গণেশ ঘোষ
ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী,
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন ১৯৩০'-এর
সূর্যসেন-এর সহযোদ্ধা।
১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে জুন, যশোহর জেলার
বিনোদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা
বিপিন বিহারী ঘোষ ছিলেন রেলকর্মচারী। পিতার কর্মস্থল ছিল চট্টগ্রাম। সেই সূত্রে
তিনি চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলে লেখাপড়া করতেন। এই সময় তাঁর বন্ধু অনন্ত
সিং-এর মাধ্যমে
সূর্যসেন-এর সংস্পর্শে আসেন এবং
সূর্যসেন-এর অনুপ্রেরণায় তিনি বিপ্লবী দলে যোগ দেন।
১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নিয়ে স্কুল-কলেজ, চট্টগ্রামের বার্মা ওয়েল
মিল, স্টিমার কোম্পানি, আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে ইত্যাদি ধর্মঘটে সক্রিয় অংশ নেন। ১৯২২
খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে (বর্তমানে যাদবপুর
ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ) ভরতি হন। ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে বোমা বানানোর অভিযোগে গ্রেফতার হন।
কিন্তু সেবার তিনি প্রমাণাভাবে মুক্তি পান। ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে ভারতরক্ষা আইনে তাঁকে
আবার গ্রেফতার করা হয় এবং চার বছর বন্দি থাকেন।
১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে
সূর্যসেনের নেতৃত্বে তিনি এবং কয়েকজন কলকাতায় কংগ্রেস অধিবেশনে যোগ
দেন। এই অধিবেশনে সুভাষচন্দ্র বসু যে বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স দল গঠন করেছিলেন, তার
আদলে
সূর্যসেন চট্টগ্রামের দলে তিনি জিওসি হন। ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম
জেলা কংগ্রেসে নির্বাচিত হওয়ার পর
সূর্যসেনের 'বিপ্লবী পরিষদ' গঠন করেন। এই পরিষদে গণেষ ঘোষ ছিলেন
তার পাঁচ সদস্যের অন্যতম সদস্য (অপর সদস্যেরা হলেন
সূর্যসেন নিজে, অম্বিকা চক্রবর্তী, নির্মল সেন ও অনন্ত সিং)। পরে
পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলের নাম পালটে 'ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি, চট্টগ্রাম
শাখা' রাখা হয়। পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে ১৮ এপ্রিল
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন অভিযান সংগঠিত হয়। এই অভিযানে গণেশ ঘোষ ছিলেন ফিল্ড
মার্শাল। পরে ঘটনাচক্রে তিনি অপর কয়েক জন সঙ্গীর সঙ্গে বাহিনী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে
পড়ায় ২২ এপ্রিল কলকাতার পথে রওনা হন। ফেণী স্টেশনে রেলপুলিশের হাতে বন্দী হলেও
তাঁরা পালাতে সক্ষম হন। কলকাতায় আসার পর যুগান্তর দলের সহায়তায় তাঁদের চন্দননগরে
আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়।
১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর চন্দননগর সংঘর্ষের ঘটনায় অন্যান্য কয়েকজনের
সঙ্গে গণেশ ঘোষ বন্দি হন। ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলায় দণ্ডিতদের
সঙ্গে তাঁকেও সেলুলার জেলে চালান করা হয়। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তি পাওয়ার পর
তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে কমিউনিস্ট পার্টি
বিভাজনের পর তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) নামে নবগঠিত দলটিতে যোগদান
করেন। পার্টি নিষিদ্ধ হলে তিনি ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কারারুদ্ধ
থাকেন। ১৯৫২, ১৯৫৭ ও ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বেলগাছিয়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা
কেন্দ্র থেকে লোকসভাতেও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে মাস্টারদা
সূর্য সেনের সহকর্মী ও অনুরাগীদের নিয়ে গঠিত 'বিপ্লবতীর্থ চট্টগ্রাম স্মৃতি
সংস্থা'-র সভাপতিত্বের ভার গ্রহণ করেন। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই আগষ্ট কলকাতায়
মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র :
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন : চারুবিকাশ দত্ত, কলকাতা
আমি সুভাষ বলছি। প্রথম খণ্ড । শৈলেশ দে। বিশ্ববাণী প্রকাশনী। কলকাতা-৯। অগ্রহায়ণ, ১৩৭৫