কলাম্বিয়া রেকর্ড
Columbia Records
প্রখ্যাত রেকর্ড কোম্পানি কলাম্বিয়া'র তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত রেকর্ড।

১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে এডওয়ার্ড ইস্টন (১৮৫৬-১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দ) এবং বেশ কিছু ব্যবসায়ীর সাথে মিলিত হয়ে 'কলাম্বিয়া ফনোগ্রাফ কোম্পানি' নামক একটি প্রতিষ্ঠা করেন। ব্যবসার শুরুতে এই প্রতিষ্ঠান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি, মেরিল্যান্ড এবং ডেলাওয়ার-এ 'এডিশন ফনোগ্রাফ' এবং 'ফোনোগ্রাফ সিলিণ্ডার'-এর একচেটিয়া ব্যবসা করতে সক্ষম হয়। এই সময় এই কোম্পানি গানের প্রচুর সিলিণ্ডার রেকর্ড তৈরি করে। ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই কোম্পানি এডিশন এবং 'নর্থ আমেরিকান ফনোগ্রাফ' কোম্পানির সাথে একত্রে ব্যবসা করে। এরপর এই কোম্পানি শুধু নিজেদের তৈরি সিলিন্ডার রেকর্ডই বিক্রয় করা শুরু করে।

১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে কলাম্বিয়া সিলিন্ডার রেকর্ডের পাশাপাশি ডিস্ক রেকর্ড বিক্রয় করা শুরু করে। ১৯০২ কলাম্বিয়া বাদামি মোমের রেকর্ড
(XP record) প্রথম বাজারজাত করে। ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে কোম্পানি কালো মোম-রেকর্ড বাজারে ছাড়ে। সব মিলিয়ে সে সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে  কলাম্বিয়া রেকর্ড বিক্রয়ের তিনটি প্রধান কোম্পানির একটিতে পরিণত হয়। উল্লেখ্য অপর দুটি কোম্পানি ছিল Edison Phonograph Company এবং Victor Talking Machine Company। এই সময় নিউ ইয়র্ক মেট্রোপলিটান অপেরার তারকা শিল্পীদের রেকর্ড প্রকাশ করে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব-কাল পর্যন্ত এদের রেকর্ডের শব্দমান এডিশন, ভিক্টর বা ইংল্যান্ডের হিস মাস্টার ভয়েস, ইতালির ফোনোটিপিয়া রেকর্ড-এর মতো ভাল ছিল না।

১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে কলাম্বিয়া রেকর্ড কোম্পানি ফাইবার দিয়ে রেকর্ড তৈরি করা শুরু কর এতে বাজানোর জন্য ব্যবহার করা হতো স্বর্ণাবৃত পিন। কিন্তু শব্দের গুণগত মানের বিচারে এই রেকর্ড জনপ্রিয়তা লাভ করে নি। শব্দের ধারণের ডিস্কের ঘূর্ণনগতি একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। প্রতি মিনিটে ঘূর্ণন (আরপিএম) সংখ্যা দ্বারা এই মান নির্ধারিত হয়। এই সময়ে ৬০ আরপিএম থেকে ১৩০ আরপিএম ঘূর্ণনগতির রেকর্ড প্রকাশিত হতো।
 

১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত রেকর্ড

১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সকল কোম্পানির রেকর্ডই ছিল এক-পার্শ্বীয়। এই সময় অনেক কোম্পানিই উভয় পার্শ্ব বাদন-উপযোগী রেকর্ড তৈরির উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হয়েছিল।

১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে কলাম্বিয়া এই রেকর্ড তৈরিতে সাফল্য লাভ করে। এই সময় এই রেকর্ডের নাম ছিল
Double-Faced record'। ১০ ইঞ্চি মাপের এই ডিস্কগুলো তখন বিক্রয় হতো ৬৫ সেন্ট মূল্যে। এই সময় কলাম্বিয়া রেকর্ড লোগো হিসেবে এক জোড়া সেমিকোয়েভার স্বরের প্রতীক ব্যবহার করতো। এই সময় থেকে কলাম্বিয়া মোমের সিলিন্ডার রেকর্ড তৈরি বন্ধ করে দেয়। এর পরিবর্তে তারা সেলুলয়েড সিলিন্ডার রেকর্ড বাজারে ছাড়া।

১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে কলাম্বিয়া রেকর্ড কোম্পানি সিলিন্ডার রেকর্ড উৎপাদনে আসে।

১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের কলম্বিয়া দুটি কোম্পানিতে ভাগ হয়ে যায়। এর একটি কোম্পানি রেকর্ড তৈরি করতো অপরটি রেকর্ড বাজানোর যন্ত্র তৈরি করতো। এই বছর থেকে এরা সিলিন্ডার রেকর্ড-এর উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।

১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে কলম্বিয়া নব্য আবিষ্কৃত বৈদ্যুতিক রেকর্ড পদ্ধতি ব্যবহার করা শুরু করে। এই ধরনের শব্দধারণযুক্ত রেকর্ডে তারা
Viva-tonal শব্দ ব্যবহার করতো। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে এরা Okeh Records কোম্পানি কিনে নেয়।  ফলে জাজ এবং ব্লুজ শিল্পীদের অনেকের রেকর্ড প্রকাশের অধিকার লাভ করে।

১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকান কলম্বিয়া কোম্পানি থেকে পৃথক হয়ে, ব্রিটিশ কলম্বিয়া গ্রামোফোন কোম্পানিতে পরিণত হয়। পরে গ্রামোফোন কোম্পানির সাথে একত্রিত হয়ে
 Electric & Musical Industries Ltd. (EMI) নামে আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু The "Gramophone Company, Ltd." নামটি অনেকদিন চালু ছিল।

১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে ভারতে কলাম্বিয়া কোম্পানির মালিকানা লাভ করেছিল কলকাতার উদ্যোক্তা। এর পরিচালনায় ছিলেন নৃপন মজুমদার। তাঁর উদ্যোগে ভারতীয় কলম্বিয়া রেকর্ড কোম্পানি, হিস মাস্টার ভয়েস -এর প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠে। এই কোম্পানির উদ্যোগে ১৯৩৭-৩৮ খ্রিষ্টাব্দের দিকে 'রিগ্যাল রেকর্ড' লেবেলে কিছুদিন রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। এসব কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে কলম্বিয়া রেকর্ডের বাজার অনেকটাই দখল করে নিতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হিস মাস্টার ভয়েস -এর কৌশলে এই কোম্পানি তাদের অংশভাগী হয়ে গিয়েছিল।

 



সূত্র: