রাজা গণেশ
গৌড়ের রাজা। প্রথম দিকে তিনি ইলিয়াস শাহী রাজবংশ-এর চতুর্থ শাসক হামজা শাহ (১৪০৯-১৪১৩ খ্রিষ্টাব্দ) অধীনে জমিদার ছিলেন। হামজা শাহ-এর মৃত্যুর পর, শিহাবউদ্দিন বায়াজিদ অল্প সময়ের জন্য সিংহাসনের অধিকারী হন। এই সময় রাজা গণেশ ক্ষমতার শীর্ষে চলে আসেন।

'রিয়াজ-উস-সুলতান' নামক গ্রন্থ মতে তিনি রাজশাহী অঞ্চলের ভাতুরিয়ার জমিদার ছিলেন। তিনি হামজা শাহ -এর আমলেই একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন। ১৪১৫ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহ-কে হত্যা করে, সিংহাসন দখল করেন। এই সূত্রে ইলিয়াস শাহী রাজবংশ প্রথম পর্যায় (১৩৪২-১৪১৫) শেষ হয় এবং শুরু হয় রাজা গণেশের রাজত্বকাল।

এই সময় বাংলার মুসলমান দরবেশরা হিন্দু রাজার বিরুদ্ধে মুসলমান প্রজাদের বিরুদ্ধে  ক্ষেপিয়ে তোলেন। এই সময় গণেশ কয়েকজন বিদ্রোহী দরবেশকে হত্যা করেন। ফলে মুসলমান প্রজাদের বিদ্রোহ চরম আকার ধারণ করে। এই সময় বিদ্রোহীদের নেতা নূরকুৎব আলম জৌনপুরের সুলতান ইব্রাহিম শর্কিকে বাংলা আক্রমণের আমন্ত্রণ জানান। ইব্রাহিম শর্কি বাংলা আক্রমণ করলে, গণেশ সিংহাসন ত্যাগ করেন। এই সময় তাঁর পুত্র যদু সেন (ভিন্ননাম জিৎমল), ইব্রাহিমের পক্ষে চলে যান। পরে রাজ্য লোভে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে জালালউদ্দিন নাম ধারণ করেন। ইব্রাহিম শাহ, জালালুদ্দিনকে সিংহাসনে বসিয়ে জৌনপুরে ফিরে যান।

 ইব্রাহিম শাহ ফিরে যাওয়ার পরপরই, গণেশ ক্রম ক্রমে আবার ক্ষমতার শীর্ষে চলে আসেন এবং পুত্রের ছায়ায় তিনি রাজ্য শাসন করা শুরু করেন। এই সময় তিনি বাংলার বিদ্রোহী দরবেশদের কঠোর হাতে দমন করেন। এরপর তিনি জালালউদ্দিনকে ক্ষমতাচ্যুত করে, সিংহাসন অধিকার করেন। এই সময় তিনি 'দনুজমর্দনদেব' নাম ধারণ করেন। তিনি মুসলমান দরবেশদের প্রতি হিংসাত্মক আচরণ করলেও, সাধারণ মুসলমানদের প্রতি সদয় ব্যবহার করেছেন বলেই জানা যায়। এই কারণে সাধারণ মুসলমানদের সমর্থন তাঁর প্রতি ছিল। ১৪১৮ খ্রিষ্টাব্দে রাজা গণেশ মৃত্যুবরণ করেন। এরপর তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র মহেন্দ্রদেব রাজত্ব লাভ করেন।  পরে জালালউদ্দিন মুসলমানদের আমিরদের সহায়তায় মহেন্দ্রদেবকে অপসারিত করে সিংহাসন দখল করেন। জালালউদ্দিন পূর্ববঙ্গ ও চট্টগ্রাম অঞ্চলসহ প্রায় সমগ্র বাংলা অধিকার কৱতে সক্ষম হন। ১৪৩১ 'খ্রিষ্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এরপর ক্ষমতায় বসেন তাঁর পুত্র সামস্‌উদ্দিন আহমেদ। কিন্তু তাঁর কুশাসনে দেশে অরাজকতার সৃষ্টি হয়। এই সময় সাদি খাঁ এবং নাসির খাঁ নামক দুইজন আমির তাঁকে হত্যা করেন। পরে এই দুই হত্যাকারী আমির পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন এবং উভয়ই নিহত হন। এরপর অন্যান্য আমিরর ইলিয়াস শাহ বংশের নাসিরউদ্দিন মাহমুদকে ১৪৪২ খ্রিষ্টাব্দে সিংহাসনে বসান। এর ফলে ইলিয়াস শাহী বংশের রাত্বকাল দ্বিতীয়বারের মতো শুরু হয়।


সূত্র :
বাংলাদেশের ইতিহাস/রমেশচন্দ্র মজুমদার।
ভারতের ইতিহাস । অতুলচন্দ্র রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়।