মতিউর রহমান নিজামী
(১৯৪৩-২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ)
যুদ্ধাপরাধী, জামায়েত-ই-ইসলামী'র নেতা।

১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩১শে মার্চ পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম লুৎফর রহমান খান। স্ত্রীর নাম  সামসুন্নাহার।
সামসুন্নাহার ঢাকার মানারাত ইন্টারন্যাশনাল কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই দম্পত্তির চার পুত্র ও দুই কন্যা রয়েছে।

১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তফ্রন্টে ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন।
১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে আলিম পরীক্ষায় ১ম বিভাগে সমগ্র বোর্ডে ষোলতম স্থান অধিকার করেন।
১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের (বর্তমান ইসলামী ছাত্র শিবির) সাথে যুক্ত হন।

১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে কামিল কামিল পরীক্ষায় ফেকাহ শাস্ত্রে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন।
১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এই পদে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ছিলেন।
১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। 
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়, তিন পাকিস্তানীদের পক্ষে যোগ দেন। এই সময় তিনি পাবনাতে প্রত্যক্ষভাবে গণহত্যার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। বুদ্ধিজীবী হত্যার ক্ষেত্রে তিনি মূখ্য ভূমিকা রাখেন।

১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর নিজামী এবং দলের আরো কয়েকজন প্রধান নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশ ত্যাগ করেন।
১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের হাতে বঙ্গব্ন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর, ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে একটি অভ্যূত্থানের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন।
১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে নিজামীকে বাংলাদেশে ফিরে আসার অনুমতি দেওয়া হয়। এঁরা  ফিরে এসে নিজামী দলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন এবং জামায়াতের যুব সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরকে সংগঠিত করেন।
১৯৭৮-১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা মহানগরীর আমীর ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮৩-১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি
জামায়েত ই-ইসলামী সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে
জামায়েত ই-ইসলামী সেক্রেটারী জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং আমীর নির্বচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত (২০০০ খ্রিষ্টাব্দ) তিনি এই পদে ছিলেন।
১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জামায়াতে ইসলামীর হয়ে সংসদীয় আসন পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়া) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৯৪ পর্যন্ত সংসদে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব করেন।
১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে নির্বাচনে তিনি তার প্রার্থীতা হারান এবং আওয়ামী লীগের অধ্যাপক আবু সাঈদ তার আসন থেকে নির্বাচিত হন।
২০০১ খ্রিষ্টাব্দে গোলাম আযমের উত্তরসূরী হিসেবে নিজামী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর হিসেবে দায়িত্ব পান। একই বছর নিজামী বিএনপির সাথে চারদলীয় ঐক্যজোট গঠন করেন এবং তার নির্বাচনি এলাকা পাবনা-১ থেকে ৫৭.৬৮% ভোট পেয়ে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০০১-২০০৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি কৃষিমন্ত্রী ও ২০০৩-২০০৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৮ খ্রিষ্টাব্দ সাধারণ নির্বাচনে পাবনা-১ আসন থেকে চার দলীয় ঐক্যজোটের পক্ষে পুনরায় নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের মো: শামসুল হকের কাছে পরাজিত হন। নিজামী নির্বাচনে ৪৫.০৬% ভোট অর্জন করেন। এই বৎসরের মে মাসে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন নিজামীসহ আরো কয়েকজন রাজনীতিবিদের নামে গেটকো দুর্নীতি মামলা করেন। এই মামলার অভিযোগে বলা হয় তিনি সহ অন্যরা অবৈধভাবে স্থানীয় গেটকো ফার্মের সাথে কন্টেইনার ডিপো সংক্রান্ত একটি চুক্তি করেছিলেন। নিজামীসহ আরো ১২ জনের নামে এই মামলায় ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে ১৫ই মে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই মার্চ একটি জনসভায় ঢাকা মহানগর জামায়াতের আমির রফিকুল ইসলাম নিপীড়নের কথা উল্লেখ করে নিজামীর জীবনকে নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাথে তুলনা করেন। ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুভূতিতে আঘাত করেছে, এমন অভিযোগে ২১শে মার্চ বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, ঢাকা মহানগর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম খাঁন ও ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) ছাত্রশিবিরের সভাপতি আ স ম ইয়াহিয়ার নামে মামলা করেন। ২৯শে জুন, তারিখে রমনা থানা পুলিশ প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মতিউর রহমান নিজামীসহ আরো তিনজন প্রবীন জামায়াত নেতাকে গ্রেপ্তার করে। ২রা আগস্ট নিজামীকে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। ওই দিন তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

২০১১ খ্রিষ্টাব্দের মার্চে উচ্চ আদালত মামলাটি চার মাসের জন্য মুলতুবি ঘোষণা করেন।  এরপর ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ১১ ডিসেম্বর জামায়াতের আমিরের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উপস্থাপন করে ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষ। ২৮ ডিসেম্বর আদালত অভিযোগ আমলে নেয়।

২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা মে নিজামীকে ভারতের আসামের বিদ্রোহী সংগঠন উলফার জন্য অস্ত্র চোরাচালান মামলায় গ্রেফতার করা হয়। ৭ই সেপ্টেম্বর তার জামিন আবেদন আদালত নাকচ করে দেন।

২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ মে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে হত্যা, লুট, ধর্ষণ, উস্কানি ও সহায়তা, পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার মতো ১৬টি অভিযোগে নিজামীর মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-এ বিচারাধীনে আনা হয়। ঐ বছরের ২৬ আগস্ট থেকে এ মামলায় স্যাক্ষ গ্রহণ শুরু হয়। তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক খানসহ এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দেন মোট ২৬ জন। আর নিজামীর পক্ষে তার ছেলে মো. নাজিবুর রহমানসহ মোট চারজন সাফাই সাক্ষ্য দেন। রাষ্ট্রপক্ষ মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের যেসব অভিযোগ আনেন সেগুলো হলো
[সমকাল, ২ নভেম্বর ২০১৪]

১. নিজামী চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে শহর ছাত্রসংঘের এক সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন। তিনি সেখানে পাকিস্তান রক্ষার পক্ষে বক্তব্য দেন। ওই সভায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রসংঘের সভাপতি আবু তাহের হিন্দু সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করার আদেশ দেন। নিজামী ওই সভায় উপস্থিত থেকেও আবু তাহেরের বক্তব্যের বিরোধিতা না করে মৌন সম্মতি দেন।

২. একই বছরের ২২ আগস্ট নিজামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক একাডেমি হলে আল-মাদানি স্মরণসভায় বক্তব্য দেন। তিনি এ সভায় দলীয় নেতাকর্মীদের স্বাধীনতাকামীদের নিশ্চিহ্ন করতে উদ্বুদ্ধ করেন। এরপর তারা সারাদেশে সংগঠিত হয়ে অপরাধ করতে থাকেন। যার দায় নিজামীর।

৩. একই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন প্রাঙ্গণে এক ছাত্রসমাবেশে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন নিজামী।

৪. একই বছরের ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর যশোর বিডি হলে ছাত্রসংঘের সভায় তিনি জিহাদের সমর্থনে বক্তব্য দেন। নিজামী ওই সভায় বক্তব্য দিয়ে নিরীহ স্বাধীনতাকামী বাঙালি হত্যার নির্দেশ দেন।

৫. একই বছরের ১৪ মে নিজামীর নেতৃত্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, রাজাকার, আলবদররা পাবনার ডেমরা ও বাউসগাতি গ্রাম ঘেরাও করে। এরপর সাড়ে চার শতাধিক হিন্দু সম্প্রদায়ের লোককে এক জায়গায় জড়ো করে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। সেখানে নারীদের ধর্ষণও করা হয়।

৬. নিজামীর নির্দেশে পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগিতায় একই বছরের ৮ মে পাবনার সাঁথিয়া থানার করমজা গ্রামে লোক জড়ো করে নির্বিচারে সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ অসংখ্য লোককে হত্যা করা হয়। নারীদের ধর্ষণ করা হয়।

৭. একই বছরের ২৭ ও ২৮ নভেম্বর পাবনার সাঁথিয়া থানার ধোলাউড়ি গ্রামে ডা. আবদুল আওয়ালের বাড়ি ও আশপাশের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ৩০ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেখান থেকে চারজনকে ধরে নিয়ে ইছামতি নদীর পাড়ে নিয়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। সেখানে শাহজাহান আলী নামে একজনকে গলা কেটে ফেলে রাখা হয়। ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান।

৮. ১৬ এপ্রিল ঈশ্বরদি থানার আটপাড়া ও বুথেরগাড়ি গ্রামে হামলা চালিয়ে ১৯ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

৯. ১০ জুন আতাইকুলা থানার মাতপুর গ্রামের মাওলানা কছিমউদ্দিনকে ধরে নিয়ে ইছামতি নদীর পাড়ে নিয়ে হত্যা করা হয়।

১০. ৯ আগস্ট পাবনা শহরের নূরপুর ওয়াপদা মোড় থেকে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মাজেদসহ দু'জনকে ধরে নিয়ে হত্যার পর পাবনা সুগার মিলের পাশে নিয়ে লাশ ফেলে রাখা হয়।

১১. ৩ ডিসেম্বর বেড়া থানার বিছাখালী গ্রামে হামলা চালিয়ে ৭০ জনকে হত্যা করা হয়।

১২. আগস্টের কোনো এক সময় সাঁথিয়ার সোনাতলা গ্রামে হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

১৩. ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে মে মাসে ঢাকার মোহাম্মদপুরে শারীরিক শিক্ষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও রাজাকাররা ক্যাম্প স্থাপনের পর সেখানে গোলাম আযম ও নিজামী নিয়মিত যাতায়াত করতেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে শলাপরামর্শ করতেন। তারই ফসল হিসেবে সারাদেশে হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

১৪. ৩০ আগস্ট রাতে পুরনো এমপি হোস্টেলে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ক্যাম্পে বন্দি জালাল, রুমী, বদিসহ বেশ কয়েকজনকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেন মতিউর রহমান নিজামী। এরপর তাদের হত্যা করা হয়।

১৫. একই বছরের ৫ মে থেকে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে পাবনার সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে রাজাকার ক্যাম্পে মাঝে মধ্যে নিজামী যেতেন। সেখানে তিনি রাজাকার কমান্ডার সামাদ মিয়ার সঙ্গে বৈঠক করে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের জন্য শলাপরামর্শ ও ষড়যন্ত্র করতেন।

১৬. আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে নিজামী একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের ঊষালগ্নে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়।২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই নভেম্বর বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ নিজামীর মামলার রায় অপেক্ষমান রাখে। তবে রায় দেয়ার আগেই ট্রাইব্যুনাল-১ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসা বিচারপতি এ টিএম ফজলে কবীর ৩১ ডিসেম্বর অবসরে গেলে নিজামীর রায় প্রদানে স্থিবিরতার সৃষ্টি হয়।


২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই নভেম্বর প্রথম দফায় নিজামীর বিরুদ্ধে মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ হয়। তবে রায় ঘোষণা অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন ট্রাইব্যুনাল। এই রায় ঘোষণার আগেই ওই বছরের ৩১শে ডিসেম্বর অবসরে যান ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর। এরপর ৫৩ দিন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান-শূন্য ছিল ।

২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে জানুয়ারি আদালত, নিজামীসহ আরো ১৩ জন আসামীকে  ভারতের বিদ্রোহী সংগঠন উলফার জন্য অস্ত্র চোরাচালান মামলায় অভিযুক্ত করেন এবং ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেন।

২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে নিজামীর বিচার শুরুর জন্য, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়ে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। দায়িত্ব নিয়ে আসামিপক্ষের আবেদনে ২৬ ফেব্রুয়ারি এই মামলার যুক্তিতর্ক আবার করতে আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর নতুন এই চেয়ারম্যান। এই বছরের ২৪ মার্চ মামলাটি দ্বিতীয় দফায় রায়ের অপেক্ষায় রাখা হয়৷ এর তিন মাস পর ২৪ জুন রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়। রায় ঘোষণার আগের দিন সন্ধ্যায় নিজামীকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। তবে রায় ঘোষণার দিন সকালে কারাবন্দী নিজামী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে মামলাটি আবার রায়ের অপেক্ষায় রাখা হয়। এর প্রায় চার মাস পর ২৯ অক্টোবর নিজামীর ফাঁসির রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল। নিজামীর বিরুদ্ধে অনীত অপরাধের ১৬টি অভিযোগের মধ্যে আটটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে চারটি অভিযোগে ফাঁসি ও অপর চারটি অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে আদালত।

এই রায়ের বিরুদ্ধে নিজামীর আইনজীবীরা আপিল করলে, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই জানুয়ারি মে আপিল বিভাগ সর্ব্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। ১৫ই মার্চ এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রদান করা হয়। ২৯শে মার্চ এই রায়ের পুনরায় বিবেচনার জন্য নিজামীর আইনজীবীরা আবেদন করে। এরপর ৫ই মে সর্বোচ্চ আদালত তা খারিজ করে দেয়।

২০১৬ সালের ১১ই মে রাত ১২টা ১০ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।


জামীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৬টি অভিযোগের মধ্যে আটটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে চারটি অভিযোগে ফাঁসি ও অপর চারটি অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। - See more at: http://www.jjdin.com/?view=details&type=single&pub_no=996&cat_id=1&menu_id=13&news_type_id=1&index=10&archiev=yes&arch_date=30-10-2014#sthash.BcfoD1qA.dpuf