বহুলুল্ লোদী
লোদী বংশের আফগান বংশোদ্ভুত যোদ্ধা ও 
শাসক এবং বহুলুল্ লোদী দিল্লীর 
লোদী রাজবংশের রাজতন্ত্র 
প্রতিষ্ঠাতা। 
তাঁর পিতা মালিক কারার পুত্র। মালিক কারার পিতা বাহরাম সুলতান 
ফিরোজ তুঘলকের আমলে মুলতানের গভর্নর মর্দান দৌলতের অধীনে চাকুরি নেন। বাহরামের 
দুই পুত্রের ভিতরে সুলতান শাহ শিরহিন্দের শাসক নিযুক্ত হন এবং খিজির খাঁ কর্তৃক ইসলাম খাঁ' উপাধিতে ভূষিত হন। 
বাহরামের অপর পুত্র মালিক কারার বহলুল ইসলাম খাঁর প্রিয়পাত্র ছিলেন।  ইসলাম খাঁ' ইচ্ছানুযায়ী তাঁর মৃত্যুর পর বহলুল লোদী শিরহিন্দের গভর্নর নিযুক্ত 
হন। পরে তিনি গুজরাটের শাসনকর্তা হন। 
সৈয়দ বংশের সুলতান মুহম্মদ শাহের (১৪৩৪-৪৫খ্রিষ্টাব্দ) শাসনমালে মালবের শাসনকর্তা 
মাহমুদ শাহ দিল্লি আক্রমণের উদ্যোগ নিলে, বহলুল গুজরাট ত্যাগ করে মহম্মদ শাহের স্বপক্ষে যুদ্ধে 
অংশ নেন এবং মাহমুদ খলজিকে 
পরাজিত করেন। এই সহযোগিতার জন্য বহলুল পুরস্কার স্বরূপ লাহোরের শাসক পদ পান। এই সময় সুলতান 
তাঁকে খান-ই-খানন' উপাধিতে ভূষিত করেন। 
১৪৪৫ খ্রিষ্টাব্দে মুহম্মদ শাহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র আলাউদ্দিন শাহ দিল্লির 
রাজত্ব লাভ করেন। আলাউদ্দিন শাহ ছিলেন শাসক হিসেবে অযোগ্য। এই সুযোগে ১৪৫১ 
খ্রিষ্টাব্দে তিনি দিল্লী আক্রমণ করেন। আলাউদ্দিন শাহ সিংহাসন ত্যাগ করে বদাউনে চলে 
গেলে, বহুলুল দিল্লির সিংহাসন দখল করেন। এর মাধ্যমে ‘লোদী রাজবংশের’ সূচনা হয়।
সিংহাসন লাভের পর, তাঁর সাহায্যকারী সৈয়দবংশের প্রধানমন্ত্রী হামিদ খাঁকে বন্দী করে 
কারাগারে নিক্ষেপ করেন। এরপর তিনি সসৈন্যে মুলতানের বিদ্রোহ দমনে অংশগ্রহণ করলে, 
জৌনপুরের শাসক মাহমুদ শাহ আক্রমণ করলে বহুলুল দিল্লিতে ফিরে আসেন। দিল্লির সন্নিকটে নারেলা নামক স্থানে উভয় পক্ষ মুখোমুখি হয়। জৌনপুরের সৈন্যাধ্যক্ষ দারিয়া খাঁকে বশীভূত করে বহলুল মামুদ শার্কীর বাহিনীর মধ্যে ভাঙন ধরিয়ে দেন এবং বিভ্রান্ত শার্কীকে স্বরাজ্যে প্রত্যাবর্তনে বাধ্য করেন। 
১৪৫৭ খ্রিষ্টাব্দে
মামুদ শাহের মৃত্যুর পরে তাঁর পুত্র মহম্মদ শাহ- 
সিংহাসনে আরোহণ করেন। ১৪৫৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আততায়ীর 
হাতে প্রাণ হারালে,  হুসেন 
শাহ্ সিংহাসনে লাভ করেন। ১৪৭৯ 
খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি জৈনপুরের সুলতান হিসেবে ছিলেন। হুসেন 
শাহ্ বহলুল লোদীর সাথে
মিত্রতার বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং 
তিব্বতের স্বাধীন জামদারগণকে তাঁহার স্বীকার 
করিতে বাধ্য করেন।
ও পৌত্রের আমলেও দিল্লির সাথে জৌনপুরের বিরোধ ও সংঘাত অব্যাহত থাকে। শেষ পর্যন্ত 
১৪৮৬ খ্রিষ্টাব্দে হুসেন শাহ শার্কীকে বিতাড়িত করে বহুলুল জৌনপুর দখল করতে সক্ষম হন। জৌনপুরের শাসক হন বহলুলের পুত্র বরবক 
শাহ। এরপর তিনি কালপি, ঢোলপুর, গোয়ালিয়র-সহ বহু অঞ্চল দখল করেন। ১৪৮৯ খ্রিষ্টাব্দে গোয়ালিয়র অভিযানের পরে বহলুল অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কিছুদিনের মধ্যে 
মৃত্যুবরণ করেন। 
সুলতানি সাম্রাজের 
গৌরব পুনরুদ্ধারকারী হিসেবে বহুলুল্ লোদীর নাম স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। তাঁর মৃত্যুর পর 
দিল্লীর সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন, তাঁর তৃতীয় পুত্র নিজাম খাঁ (সিকান্দার 
লোদী)।
সূত্র :
ভারতের ইতিহাস। শ্রীঅতুল চন্দ্র রায়। 
মৌলিক লাইব্রেরি, কলকাতা। জুলাই ১৯৯৫।