মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন
সাংবাদিক, সাহিত্য ও সমাজসেবী।
সওগাত পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত।
১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে নভেম্বর বাংলাদেশের চাঁদপুরের পাইকারদি গ্রামে জন্মগ্রহণ
করেন। পিতার নাম আবদুর রহমান এবং মায়ের নাম আমেনা বিবি। তিনি ছিলেন পিতামাতার
জ্যেষ্ঠ সন্তান।
তাঁর শিক্ষা শুরু হয়েছিল হরিণা গ্রামে ইংরেজি উচ্চবিদ্যালয়ে। আঠারো বছর বয়সে তখন
তাঁর বাবা মৃত্যুবরণ করেন। বাবার অবর্তমানে সংসারের গুরুদায়িত্ব বহন করতে হয়
তাঁকে। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে তখন তিনি স্বল্প বেতনে স্টিমার
কোম্পানিতে স্টেশন মাস্টারের সহকারী হিসেবে চাকরি শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যেই
ওরিয়েন্টাল লাইফ ইনস্যুরেন্সের এজেন্টের কাজ নিয়ে কলকাতায় চলে আসেন। এখানে কাজ
করে অর্থ সঞ্চয় করেন। কিছুটা পুঁজি হলে চাকরি ছেড়ে দেন এবং কলকাতায় সাহিত্যসেবায়
আত্মনিয়োগ করেন।
১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২রা ডিসেম্বর তিনি প্রথম মুসলিম সম্পাদক হিসেবে
সওগাত পত্রিকা
প্রকাশ করেন। পত্রিকা প্রকাশের পর চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে স্বাভাবিক প্রকাশনা
ব্যাহত হলে কিছুদিন পত্রিকা বন্ধ রাখেন। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে পুনরায় প্রকাশনা শুরু
করেন।
১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে নাসিরুদ্দিন ‘সওগাত সাহিত্য মজলিস’ নামে একটি সাহিত্য সংগঠন গড়ে তোলেন। সে সময়ের সওগাত পত্রিকায় কাজী নজরুল ইসলাম , বেগম রোকেয়া, শামসুন্নাহার মাহমুদ, বেগম সুফিয়া কামাল প্রমুখের লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হত।
তাঁর উদ্যোগে এবং সম্পাদনায় সওগাত নামে আরও কিছু পত্রিকা প্রকাশিত হয়। যেমন ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে বার্ষিক সওগাত প্রকাশিত হয়। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে সাপ্তাহিক সওগাত প্রকাশিত হয়। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে সচিত্র মহিলা সওগাত প্রকাশিত হয়। এছাড়াও কিছুদিন শিশু সওগাত প্রকাশিত হয়েছিল।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মূল পত্রিকাটি চালু ছিল।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে জুলাই। কলকাতা থেকে
মহিলাদের জন্য পত্রিকা প্রকাশ করেন। এর নাম ছিল 'বেগম'। এই পত্রিকার প্রথম সম্পাদক
ছিলেন কবি সুফিয়া কামাল। আর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন নূরজাহান বেগম ।
১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে নাসিরউদ্দীন সপরিবার ঢাকায় চলে আসেন। সে সময়
সওগাত ও বেগম
পত্রিকাও তখন কলকাতা থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। ঢাকায় এসে নুরজাহান বেগম ৩৮নং
শরৎগুপ্ত রোডের বাড়িতেই বেগমের কাজকর্ম শুরু করেন। এখানেই হয় পত্রিকার উদ্বোধনী
অনুষ্ঠান। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় 'বেগম ক্লাব'। ক্লাবের
প্রেসিডেন্ট হন বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ, সেক্রেটারি হন
নুরজাহান বেগম।
বেগম সুফিয়া কামাল ছিলেন
এর অন্যতম উপদেষ্টা।
সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নারীদের উৎসাহিত করার জন্য তিনি ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে
‘বেগম ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেন। নাসিরউদ্দীনের কন্যা
নুরজাহান বেগম আজও পত্রিকাটি
নিয়মিত প্রকাশ করে চলেছেন।
সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় অসামান্য অবদানের জন্য তিনি একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক, বাংলা
একাডেমী পুরস্কার-সহ অসংখ্য পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে ২১শে মে
তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
স্ত্রী: ফাতিমা খাতুন
কন্যা: নুরজাহান বেগম