ভুপেন্দ্রনাথ দত্ত
ভূপেন্দ্রনাথ কলকাতা মেট্রোপলিটান ইনস্টিটিউট থেকে এন্ট্রান্স পাশ করেন। এই সময় শিবনাথ শাস্ত্রীর সাথে তাঁর পরিচয় হয়। সেই সূত্রে তিনি ব্রাহ্মধর্মের প্রতি অনুরক্ত হয়ে উঠেন।
১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে ব্যরিষ্টার
প্রমথনাথ মিত্র নিখিল বঙ্গ
বৈল্পলিক সমিতি গঠন করলে, তিনি এই সমিতিতে
যোগদান করেন। এই সমিতির সূত্রে তাঁর সাথে
পরিচয় ঘটে অরবিন্দ ঘোষ, যতীন বন্দ্যোপাধ্যায়, ভগ্নী নিবেদিতা প্রমুখের
সাথে। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে অরবিন্দ ঘোষের সহায়তায় তিনি বিপ্লবীদের
মুখপত্র
যুগান্তর
প্রকাশ করা শুরু করেন।
১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি 'সোনার বাঙলা' নামের একটি বেনামী ইস্তাহার
প্রকাশ করেন। পরে পুলিশের হাতে তিনি ধরা পড়েন এবং এই ইস্তাহার প্রকাশের
জন্য তাঁর এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি
বন্ধুদের পরামর্শে ছদ্মবেশে আমেরিকা চলে যান।
আমেরিকাতে তিনি ইন্ডিয়া হাউসে আশ্রয়
পান। এরপর তিনি ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক
হন এবং ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ ডিগ্রি লাভ
করেন ।
এই সময়
তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার গদর পার্টি এবং সোশ্যালিস্ট ক্লাবের সংস্পর্শে
আসেন এবং সমাজতন্ত্র সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞানলাভ করেন। এই সময় তিনি
শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা নির্যাতিতও হন। ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম
বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনকে জোরদার করার জন্য,
অন্যান্য ভারতীয় বিপ্লবীদের অনুসরণর বার্লিনে আসেন। ১৯১৬ থেকে ১৯১৮
খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি বার্লিন কমিটির সম্পাদক ছিলেন। ১৯১৫
খ্রিষ্টাব্দে তিনি ছদ্মবেশে দক্ষিণ ইউরোপ ভ্রমণ করেন। পরে বার্লিন
কমিটির অনুরোধে জার্মান সরকার তাঁকে গ্রিস থেকে বার্লিনে আনেন। তাঁর
নেতৃত্বে বার্লিন কমিটির কর্মক্ষেত্র পশ্চিম এশিয়ায় বিস্তৃতি লাভ
করে। বৈপ্লবিক এই আন্দোলনের পাশাপাশি তিনি সমাজতত্ত্ব এবং
নৃতত্ত্বের উপর গবেষণা করেন। ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে এই বিষয়ে তিনি হামবুর্গ
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট উপাধি পান।
১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে 'জার্মান অ্যানথ্রোপলজিক্যাল সোসাইটি' এবং ১৯২৪
খ্রিষ্টাব্দে জার্মান এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য পদ লাভ করেন। ১৯২১
খ্রিষ্টাব্দে তৃতীয় কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের আহ্বানে বীরেন্দ্রনাথ
বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে তিনি মস্কোতে আসেন। এই সময় তিনি সোভিয়েট নেতা
লেনিনের কাছে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে
একটি গবেষণাপত্র প্রদান করেন।
১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে মস্কো থেকে ভারতের শ্রমিক
কৃষক আন্দোলনের একটি কর্মসূচী পাঠান।
১৯২৭-২৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক কমিটির হন।
১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির সদস্য হন।
১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে কংগ্রেসর করাচী অধিবেশনে শ্রমিক এবং কৃষকদের মৌলিক
অধিকার নিয়ে একটি প্রস্তাব নেহেরুকে দিয়ে গ্রহণ করান।
১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ভারতের কৃষক আন্দোলনে যুক্ত হন। তিনি দুই বার অখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের অধিবেশনে সভাপতি হন ।
১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে ডিসেম্বর
মৃত্যুবরণ করেন।
সমাজবিজ্ঞান, নৃতত্ব, ইতিহাস, সাহিত্য, বৈষ্ণবশাস্ত্র, হিন্দু
আর্যশাস্ত্র, মার্কসীয় দর্শন প্রভৃতি বিষয়ে তাঁর পাণ্ডিত্য ছিল ।
বাংলা, ইংরেজি, জার্মান, হিন্দি, ইরানী প্রভৃতি ভাষায় তাঁর অনেক রচনা
প্রকাশিত হয়েছে।
তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো
অপ্রকাশিত রাজনীতিক ইতিহাস
যুগসমস্যা
তরুণের অভিযান
জাতিসংগঠন
যৌবনের সাধনা
সাহিত্যে প্রগতি
ভারতীয় সমাজপদ্ধতি (৩ খণ্ড)
আমার আমেরিকার অভিজ্ঞতা (৩ খণ্ড)
বৈষ্ণব সাহিত্যে সমাজতন্ত্র
বাংলার ইতিহাস
ডায়ালেক্টস অফ হিন্দু রিচুয়ালিজম
ডায়ালেক্টস অফ ল্যান্ড ইকোনমিকস অফ ইন্ডিয়া
বিবেকানন্দ দ্য সোসালিস্ট
সূত্র: বিপ্লবীদের কথা। [http://www.biplobiderkotha.com/bd-revolutionary/98-2011-06-09-06-03-30]