ডোম্বীপা
অন্যতম প্রাচীন বাঙালি কবি।
ডোম্বীবা সম্পর্কে ঐতিহসিক কোনো নিদর্শন পাওয়া যায় না। তবে তাঁর রাজ্য এবং অলৌকিক
কর্মকাণ্ড সম্পর্কে নানা রকম গল প্রচলিত আছে। এসব গল্প থেকে অনুমান করা যায়, তিনি
বৌদ্ধপ্রচারক ছিলেন।
কথিত আছে
তিনি এক সময় ত্রিপুরা রাজ্যের রাজা ছিলেন। আচার্য
বিরুপা
ঘুরতে
ঘুরতে তাঁর রাজত্বে এলে ডোম্বীপা বৌদ্ধ তান্ত্রিক মতে দীক্ষিত হন। পরে তিনি
সাধনার জন্য ডোম জাতীয়া পদ্মিনী'কে বিবাহ করেন। এই কারণে রাজ্যের সবাই তাঁকে রাজ্য
থেকে বহিষ্কার করেন। এরপর তিনি এই সাধিকার সাথে তিনি বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে থাকেন।
এই ডোম-কন্যার সাথে থাকার কারণে তিনি ডোম্বী নামে পরিচিতি লাভ করেন।
এক সময় এই
রাজ্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। গণকেরা মত দেন যে- রাজাকে তাড়িয়ে দেওবার জন্য এই
দুর্ভিক্ষ হয়েছে। এরপর সকলে মিলে উক্ত ডোমকন্যাসহ তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনেন। এরপর দেশ
থেকে দুর্ভিক্ষ দূর হয়ে যায়। পরে তিনি রাজ্যের অনেককে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত করেন।
নিজেও সাধনার দ্বারা সিদ্ধি লাভ করেন।
এরপর তিনি রাঢ়দেশে গিয়ে বিভিন্ন অলৌকিক কার্যকলাপ দেখিয়ে
সেখানকার হিন্দুধর্মাবলম্বীদের বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত করেন। এরপর তিনি দক্ষিণ
কর্ণাটকে যান এবং সেখানে বিভিন্ন অলৌকিক কার্মকাণ্ড প্রদর্শন করেন। সেখান থেকে তিনি
রাজা লিঙ্গাইত রাজ্যে যান। সেখানে ৮০০ স্তূপ তৈরি করেন। একরাত্রে
তিনি এইসব স্তূপ ধ্বংস করে দেন। কিন্তু রাজা পরে কোনো বলির জন্য প্রাণী হত্যা করেবন
না, এমন প্রতিজ্ঞা করায় স্তূপগুলো আবার আগের অবস্থা লাভ করে। এরপর তিনি স্বশরীরে
স্বর্গে চলে যান। চর্চাগীতিতে তাঁর রচিত ১টি পদ
পাওয়া যায়। এই পদটি হলো–
গঙ্গা জউনা মাঝেঁ রে বহই নাঈ [তথ্য]। পদসংখ্যা-১৪
তথ্যসূত্র
:
চর্যাগীতিকা/মুহম্মদ আবদুল হাই ও আনোয়ার পাশা সম্পাদিত। ষ্টুডেন্ট ওয়েজ।
অগ্রহায়ণ ১৪০২।
চর্যাগীতি কোষ/নীলরতন সেন। সাহিত্যলোক। জানুয়ারি ১৯৭৮।
চর্যাগীতি পরিক্রমা/ড. নির্মল সেন। দে'জ পাবলিশিং, জানুয়ারি ২০০৫।
চর্যাগীতি প্রসঙ্গ/সৈয়দ আলী আহসান। মৌলি প্রকাশনা, জুন ২০০৩।
বাংলাভাষার ইতিবৃত্ত/ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। মাওলা ব্রাদ্রার্স, মার্চ ২০০০।
হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধ গান ও দোহা/হরপ্রসাদ শাস্ত্রী।
(বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, ১৩২৩)
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী রচনা-সংগ্রহ (দ্বিতীয় খণ্ড)। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক
পর্ষৎ, নভেম্বর ২০০০