিটউট, ঢাকা। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ।
  • নজরুল তারিখ অভিধান। মাহবুবুল হক। বাংলা একাডেমী, ঢাকা। জুন ২০১‌০ খ্রিষ্টাব্দ।
  • নজরুল রচনা সম্ভার। আব্দুল কাদির সম্পাদিত। ইউনিভার্সল বুক ডিপো। কলিকাতা। ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দ।
  • নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। প্রথম-দ্বাদশ খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ঢাকা]
  • নজরুল সঙ্গীত নির্দেশিকা। ব্রহ্মমোহন ঠাকুর [কবি নজরুল ইনস্টিটিউট। আষাঢ় ১৪২৫/জুন ২০১৮]
  • নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ (নজরুল ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২)।
  • বসন্ত।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। [স্বরবিতান ৬। চৈত্র ১৪১৩। বিশ্বভারতী]
  • বিদ্রোহী-রণক্লান্ত, নজরুল জীবনী। গোলাম মুরশিদ। প্রথমা, ঢাকা। ফেব্রুয়ারি ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ।
  • বিষের বাঁশী : প্রথম সংস্করণ  [১৬ই শ্রাবণ ১৩৩১ বঙ্গাব্দ (শুক্রবার ১ আগষ্ট ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দ)]
  • 'সওগাত' ও নজরুল। মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন। নজরুল-স্মৃতিচারণ। রফিকুল ইসলাম সম্পাদিত। নজরুল একাডেমী, ঢাকা। ২৫ মে, ১৯৯৫।