(১৯৫৭-২০১১ খ্রিষ্টাব্দ)
আল্-কায়দা নামক ইসালমী সন্ত্রাসী সংঠনের অন্যতম নেতা।
ওসামা বিন মুহাম্মদ বিন আবাদ বিন লাদেন( أسامة بن محمد بن عوض بن لادن)। ওসামা বিন লাদেন বা উসামা বিন লাদেন বা সংক্ষেপে লাদেন নামে পরিচিত।
১৯৫৭
খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসের ১০ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মোহাম্মদ বিন লাদেন।
তার জন্মের কিছু দিন পরই তার বাবা মায়ের মধ্যে সম্পর্কে বিচ্ছেদ
ঘটে।
ইনি সৌদি আরবের কিংন্স আব্দুল আজিজ
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি এবং ব্যবসায়িক
প্রশাসন নিয়ে লেখাপড়া করেন। এরপর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের
প্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হন। ৩ বছর পর এই বিভাগে
ত্যাগ করে ইসলাম ধর্মের উপর গবেষণা শুরু করেন।
এই সময় ইনি শরিয়া ভিত্তিক ইসলাম ধর্মের প্রতি
অনুরক্ত হয়ে পড়েন। এরপর তিনি ব্যবসায়ী কর্মকাণ্ডে
জড়িয়ে পড়েন। এবং
অল্প সময়ের ভিতরে ঠিকাদারি ব্যবসায় প্রচুর অর্থ উপার্জনে সক্ষম হন। ক্রমে
ক্রমে ইনি সৌদি আরবের রাজ পরিবারেরও ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন।
এই সূত্রে ইনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাণিজ্য করার সুযোগ
সৃষ্টি করেন। ইনি সুদানে নির্মাণ এবং কৃষি প্রকল্পে
প্রায় দুশো মিলিয়ন ডলার লগ্নি করেছিলেন।
পরে অবশ্য সুদান সরকার এই অর্থ বাজেয়াপ্ত করে। ইসলামী
শরীয়া ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ইনি আফগানিস্থানকে বেছে নেন।
১৯৭৯ থেকে ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে
আফগানিস্তানে সোভিয়েত রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর উপস্থিতির
সময় তিনি আফগানিস্তানে আসেন। এখানে তিনি সোভিয়েত বিরোধী সশস্ত্র 'আফগান
মুজাহিদ'-দের কার্যক্রমের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েন। এই সূত্রে
প্যালেস্টাইনের বিশিষ্ট যোদ্ধা-সংগঠক
আব্দুল্লাহ ইউসুফ আজ্জম-এর সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক
গড়ে উঠে। আব্দুল্লাহ ইউসুফ আজ্জম-এর অনুপ্রেরণায় এবং জিহাদি শিক্ষায় তিনি
বিশ্বব্যাপী পরিচালিত হতে পারে এমন একটি ইসলামী সশস্ত্র সংগঠন গড়ে তোলার
চেষ্টা করেন। সোভিয়েত বিরোধী শিবির হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লাদেনের বাহিনী
তৈরিতে পূর্ণ সমর্থন ও
সহযোগিতা দান করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির পর
যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্থানে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করে। এই সময় লাদেনের সাথে
যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এবং ক্রমে ক্রমে লাদেন যুক্তরাষ্ট্রে
বিরুদ্ধে কৌশলী যুদ্ধ পরিচালনা শুরু করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার
সহযোগী দেশগুলো এই যুদ্ধকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম নামে অভিহিত করে। এই সূত্রে
ইসলামের শত্রুদের জন্য তিনি 'আল-কায়দা'
নামক একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি
করেন।
ইনি মেধাবী এবং ইসলাম ধর্মে
নিবেদিত কর্মী সংগ্রহ করেন। ইনি সৌদি আরবের রাজা
কিং ফাহাদ এবং অন্যান্য
আরব নেতাদের সাথে দেখা করেন
এবং এবং অমুসলিম
জনগোষ্ঠী- বিশেষ করে আমেরিকানদের কোন
সাহায্য না নিতে এবং না করতে আহ্বান জানান।
ইনি এই প্রচারণায় মুসলিম রাষ্ট্র প্রধানদের স্বপক্ষে
আনতে ব্যর্থ হন। এরপর তার সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে
যুদ্ধ ঘোষণা
করে। মার্কিনীদের বিরুদ্ধে তাঁর সবচেয় সফল অভিযান ছিল- ২০০১ এর
সেপ্টেম্বর মাসে টুইন টাওয়ারের
ধ্বংস। এরপর থেকে লাদেনকে হত্যা করা এবং আলকায়দা
বাহিনীকে ধ্বংস করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্টা
সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করে।
আফগান যুদ্ধ চলাকালীন সময় অন্তত
চল্লিশবার গোলাবর্ষণের মধ্য থেকে তিনি
রক্ষা পান ।
যুদ্ধে একবার তাঁর কুড়ি গজের মধ্যে একটা
স্কাড মিসাইল ফেটেছিল। একবার বিষাক্ত গ্যাস আক্রমণে প্রায় মারা পড়েছিলেন। একবার কান্দাহারের ঘাটি থেকে খোশতের যাওয়ার সময়
মার্কিন বাহিনী বিমান হামলা চালায়। কিন্তু হঠাৎ পথ পরিবর্তন করে
তিনি কাবুলে চলে যান। ফলে এই আক্রমণ থেকে তিনি রক্ষা পান। এরপর এক বিমান আক্রমণে
ঘটে তোরা বোরায় বা ঈগলের গুহা নামে খ্যাত আফগানিস্থানের পাহাড়ি
ডেরায়। সেবারও অল্পের জন্য বেঁচে যান তিনি। এক যুদ্ধে
বাঁ কাঁধে গোলার আঘাত পান । খুব সম্ভবত
জওয়াহিরি নামক একজন শল্যচিকিৎসক
গোলার টুকরো অপসারণ করেন।
২০০২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জানুয়ারিতে আলজাজিরা টেলিভশনে বক্তৃতা
করেন।
আল্-কায়দার এই
আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লাদেনকে ধরার জন্য
সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করেও, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।
অবশেষে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের আগষ্ট মাসে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা জানতে পারে
যে, লাদেন পাকিস্তানের
রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ৩৫
কিলোমিটার দূরে আযবোটাবাদ শহরে অবস্থান করছেন। সিআইএ সন্ধানী ড্রোন বিমানের
সাহায্যে মার্কিন সৈন্যরা এই
লাদেনের অবস্থানের
শনাক্ত করে আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
১৭ বছর বয়সে তিনি বিয়ে করেন। ইনি তিনি ৪টি বিয়ে করে এবং তার ২৬ সন্তানের বাবা।