ইহুদি ধর্মের প্রবর্তক। ইসলাম ও খ্রিষ্টান ধর্মমতে নবী। বাইবেলে
ইনি মোজেস নামে পরিচিত। পিতার নাম আম্রান এবং মাতার নাম যোসেবেদ। তাঁর বড় বোনের
নাম মরিয়ম এবং ছোট ভাইয়ের নাম হারোন।
বাইবেলের পুরাতন নিয়ম এবং কোরান শরিফ থেকে জানা যায়, তৎকালীন মিশরের রাজা
ফেরাউন যখন স্বপ্নে দেখেছিলেন বনী-ইসরাইল বংশে জন্মগ্রহণকারী এক পুত্র
সন্তান ফেরাউনদের পরাজিত করে নতুন রাজত্ব স্থাপন করে। এই কারণে ফেরাউন বনি-ইসরাইলের
সকল নবজাতক পুত্রসন্তানদের হত্যা করার নির্দেশ দেয়। এভাবে কিছুকাল
এইরূপ হত্যা চালিয়ে যাওয়ার কারণে বনি-ইসরাইলদের পুত্র সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে। এর
ফলে ফেরাউন ভাবলো যে, বনি-ইসরাইল বংশের বিলুপ্ত ঘটলে তাদের দাস ও শ্রমিকের অভাব ঘটবে।
তাই
তিনি নির্দেশ দেন যে, এক বছর অন্তর যেন পুত্র সন্তান হত্যা করা
হয়। এই অবস্থার ভিতরে আমরামের ঔরসে জোকেবেদ-এর গর্ভে মুসা আঃ-এর জন্ম হয়। জন্মের
পর শিশু মুসা আঃ-এর রূপে মুগ্ধ হয়ে, ফেরাউনের দূতদের কাছ থেকে তাঁর জন্মের সংবাদ
গোপন রেখেছিল।
কিছুদিন শিশু মুসা আঃ-কে গোপনে প্রতিপালন করার পর, পাপিরাসের তৈরি একটি আলকাতরা মাখা
ঝাঁপিতে, নীল নদের ঘন নলখাগড়ার ভিতরে জলাভূমিতে তাঁকে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এর কিছু পরে
ফেরাউনের এক কন্যা নদীতে স্নান করতে আসেন এবং ঝাঁপিতে ভেসে থাকা শিশু মুসা আঃ-কে
দেখতে পেয়ে তার দাসীদের পাঠিয়ে মুসা আঃ-কে উদ্ধার করেন। এরপর ফেরাউন-কন্যা মুসা
আঃ-কে প্রতিপালনের দায়িত্ব দেন এক ধাত্রীর উপর। মুসা আঃ একটু বড় হয়ে উঠলে, তাঁকে
ফেরাউন-কন্যার কাছে নিয়ে গেলে, তিনি তাঁকে পুত্রের মতন গ্রহণ করেন। এই সময় ফেরাউনের
নাম দেন মোশি বা মুসা। এরপর থেকে মুসা আঃ ফেরাউনদের রাজ-প্রাসাদে বসবাস করতে থাকেন।
এই সময় একদিন মুসা আঃ ঘুরতে ঘুরতে বনি-ইসরাইলদের উপর ফেরাউনদের উপর অত্যাচার দেখতে
পান। এই সময় তিনি এক মিসরীয় সৈন্যকে হত্যা করে, বালির মধ্যে লুকিয়ে রাখেন। এর পরের
দিন পথে ঘুরতে বের হয়ে দেখলেন যে, দুজন বনি-ইসরাইল পরস্পর হাতাহাতি করছিল। মুসা আঃ
তাদেরকে এই কলহের কারণ জিজ্ঞাসা করলে, একজন উত্তর দিল- 'গতকাল তুমি যেভাবে এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে, সে রকম আমাকেও কি হত্যা করতে চাও?'
মুসা আঃ এই উত্তর পেয়ে এই ভেবে শঙ্কিত হয়ে পড়েন যে, ঘটনাটি জানাজানি হয়ে গেছে। এই
ঘটনা ফেরাউন জানতে পেরে, মুসা আঃ-কে হত্যার আদেশ দেয়। এরপর মুসা আঃ পালিয়ে
মিদিয়ানের মরুদ্যানে পৌঁছান। সে দেশে চলে যান। সেখানে
তখন একদল রাখাল তাদের জন্তুদের পানি পান করাচ্ছিল। এ সময়ে তিনি লক্ষ্য করেন যে দুজন রমণীদ্বয় তাদের পশুপালকে আগলিয়ে রেখেছে, তাদের পশুদের পানি পান করানোর জন্য। তখন মুসা
আঃ রমণীদ্বয়কে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কি ব্যাপার? তোমরা তোমাদের পশুপালকে আগলিয়ে দাড়িয়ে আছ কেন?
তাঁরা বললেন যে, স্থানীয় বিধান মতে- তারা পুরুষের সাথে মেলামেশা থেকে আত্মরক্ষার জন্য পশুপালগুলোকে পানি পান করায় না।
পুরুষ
রমণীদ্বয় এটাও বলল যে, আমাদের পিতা অতিশয় বৃদ্ধ। তিনি একাজ করতে পারেন না। তাই আমরা করতে বাধ্য হয়েছি। অতঃপর মূসা রমণীদ্বয়ের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে কূপ থেকে পানি তুলে তাদের পশুপালগুলোকে পান করিয়েছিলেন। কোন কোন রেওয়ায়েতে আছে, রাখালদের অভ্যাস ছিল যে, তারা জন্তুদেরকে পানি পান করানোর পরে একটি ভারী পাথর দ্বারা কূপের মুখ বন্ধ করে দিত। ফলে রমণীদ্বয় তাদের উচ্ছিত পানি পান করাত। এই ভারী পাথরটি দশ জনে মিলে স্থানান্তরিত করত। কিন্তু মূসা (আঃ) একাকী পাথরটি সরিয়ে দেন এবং কূপ থেকে পানি উত্তোলন করেন। সম্ভবতঃ এ কারণেই রমণীদ্বয়ের একজন মূসা সম্পর্কে পিতার কাছে বলেছিল, সে শক্তিশালী।[১] মূসা(আঃ) সাত দিন থেকে কোনকিছু আহার করেননি। তখন এক বৃক্ষের ছায়ায় এসে আল্লাহ্ তাআলার সামনে নিজের অবস্থা ও অভাব পেশ করলেন। এটা দোয়া করার একটা সূক্ষ পদ্ধতি। রমণীদ্বয় নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই বাড়ি পৌছে গেলে বৃদ্ধ পিতা এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন। কন্যাদ্বয় ঘটনা খুলে বলল। পিতা দেখলেন, লোকটি অনুগ্রহ করেছেন; তাকে এর প্রতিদান দেয়া উচিত। তাই তিনি কন্যাদ্বয়ের একজনকে তাকে ডেকে আনার জন্যে প্রেয়ণ করলেন। মূসা(আঃ) যখন সবেমাত্র বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, সে সময় বালিকাটি লজ্জাজড়িত পদক্ষেপে সেখানে পৌছল। এতেও ইঙ্গিত আছে যে, পর্দার নিয়মিত বিধানাবলী অবতীর্ণ না হওয়া সত্ত্বেও সর্তী রমণীগণ পুরুষের সাথে বিনাদ্বিধায় কথাবার্তা বলত না। প্রয়োজনবশতঃ সেখানে পৌছে বালিকাটি লজ্জা সহকারে কথা বলেছে। বালিকাটি বণীতভাবে বললেনঃ "আপনি আমাদের জন্য যা করেছেন, তার জন্য আমার পিতা আপনার কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের জন্য এবং পারিশ্রমিক দেবার জন্য ডেকেছেন।" তাফসীরে আরোও বলা হয়েছে যে, মূসা (আঃ) তার সাথে পথ চলার সময় বললেন, তুমি আমার পশ্চাতে চল এবং রাস্তা বলে দাও। বলাবাহুল্য, বালিকাটি প্রতি দৃষ্টিপাত থেকে বেঁচে থাকাই ছিল এর লক্ষ্য। সম্ভবতঃ এ কারণেই বালিকাটি তাঁর সম্পর্কে পিতার কাছে বিশ্বস্ততার সাক্ষ্য দিয়েছিল। এই বালিকাদ্বয়ের পিতা কে ছিলেন, এ সম্পর্কে তফসীরকারকগণ মতভেদ করেছেন। কিন্তু কোরআনের আয়াতসমূহ থেকে বাহ্যতঃ এ কথাই বোঝা যায় যে, তিনি ছিলেন হযরত শোয়ায়ব।