যুগান্তর
বাংলা সাপ্তাহিক পত্রিকা।

১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই মার্চ কলকাতা থেকে এই পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। সাপ্তাহিক এই পত্রিকাটি ছিল রাজনৈতিক। মূলত সেকালের বিপ্লবী সংগঠন
অনুশীলন সমিতি-এর মুখপত্র হিসেবে এই পত্রিকাটি প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। বারীন্দ্র ঘোষের প্রস্তাবে এবং অরবিন্দ ঘোষ-এর সমর্থনে এই পত্রিকাটি প্রকাশের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

এই পত্রিকার সম্পাদকের নাম ছাপা হতো না। ধারণা করা হয়, এই পত্রিকার প্রথমদিকে সম্পাদক এবং মূল লেখক ছিলেন বারীন্দ্র ঘোষ। এর পাশাপাশি লিখতেন উপেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি এবং দেবব্রত বসু। পত্রিকার ম্যানেজার ছিলেন অবিনাশচন্দ্র ভট্টাচার্য। এর অফিস ছিল কলকাতার ২৭ নম্বর কানাই ধর লেন। এর মূল্য ছিল ১ পয়সা।

১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা জুলাই আপত্তিকর প্রবন্ধ ছাপানোর অভিযোগে পুলিশ যুগান্তর কার্যালয়ে খানাতল্লাস চালায়। এই সময় পুলিশ ভূপেন্দ্রনাথ দত্তকে পত্রিকার সম্পাদক মনে করে গ্রেফতার করে। ২২শে জুলাই এর মকদ্দমা শুরু হলে, ভূপেন্দ্রনাথ ইংরেজের আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন থেকে বিরত থাকেন। মূলত তিনি আদালতে মামলার পক্ষ বা বিপক্ষে কোনো কিছু বলেন নি। ২৪শে জুলাই পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে, ভূপেন্দ্রনাথকে আদালত ১ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন। এরপর এই পত্রিকা মুদ্রণ স্থান সাধনা প্রেস বাজেয়াপ্ত করে। এরপর যুগান্তরের কার্যালয় স্থানন্তরিত হয় কলকাতার ২৮/১ মির্জাপুর স্ট্রীটে।

যুগান্তরের কিছু কিছু প্রবন্ধ 'বন্দেমাতরম' নামক অপর একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।  সরকার এই পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে
অরবিন্দ ঘোষ-কে সন্দেহ করে এবং ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই আগষ্ট তাঁকে গ্রেফতার করে। এই সন্দেহকে প্রমাণ করার জন্য এই পত্রিকার প্রাক্তন সম্পাদক বিপিনচন্দ্র পালকে সাক্ষী হিসেবে ডাকা হয়। কিন্তু বিপিনচন্দ্র পাল সাক্ষ্য দিতে অস্বীকার করেন। প্রমাণের অভাবে অরবিন্দ ঘোষ মুক্তি পান। সরকার যুগান্তরের বিরুদ্ধে রাজদ্রোহের অভিযোগ আনে এবং এর প্রকাশক ও প্রিন্টার বসন্তকুমার ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করে। পরে বিচারে তাঁর দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের জেলে হয়। মুদ্রাকরের অনুমতি না পাওয়ায় এরপর যুগান্তর বন্ধ হয়ে যায়। পরে সরকার মুদ্রাকরের অনুমতি দিলে যুগান্তর প্রতি শনিবার প্রকাশের ব্যবস্থা হয়। 

সরকারের হয়রানির কারণে যুগান্তরের নিয়মিত প্রকাশে বিঘ্ন সৃষ্টি হতে থাকে। পরে গ্রাহকদের সহায়তায় ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই নভেম্বর থেকে প্রতি রবিবার প্রকাশিত হতে থাকে ৭৫ কর্নওয়ালিস স্ট্রিট থেকে।  কিন্তু এই বৎসরের শেষে যুগান্তর অফিসে পুলিশ পুনরায় হানা দেয়। ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে ডিসেম্বর সরকর যুগান্তরের বিরুদ্ধে মামলা চালানোর নির্দেশ দেয়। এই সূত্রে পত্রিকার সম্পাদক বৈকুণ্ঠচন্দ্র আচার্যকে গ্রেফতার করে। ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ৬ জানুয়ারি বৈকুণ্ঠচন্দ্র আদালতে হাজিরা দেন। পাঁচ হাজার টাকার জামিনে তিনি জামিন পান। এই সময় নানা হয়রানির জন্য ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা জানুয়ারি সংখ্যা প্রকাশিত হয় নি। ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই জানুয়ারি বৈকুণ্ঠ আচার্যের আড়াই বছরের কারাদণ্ড হয়।

পত্রিকার সম্পাদক-সহ প্রকাশক, মুদ্রাকরদের কারাদণ্ড, জরিমানা, বারবার পত্রিকা অফিসে পুলিশি হামলা ইত্যাদির কারণে পত্রিকাটি চিরতরে বন্ধ হয় যায়। এর সর্বশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ৬ জুলাই।