অগ্নি-বীণা
কাজীনজরুল ইসলাম

প্রলয়োল্লাস     

     
তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!
      তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!
ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল্-বোশেখির ঝড়।
      তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!
      তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!

আস্‌ছে এবার অনাগত প্রলয়-নেশার নৃত্য-পাগল,
সিন্ধু-পারের সিংহ-দ্বারে ধমক হেনে ভাঙ্‌ল আগল।
      মৃত্যু-গহন অন্ধ-কূপে
      মহাকালের চণ্ড-রূপে

                ধূম্র-ধূপে
বজ্র-শিখার মশাল জ্বেলে আস্‌ছে ভয়ঙ্কর

      ওরে ঐ হাস্‌ছে ভয়ঙ্কর!
      তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!
      তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!

ঝামর তাহার কেশের দোলায় ঝাপ্‌টা মেরে গগন দুলায়,
সর্বনাশী জ্বালা-মুখী ধূমকেতু তার চামর ঢুলায়!
      বিশ্বপাতার বক্ষ-কোলে
      রক্ত তাহার কৃপাণ ঝোলে
                দোদুল্‌ দোলে!
অট্টরোলের হট্টগোলে স্তব্ধ চরাচর

      ওরে ঐ স্তব্ধ চরাচর!
      তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!
      তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!

দ্বাদশ রবির বহ্নি-জ্বালা ভয়াল তাহার নয়ন-কটায়,
দিগন্তরের কাঁদন লুটায় পিঙ্গল তার ত্রস্ত জটায়!
      বিন্দু তাহার নয়ন-জলে
      সপ্ত মহাসিন্ধু দোলে
                       কপোল-তলে!
বিশ্ব-মায়ের আসন তারি বিপুল বাহুর 'পর

      হাঁকে ঐ 'জয় প্রলয়ঙ্কর!
      তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!
      তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!

মাভৈ মাভৈ! জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে!
জরায়-মরা মুমূর্ষদের প্রাণ লুকানো ঐ বিনাশে!
      এবার মহা-নিশার শেষে
      আস্‌বে ঊষা অরুণ হেসে
                        করুণ বেশে!
দিগম্বরের জটায় লুটায় শিশু চাঁদের কর,
      আলো তার ভর্‌বে এবার ঘর।
      তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!
      তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!

ঐ সে মহাকাল-সারথি রক্ত-তড়িত-চাবুক হানে,
রণিয়ে ওঠে হ্রেষার কাঁদন বজ্র-গানে ঝড়-তুফানে!
খুরের দাপট তারায় লেগে উল্কা ছুটায় নীল খিলানে!
                    গগন-তলের নীল খিলানে।
      অন্ধ করার বন্ধ কূপে
      দেবতা বাঁধা যজ্ঞ-যূপে
                          পাষাণ স্তূপে!
এই তো রে তার আসার সময় ঐ রথ-ঘর্ঘর

      শোনা যায় ঐ রথ-ঘর্ঘর। 
      তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!
      তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!

ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর? প্রলয় নূতন সৃজন-বেদন!
আসছে নবীন
জীবন-হারা অ-সুন্দরে কর্‌তে ছেদন!
      তাই সে এমন কেশে বেশে
      প্রলয় বয়েও আস্‌ছে হেসে

                           মধুর হেসে!
ভেঙে আবার গড়তে জানে সে চির-সুন্দর!
      তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!
      তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!

ঐ ভাঙা-গড়া খেলা যে তার কিসের তবে ডর?
      তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!

      বধূরা প্রদীপ তুলে ধর্‌!
কাল ভয়ঙ্করের বেশে এবার ঐ আসে সুন্দর!

      তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!
      তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!

কালানুক্রমিকের বিচারে এটি নজরুলের সঙ্গীতজীবনের দ্বিতীয় পর্বের ৩৫ সংখ্যক গান। বৈশাখ মাসে রচিত এই গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছি প্রবাসী পত্রিকার জ্যৈষ্ঠ ১৩২৯ বঙ্গাব্দ (মে ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দ) সংখ্যায়। [পৃষ্ঠা ১৯১]সংখ্যায়। শিরোনাম ছিল প্রলয়োল্লাস। এছাড়া প্রকাশিত হয়েছিল বিজলী  পত্রিকার ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৩২৯ বঙ্গাব্দ (১৯ মে, ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দ) সংখ্যায়।