বিষয়: নজরুল সঙ্গীত
শিরোনাম: কারার ঐ লৌহ-কপাট

    সিনেমা: 'চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন',
        তাল: দ্রুত-দাদ্‌রা

কারার ঐ লৌহ-কপাট
ভেঙ্গে ফেল্‌ কর্‌ রে লোপাট রক্ত-জমাট
শিকল-পূজার পাষাণ-বেদী!
ওরে ও তরুণ ঈশান!
বাজা তোর প্রলয়-বিষাণ ! ধ্বংস-নিশান
উঠুক প্রাচী-র প্রাচীর ভেদি'॥ গাজনের বাজনা বাজা !
কে মালিক? কে সে রাজা? কে দেয় সাজা
মুক্ত-স্বাধীন সত্য কে রে?
হা হা হা পায় যে হাসি, ভগবান প'রবে ফাঁসি? সর্বনাশী─
শিখায় এ হীন্‌ তথ্য কে রে? ওরে ও পাগ্‌লা ভোলা, দেরে দে প্রলয়-দোলা গারদগুলা
জোরসে ধ'রে হ্যাঁচকা টানে।
মার্‌ হাঁক হায়দরী হাঁক্‌ কাঁধে নে দুন্দুভি ঢাক ডাক ওরে ডাক
মৃত্যুকে ডাক জীবন-পানে॥

নাচে ঐ কাল-বোশেখী, কাটাবি কাল ব'সে কি?
দে রে দেখি ভীম কারার ঐ ভিত্তি নাড়ি'।
লাথি মার, ভাঙ্‌রে তালা ! যত সব বন্দী-শালায় ─
আগুন জ্বালা, আগুন জ্বালা, ফেল্‌ উপাড়ি॥
"আমার সামনেই দাশ-পরিবারের শ্রী সুকুমাররঞ্জন দাশ 'বাঙ্গলার কথা'র জন্য একটি কবিতা চাইতে এসেছিলেন। শ্রীযুক্তা বাসন্তী দেবী তাঁকে কবিতার জন্যে পাঠিয়েছিলেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ তখন জেলে। ...‌ অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নজরুল তখনই কবিতা লেখা শুরু ক'রে দিল। সুকুমাররঞ্জন আর আমি আস্তে আস্তে কথা বলতে লাগলাম। বেশ কিছুক্ষণ পরে নজরুল আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে তার সেই মুহূর্তে রচিত কবিতাটি আমাদের পড়ে শোনাতে লাগল। ... নজরুল 'ভাঙার-গান' লিখেছিল ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসের কোনো এক তারিখে। 'ভাঙার গান' বাঙ্গলার কথা'য় ছাপা হয়েছিল।"
মুজাফ্ফর আহমদ-এর বিবৃতি অনুসারে বলা যায়, যায় গানটি রচিত হয়েছিল ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর (অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩২৮)  মাসে। এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ২২ বৎসর ৬ মাস।
কবি পাগলা ভোলারূপী (মহাদেব) তরুণদের ডেকে বলছেন, প্রচণ্ড ধ্বংসের দোলা সব কারাগারকে আন্দোলিত করুক আর হ্যাঁচকা টানে সেগুলোকে ধ্বংস করুক। হায়দরী হাঁক (যুদ্ধের সময় হযরত আলী যে হাঁক দিতেন) হেঁকে আর যুদ্ধের দুন্দুভি (বড় ঢাক বিশেষ) বাজিয়ে মৃত্যুর আলয়কে ধ্বংস করে, সে মৃত্যু যেন মুক্তজীবনের আকাঙ্ক্ষাকে উজ্জীবিত করুক। কবি তরুণদের ডেকে বলছেন, বিধ্বংসী কালবৈশাখীর মতো আন্দোলন সমাসন্ন, এখন বসে বসে কাল কাটানোর অবসর নেই। এখন অটল কারাগারের ভিত্তিকে নড়িয়ে দিতে হবে। কবি কামনা করছেন, যত কারাগার আছে, পদাঘাতে তার সবগুলোর তালা খুলে যাক, আগুনের লেলিহান শিখায় ধ্বংস হয়ে যাক সকল বন্দীকারাগার, সমূলে উৎপাটিত হোক পরাধীনতার জগদ্দল পাথর।

এই গানের ভিতর দিয়ে নজরুল তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের আহ্বান করেছিলেন। তিনি বিপ্লবীদের মনে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন পরাধীনতার বন্দী দশা থেকে মুক্ত হওয়ার বার্তা।