মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য
(১৮৮৯-১৯৫৪)
অভিনেতা, নাট্যকার

১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি ঢাকার বিক্রমপুরের কামারখাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম নবীনচন্দ্র ভট্টাচার্য। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি পাসের পর এমএসসি পড়ার সময় লেখাপড়া বাদ দিয়ে জড়িয়ে পড়েন গান্ধীবাদী রাজনীতির সঙ্গে এবং এই সূত্র ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে গ্রেফতার হন।

১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জেল থেকে ছাড়া পেয়ে নিজ গ্রাম কামারখাড়াতে চলে আসেন। এই সময় তিনি নাট্যচর্চা করে সময় কাটান।

১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। এরপর আবার ঢাকায় ফিরে একই তারপর ঢাকায় এসে ঢাকার তৎকালীন বিখ্যাত মঞ্চ ক্রাউন থিয়েটারে যোগ দিয়েছিলেন। এই মঞ্চে তিনি ‘চন্দ্রশেখর’ ও ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাটকে অভিনয় করে বিপুল জনপ্রিয়তা পান । এই খ্যাতির সূত্রে তিনি কলকতার মনোমোহন থিয়েটারে অভিনয় করার ডাক পান। এই মঞ্চস্থ ‘সীতা’ নাটকে অভিনয় করে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন । কলকাতায় অবস্থান কালে তিনি একাধিক নাটক রচনা করেন। এই সময় পত্র-পত্রিকায় নানা ধরনের তাঁর রচিত প্রবন্ধাদিত প্রকাশিত হয়। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলো- ‘চক্রব্যূহ’, ‘ব্রতচারিণী’, ‘বন্দনার বিয়ে’, ‘দেশবন্ধু’, ‘হোমিওপ্যাথি’ প্রভৃতি ।

১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে জাপান ব্রহ্মদেশ আক্রমণ করে। এই পটভূমিতে ব্যাপকতর ভারতীয় সংগঠনগুলো ভারতীয় জনগোষ্ঠীর কাছে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পোঁছে দিয়ে তাদেরকে প্রাণোদ্দীপনায় উজ্জীবিত করার চেষ্টায় করতে থাকেন। এর সাথে যুক্ত হন সে সময়ের উদীয়মান সাহিত্যিক, সাংবাদিক, নাট্যকার, সঙ্গীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, লোকশিল্পীসহ শিল্পের সকল শাখায় কর্মীবৃন্দ। এ সময়ে রাজনৈতিক সংগঠন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ও সাংস্কৃতিক কর্মক্রমের মধ্য দিয়ে শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার ক্ষেত্রে জনগণের সচেতনতা সৃষ্টির প্রতি বিশেষ কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নেয়। এই সূত্রে ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে বোম্বাইয়ে (অধুনা মুম্বাই) ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। এই অধিবেশনে ফ্যাসিবিরোধী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জন্য একটি সাধারণ সংঘ তৈরি করার জন্য। এরই ভিতর দিয়ে ভারতীয় গণনাট্য সংঘ বা সংক্ষেপে আই.পি.টি.এ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। এর উদ্যোক্তাদের মধ্যে ছিলেন কায়ফি আজমী, শান্তি বর্ধন, প্রেমধাবন, বলরাজ সাহনী, শংকর, শৈলেন্দ্র, পৃথ্বিরাজ কাপুর, অমর শেখ প্রমুখ। আর বাংলার প্রাদেশিক কমিটিতে মনোনীত হন সুনীল চ্যাটার্জী, দিলীপ রায়, সুধী প্রধান, বিজন ভট্টাচার্য, শম্ভু মিত্র, সুজাতা মুখার্জী, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, স্নেহাংশু আচার্য, বিষ্ণু দে, বিনয় রায় প্রমুখ। এরপর বাংলাতে প্রায় সকল প্রগতিশীল শিল্পীরাই এর সাথে যুক্ত হন। বঙ্গদেশে ভারতীয় গণনাট্যে সংঘকে বেগবান করেছিলেন মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য।

চলচ্চিত্রের নির্বাকযুগে ‘কপালকুণ্ডলা’-র মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেন। তাঁর অভিনীত অন্যান্য সিনেমাগুলো হলো-- রজনী (১৯২৯), চণ্ডীদাস (১৯৩১), মীরাবাঈ (১৯৩৩), সীতা(১৯৩৩), রূপলেখা (১৯৩৪), দেবদাস (১৯৩৫), ধূমকেতু (১৯৩৭), গ্রহের ফের (১৯৩৭), সার্বজনীন বিবাহ ‍ুউৎসব (১৯৩৮), দেবী ফুল্লরা (১৯৩৮), গোরা (১৯৩৮), জনকনন্দিনী (১৯৩৯), পথিক (১৯৩৯), সাপুড়ে (১৯৩৯) প্রভৃতি ।

১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ২১ জানুয়ারি কলকাতায় তিনি মৃত্যবরণ করেন।