আজ বাঙালির ঘরে ঘরে
দেয়ালি-উৎসবের আগুন লেগেছে, শব্দ-বিদারণের ধুম পড়ে গেছে। বুঝি মরা গাঙে জোয়ার এসেছে, মরা বাঙালির বুকে আগুন-খেলার
পুলক ঝলক
দিয়ে উঠছে। কিন্তু হায়, এ দেখে আনন্দ যত না হচ্ছে তার চেয়ে কষ্টই হচ্ছে বেশি।
মুসলমানদের মোহরমের লাঠি খেলার মতোই এ দেয়ালি উৎসবেরও আগুন আর
বোমাও আজ্ শুধু অভিনয় মাত্র। আজ যারা আগুন নিয়ে খেলার অভিনয় করছে, কাল
তারা সত্য আগুন দেখে আর্তনাদ করে উঠবে, আজ যারা বোমার নিষ্ফল শব্দ করে
আস্ফালন করছে, কাল সত্যকার বোমার বিদারণ দেখে তারা মূর্ছিত হয়ে পড়বে। আজ
দেশের বাইরে ভিতরে চলেছে এই অভিনয়- শুধু অভিনয়, শুধু কৃত্রিমতা, শুধু মিথ্যা।
তারা মিথ্যা নিয়ে আস্ফালন আনন্দ করতে চায়। সত্যে আঘাত আছে, সত্য খেলায়
হাত পা ভাঙ্বার ভয় আছে, সত্যকে জানতে হলে, জাগাতে হলে বিদ্রোহ করতে হবে।
অতএব তারা ওপথে যাবে না।
এ তোমার শক্তিপূজা নয় বাঙালি, এ তোমার মিথ্যাপূজা, শক্তির অপমান। যে
দেবীর পূজায় আজ এই দেয়ালি উৎসব করছ, সে বেটি সত্য আগুন জ্বালিয়েছিল হয়ে গিয়েছিল।
পারো তো তেমনি করে এসো বাঙালি ওই করালি কালি বেটির মতো অন্ধকারের
চেয়েও ভীষণ কালো রূপ নিয়ে, যেন সে কালরূপ দেখে মহাকালও ভয় পায়। পারো তো
সেই অগ্নি-গোলা আনো যা অত্যাচারীর অর্থ পিশাচের প্রাসাদ-শিলে বাজের মতো গিয়ে পড়ে
তা চূর্ণবিচূর্ণ করে দেবে, পারো তো সেই বোমা-বিদারণ আনো, যার শব্দে শ্মশান
ছেড়ে শ্মশানচারিণী বেটি তোদের ঘরে ঘরে এসে ধ্বংস-নৃত্য নাচবে, মা-রা আর্তনাদ করে
ব্যথা-গরবের তুফান তুলবে।
কবে সে-দেয়ালি-উৎসব লাগবে বাঙালি, কবে তোমার ঘরে সে-আগুন লাগবে,
যখন কোটি ফায়ার ব্রিগেড ভয়ে বিস্ময়ে মূক স্তরূ হয়ে যাবে। সূর্যের আলো সে অগ্নি-শিখায় পুড়ে তাম্রব্র্ণ হয়ে উঠবে। সে-আগুনে পুড়ে মরবার ভয়ে অত্যাচারীর দল
মহাসিন্ধুর জলে ঝাঁপিয়ে পড়বে ! জন্ম জন্ম ধরে এই ভণ্ডামি করে আসছ তাই শক্তি
বেটিও এল না ঘরে। তোমাদের ফাঁকির পূজা তোমরাই যে মনে মনে বোঝো, আর ও দেবী বেটি বোঝে না মনে করো?
ধূমকেতু
পত্রিকার প্রথম বর্ষ। পঞ্চদশ সংখ্যা [৩ কার্তিক
১৩২৯, শুক্রবার ২০ অক্টোবর ১৯২২] সম্পাদকীয় হিসেবে প্রকাশিত হয়েছিল।