(১৮৪১-১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে)
মরমি কবি বাউল।
১৮৪১ খ্রিষ্টব্দে ঝিনাইদহ (বৃহত্তর যশোহর জেলা) জেলার হরিণাকুণ্ড উপজেলার বেলতলা
গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম দবিরুদ্দিন। ফকিরি মতে দীক্ষিত হওয়ার
পর, দুদ্ মণ্ডল বা
দুদ্দু শাহ নামে অভিহিত হন। তাঁর পিতার নাম মুহম্মদ ঝড়ুমণ্ডল ছিলেন কৃষক। তাঁর চাচা জিন্দার
আলী বিশ্বাসও ছিলেন কৃষক। দু্দ্দ শাহ্ ছিলেন তাঁর ভাইদের ভিতরে কনিষ্ঠ। তাঁর
অন্যান্য ভাইদের নাম মধু মণ্ডল, পিরু মণ্ডল, গরাই মণ্ডল।
দু্দ্দ শাহ্ হরিশপুর শ্রীনাথ বিশ্বাসের
পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। একই সাথে তিনি স্থানীয় আলেম মৌলবিদের কাছে
কাছে আরবি-ফারসি ভাষা শিক্ষা করেন। এছাড়া হরিশপুর নিবাসী মদনদাস গোস্বামীর কাছে
তিনি সংস্কৃত ভাষা শেখেন। সংস্কৃত ভাষায় রচিত বহু গ্রন্থ এবং চৈতন্যচরিতামৃত তাঁর
কণ্ঠস্থ ছিল বলে জানা যায়।
এক সময় তাঁর গ্রামের নিকটবর্তী হরিশপুরে বহু সাধু-দরবেশের
বসতি ছিল। এঁদের সংস্পর্শে এসে দুদ্দু শাহ ভাববাদী হয়ে ওঠেন। ফকিরি মতে আকৃষ্ট হয়ে
তিনি সদ্গুরুর সন্ধান করতে থাকেন। গুরুর সন্ধানে তিনি যশোর-নদীয়া-সহ বিভিন্ন অঞ্চল
ভ্রমণ করেন। এই সময় ধর্ম বিষয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে আলেম ও পণ্ডিতদের সাথে তিনি তর্কুযুদ্ধে
অবতীর্ণ হতেন। শেষ পর্যন্ত তিনি
তৎকালীন নদীয়া জেলার মহকুমা শহর কুষ্টিয়ায় আসেন। এখানে এসে তিন
লালন
শাহ-এর গান এবং
দর্শনের বিষয়ে অবগত হয়ে,
লালন শাহের সাথে দেখা করেন। সেসময়
লালন শাহ
থাকতেন কুষ্টিয়ার
ছেঁউড়িয়ার আখড়ায়। এই আখড়ায় দুদ্দু লালনের সঙ্গে প্রথমে ধর্মালোচনায় বসেন। পরে
এই আলোচনা তর্কযুদ্ধে পরিণত হয়। অবশেষে লালনের যুক্তির কাছে পরাজিত হয়ে তিনি
লালনের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। দুদ্দু শাহ তাঁর একটি গানে এই বিষয়ে জানান
বাহাছ করিতে এসে বয়াত হইনু,
আমি অতি অভাজন লালন সাঁই বিনু।
এরপর তিনি লালনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে,
তিন বহু গান রচনা করেন। অনেকে
দুদ্দু শাহকে
লালন শাহ
ের সার্থক উত্তরাধিকার হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।
পরর্বর্তী সময়ে এই গানগুলো দুদ্দু শাহের গান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তাঁর গানে
পাওয়া যায় সৃষ্টিকর্তার প্রতি একনিষ্ঠ সাধনার কথা। তাঁর মতে নিষ্ঠা ছাড়া কোনো
সিদ্ধি লাভ করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন ধ্যান। মানব চরিত্র দ্বিমুখী। এর একটি
ভালো, অন্যটি মন্দ। মন্দ কাজের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিৎ, সেটা
তাঁর গানেই পাওয়া যায়। শেষজীবন তিনি কাটান তাঁর পৈত্রিক বাড়ি
বেলতলায়। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। বেলতলায় পৈতৃক
বাস্তু-ভিটেতে সমাহিত করা হয়।
রচিত গ্রন্থ:
রচিত
গান
সূত্র:
- বাংলাপেডিয়া।
- মরমী কবি লালন শাহ, জীবন ও সঙ্গীত, লেখক : ড. খন্দকার রিয়াজুল হক, প্রকাশকাল :
জুন ১৯৯৯, প্রকাশক : গোলাম মঈনউদ্দিন।
- বাংলাদেশের বাউল গান : ড. আশরাফ সিদ্দিকী সম্পাদিত, প্রকাশকাল : ১০ মার্চ ২০০৮,
প্রকাশক : পল্লীবাউল সমাজ-উন্নয়ন সংস্থা।
- বৃহত্তর যশোরের
লোককবি ও চারণ কবি গ্রন্থ।
বাউল বৈষ্ণব ধর্ম এক নহে তো ভাই,
বাউল ধর্মের সঙ্গে বৈথাবের যোগ নাই ॥
বিশেষ সম্প্রদায় বৈঞ্চব
পঞ্চতত্বে করে জপতপ
তুলসিমালা অনুষ্ঠান সদাই ॥
বাউল মানুষ ভজে
যেখানে নিজ বিরাজে
বিস্তর অমৃত মজে নারী সঙ্গ তাই ॥
নিত্যামন্দের দুই পুরুষ হয়
বীরভদ্র বীরড়ামনি কয়
দুই জনে দুই মতের গোঁসাই শুনতে পাই ॥
দরবেশি বাউলের ক্রিয়া
বীরভদ্র জানে সেই ধারা
দরবেশ লালন সাঁইর কথায়
দুদ্দু জানে তাই ॥
তথ্য সূত্র: