রাজা জয়চন্দ্র
(রাজত্বকাল ১১৭০-১১৯৪ খ্রিষ্টাব্দ)
প্রাচীন ভারতবর্ষে গাড়ওয়াল রাজবংশের রাজা।
তাঁর পিতা ছিলেন রাজা বিজয়চন্দ্র। পিতার মৃ্ত্যুর পর তিনি
১১৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১১ জুন রাজত্বলাভ করেন। কথিত আছে রাজা জয়চন্দ্রের পিতা বিজয় চন্দ্র তাঁর জীবদ্দশায় জয়চন্দ্রের কাছে কনৌজের রাজ্য হস্তান্তর করেছিলেন।
তাঁর রাজত্বের সময় কৌনজের ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছিল। এই সময় প্রাচীন কাশীরাজ্যের
রাজধানী বারাণসীর ব্যাপক সংস্কার করেছিলেন।
তাঁর রাজত্বের সময় চৌহানরাজ পৃথ্বীরাজের সাথে তাঁর কন্যা সংযুক্তার বিবাহ নিয়ে
মনোমালিন্য হয়। কথিত আছে, পৃথ্বীরাজের পাণ্ডিত্য এবং সাহসী বীর যোদ্ধা হিসেবে
খ্যাতিতে সংযুক্তা পৃথ্বীরাজের প্রেমে পড়েন। জয়চন্দ্র এই সম্পর্ক মেনে না নিয়ে- তিনি একটি অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন
করে, সংযুক্তার স্বয়ম্বর সভা ঘোষণা করেন। এই সভায় পৃথ্বীরাজ চৌহানকে ডাকা হয় নি।
এবং তাঁকে অপমান করার জন্য, জয়চন্দ্র
পৃথ্বীরাজের একটি লোহার মূর্তি তৈরি করে তার প্রাসাদের বাইরে দারোয়ানের জায়গায় স্থাপন করেন।
সংযুক্তা স্বয়ম্বরের সময় এই লৌহ মূর্তিকে মালা দিয়েছিলেন। অন্যদিকে এদিকে পৃথ্বীরাজ চৌহান
এই সময়ম্বর সভার কথা শুনতে পেয়ে সভাস্থলে আসেন এবং সংযুক্তাকে ঘোড়ায় তুলে নিয়ে
নিজরাজ্যে প্রত্যাবর্তন করেন। ফলে উভয়ের ভিতরে ঘোরতর শত্রুতা শুরু হয়।
এই সময় গজনীর সুলতান ভারতবর্ষে মোহম্মদ ঘোরীকে
ভারতবর্ষে আক্রমণ শুরু করে। ঘোরী
প্রথমে মুলতানের উচ্ দুর্গ দখলের পর পৃথ্বীরাজের রাজ্য আক্রমণ করে। ১১৯১ খ্রিষ্টাব্দে তরাইনের প্রথম যুদ্ধে
পৃথ্বীরাজ ভারতের অন্যান্য রাজপুত রাজাদের সাহায্য নিয়ে মোহম্মদ ঘোরীকে পরাস্ত করেন।
১১৯২ খ্রিষ্টাব্দে মোহম্মদ ঘোরী একটি বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে এসে তরাইনের দ্বিতীয়
যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। এই যুদ্ধে পৃথ্বীরাজকে পরাজিত ও নিহত হন। ফলে দিল্লী ও আজমীর
মোহম্মদ ঘোরীর
দখলে আসে। এরপর তিনি মিরাট, বুলান্দগড়, এবং আলিগড় অধিকার করেন। পরের বার ভারত
অভিযানে এসে মোহম্মদ ঘোরীর
কনৌজ রাজ্যও জয় করে নেন ।
১১৯৪ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান কুতুবুদ্দিন আইবেক
কৌনজরাজ জয়চন্দ্রকে পরাজিত করেন। এই সময় তিনি বারণসী আক্রমণ করে
বহু মন্দির ধ্বংস করে দেন।
এই যুদ্ধে জয়চন্দ্র নিহত হন।
সূত্র :
বাংলাদেশের
ইতিহাস/রমেশচন্দ্র মজুমদার।
ভারতের ইতিহাস । অতুলচন্দ্র রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়।