জাহানারা
চৌধুরী
(১৯১৩–১৯৮২)।
কবি, সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদিকা।
১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে মালদার এক অভিজাত জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ
করেন। যতদূর জানা যায়, তিনি তাঁর ভাই আলতাফ চৌধুরীরর সাথে কলকাতায় থাকতেন। সমকালীন
সাহিত্যিকদের আলোচনার সূত্রে ধারণা করা হয়, তিনি বিদুষী এবং সুন্দরী ছিলেন।
তিনি 'রূপরেখা' নামক একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদন করতেন। এই পত্রিকার নামকরণ করণ
করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এই পত্রিকার সূচনা সংখ্যায় রবীন্দ্রনাথ একটি কবিতা
পাঠিয়েছিলেন। কবিতাটির শিরোনাম ছিল
'মূল্যশোধ'।
মূল্যশোধ
তোমার কালো চুলের বন্যায়
আমার দুই পা ঢেকে দিয়ে বলেছিলে
তুমি আমার রাজা,
তোমাকে যা দিই—
তোমার রাজকর যে তার চেয়ে অনেক বেশি
আরো দেওয়া হলো না
কেননা, আর যে আমার নেই
বলতে গেলে তোমার দুই চোখ দিয়ে জল পড়েছিল।
উল্লেখ্য, এই সময় 'রূপ-রেখা' নামে একটি সিনেমা পত্রিকা ছিল। তাই তিনি পত্রিকার নাম
পাল্টে রাখেন 'বর্ষবাণী'। জাহনারার লেখা থেকে জানা যায়, রবীন্দ্রনাথের সাথে বেশ
সুসম্পর্ক ছিল।
এক চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ তাঁকে লিখেছিলেন-
সেদিন তোমার কথা শুনে বড় আনন্দ পেয়েছি,...সেদিন তোমার কাছ থেকে আমি যেন
সমস্ত বাংলাদেশের মেয়েদের হাতের অর্ঘ্য পেয়েছি।
জাহানারার সাথে
কাজী নজরুল ইসলাম বিশেষ মধুর সম্পর্ক ছিল।
নজরুলনের নলিনীকান্ত সরকারের
বর্ণনা থেকে জানা যায়. ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের কোনো একদিন নজরুলকে সাথে নিয়ে জাহানারা
তাঁদের কলকাতার বাসায় গিয়েছিলেন। সেই সূত্রে
নজরুলের সাথে পরিচয়। পরবর্তী সময়ে
জাহানারা নজরুলের উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার
করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জুন (রবিবার ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৮)
নজরুল তাঁর নিজের গাড়ি নিয়ে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে দার্জিলিং
ভ্রমণে যান। এই ভ্রমণে পৃথকভাবে
গিয়েছিলেন মন্মথ রায়, অবনী রায়, মনোরঞ্জন চক্রবর্তী, স্বপন বুড়ো (অখিল নিয়োগী),
নীহার বালা। কিন্তু নজরুলের সাথে গাড়িতে গিয়েছিলেন জাহান
আরা চৌধুরী। এই ভ্রমণে জাহান আরার সাথে নজরুলের বিশেষ
হৃদ্যতা গড়ে উঠেছিল। নজরুল উঠেছিলেন জাহান
আরাদের দর্জিলিং-এর ডাক বাংলোতে। ১৪ই জুন ২৮ জুন পর্যন্ত জাহানারার আবদারে নজরুল
তাঁকে নিয়ে ৫টি কবিতা ও ৩টি গান রচনা করেছিলেন। গানগুলো নজরুল রচনা করেছিলেন
জাহানারার খাতায়।
- কবিতা। সুন্দর তুমি, নয়নে তোমার [১৪ জুন (রবিবার ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৮)]। কবিতাটি জাহান আরা'র
খাতায় লিখেছিলেন। লেখাটির সাথে স্থান ও তারিখ
উল্লেখ আছে- দার্জিলিং/১৪-৬-৩১।
[পাণ্ডুলিপি]
- কবিতা। আমার ধেয়ান-কমলে আলতো রাখিয়া চরণখানি। [১৬ জুন (মঙ্গলবার ১ আষাঢ় ১৩৩৮)]। কবিতাটি জাহান আরা'র খাতায়
লিখেছিলেন। লেখাটির সাথে স্থান ও তারিখ উল্লেখ আছে- দার্জিলিং/১৬-৬-৩১।
[পাণ্ডুলিপি]
- কবিতা। সুন্দর তনু, সুন্দর মন হৃদয় পাষাণ কেন
[দার্জিলিং। ১৬ জুন (মঙ্গলবার ১ আষাঢ় ১৩৩৮)] ।
কবিতাটি জাহান আরা'র খাতায় লিখেছিলেন। লেখাটির সাথে স্থান ও তারিখ উল্লেখ আছে- দার্জিলিং/১৬-৬-৩১।
[পাণ্ডুলিপি]
- গান। এলে কি স্বপন-মায়া
[তথ্য][২০ জুন (শনিবার
৫ আষাঢ় ১৩৩৮)]
কালানুক্রমিকের বিচারে এটি নজরুলের সঙ্গীতজীবনের দ্বিতীয় পর্বের ২৮১ সংখ্যক গান। গানটি জাহান আরা চৌধুরীর
জন্য লিখেছিলেন। নজরুলের পাণ্ডুলিপিতে গানটি রচনার স্থান, তারিখ ও সময় উল্লেখ আছে-
দার্জিলিং/শনিবার/রাত্রি এখানে তারিখের উল্লেখ নেই।
[পাণ্ডুলিপি]
- গান: আমি অগ্নি-শিখা মোরে বাসিয়া ভালো
[তথ্য]
[২১ জুন (রবিবার ৬ আষাঢ় ১৩৩৮)]
কালানুক্রমিকের বিচারে এটি নজরুলের সঙ্গীতজীবনের দ্বিতীয় পর্বের ২৮২ সংখ্যক গান। গানটি জাহান আরা চৌধুরীর
জন্য লিখেছিলেন। নজরুলের পাণ্ডুলিপিতে লেখা আছে '২১-৬ ৩১/রবিবার/সকাল'।
[পাণ্ডুলিপি]
- গান: আজি গানে গানে ঢাক্ব আমার
[তথ্য]
[২১ জুন (রবিবার ৬ আষাঢ় ১৩৩৮)]
কালানুক্রমিকের বিচারে এটি নজরুলের সঙ্গীতজীবনের দ্বিতীয় পর্বের ২৮৩ সংখ্যক গান।
গানটি জাহান আরা চৌধুরীর জন্য লিখেছিলেন। কবিতাটি জাহান আরা চৌধুরীর
জন্য লিখেছিলেন। নজরুলের পাণ্ডুলিপিতে লেখা আছে '২১-৬-৩১/দার্জিলিং/রবিবার -সকাল'।
[পাণ্ডুলিপি] -
গান: থাক সুন্দর ভুল আমার
[তথ্য]।
[২৩ জুন (মঙ্গলবার ৮ আষাঢ় ১৩৩৮)] কালানুক্রমিকের বিচারে এটি নজরুলের সঙ্গীতজীবনের দ্বিতীয় পর্বের ২৮৭ সংখ্যক গান।
কবিতাটি জাহান আরা চৌধুরীর জন্য লিখেছিলেন।
নজরুলের পাণ্ডুলিপিতে লেখা আছে 'দার্জিলিং/২৩-৬-৩১/সকাল'।
[পাণ্ডুলিপি]
-
কবিতা: আমার অশ্রু-বর্ষার শেষে ইন্দ্রধনু মায়া।
জয়তী পত্রিকার 'কার্তিক-পৌষ ১৩৩৮'
সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।
[২৮ জুন (রবিবার ১৩ আষাঢ় ১৩৩৮)]
কবিতাটি জাহান আরা'র খাতায় লিখেছিলেন। লেখাটির সাথে স্থান ও তারিখ উল্লেখ আছে- দার্জিলিং/২৮-৬-৩১।
[পাণ্ডুলিপি] -
কবিতা: ওপার হইতে আসিয়াছে ভেলা।
[২৯ জুন (রবিবার
১৪ আষাঢ় ১৩৩৮)] কবিতাটি জাহান আরা চৌধুরীর জন্য লিখেছিলেন।
লেখাটির সাথে স্থান ও তারিখ উল্লেখ আছে- দার্জিলিং/২৯-৬-৩১।
[পাণ্ডুলিপি]
-
কবিতা: রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিবসে তোমার। নজরুল রচনাবলীতে দার্জিলিং-এ রচিত উল্লেখ করেছে। কিন্তু পাণ্ডুলিপিতে
কবিতাটির সাথে রচনার স্থান ও তারিখ উল্লেখ নেই।
[পাণ্ডুলিপি]
- তুমি বুঝিবে না মোরে।
পাণ্ডুলিপিতে কবিতাটির তারিখ উল্লেখ আছে- ৮-৮-৩১। কিন্তু স্থানের উল্লেখ নেই।
নজরুল রচনাবলীতে দার্জিলিং-এ রচনার ভিতরে এই কবিতাটি রচিত উল্লেখ করেছে।
কিন্তু নজরুল-জীবনীর কালানুক্রমিক সূচি অনুসরণ করলে দেখা যায়, ১৫ই জুলাই (বুধবার ৩০ আষাঢ় ১৩৩৮) কলকাতা
থেকে শ্রীমতি মীরা চৌধুরীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি কবিতা লিখেছিলেন।
[মীরা
রায়কে লেখা পত্র]
এরপরে নজরুল যে
আবার দার্জিলিং গিয়েছিলেন- এমনটা জানা যায় না।
তাই ধারণা করা যায়, কবিতাটি তিনি কলকাতাতে রচনা করেছিলেন।
[পাণ্ডুলিপি]
১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।