অগ্রন্থিত প্রবন্ধ
নজরুল ইসলাম, কাজী


       কামাল

যাক, এতদিনের পর একটা ছেলের মতো বেটাছেলে দেখলাম। এমন দেখা দেখে মরতেও আর,আপত্তি নাই। এতদিন দুঃখ হতো যে, এই হিজড়ে নপুংসকগুলোর মুখ দেখে মরবার পাপে হয়তো আবার শুয়োর হয়ে জন্মাতে হবে, কেননা হিজড়ের মুখ দেখে যাত্রা মতে অলক্ষুণে কোনো কিছু আছে কিনা জানি না। কিন্তু হঠাৎ একি শুনি? ও কার বিষাপ বাজে? ও কার তরবার মরা সৃষ্টির বুকে জীবনের বিদ্যুৎ হেনে যায়? বিশ্বে যুখন, “যেদিকে ফিরাই আঁখি, কেবল মাদিই দেখি' অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, সেই সময় মদ্দা পুরুষ কামাল এল তার বিশ্বত্রাস মহা তরবারি নিয়ে সামাল সামাল করে রোজ কিয়ামতের ঝঞ্ঝার মতো, রুদ্রের মহারোষের মতো। অত্যাচারীর মুখে গোখরো সাপের বিষাক্ত চাবুক মেরে, মুখ ছিঁড়ে ফেললে খ্যাপা ছেলে। ঘুষি মেরে তার মুখটা ঘুরিয়ে দিলে, পেঁদিয়ে তিন ভুবন দেখিয়ে দিলে। হাঁ, ব্যাটাছেলে বটে বাবা, একেই বলে বাপের ছেলে সুপুতুর। ইচ্ছা করছে, খুশির ছোটে তার পায়ের কাছে পড়ে নিজের বুকে নিজেই খঞ্জর বসিয়ে, দিই। এই তো সত্যিকারের মুসলিম। এই তো ইসলামের রক্ত-কেতন।
দাড়ি রেখে,গোশত খেয়ে নামাজ-রোজা করে যে.খিলাফত উদ্ধার হবে না, দেশ উদ্ধার হবে না, তা সত্য মুসলমান কামাল বুঝেছিল, তা নাহলে সে এতদিন আমাদের বাঙলার কাছা-খোলা মোল্লাদের মতন সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে কাছা না খুলে কাবার দিকে মুখ করে
হর্দম ওঠবোস্‌ শুরু করে দিত। কিন্তু সে দেখলে যে বাবা, যত পেল্লাই দাড়িই রাখি আর ওঠবস করে যতই পেটে খিল ধরাই, ওতে আল্লার আরশ কেঁপে উঠব না। আল্লার আরশ কাঁপতে হলে হাইদরি হাঁক হাঁকা চাই, মারের চোটে স্রষ্টারও পিলে চমকিয়ে
দেওয়া চাই। ওসব ধর্মের ভণ্ডামি দিয়ে ইসলামের উদ্ধার হবে না- ইসলামের বিশেষ তলোয়ার, দাড়িও নয়, নামাজ-রোজাও নয়।
    তাই সে সিধে মালকোঁচা এঁটে কোমর বেঁধে বন্ধু কাঁধে তুলে, দে ধনাধ্বন মার ধনাধ্বন জুড়ে দিলে। আল্লাতায়ালাও তার কথা শন্‌লেন, ডাকাত ব্যাটারা মুক্তকচ্ছ হয়ে চোঁ চোঁ দৌড় মারলে! তাই বলি কি, ভাই রে তোদের ঐ ধনুষ্টঙ্কারী চেহারার হিজড়ে
মার্কা ফাঁকির প্রেম-বাণীটানি দিয়ে কিছু হবে না, ওসব ভণ্ডামি ছেড়ে দে। সোজা 'হল বলরাম স্কন্ধে' অ্জামিলের মতো বম্বু ঘাড়ে তুলে বেরিয়ে পড়। ভাবত কখনও তোমার হাতে বম্বু দিয়ে বলে দেবে না যে, নাও বন্ধু, পিঠ পেতে দিলেম, তুমি পিটাও। ওটা
নিজে জোগাড় করে দিতে হবে। এখন ঐ উপায়টাই দেখো! এর চেয়ে সোজা সহজ সত্যি বোম কেদারনাথ বলে। আপনি আল্লা ভগবান সবাই সহায় হবে তোমার।
    প্রেমের খোশামোদিতে নিদ্রিত নারায়ণের ঘুম ভাঙে না। ওর দোরে প্রচণ্ড ঘা দিতে হয়। ভৃগুর মতো বুকে লাথি মেরে জাগাতে হয়। রেগো না বন্ধু, যতই রাগো, এটা ডাহা সত্যি যে, মারের মতো বড় জিনিস এখনো সৃষ্টি হয়নি দুনিয়ায়।