মুহম্মদ বিন তুঘলক
১৩২৫-১৩৫১ খ্রিষ্টাব্দ
ভারতবর্ষের দিল্লীকেন্দ্রিক রাজত্বের তুঘলক বংশের দ্বিতীয় সুলতান।

পিতা গিয়াসউদ্দিন তুঘলক ছিলেন তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাতা সুলতান। ১৩২৫ খ্রিষ্টাব্দে গিয়াসউদ্দিন বঙ্গদেশ থেকে দিল্লীর পথে রওনা দেন।
গিয়াসউদ্দিনের জ্যেষ্ঠপুত্র জুনা খাঁ পিতার অভ্যর্থনার জন্য দিল্লীর ছয় মাইল পূর্বে আফগানপুরে একটি শিবির স্থাপন করেন। গিয়াসউদ্দিন এই শিবিরে প্রবেশ করার কিছুক্ষণ পরে, শিবিরটি গিয়াসউদ্দিনের উপর ভেঙে পড়ে। এই দুর্ঘটনায় গিয়াসউদ্দিনের মৃত্যু ঘটে। গিয়াসউদ্দিনের মৃত্যুর পর তাঁর জ্যৈষ্ঠপুত্র জুনা খাঁ 'মুহম্মদ বিন তুঘলক' উপাধি গ্রহণ করে দিল্লীর সিংহাসনে বসেন।

সিংহাসন আরোহণের পর, তিনি রাজ্যের নানারূপ সংস্কার করেন। তিনি রাজ্যের কল্যাণের জন্য রাজধানী দিল্লি থেকে দেবগিরিতে স্থানান্তরিত করেন। এই স্থানান্তরের বিষয়ে যে প্রধান কারণগুলো ছিল তা হলো-

১৩২৬ থেকে ১৩২৭ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তর সম্পন্ন হয়। এই সময় তিনি দেবগিরির নাম পরিবর্তন করে দৌলতাবাদ রাখেন।

রাজধানী স্থানান্তরের কারণে দিল্লির প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছিল। এছাড়া দিল্লি থেকে আগত মুসলমানরা নতুন রাজধানীতে আসায় বিরক্ত হয়েছিল। এই কারণে সুলতান বিরূপ সমালোচনার মুখে পড়েন। সুলতান রাজধানী স্থানান্তরে সিদ্ধান্ত ভুল হয়েছে, এমন বিবেচনা করে- পুনরায় দিল্লিতে রাজধানী স্থানান্তর করেন।

দৌলতাবাদে স্থানান্তরের কিছুদিন পর মোঙ্গলরা ভারত আক্রমণ শুরু করে। ১৩২৭ খ্রিষ্টাব্দে মোঙ্গল সেনপাতি তার্মাসিরিণ ভারত আক্রমণ করে পাঞ্জাব, লাহোর মুলতান অধিকার করে নেয়। এরপর এরা দিল্লি পর্যন্ত অগ্রসর হয়। এই আক্রমণ প্রতিরোধে সুলতান যথেষ্ঠ প্রস্তুত ছিলেন না। তাই মোঙ্গলদের প্রচুর অর্থ প্রদান করে দিল্লি রক্ষা করেন।

সুলতান সিংহাসন জয়লাভের পর, খোরাসান ও ইরাক আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিলেন। এই অভিযানের জন্য তিনি প্রায় ৩,৭০,০০০ সৈন্য সংগ্রহ করেছিলেন। হিন্দুকুশ পর্বত অতিক্রম করে মধ্য-এশিয়া আক্রমণ করা অসম্ভ বিবেচনা করে তিনি এই পরিকল্পনা ত্যাগ করেছিলেন। এরপর তিনি প্রতিবেশী রাজ্যজয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এই সূত্রে ১৩৩৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নগরকোট আক্রমণ করেন। এই আক্রমণে নগরকোটের রাজা পরাজিত হয়ে, সুলতানের বশ্যতা মেনে নেন।

১৩৩৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কুমায়ুন ও গাড়োয়াল অঞ্চলের দুর্ধর্ষ পার্বত্য-অধিবাসীদের দমন করার জন্য কারজল আক্রমণ করেন।  ১৩৩৮ খ্রিষ্টাব্দে এই অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছিল। কুতুল খাঁকে দিল্লিতে ফিরিয়ে এনে আইন-উল-মুলককে দাক্ষিণ্যত্যের শাসনকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেন।

দাক্ষিণত্যে বাহমান রজ্যের প্রতিষ্ঠা
১৩৪৫ খ্রিষ্টাব্দে কুতুল খাঁ ছিলেন দাক্ষিণ্যত্যের শাসক। তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় শাসক ছিলেন। সুলতানের কতিপয় 'আমির ই প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের প্ররোচনায় তিনি। এর ফলে দাক্ষিণাত্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে প্রাদেশিক শাসক 'আমির-ই-সাদাহ' -রা একত্রিত হয়ে একে বিদোহে রূপ দেন। এই বিদ্রোহ চরমরূপ ধারণ করলে, সুলতান ১৩৪৬ খ্রিষ্টাব্দে দাক্ষিণ্যাত্যে আসেন এবং 'আমির-ই-সাদাহ'-দের পরাজিত করেন। এদের নেতৃস্থানীয় কয়েকজনকে ব্রোচে যাওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু  'আমির-ই-সাদাহ'-রা সে আদেশ অগ্রাহ্য করে দৌলতাবাদ (দেবগিরি) দখল করে নেন। এই সময় এঁরা ইসমাইল মুখ নামক একজন আমিরকে সুলতান হিসেবে ঘোষণা করেন। কিন্তু তিনি শাসনকার্যে অপরাগতা জানালে, তাঁর অনুকূলে হাসান নামক এক আমির
রের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ১৩৪৭ খ্রিষ্টাব্দে হাসান সিংহাসন লাভের পর 'আলাউদ্দিন বাহমান শাহ' উপাধি ধারণ করেন।

 ১৩৫১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সিন্ধুর বিদ্রোহ দমনে গেলে- রোগাক্রান্ত হয়ে মৃ্তুবরণ করেন।


সূত্র :
ভারতের ইতিহাস । অতুলচন্দ্র রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়।