সৈ্য়দ জামাল আল-দীন আল-আফগানি
১৮৩৮/৩৯-১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দ
মুসলিম রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক আন্দোলনকারী এবং সাংবাদিক।

অন্য নাম- সৈয়দ জামাল আদ-দীন আসাদাবাদী। আল-আফগানি নামে বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন।

১৮৩৮ বা ১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দে মধ্য ইরানের হামাদানের নিকটবর্তী আসাদবাদে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ধর্মমতে তিনি ছিলেন শিয়া মতাবলম্বী মুসলমান। তাঁর শৈশব সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। আফগানিস্থানের সুন্নিপ্রধান এলাকায় অবস্থান করার সময়, তিনি নিজের নামের সাথে আফগানি শব্দ জুড়ে দিয়ে - সুন্নি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন।

১৮৬৬ খ্রিষ্টাব্দে আফগানিস্থানের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে মোহাম্মদ আ'আম খান রাজত্ব শুরু করেন। এই বছরে তিনি কান্দাহার দখল করেন। এই সময় জামাল আফগানি তাঁর গোপন পরামর্শদাতা হন, এবং তাঁর সাথে কাবুলে আসেন। এরপর মোহাম্মদ আ'আম খান পদচ্যুত হন। এই সময় আফাগনিকে রুশ গুপ্তচর হিসেবে সন্দেহ করা হতে থাকে। ফলে ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে মোহাম্মদ আ'আম খান যখন পুনরায় ক্ষমতা লাভ করেন, তখন তিনি তাঁকে বহিষ্কার করেন।

কাবুল থেকে বহিষ্কারের পর ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইস্তাম্বুলে যান। সেখানে ধর্ম ও রাজনৈতিক বিষয়ে বিতর্কিত বক্তৃতা দিয়ে বিতর্কিত হয়ে পড়েন। এর ফলে তিনি ইস্তাম্বুল ত্যাগ করে ১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দে আফগানিস্তানে চলে যান।  এই সময়ে মিশরের শাসক ছিলেন ইসমাঈল পাশা। আফগানি সে সময়ে মুহম্মদ আবদুহ এবং সা'দ পাশা জাঘলুল-এর সমর্থক ছিলেন। মূলত এঁরা ছিলেন ইসলামের আধুনিকতাবাদের প্রবক্তা। এই আন্দোনের সাথে যুক্ত হয়ে- কায়রোতে তিনি ধীরে ধীরে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করেন। ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে  ইসমাঈল পাশা ক্ষমতাচ্যুত হলে- ইসলামের আধুনিকতাবাদের সমর্কদের নিয়ে ক্ষমতা দখলের উদ্যোগ নেন। এই সূত্রে তিনি একজন রাজনেতিক এবং ধর্মীয় নেতায় পরিণত হন। শেষ পর্যন্ত তাঁর এই উদ্যোগ ব্যর্থ হয় এবং মিশর থেকে বহিষ্কৃত হন। এরপর তিনি  ভারতের হায়দ্রাবাদে কিছুদিন কাটিয়ে কলকাতায় আসেন। এখান থেকে ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্সের প্যারিসে আসেন।

প্যারিসে তিনি আধুনিক ইসলামের দর্শন প্রচার করেন। একই সাথে ইউরোপীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য প্রদান করে মুসলমানদের উজ্জীবিত করা শুরু করেন। প্যারিসে তিনি তাঁর ছাত্র আবদুহের সাথে মিলে ব্রিটিশ বিরোধী সংবাদপত্র আল-উরওয়াত আল-উথকা প্রকাশ করেন। সে সময় তিনি বিভিন্ন ইউরোপীয় দার্শনিকদের সাথে বিতর্কে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৮৭, ১৮৮৮ এবং ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে তিন রাশিয়া ভ্রমণ করেন।

ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন। প্রবাসী ভারতীয়দের সাথে তাঁর রাজনৈতিক যোগাযোগ সচল ছিল।

এরপর তিনি খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইরানে ফিরে আসেন। সেখানে তিনি আবার শাহের পরামর্শক হিসেবে নিযুক্ত হন। এই সময়ের জিরানের শাসক, নাসের আল-দীন শাহের বিরুদ্ধে বিরোধিতামূলক প্রচারণা শুরু করেন। ১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নির্বাসিত হন। ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর প্রচারণা এবং উদ্যোগে নাসের আল-দীন শাহ নিহত হন।

এরপর তিনি সুলতানের একজন এজেন্টের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ইস্তাম্বুল যান। সুলতান হয়তো তাঁকে প্যান-ইসলামিক প্রচারে ব্যবহার করার আশা করেছিলেন। কিন্তু সুলতানকে তিনি আশাহত করেন। ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ৯ মার্চ তিনি ইস্তাম্বুলে মৃত্যবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর বড় ধরনের কোনো কবর-ভিত্তিক (মাজার) আন্দোলনের সূত্রপাত হোক, তা ঠেকানোর জন্য দাফনের স্থানটি গোপন রাখা হয়েছিল।
 
সূত্র: