১২৫৮ বঙ্গাব্দের ২৮ শ্রাবণ (১৮৫১ খ্রিষ্টাব্দ) ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার হরিশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা খাদেম আলী খোন্দকার ছিলেন পাঠানবংশীয় জমিদার। খাদেম আলী খোন্দকার খুবই ধর্মপরায়ণ লোক ছিলেন। ধর্মের প্রতি অনুরাগ তাঁকে সংসারের প্রতি উদাসীন করে তুলেছিল। ফলে পৈতৃকসূত্রে প্রাপ্ত পাঁচ শ বিঘা খামার সম্পত্তি, কয়েক হাজার টাকা-আদায়ের জমিদারি কিছুরই প্রতি তাঁর লক্ষ ছিল না। ফলে তাঁর সম্পত্তি বেহাত হয়ে যায়।
শৈশবে তিনি বাংলা, আরবি এবং ফারসি ভাষা শেখেন
স্থানীয় মৌলবীর কাছে।
পাঞ্জু শাহ কৈশোর কাল থেকেই সুফি মতবাদ, ভক্তিমূলক ভাবগান
বিশেষ অনুরাগী হয়ে ওঠেন। এই সময় তিনি হরিশপুর নিবাসী হিরাজতুল্লাহ খোন্দকার-এর কাছে
দীক্ষা নেন। এবং সুফি ভাব ধারায় গান রচনা শুরু করেন। পাঞ্জু শাহ তাঁর গানে জানিয়েছেন–
গুরুজীর নাম লিখি করিয়া ছালাম।
হয়ে আছে হীন পাঞ্জু যাহার গোলাম
জানিবে যে খোন্দকার হিরাজতুল্লায়।
একসময় নিজ গ্রাম ত্যাগ করে, নানা জায়গায়
ঘুরতে ঘুরতে
লালন শাহ-এর আখড়ায় আসেন এবং
তাঁর আশীর্বাদ লাভ করেন। কথিত আছে, বৃদ্ধ বয়সে
লালন শাহ ছেঁউড়িয়ায় এক সাধুসভার
আয়োজন করেন। ঐ সভায় তিনি গানের ভিতর দিয়ে দুটি প্রশ্ন রাখেন। তিন দিন পর্যন্ত
উপস্থিত শ্রোতাদের কেউ এর উত্তর দিতে পারেন নি। শেষ পর্যন্ত তরুণ পাঞ্জু শাহ ঐ গান
দুটির জবাব দেন। গান শুনে
লালন শাহ ‘কে রে বাবা, আয়, আমার
কাছে আয়’ বলে পাঞ্জু শাহকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। এরর লালন শাহ পাঞ্জু শাহকে পরবর্তী সময়ের
বাউল সমাজের নেতা ঘোষণা করেন। এই সময় থেকে পাঞ্জু শাহ লালনের শিষ্যদের কাছে শ্রেষ্ঠ আসনের
মর্যাদা পেয়েছেন।
পাঞ্জু শাহ দেহতত্ত্বের ব্যাখা বিশ্লেষণকারী একজন মরমি দর্শনের উপদেষ্টা ও সাধক
কবি হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। তাঁর মরমি গানের মূল দর্শন ছিলো স্রষ্টা এবং সৃষ্টি।
তবে তা আবর্তিত ছিল মানুষের রহস্যকে কেন্দ্র করে।
পাঞ্জু শাহ ১৩২১ বঙ্গাব্দের ২৮ শ্রাবণ (১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দ) হরিশপুরে তিনি
মৃত্যুবরণ করেন।
পাঞ্জু শাহের শিষ্যগণের মধ্যে রহিম শাহ, আরমান শাহ, সদয় শাহ, আনার শাহ, হিরু শাহ
(বসন্তপুর), মাতাম শাহ, হায়দার শাহ, জুমমন শাহ (খোরাসান), আঁধারী শাহ, ফিকির শাহ
প্রমুখ সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।
ড. খোন্দকার রিয়াজুল হকের মরমী কবি পাঞ্জু শাহ: জীবন ও কাব্য (১৯৯০) গ্রন্থে তাঁর দুশতাধিক গান সঙ্কলিত হয়েছে। ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে ছহি ইস্কি ছাদেকী গওহোর নামে তাঁর একখানা কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এতে সুফিতত্ত্বের মর্মকথা ও নৈতিক উপদেশ বর্ণিত হয়েছে।
হরিশপুর গ্রামে পাঞ্জু শাহার মাজার অবস্থিত। একতলা মাজার ভবনটি উত্তর-দক্ষিণ লম্বা। ভিতরে তিনটি কবর রয়েছে। কবির দু'পাশে দু'স্ত্রী চন্দন নেছা ও পাঁচি নেছার কবর। বছরে তিন বার তাঁর অনুসারীরা সাহিত্য সম্মেলন করে থাকেন।
সূত্র: