ওঠো ওগো আমার নির্জীব ঘুমস্ত
পতাকাবাহী বীর সৈনিক দল। ওঠো, তোমাদের ডাক পড়েছে- রণদুন্দুভি রণভেরী বেজে উঠেছে।
তোমার বিজয়-নিশান তুলে ধরো। উড়িয়ে
দাও উঁচু করে ধরে; তুলে দাও যাতে সে নিশান আকাশ ভেদ করে ওঠে। পুড়িয়ে ফেলো ঐ
প্রাসাদের উপর যে নিশান বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে তোমাদের উপর প্রভুত্ব ঘোষণা করেছে ভেঙে ফেলো
ঐ প্রসাদশৃঙ্গ। বলো আমি আছি। আমার সত্য আছে। বলো আমরা
স্বাধীন। আমরা রাজা। বিজয়পতাকা আমাদের; আর কারো জন্য নয়। মনে প্রতিজ্ঞা
কর যে, নিশান ওড়াব আমরা। আমাদের বুকের উপর ও নিশান আর কাউকে ওড়াতে
দেবো না। ও নিশান জ্বালিয়ে দেবো। শপথ করো, যদি ও নিশান আবার তুলে খতে চায়
তবে এমন শাস্তি দেবো, যা তারা মরণের পরপারে গিয়েও তার জ্বালা ভুলতে না পারে।
শয়তানকে জয় করে দেশত্যাগী করতে হলে, তাদের বুকের উপর রক্ত উড়িয়ে দিতে হবে।
আমাদের বিজয়-পতাকা তুলে ধরবার জন্যে এস সৈনিক। পতাকার রঙ হবে লাল,
তাকে রঙ করতে হবে খুন দিয়ে। বলো আমরা পেছাব না। বল আমরা সিংহশাবক,
আমরা খুন দেখে ভয় করি না। আমরা খুন নিয়ে খেলা করি, খুন দিয়ে কাপড় ছোপাই,
খুন দিয়ে নিশান রাঙাই। বলো আমি আছি, আমি পুরুষোত্তম। বলো মাভৈ মাভৈ জয় সত্যের জয়।
আমি আছি বলে নিশান হাতে তুলে নাও। এস দলে দলে নিশানধারী বীর সৈনিক,
ভাইরা আমার। নিজেকে সৈনিক বলে প্রচার করি, এস। এস, শয়তানকে অর্ধেক পুঁতে ফেলে তার মাথার উপর তাদেরি মাথার মগজের চর্বি দিয়ে চেরাগ
জ্বালাই। শয়তানকে
দগ্ধ-করে করে মারতে হবে। এই কথা বলে বেরিয়ে এস-আমি আছি, আমাতে আমিত্ব
আছে, আমি পশু নই, আমি মনুষ্য, আমি পুরুষসিংহ। আমাদের বিজয়ী হতে হবে।
বিজয়-পতাকা গড়াতে হলে খুন -খোশরোজ খেলা খেলতে হবে। ধরো ধরো-এক হাতে ভীম-খড়গ সর্বনাশের 'ঝাণ্ডা আর- আর এক হাতে ধরো রক্তমাখা পতাকা। আমাদের
এই বিজয়-মঙ্গলের সময় যদি কেউ বাধা দিতে আসে তবে তাকে ধড় থেকে অর্ধেক
ছাড়িয়ে নিয়ে অর্ধেক সাগরজলে ভাসিয়ে দাও আর অর্থেকখানা সেখানে পড়ে দুপায়ের
গিঁটে গিঁটে যেন ঠোকাঠুকি করে।
আঘাতে দেবতাকে এনে তোমার মগজের ভিতর বসিয়ে নাও। কালী করালীর হাত
থেকে ভীম খড়গ ছিনিয়ে আনো। উচ্চ প্রাসাদ-শিরে' যে পতাকা উড়ছে তাকে উপড়ে ফেলে সেখানে আমাদের বিজয়-পতাকা উড়িয়ে দেবো বলে বেরিয়ে পড়ো। চেয়ে দেখো
তোমার মা'মেয় ভূখা বলে চিৎকার করে করে বেড়াচ্ছে, সর্বনাশী বেটিকে শান্ত করো।
নাহলে সে নিজেরে ছেলের রক্ত খেতে কুণ্ঠাবোধ করবে না।
যে নরনারায়ণের বক্ষে পদাঘাত করে, ভীরুতা শিখিয়ে দাস করে রেখে দেয়, তাকে
তোমরা ক্ষমা করো না। তার কণ্ঠ চিরে উষ্ণ রক্ত পান করো। তোমাদের পূর্বস্থান তোমরাই
দখল করে তার উপরে তোমাদেরই বিজয়-পতারা উড়িয়ে দাও।
ধূমকেতু
পত্রিকার প্রথম বর্ষ। পঞ্চদশ সংখ্যা [৩ কার্তিক
১৩২৯, শুক্রবার ২০ অক্টোবর ১৯২২] সম্পাদকীয় হিসেবে প্রকাশিত হয়েছিল।