সিকান্দর লোদী
লোদী বংশের দ্বিতীয় সুলতান। প্রকৃত নাম নিজাম খাঁ।

তাঁর পিতা
বহলুল্ লোদী ছিলেন লোদী বংশের প্রতিষ্ঠাতা সুলতান। তিনি ছিলেন বহলুল্ লোদীর তৃতীয় সন্তান। ১৪৮৯ খ্রিষ্টাব্দে পিতার  মৃত্যুর পর নিজাম খাঁ দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি সিংহাসনে আরোহণের পর তিনি 'সিকান্দর লোদী' উপাধী ধারণ করেন।

বহলুল্ লোদী'র মৃত্যুর পর জৌনপুরের শাসক বরবক্ শাহ্ স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বরবক্ শাহ্‌কে দমন করার জন্য তিনি একটি অভিযান পরিচালনা করেন। বরবক্ শাহ সিকান্দরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করে, তাঁর বশ্যতা স্বীকার করেন। কিন্তু বরবক্ শাহ-এর অত্যাচারে অতীষ্ট হয়ে, তাঁর আমিররা জৌনপুরের পূর্ববর্তী শাসনকর্তা হুসেন শর্কীকে সিংহাসনে বসার আহ্বান করেন। এই সময় সিকান্দর জৌনপুর আক্রমণ করলে, হুসেন শর্কী বঙ্গদেশে পালিয়ে যান। এই যুদ্ধের পর তিনি 'ত্রিহূত' ও 'বিহার' নিজ রাজ্যের অধিকারভুক্ত করতে সমর্থ হন।

এই সময় বঙ্গের রাজা ছিলেন হুসেন শাহ। হুসেন শর্কীকে আশ্রয় দেওয়ার কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে সিকান্দর লোদী বঙ্গদেশ আক্রমণের উদ্যোগ নেন।

 সিকান্দরের সৈন্য বাংলার সীমান্তে বারহ (বর্তমান পাটনা জেলার পূর্বাঞ্চল) নামক স্থানে শিবির স্থাপন করনে। সুলতান হুসেন শাহ তাঁহার পুত্র দানিয়েলের অধীনে এক বিরাট সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন। সুলতান সিকান্দর লোদীর সেনাপতি মুহম্মদ লোদী ও মুবারক খান লোহানীর বিরাট বাহিনী বাঙালি সৈন্যবাহিনীর উপস্থিতিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ফলে বুদ্ধিমান সিকান্দর লোদীর পরামর্শে সন্ধির প্রস্তাব করা হইল। অচিরে সন্ধিপত্র স্বাক্ষরিত হইল। পিতার পক্ষে দানিয়েল প্রতিশ্রুতি দিলেন যে, দিল্লির সম্রাট সিকান্দর লোদীর শত্রুকে বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদান করা হবে না। এই চুক্তির দ্বারা বাংলা এবং দিল্লির সীমান্তরেখা নির্ধারিত হয়েছিল। এর সিকান্দর লোদী  দিল্লীতে ফিরে যান।

১৫১৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দিল্লীতে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর, তাঁর পুত্র ইব্রাহিম লোদী দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করেন।

সিকান্দর শাহ উদ্ধত আফগান আমিরদের দমন করে দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা স্থাপনে সমর্থ হন। তিনি রাজ্যের প্রশাসনিক বিষয়ের কোনো পরিবর্তন করেন নাই। তারপরেও তিনি দেশের সরকারি আয়-ব্যয়ের হিসেব সুচারুরূপে ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। গুপ্তচর নিয়োগের দ্বারা দেশের ভিতর ও বাইরের সংবাদ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি সাহিত্য ও শিল্পকলার বিশেষ অনুরাগী ছিলেন। তিনি নিজেও ফার্সি ভাষায় কবিতা রচনা করতেন।

তিনি অনেকাংশেই হিন্দু-বিদ্বেষী ছিলেন। মথুরার হিন্দু মন্দির তাঁর নির্দেশে ধূলিসাৎ করা হয়েছিল। তিনি হিন্দুদের যমুনা নদীতে ধর্মীয় স্নান করা নিষিদ্ধ করেছিলেন।


সূত্র :

ভারতের ইতিহাস। শ্রীঅতুল চন্দ্র রায়। মৌলিক লাইব্রেরি, কলকাতা। জুলাই ১৯৯৫।