কৃষ্ণচন্দ্র রায়
১৭১০-১৭৮২ খ্রিষ্টাব্দ।
নদীয়ার মহারাজা।
১৭১০ খ্রিষ্টাব্দে নদীয়ার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন। এঁর পিতার নাম রঘুনাথ
রায়। কূটকৌশলে তিনি তাঁর পিতৃব্যকে বঞ্চিত করে বিপুল সম্পদের অধিকারী হন। বাংলার
নবাব
আলীবর্দী খানের (১৬৭১-১৭৫৬
খ্রিষ্টাব্দ)শাসনামলে
তিনি নদীয়ার জমিদার ছিলেন। ১৭৫৪ খ্রিষ্টাব্দে রাজকর দিতে না পারায় তিনি কারাবন্দী
হন। পরে মুক্তি লাভ করেন এবং জমিদারী রাখতে সমর্থ হন। কথিত আছে, নবাবের কারাগার
থেকে মুক্ত হয়ে 'বিজয়া দশমী'র দিনে নৌকায় নদীয়ায় ফিরছিলেন।
ক্লান্ত শরীরে তিনি নৌকার ভিতরের ঘুমিয়ে পড়েন এবং স্বপ্নে দেখেন যে এক রক্তবর্ণা
চতুর্ভুজা কুমারী দেবী তাঁকে আগামী কার্তিক মাসের শুক্লানবমী তিথিতে তাঁর পুজো করতে
আদেশ দিচ্ছেন। রাজা নদীয়ায় ফিরে জগদ্ধাত্রী পূজার আয়োজন করেন। সেই থেকে কৃষ্ণনগরে
জগদ্ধাত্রী পূজার প্রচলন হয়।
বাংলার নবাব কর্তৃক কারাদণ্ডের কথা তিনি বিস্মৃত হন নি। তাই ইংরেজরা যখন
আলীবর্দী খানের দৌহিত্র
নবাব সিরাজদৌল্লার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে থাকেন, কৃষ্ণচন্দ্র তাতে ইন্ধন
যোগান। এই কারণে
সিরাজদৌল্লার পতনের পর তিনি মহারাজ পদবী লাভ
করেন। মীরকাশিমের শাসনামলে (১৭৬০-১৭৬৩ খ্রিষ্টাব্দে) খাজনা না দেওয়ার কারণে তাঁকে
গ্রেফতার করা হয় এবং মুঙ্গের কারাগারে রাখা হয়। পরে ইংরেজদের সহায়তায় তিনি মুক্তি
পান।
ইংরেজদের সহায়তার কারণে তিনি ইতিহাসে নিন্দিত হলেও, বাংলা সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ
এবং গুণীজনের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে প্রশংসিত। তাঁর রাজদরবারে ছিলেন ভারতচন্দ্র,
রামপ্রসাদ সেন, হরিরাম তর্কসিদ্ধান্ত, কৃষ্ণানন্দ বাচস্পতি, বাণেশ্বর বিদ্যালঙ্কার,
জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন, রাধামোহন গোস্বামী, গোপাল ভাঁড় প্রমুখ গুণিজন। তাঁর নির্দেশেই
ভারতচন্দ্র অন্নদামঙ্গল কাব্য রচনা করেছিলেন। তিনি নাটোর থেকে কিছু মৃৎশিল্পী এনে
কৃষ্ণনগরে মৃৎশিল্পের নতুন ধারার জন্ম দেন। বর্গী আক্রমণের ভয়ে তিনি 'শিবনিবাস'
নামে একটি রাজধানীও নির্মাণ করেছিলেন।
তথ্যসূত্র
:
সংসদ বাঙালি চরিতাবিধান (প্রথম খণ্ড)। জানুয়ারি ২০০২।