নে উইন
ne win
(১ জুলাই ১৯১০, মতান্তরে ১৪ বা ২৪ মে ১৯১১ - ৫ ডিসেম্বর, ২০০২)
মিয়ানমারের সামরিক প্রশাসক, রাজনীতিবিদ, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপ্রধান।

মিয়ানমারের রাজধানী রেঙ্গুন থেকে প্রায় ২০০ মাইল দূরবর্তী, নিম্ন বার্মার পেগু প্রদেশের পংডেল এলাকার কাছাকাছি ছোট্ট একটি গ্রামে বর্মী-চীনা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশবের নাম ছিল ‘শু মং’।

১৯২৯ সালে রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। দুই বছর জীববিদ্যা নিয়ে লেখাপড়া করেন। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন। এরপর তিনি ‘দোবামা এশিয়াওয়ান’ নামের জাতীয়তাবাদী সংগঠনে যোগ দেন। ঐ সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে
 অংসান সু চি’র বাবা অং সান এবং ইউ নু ছিলেন।

১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে নে উইন সমাজতান্ত্রিক দল 'বা-সেইন-তুন ওক' দলের সদস্য হন। এই সময় জাপানি কর্নেল সুজুকি কেইজির তত্ত্বাবধানে ৩০ জন তরুণ সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। এর ভিতরে নে উইনই ছিলেন। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ ডিসেম্বর জাপান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেনের বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করার উৎসবের দিনে, ব্যাংককে
Burma Independence Army (BIA) সৃষ্টির কথা ঘোষণা করা হয়। জাপানি সহায়তায়, সে সময়ে অং সান-এর নেতৃত্বে এই বাহিনী শক্তিশালী হয়ে উঠে। উল্লেখ্য, নে উইনের সামরিক প্রশিক্ষণের সময়, জাপান চীনের হাইনান দ্বীপ দখল করে নেয়। এই সময় ‘শু মং’ তার নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম নেন 'বো নে উইন'। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে জাপানি সৈন্য এবং BIA বার্মায় প্রবেশ করার সময়, নে উইন ব্রিটিশ বাহিনীর প্রতিরোধ ব্যব্স্থা ভাঙার ক্ষেত্রে সাংগঠিক কাজ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ শে মার্চে ব্রিটিশ বাহিনী বার্মায় প্রবেশ করে। এই সময় BIA
নিজেদের ভোল পাল্টিয়ে ব্রিটিশদের সহায়তা করতে শুরু করে এবং এই সময় এই বাহিনীর নাম হয় বার্মা জাতীয় সেনাবাহিনী
  Burma National Army। এই সময় নে উইন এই সেনাবাহিনীর এ্কটি অংশের কমাণ্ডিং অফিসার হিসেবে কাজ করেন।

১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা জানুয়ারি স্বাধীন হলে, প্রধানমন্ত্রী হন য়ু নু। কিন্তু এই বৎসরের শেষের দিকে বার্মার সেনাবাহিনীর ভিতর বিভাজন শুরু হয়। এই সময় প্রধান দুই সেনা নায়ক নে উইন (Ne Win) এবং বো যেয়া ( Bo Zeya) প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হন। প্রধানমন্ত্রী য়ু নু বার্মার সেনাবাহিনীর সেকেন্ড-ইন কমান্ডের দায়িত্ব অর্পণ করেন নে উইন-কে।

১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের ২রা মার্চ
তারিখে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। পরবর্তীকালে বার্মার রাষ্ট্রপ্রধানসহ প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেন। বিশ্বের গণমাধ্যমে তিনি এই অভ্যুত্থানকে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থান হিসেবে প্রচার করেন। তিনি সাংবিধানিক কার্যক্রম স্থগিত করে ও আইনসভা ভেঙ্গে দেন।

১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ে দাঙ্গা শুরুর পরিপ্রেক্ষিতে সেনা মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এই সময় সেনাবাহিনী প্রতিবাদকারীদের উপর প্রতি নির্বিচারে গুলি করে এবং ছাত্র সংগঠনের ভবন গুড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর পাঁচ মিনিটের বেতার ভাষণে নে উইন বলেন যে, ‘যদি প্রতিবাদকারীরা আমাদেরকে মুখোমুখি হতে বলে, তাহলে আমরা তরবারির বিপরীতে তরবারি দিয়ে মোকাবেলা করতে প্রস্তুত।’ তিনি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়ে পরিস্থিতি নিজের অনুকুলে আনেন। এরপর ১৩ জুলাই তিনি নিজ স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য সফরে যান। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছিল।

১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বার্মা সোশ্যালিস্ট প্রোগ্রাম পার্টি (বিএসপিপি) প্রতিষ্ঠা করেন ও দেশের একমাত্র বৈধ দল হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ২ মার্চ,
বিপ্লবী কাউন্সিল বিলুপ্ত করাসহ বার্মাকে বার্মা সমাজতন্ত্রী প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেন। এই সময় তিনি নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করেন এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সিন উইনকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন।

১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের ৯ নভেম্বর,
নে উইন পদত্যাগ করেন ও তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন জেনারেল সান উ। নে উইনের স্বৈরাচারী মনোভাবের জন্য দেশ অশান্ত হয়ে উঠে। এই অবস্থায় ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ সেপ্টেম্বর,  জেনারেল স মংয়ের নেতৃত্বে সেনা অভ্যুত্থান ঘটে। এই সময় নে উইন অবসরে থাকলে, বিশ্বাস করা হয় যে, এই অভ্যুত্থান তাঁর ইঙ্গিতেই হয়েছিল।

১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের পর সেনাবাহিনীতে তাঁর প্রভাব কমে যেতে থাকে। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের  ৪ মার্চ,
তারিখে তাঁর জামাতা আই জ উইন ও কন্যা সান্দার উইনকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। এই সময় নে উইন ও তাঁর কন্যাকে গৃহে অন্তরীণ রাখা হয়। সেপ্টেম্বর মাসে আই জ উইন ও তিন পুত্র আই নে উইন, কিয় নে উইন ও জি নে উইনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়।

২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ডিসেম্বর গৃহে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর কন্যা সান্দার উইনকে মুক্তি দেয়া হয়। এরপর জি


সূত্র :