তুঘলক বংশ
১৩২০- ১৪১৪ খ্রিষ্টাব্দ

তুঘলকি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা সুলতান ছিলেন গিয়াসউদ্দিন তুঘলক। তাঁর বাবা ছিলেন তূর্কি বংশোদ্ভুত এবং তুঘলক গোত্রের। ১৩২০ খ্রিষ্টাব্দে গিয়াসউদ্দিন রাজত্ব লাভের পর, গিয়াসউদ্দিন তুঘলক নাম ধারণ করেন। তাঁর নাম ছিল মালিক। ১৩৮৮ খ্রিষ্টাব্দে ফিরোজ শাহ তুঘলকের মৃত্যুর পর তাঁর পৌত্র গিয়াস উদ্দীন তুঘলক দ্বিতীয়, সিংহাসন লাভ করেন। ১৩৮৯ খ্রিষ্টাব্দে নিজ আত্মীয় আবু-বকর কর্তৃক নিহত হন। এর কয়েক মাসের মধ্যেই, ১৩৯০ খ্রিষ্টাব্দের প্রথমার্ধে ফিরোজ তুঘলকের এক পুত্র মুহম্মদ খাঁ তাঁকে হত্যা করে সিংহাসন অধিকার করেন। তিনি অত্যাধিক মদ্যপানের কারণে ১৩৯৪ খ্রিষ্টাব্দে অসুস্থ হয়ে মৃত্যবরণ করেন।

১৩৯৪ খ্রিষ্টাব্দে সিংহাসন লাভ করেন সিকান্দার শাহ। ১৩৯৫ খ্রিষ্টাব্দে সিকান্দার শাহ মৃত্যুবরণ করলে, মুহম্মদ খাঁর পুত্র নাসির উদ্দিন মামুদ সিংহাসন লাভ করেন। এই সময় দিল্লির আমিররা নাসির উদ্দিন প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করতে থাকে। এই অবস্থায় আমিররা ফিরোজ তুঘলকের এক পৌত্রকে সুলতান হিসেবে ঘোষণা দেয়। কিন্তু উভয় সুলতান সংঘাত এড়িয়ে উভয় রাজ্য শাসন শুরু করেন। ফলে তুঘলকী সাম্রাজ্য দ্বৈত শাসনাধীনে চলে যায়। ফলে ধীরে ধীরে প্রশাসন দুর্বল হয়ে পড়ে। শেষে পর্যন্ত নাসির উদ্দিন মামুদ সিংহাসনের পূর্ণ অধিকার লাভ করেন।

১৩৯৮ খ্রিষ্টাব্দে তৈমুর লং-এর নির্দেশে তাঁর পৌত্র পীর মোহম্মদ ভারত আক্রমণ করেন এবং মুলতান জয় করে নেন। এই সময় তৈমুর সমরকন্দে ছিলেন। পীর মোহম্মদের মুলতান জয়ের কথা শোনার পর তিনি নিজেই ভারতে চলে আসেন। ১৩৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ ডিসেম্বর, প্রায় ৯০ হাজার সৈন্য নিয়ে সিন্ধু নদের পাড়ে উপস্থিত হন। এরপর ভারতবর্ষে তৈমুর ভয়ঙ্কর হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেন। তিনি সিন্ধুর দুই পাড়ের মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেন। এরপর হত্যাযজ্ঞ চালাতে চালাতে দিল্লীর দিকে অগ্রসর হন। বিশেষ করে  তালাম্বা, দীপালপুর, ভাতনা ইত্যাদি অঞ্চল জনশূন্য হয়ে পড়েছিল। কথিত আছে দিল্লী আসার পথে প্রায় ১ লক্ষ মানুষ হত্যা করেছিলেন। দিল্লীর সেনাবাহিনী তাঁর হস্তিবাহিনী নিয়ে তৈমুরকে আক্রমণ করেন। তৈমুর কৌশলে হিসেবে হাজার হাজার উটের পিঠ খড়ের গাদা দিয়ে বোঝাই করলেন। এরপর খড়ের গাদায় আগুন লাগিয়ে উটগুলোকে হস্তিবাহিনীর দিকে হটিয়ে দেন। সুলতানের হস্তিবাহিনী জ্বলন্ত উটের আগ্রাসনে ভয় পেয়ে যায়। অবস্থা হিতে বিপরীত হয়ে যায়। হাতিগুলো উল্টো ঘুরে সুলতানকেই আক্রমণ করে বসে।

সুলতান নাসিরুউদ্দিন পরাজিত গুজরাটে পলায়ন করেন। তৈমুর দিল্লী দখল করে সেখানে ব্যাপক গণহত্যা এবং লুটতরাজ করেন। তিনি ভারতবর্ষ থেকে বহু মূল্যবান সম্পদ লুট করেন।  

তৈমুরের ভারত ত্যাগের পর, নসরৎ শাহ দিল্লীর সিংহাসন দখল করেন। কিন্তু মাহমুদ শাহের মন্ত্রী মল্লু ইকবাল তাঁকে বিতারিত করে, নাসিরউদ্দিন শাহকে দিল্লিতে আসতে বলেন। ১৪০১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দিল্লিতে আসেন। এই সময় অধিকাংশ রাজ্যই স্বাধীন হয়ে গিয়েছিল। ফলে নাসিরুদ্দিনের শুধু দিল্লির আশপাশের কয়েকটি অঞ্চল দখলে ছিল মাত্র। ১৪১৩ খ্রিষ্টাব্দে নাসিরউদ্দিনের মৃত্য হলে- আমিরার দৌলত খাঁকে সিংহাসনে বসান। ১৪১৩ খ্রিষ্টাব্দে তৈমুর লং-এর  ভারতীয় শাসনকর্তা খিজির খাঁ দৌলত খাঁকে পরাজিত করে দিল্লির সিংহাসন অধিকার করেন।  এর মধ্য দিয়ে তুঘলক বংশের শাসন বিলুপ্ত হয়ে যায়।


সূত্র :
বাংলাদেশের ইতিহাস/ রমেশচন্দ্র মজুমদার।
ভারতের ইতিহাস । অতুলচন্দ্র রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়।