প্রেমেন্দ্র মিত্র
(১৯০৩/৪-১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দ )
বাংলা ভাষার অন্যতম বাঙালি কবি, ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক এবং চিত্রপরিচালক।
প্রেমেন্দ্র মিত্রে জন্ম-সাল ও জন্মস্থান নিয়ে বিতর্ক আছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে উল্লেখ
করা হয়, ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন কাশীতে। 'মিত্র ও ঘোষ' প্রকাশনা
থেকে প্রকাশিত 'প্রেমেন্দ্র মিত্র শতবার্ষিকী সংকলন' গ্রন্থে সম্পাদক সুরজিৎ
দাশগুপ্ত উল্লেখ করেছেন-
'১৯০৪ খ্রীষ্টাব্দের ৪ সেপ্টেম্বর বারাণসীর হরিশঘাটের কাছে আউদঘরবি
মহল্লাতে দাদামশায় রাধারমণ ঘোষের বাড়িতে প্রেমেন্দ্রমিত্রের জন্ম।
তার পিতার নাম জ্ঞানেন্দ্রনাথ মিত্র। তিনি ছিলেন রেলে চাকরি করতেন। মাতার নাম সুহাসিনী দেবী।
পৈতৃক নিবাস ছিল দক্ষিণ চবিবশ পরগণার বৈকুণ্ঠপুর।'
১৯২০
খ্রিষ্টাব্দে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন এবং এই সার্টিফেকট অনুসারে তাঁর বয়স ছিল ১৬
বৎসর ৬ মাস। এই বিচারে তাঁর ধরা যায় তাঁর জন্ম হয়েছিল ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দের আগষ্ট বা সেপ্টেম্বর মাসে।
শৈশবে মায়ের কাছে তাঁর হাতেখড়ি হয়েছিল। শৈশবের অনেকটা সময় তিনি কাটিয়েছেন মির্জাপুরের মাতামহের বাড়িতে। ১৯০৮-১৯০৯
খ্রিষ্টাব্দের দিকে মির্জাপুরে গুটি বসন্ত মহামারী আকার ধারণ করে। এই সময় তাঁর মাতামহ রাধারমণ ঘোষ ওই এলাকার
চিকিৎসক ছিলেন। কিন্তু চিকিৎসা করতে গিয়ে তিনি এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এই সময় তাঁর দিদিমা
কুসুমকুমারীও গুটি বসন্তে আক্রান্ত হন। তবে এই রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করেছিলেন। এরপর ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রেমেন্দ্র মিত্র
তাঁর মা এবং দিদিমার সাথে মির্জাপুর থেকে বীরভূমের নলহাটিতে আসেন। এই সময় কুসুমকুমারী ভাই কালিপদ সেন নলহাটি
রেলস্টশনের হেড সিগনালার ছিলেন।> নলহাটিতে থাকাকালে
দিদিমা কুসুমকুমারী কলকাতার ভবানীপুরে একটি বাড়ি কিনেছিলেন। ১৯১৪
খ্রিষ্টাব্দে তাঁরা নলহাটি থেকে কলকাতার বাড়িতে চলে আসেন। এরপর তার কলকাতার
শিক্ষাজীবন শুরু হয়। পরে সাউথ সাবার্বন স্কুলে চলে আসেন।
১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। কিন্তু বয়স কম হওয়ায় তিনি
ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার অনুপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হন। পরে ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার সাউথ সাবার্বন স্কুল থেকে
প্রথম স্থান অধিকার করে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন।
এরপর তিনি ভর্তি হয়েছিলেন স্কটিশ চার্চ কলেজের কলা বিভাগে। এই সময় ভারত জুড়ে চলছিল
অহিংস অসহযোগ আন্দোলন। ভারতের স্বাধীনতা, প্রান্তিক দরিদ্র মানুষে অসহায়তা ইত্যাদির
সূত্রে তিনি লেখাপড়া মন বসাতে পারছিলেন না। ফলে কলেজের নিয়মিত পাঠ অনুসরণ করা তাঁর
জন্য অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। তাই তিনি বিকল্প হিসেবে স্কটিশ চার্চ ছেড়ে সাউথ সাবার্বন কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে
ভর্তি হন।
১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সিদ্ধান্ত নেন বাঙলার অবহেলিত কৃষকদের সাথে প্রত্যক্ষভাবে থেকে কাজ করবেন।
এক্ষেত্রে তিনি হাতেকলমে কৃষিকাজ শেখার জন্য শ্রীনিকতনে যান এবং সেখানে ভর্তি হন। এই সময় শ্রীনিকেতনের
তত্ত্বাবধায়ক এলমহার্স্ট এবং শিক্ষক দেবকিশোরের তাঁকে ব্যাপক সহযোগিতা করেছিলেন। এই সময় তিনি রবীন্দ্রনাথের
সান্নিধ্যও লাভ করেছিলেন। শ্রীনিকেতনের থেকে তাঁকে আমেরিকায় কৃষিবিদ্যা পড়া জন্য
সহায়তা করা বিষয়ে বিদ্যায়তনের কর্তৃপক্ষ চিন্তা করেছিল, কিন্তু
পরে প্রেমেন্দ্র শ্রীনিকেতন ছেড়ে চলে আসায় তার আমেরিকা যাওয়া হয়ে ওঠে নি।
শ্রীনিকেতন থেকে পুনরায় কলকাতায় ফিরে সাউথ সাবার্বন কলেজে পুনারয় ভর্তি হন। এ সকল
কারণে তাঁর কলেজের পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ সম্ভব হয় নি। এই কারণে তাঁর দিদিমা কুসুমকুমারী
রাগ করে, ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে ভবানীপুরের
বড়ির বেশ কিছুটা ভাড়া দিয়ে কাশী চলে যান। এই সময় প্রেমেন্দ্র মিত্র ২৮ গোবিন্দ ঘোষাল লেনের একটি মেস বাড়িতে
উঠে আসেন।
১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তাঁর বন্ধু বিমলচন্দ্র ঘোষের সাথে ঢাকা ভ্রমণ করেন। এই
সূত্রে পূর্ব-বঙ্গের জনজীবনের সাথে তার ঘনিষ্ট পরিচয় ঘটে। কথিত আছে ঢাকা থেকে
কলকাতার মেসে ফিরে ঘরের জানলার ফাঁকে একটি পোস্টকার্ড আবিষ্কার করেন। চিঠিটা পড়তে পড়তে তার মনে দুটো গল্প আসে।
সেই রাতেই গল্পদুটো লিখে পরদিন পাঠিয়ে দেন জনপ্রিয় পত্রিকা প্রবাসীতে।
১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের মার্চে প্রবাসীতে 'শুধু কেরানী' আর এপ্রিল মাসে 'গোপনচারিণী' প্রকাশিত হয়।
তিনি অবশ্য পত্রিকায় তাঁর নাম উল্লেখ করা ছিল না।
সেই বছরেই
কল্লোল পত্রিকায় 'সংক্রান্তি' নামে একটি গল্প বেরোয়।
এরপর তার মিছিল এবং পাঁক(১৯২৬) নামে দুটি উপন্যাস বেরোয়। পরের বছর বিজলী পত্রিকায়
গদ্যছন্দে লেখেন 'আজ এই রাস্তার গান গাইব' কবিতাটি।
এই সময়ে অধিকাংশ জনপ্রিয় সাহিত্য পত্রিকা তাঁর রচনা প্রকাশিত হতে থাকে।
১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে
তিনি তাঁর বন্ধু অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের উদ্যোগে 'আভ্যুদায়িক সংঘ' প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে তিনি ঢাকায় যান এবং সেখানকার অক্সফোর্ড
ছাত্রাবাসে ওঠেন। কিন্তু খ্রিষ্টান ছাত্রদের সাথে জাতীয়াবাদে তর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং
ওই ছাত্রাবাস থেকে বিতারিত হয়ে 'বয়েজ হোম' নামক একটি স্বদেশী ছাত্রাবাসে চলে যান।
পরে তিনি টিকাটুলিতে পূর্ব-পরিচিত ঢাকার শিক্ষণ-প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ের সহ অধ্যক্ষ
গুরুবন্ধু ভাট্টাচার্যে বাসায় আশ্রয় পান। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে কিছুদিন ঘোরাফেরা করে
১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে কোলকাতায় ফিরে আসেন। এখানে তিনি চক্রবেড়িয়া মাইনর স্কুলের সহকারী
প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম দিকে
কল্লোল পত্রিকা'র
সাথে সম্পর্কিত কল্লোল সাহিত্য গোষ্ঠীর দীনেশরঞ্জন দাশ ও মুরলীধর বসুর মতবিরোধ দেখা
দেয়। এই সূত্রে অনেকেই কল্লোল গোষ্ঠী থেকে বেরিয়ে এসে 'কালি-কলম' নূতন পত্রিকা
প্রকাশের উদ্যোগ নেন। পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের
এপ্রিল মাসে। প্রথম বছরে সম্পাদক ছিলেন মুরলীধর বসু, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় এবং
প্রেমেন্দ্র মিত্র। এই বছরে তিনি রায়গঞ্জের নিকটবর্তী টালিখোলার সাঁওতাল পরগণা,
কাশীর আউরধঘরবি প্রভৃতি স্থানে ভ্রমণ করেন। এই সময় কাশীতে থাকার বিষয়ে তিনি মনস্থির করেন।
কিন্তু সেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে কোলকাতায়
কল্লোল পত্রিকার কার্যালয়ে আশ্রয় নন। এই সময় তিনি 'কালিকলম' পত্রিকার সম্পাদনার সাথে যুক্ত
থাকার অক্ষমতা প্রকাশ করেন। এর ফলে কল্লোল পত্রিকার সাথে তাঁর নতুন সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই
সময় দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে কিছুদিন গবেষক হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু এই কাজে অখণ্ড
মনোযোগ দিতে না পারার কারণে ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে এই কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন।
১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দের দিকে প্রেমেন্দ্র মিত্র বিভাবতী দেবীকে বিবাহ করেন। এই বিবাহের
পর তিনি জাতীয়তাবাদী সংবাদপত্র 'বাংলার কথা'য় সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন।
একই সময় তিনি 'বঙ্গবাণী' নামক অপর একটি পত্রিকার সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন
করেন।
১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর প্রথম কন্যা মাধবীর জন্ম হয়। এই সময় তিনি সেকালের
প্রখ্যাত ঔষধ কোম্পানি 'বেঙ্গল ইমিনিউটর' বিজ্ঞাপন বিভাগের প্রচার সচিব হিসেবে
দায়িত্ব পালন করেন। উল্লেখ্য, 'বেঙ্গল ইমিনিউটর' প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ডাঃ
বিধানচন্দ্র রায় এবং তাঁত সহযোগী কয়েকজন ডাক্তার মিলে। এই বছরেই তিনি সরকারী
অনুবাদকের কাজ শুরু করেছিলেন।
১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রেমেন্দ্র মিত্রে প্রথম স্ত্রী অল্পবয়স্ক তিনটি সন্তান (মাধবী,
মৃন্ময় ও হিরন্ময়) রেখে মৃত্যবরণ করেন। পরে তিনি বীণাদেবীকে বিবাহ করেন।
১৯৩৪-৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে প্রেমেন্দ্র মিত্রের সাথে বুদ্ধদেব বসুর পারিবারিক
বন্ধুত্ব স্থাপিত হয়। সেই সূত্রে তিনি ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ১লা অক্টোবর থেকে বুদ্ধদেব
বসুর সম্পাদনায় প্রকাশিত 'কবিতা' পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদকের পদ গ্রহণ করেছিলেন । ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি এই পদে ছিলেন।
১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি 'নবশক্তি' পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত হন। এই সময় সহকারী
সম্পাদক ছিলেন অদ্বৈত মল্লবর্মণ। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি এই পত্রিকার
সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি 'রঙমশাল' পত্রিকার অন্যতম উপদেষ্টা ও সম্পাদক ছিলেন। এই
বছরেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল 'নিখিল ভারত প্রগতি লেখক সংঘ'। প্রথম থেকেই তিনি এই সংঘের
সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে লেখক সংঘের সদস্যরা ইংরেজি ও বাংলা ভাষায়
দুটি সংকলন। ইংরেজি সংকলনের নাম ছিল 'টুওয়ার্ডস প্রগ্রেসিভ লিটারেচার' এবং বাংলা
সংলকনের নাম ছিল 'প্রগতি'। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে এই সংঘের সক্রিয় সদস্য হিসেবে, সংঘের
দ্বিতীয় সম্মেলনে প্রবন্ধ পাঠ করেন। এই সংঘের সূত্রে ফ্যাসিবিরোধী আন্দোলনের সাথে
বিশেষ ভাবে যুক্ত হয়ে যান।
১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে জার্মান সোভিয়েত রাশিয়া আক্রমণ করলে,
ভারতীয় কমুনিষ্ট পার্টি ও বুদ্ধিজীবীদের সাথে তিনি প্রতিবাদ জানান। এই সূত্রে গঠিত
হয়েছিল ফ্যাসিবিরোধী 'লেখক ও শিল্পী সংঘ'। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে এই সংঘের দ্বিতীয়
সম্মেলন হয়েছিল ঢাকাতে। এই সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র।
১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে এই সংঘ থেকে 'একসূত্রে' নামক পঞ্চান্ন জন্ কবির কবিতা সংকলন প্রকাশিত
হয়েছিল। এই কবিদের ভিতরে প্রেমেন্দ্র মিত্রও ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এই
সংঘের কার্যক্রম কমে গিয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত তা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। অনেক পরে
১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে যখন 'ভারতীয় প্রগতি লেখক সংঘ' প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন তিনি
এর প্রাদেশিক
শাখার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি চলচ্চিত্রের সাথে যুক্ত হন। তিনি বিভিন্ন সময়ে
প্রযোজক, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, সংলাপ রচয়িতা, গীতিকার হিসেবে ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দ
পর্যন্ত চলচ্চিত্রের সাথে যুক্ত ছিলেন।
তিনি প্রায় ১৪টি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন। বঙ্গীয় চলচ্চিত্র সমিতি 'দাবী' ছবির
জন্য ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার হিসেবে পুরস্কৃত করেছিলেন। এছাড়া এই সমিতি
'ভাবীকাল' ছবির কাহিনি ও পরিচালনার জন্য পুরস্কৃত করেছিল।
১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে 'শরৎ স্মৃতি পুরস্কার প্রদান
করেছিলেন।
১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতার অনুষ্ঠান-প্রযোজকরূপে যোগদান করেন এবং ১৯৫৮
খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি এই পদে ছিলেন। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পূর্বাঞ্চলীয়
উপদেষ্টা হিসেবে আকাশবাণীতে যোগদান করেন এবং ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি এই পদে
ছিলেন।
১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি 'ওয়েস্ট বেঙ্গল রাইটার্স কো অপারেটিভ লিমিটেডে;-এর অন্যতম
ডিরেক্টর নির্বাচিত হন। এর বাইরে তিনি সকল কাজ বাদ দিয়ে লেখালেখির মধ্যেই কাটান।
১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীর বীণাদেবীর মৃত্যু হয়।
১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
প্রেমেন্দ্র মিত্রের সাহিত্য কর্ম
গল্পবাগিশ ঘনাদা'র গল্প। প্রথম প্রকাশ (১৯৪৫)।
গোয়েন্দা গল্প। প্রধান চরিত্র প্রেমেন্দ্র মিত্রের প্রথম কবিতার বই
'প্রথমা' প্রকাশিত হয় ১৯৩২
খ্রিষ্টাব্দে।
অন্যান্য কবিতার বই
- প্রথমা (১৯৩২)
- পুনশ্চ (১৯৩২)
- সাগর থেকে ফেরা (১৯৫৬)
- হরিণ চিতা চিল (১৯৫৯)
- কখনো মেঘ (১৯৬১)
- অথবা কিন্নর (১৯৭২)
- নদীর নিকটে (১৯৭২)
উপন্যাস
- পাঁক (১৯২৪-১৯২৫)
- মিছিল
- আগামীকাল
- কুয়াশা
- মনুদ্বাদশ (১৯৬৪)
- অমলতাস (১৯৬৬)
ছোটো গল্প
- পঞ্চসর
(১৯২৯)
- বেনামী বন্দর
(১৯৩০)
- পুতুল ও প্রতিমা
(১৯৩২)
- মৃত্তিকা
(১৯৩৫)
নাটক
- প্রেমই ধন্বত্তরি (১৯২৯)
- হাত বাড়ালেই বন্ধু (১৯৪৮)
- কালবৈশাখী
বিশেষ চরিত্র ভিত্তিক গল্প।
প্রবন্ধ সংকলন
- বর্বর যুগের পর (১৯৫৯)
- অসংলগ্ন (১৯৬৩)
জীবনীকাহিনি
- বঙ্কিমচন্দ্রের জীবন ও সাহিত্য (১৯৬০)
- নানা রঙে বোনা (১৯৮১)
পরিচালিত ছবি
- পথ বেঁধে দিল
- রাজলক্ষ্মী (হিন্দি)
- নতুন খবর
- চুপি চুপি আসে
- কালোছায়া
- কুয়াশা
- হানাবাড়ী
পুরস্কার
- বঙ্গীয় চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার (দাবী
ছায়াছবির শ্রেষ্ট কাহিনিকার, ১৯৪৩)
- বঙ্গীয় চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার (ভাবীকাল
ছায়াছবির শ্রেষ্ট কাহিনিকার ও পরিচালক)
- শরৎ স্মৃতি পুরস্কার (কলকাতা বিশ্জবিদ্যালয় ১৯৫৪))
- সাহিত্য অকাদেমী পুরস্কার (১৯৫৭)
- রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৫৮)
- বিশেষ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার (ঘনাদা সিরিজ গল্পমালার জন্য
১৯৫৮)
- পদ্মশ্রী (রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ১৯৬০)
- মৌচাক পুরস্কার (শিশু সাহিত্যের জন্য ১৯৬৩)
- আনন্দ পুরস্কার (আনন্দবাজার প্রকাশনা সংস্থা ১৯৭১)
- ৱনেহেরু পুরস্কার (সোভিয়েত রাশিয়া, ১৯৭৬)
- হরলাল ঘোষ পদক (বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, ১৯৮০)
- শরৎ পুরস্কার (শরৎ সমিতি (১৯৮১)
- ডিলিট উপাধি (বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৮১)
- জগত্তারিণী পদক (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৮২)
- বিদ্যাসাগর পুরস্কার (শিশু সাহিত্যের জন্য, পশ্চিমবঙ্গ
সরকার ১৯৮৪)
- দেশিকোত্তম (বিশ্বভারতী, ১৯৮৮)।
>
>সূত:
>https://shodhganga.inflibnet.ac.in/bitstream/10603/168249/5/05_chapter+01.pdf