রাইচাঁদ বড়াল
(১৯০৩-১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দ)
বিশিষ্ট সুরকার ও শিল্পী।

১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৯শে অক্টোবর, কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা লালচাঁদ ছিলেন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী। পিতার উৎসাহে অল্প বয়স থেকে তিনি
ওস্তাদ মুস্তাক হুসেন খান, সরোদ বাদক ওস্তাদ হাফিজ খান প্রমুখের কাছে সঙ্গীতচর্চা করার সুযোগ লাভ করেন। কলকাতার ১/১ প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিটের বাড়িতে তাঁর এবং অপর দুই জন সহযোগী (বিষণচাঁদ ও কিষণচাঁদ) মিলে একটি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আখড়া প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই আসরে তিনি ওস্তাদ এনায়েত খাঁ, ওস্তাদ হাফিজ খাঁ, ওস্তাদ আলী খাঁ, জদদ্ন বাঈ, গহরজান, জ্ঞান গোস্বামী, ভীষ্মদেব প্রমুখের সাথে তবলায় সঙ্গত করতেন।

১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় রেডিও স্টেশন স্থাপিত হলে, তিনি এখানে সঙ্গীত বিভাগের প্রযোজক হন। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে নির্বাক চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। উল্লেখ্য এই সময় তিনি ইন্টারন্যাশনাল  ফিল্ম ক্র্যাফ্ট-এর 'চোরা কাঁটা' এবং 'চাষীর মেয়ে' ছবি প্রদর্শনের সময় যন্ত্রীদের সাহায্যে পার্দার আড়ালে বসে আবহসঙ্গীত উপস্থাপন করতেন।

১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি যুক্ত হন বি এন সরকারের বিখ্যাত কোম্পানী নিউ থিয়েটার্স-এ। ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে  নিউ থিয়েটার্স-এর  দেবকী বসুর পরিচালিত 'চণ্ডীদাস' ছবির সাথে আবহসঙ্গীত যুক্ত করেন।

১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে  নিউ থিয়েটার্স-এর 'ভাগ্যচক্র' ছবি মুক্তি পায়। এই ছবিতে মুকুল বসুর সাহায্যে নতুন পদ্ধতিতে গান ও নাচের রেকর্ড এই ছবিতে যুক্ত করেন। এই সময় তাঁর সহযোগী হিসেবে ছিলেন
পঙ্কজকুমার মল্লিকউল্লেখ্য এই সংযোজনটি ছিল বাংলা সবাক ছবির ক্ষেত্রে প্রথম প্রচেষ্টা।

১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে ওয়ালট ডিজনির অনুপ্রেরণায় তিনি নিউ থিয়েটার্স-এর ব্যানারে কার্টুন ছবি 'পি ব্রাদার্স' প্রযোজনা করেছিলেন।

তিনি বহু গানে সুরারোপ করেছিলেন। সেকালের বিখ্যাত প্রায় সকল শিল্পীই তাঁর সুরে গান করেছেন। এই শিল্পীদের ভিতরে ছিলেন, কৃষ্ণচন্দ্র দে, কাননদেবী, চন্দ্রাবতী দেবী, উমাশশী দেবী, সুপ্রভা সরকার, পাহাড়ি সন্যাল, তালাত মামুদ প্রমুখ।

১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে সঙ্গীত নাটক একাডেমি তাঁকে পুরস্কৃত করে। সেই একই বছর দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কারও পান তিনি।
১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।


নীতীন বসু (২৬ এপ্রিল ১৮৯৭ - ১৪ এপ্রিল ১৯৮৬) একজন বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক।

প্রথম জীবন

নীতীন বসুর আদি নিবাস বর্তমান বাংলাদেশের ময়মনসিংহের জয়সিদ্ধিতে। তার পিতা কুন্তলীনখ্যাত সুগন্ধ ব্যবসায়ী হেমেন্দ্রমোহন বসু, বিখ্যাত ব্রাহ্ম সমাজ নেতা আনন্দমোহন বসুর ভাইপো। মা মৃণালিনী বসু ছিলেন মৈমনসিংহের মসুয়ার বিখ্যাত রায়চৌধুরী পরিবারের কন্যা, শিশু সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ছোটবোন ও সুকুমার রায়ের পিসি।

নীতীন বসু ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজি বিষয়ে প্রথম হয়ে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি বিএসসিতে ভর্তি হলেও পরীক্ষায় দেননি। তার পিতা হেমেন্দ্রমোহনের ক্যামেরা প্রজেক্টরের ব্যবসা ছিল। পিতার কাছ থেকেই চলচ্চিত্র সংক্রান্ত বহু বিষয়ে বিশেষ করে ফটোগ্রাফিতে প্রথম শিক্ষালাভ করেন। ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে পুরীর রথযাত্রার উপর তার তোলা ছবি নিউইয়র্কের ইন্টারন্যাশন্যাল নিউজ রিল কর্পোরেশন ১০০ ডলারে কিনেছিল।

চলচ্চিত্র কর্ম

চলচ্চিত্রে তার প্রথম কাজ ইনকারণেশন ছবিতে। ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে নির্বাক ছবি পুনর্জন্মের তিনি ক্যামেরাম্যান ছিলেন। স্বাধীনভাবে কাজ করার তিনি প্রথম সুযোগ পান প্রফুল্ল রায়, পি.এন.রায় এবং প্রেমাঙ্কুর আতর্থীর সাথে ইন্টার‌ন্যাশনাল ফিল্ম ক্র্যাফট এর চাষার মেয়েচোরকাঁটা ছবি দুটিতে।

নিউ থিয়েটার্স স্টুডিয়োর শুরু থেকে তিনি সেখানে প্রধান ক্যামেরাম্যান এবং তার ভাই মুকুল বসু শব্দযন্ত্রী হিসাবে যুক্ত হন। এই স্টুডিও থেকে ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তি পায় দেনা পাওনা এবং চণ্ডীদাস ছবি। ভাগ্যচক্র ছবিতে প্রথম প্লে-ব্যাক প্রথার প্রবর্তন হয়। নির্বাক থেকে সবাক এবং সবাক ছবিতে প্লে-ব্যাক প্রথার প্রবর্তনে তার অবদান উল্লেখযোগ্য।

ক্যামেরার কাজ করার সাথে সাথে তিনি চিত্র পরিচালনাও শুরু করেন। তার পরিচালিত প্রথম ছবি যুগান্তকারী চণ্ডীদাস ছবির হিন্দি চিত্ররূপ। নিউ থিয়েটার্সে তার পরিচালিত প্রায় কুড়িটি ছবির ভিতরে চণ্ডীদাস, জীবন মরণ, দেশের মাটি, দিদি, কাশীনাথ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে নিউ থিয়েটার্স ছেড়ে তিনি বম্বের চিত্রজগতে যান। সেখানে পরায়া ধন, দীদার, ওয়ারিশ, গঙ্গা যমুনা, প্রভৃতি প্রায় কুড়িটি ছবি করেন। এর মধ্যে বিচার এবং সমর ছবিদুটি বাংলায় হয়েছিল।

ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম পথিকৃৎ হিসাবে ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে ভারত সরকার তাকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করে। তিনি ভাল বেহালা বাজাতে পারতেন।