রুদ্র-মঙ্গল
কাজী নজরুল ইসলাম
বিষ-বাণী
মাভৈঃ! মাভৈঃ!! ভয় নাই, ভয় নাই – ওগো আমার বিষ-মুখ অগ্নি-নাগ-নাগিনিপুঞ্জ! দোলা দাও, দোলা দাও তোমাদের কুটিল ফণায় ফণায়। তোমাদের যুগ যুগ-সঞ্চিত কাল-বিষ আপন আপন সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে ফেলো। তোমাদের বিভূতি-বরণ অঙ্গ কাঁচা বিষের গাঢ় সবুজ রাগে রেঙে উঠুক। বিষ সঞ্চয় করো, বিষ সঞ্চয় করো -হে আমার তিক্ত-চিত ভুজঙ্গ তরুণ দল! তোমাদের ধরবে কে? মারবে কে? যে ধরতে আসবে, তার হাড়-মাংস খসে খসে পড়বে উগ্র বিষের দাহনে। কোন্ দুঃসাহসী বন্দী করবে তোমাদেরে? কারার লৌহদণ্ড দারুণ বিষ-দাহনে খসে গলে পড়বে। অত্যুগ্র নিশ্বাস-বহ্নিতে কারার কন্দরে-কন্দরে ধুধু ধুধু করে আগুন -আগুন জ্বলে উঠবে। তোমার তড়িৎ-জিহ্বার মুহূর্ত-ইঙ্গিতে জল্লাদের হাতে খড়্গ টুকরো টুকরো হয়ে যাবে, ফাঁসির রজ্জু ভস্ম হয়ে যাবে। বিষ সঞ্চয় করো, হে আমার হলাহল-পুরবাসী কূটনাগ-নাগিনিকুল। এত 'বিষ এমন বিষ' যা শুধু জ্যান্ত অবস্থাতেই অত্যাচারে দগ্ধে মারবে না, মরবার পরও যে বিষ শ্বাশত সম-তেজা সম-উগ্র হয়ে থাকবে। নিদাঘ মধ্যাহ্নের তাপ-দগ্ধ রুদ্র-বৈশাখী ঝড়ে ঝড়ে চিতায়-ভস্মীভূত তোমাদের বিষ স্ফুলিঙ্গ উড়ে বেড়াবে দিগন্তের কোলে কোলে -গৃহীর প্রাঙ্গনে প্রাঙ্গনে, বলদর্পীর মহলে-মহলে। মা ডুকরে কেঁদে উঠবে, আর বিষ-জ্বালায় শিশু-পুত্র তার আর্তনাদ করে করে নীল হয়ে, শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়ে মাতৃক্রোড়ে মরতে থাকবে, যেমন কারবালা কচি শিশু আসগর 'তৃষ্ণা তৃষ্ণা' করে জহরমাখা তীর খেয়ে মরেছিল!ধূমকেতু পত্রিকার সম্পাদকীয় প্রথমবর্ষ। অষ্টম সংখ্যা [২৬ ভাদ্র ১৩২৯, মঙ্গলবার ১২ সেপ্টেম্বর ১৯২২]
তথ্যসূত্র
নজরুল-রচনাবলী জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। দ্বিতীয় খণ্ড। বাংলা একাডেমী ঢাকা। জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮/মে ২০১১।