ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক :
২৩.২৩৮৩° উত্তর ৮৭.৮৬০৮° পূর্ব ।
ভারত প্রজাতন্ত্রের
পশ্চিমবঙ্গ নামক
প্রদেশের একটি বিভাগ। এর সদর দফতর পূর্ব বর্ধমান জেলা সদরে
অবস্থিত। এই বিভাগটি ৪টি জেলা নিয়ে গঠিত। জেলাগুলো হলো-
মহাভারতের আমলে বঙ্গদেশ এবং তৎসংলগ্ন জনপদগুলোর ভিতরে প্রত্নতত্ত্ববিদ্গণ
৩টি জনপদকে আদি জনপদ হিসেবে নির্দেশিত করে থাকেন। এই জনপদগুলো হলো- অঙ্গ (রাজশাহী
ও ভাগলপুর অঞ্চল), কলিঙ্গ (উত্তরে ভাগীরথী থেকে
দক্ষিণে গোদাবরী নদী পর্য্যন্ত) এবং বঙ্গ (অঙ্গ ও কলিঙ্গের
পূর্বাঞ্চল)। নগেন্দ্রনাথ বসু সম্পাদিত বিশ্বকোষে
(তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩০০) বলা হয়েছে- 'এখনকার
মেদিনীপুর, উড়িষ্যা, গঞ্জাম ও সরকার তৎকালে কলিঙ্গ-রাজ্যের অন্তর্গত ছিল'।
এই কলিঙ্গ-রাজ্যের উত্তরপূর্বাংশ নিয়ে
গঠিত হয়েছিল সুহ্ম-রাজ্য। সে সময়ের
মেদিনীপুর অঞ্চলের অধিকাংশই
ছিল প্রাচীন সুহ্ম-রাজ্যের অন্তর্গত। ধারণা করা হয়
প্রাচীন তাম্রলিপ্তি নগরটি সেই রাজ্যের রাজধানী।
এই রাজটি পরে
তাম্রলিপ্তি
জনপদ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছিল। এই বিচারে তাম্রিলপ্তি বা সুহ্মরাজ্যের ভৌগোলিক
সীমা ছিল- ও পশ্চিমে পুণ্ড্র রাজ্য, পূর্ব্বে বঙ্গরাজ্য, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে কলিঙ্গ-রাজ্য
(বর্তমান উড়িষ্যা)।
কলিঙ্গ রাজ্যটি বিভাজিত হয়ে সৃষ্টি হয়েছিল উৎকল। কালিদাসের বর্ণনামতে উৎকলদেশের দক্ষিণেই কলিঙ্গ-রাজ্য ছিল। রঘুবংশে দেখিতে পাওয়া যায়, রঘু
তাঁর রাজ্যের রাজধানী থেকে সুহ্মদেশ পর্য্যন্ত সমস্ত রাজ্য জয় করেছিলেন। তিনি পূর্ব্ব-মহাসাগরের তালীবনশ্যাম উপকণ্ঠে সুহ্মরাজ্যে উপস্থিত হয়েছিলেন। পরে উৎকলবাসীরা তাঁর পথ প্রদর্শক
হন। এবং সেখান থেকে তিনি কলিঙ্গের উদ্দদেশ্যে যাত্রা করেন। এ সকল বিবরণ থেকে অনুমান
করা যায়, সুহ্ম বা তাম্রলিপ্তি ও কলিঙ্গের মধ্যবর্তী রাজ্য ছিল উৎকল।
কলিঙ্গদেশের উত্তরাংশ ছিল উৎকল। সেরূপ পুণ্ড্র-রাজ্যের অংশবিশেষ গঠিত হয়েছিল উড্র। সম্ভবতঃ আধুনিক ছোটনাগপুর, ময়ুরভঞ্জ, কেঁউঝর, মেদিনীপুর জেলার পশ্চিমাংশ ও বাঁকুড়া জেলার দক্ষিণাংশ লইয়া উড্রদেশ গঠিত ছিল।
খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ/তৃতীয় অব্দের পূর্ব
এই অঞ্চলটি ছিল
তাম্রলিপ্তি
জনপদের অংশ বিশেষ। পরবর্তী খ্রিষ্টীয়
অষ্টম
শতাব্দীর
ভিতরে এই অঞ্চলটি
মনুষ্যপল্লী গড়ে উঠে। স্থল ও জল পথের যোগাযোগ সুগম ছিল। এই সূত্রে
হুগলী ও রূপনারায়ণ নদের সঙ্গমস্থল হতে ১২ মাইল দূরে
রূপনারায়ণের তীরে এই বন্দরটি গড়ে উঠেছিল। কালক্রমে বাণিজ্যের গুরুত্বে এই বন্দরটি
আন্তর্জাতিকভাবে একটি বন্দর-নগরী হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। তখন এর নাম ছিল তমলুক।
চৈনিক তীর্থযাত্রী হিউয়েন-সাং এই নগরটিকে ‘তান-মো-লি-তি’ হিসেবে উল্লেখ
করেছেন। গ্রিক ভৌগোলিক টলেমীর মানচিত্রে ‘তমলিটিস্’ নামে এর উল্লেখ আছে। এই নগরকে
কেন্দ্র করে বিকশিত যে জনপদ গড়ে, কালক্রমে তাই তাম্রলিপ্তি বা তাম্রলিপ্ত নামে
পরিচিতি লাভ করে।
মুসলমান শাসনামলে সরস্বতী নদীতীরে সপ্তগ্রামে নবাবদের রাজধানী ও বন্দরের
পরিণত হয়েছিল। খ্রিষ্টীয় ১৬ শতকে পর্তুগিজরা
এই অঞ্চলে কুঠি তৈরি করেছিল। পরে
এরা হুগলী অঞ্চলে তাদের নতুন বসতি গড়ে
তুলেছিল। ইংরেজ শাসনামলে এই অঞ্চলের ভৌগোলিক সীমা ছিল- পুবের্ব ভাগীরথী নদী ও প্রেসিডেম্সি বিভাগ,
পশ্চিমে উড়িষ্যা ও ছোটনাগপুর,
উত্তরে সাঁওতাল পরগণা ও
মুর্শিদাবাদ জেলা ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর।
১৭৮৭ খ্রিষ্টাব্দে এই অঞ্চলে নতুন বীরভূম-বাঁকুড়া জেলা তৈরি করা
হয়। ১৮১৯ খ্রিষ্টাব্দে তৈরি হয় হাওড়া-হুগলী জেলা।
বিশাল অঞ্চল থেকে ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে তৈরি করা হয়েছিল বর্ধমান
বিভাগ। এই বিভাগে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল শুশুনিয়৷ পাহাড়,
হালদা কল্যাণেশ্বরী ) পাহাড়, সমুদ্র উপকূল ।
সূত্র :
http://www.wbgov.com/
http://www.mapsofindia.com/