পঙ্কজকুমার
মল্লিক
প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী,
সুরকার, অভিনেতা, সঙ্গীতপরিচালক।
১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার এক বৈষ্ণব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মণিমোহন
মল্লিক, মায়ের নাম মনোমোহিনী দেবী।
শৈশব থেকে তাঁর সংগীতের প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল। তিনি প্রথম দুর্গাদাস
বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে তালিম নেন। এরপর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের
ভ্রাতুষ্পুত্র দ্বিপেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্র
দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের
সাথে
তাঁর আলাপ হয়। এই সূত্রে তিনি রবীন্দ্রসংগীতের প্রতি আকৃষ্ট হন। পরে তিনি
দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের
কাছে রবীন্দ্রসঙ্গীতের পাঠ নেন।
প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া করেছিলেন কলকাতার
স্কটিশ চার্চ কলেজে।
১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র আঠারো বছর বয়সে তাঁর গাওয়া "নেমেছে আজ প্রথম বাদল" গানটির রেকর্ড ভিয়েলোফোন কোম্পানি থেকে প্রকাশিত হয়।
১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে থেকে তিনি কলকাতার ইন্ডিয়ান
ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনে কাজ শুরু করেন। এই সংস্থা পরে অল ইন্ডিয়া রেডিও (এআইআর)
(বর্তমানে আকাশবাণী কলকাতা) নামে পরিচিত হয়। এখানে তাঁর সহকর্মী ছিলেন রাইচাঁদ
বড়াল। এই সময় তাঁর পরিচালনায় 'সঙ্গীত শিক্ষার আসর' নামে একটি প্রাণবন্ত অনুষ্ঠান
নিয়মিতভাবে রেডিওতে হতো।
১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে দুর্গাপূজা উপলক্ষে বেতার থেকে
'বসন্তেশ্বরী' নামে একটি অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। এই অনুষ্ঠানে
বাণী কুমার চণ্ডীর শ্লোক আবৃত্তি করেন। এই অনুষ্ঠানটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এই
অনুষ্ঠানের সাফল্য দেখে ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ষষ্ঠীর ভোরে কলকাতা বেতারকেন্দ্র থেকে
দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেবী দুর্গার পৌরাণিক কাহিনি অবলম্বনে
দুই ঘণ্টার
'মহিষীমর্দিনী' নামক একটি অনুষ্ঠান সম্প্রচার হয়। এই অনুষ্ঠানটির
গ্রন্থনা করেছিলেন বাণীকুমার ভট্টাচার্য এবং সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন
পঙ্কজকুমার মল্লিক। এই অনুষ্ঠানের ভাষ্য ও শ্লোকপাঠ করেন
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র।
১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে 'প্রলয়নাচন নাচলে যখন' ও 'তোমার আসন শূন্য
আজি' তাঁর প্রথম রবীন্দ্রসংগীতের রেকর্ড প্রকাশিত হয়। সেকালে রবীন্দ্রসংগীতকে
জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে কাজেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
তিনি রবীন্দ্রনাথের খেয়া কাব্যগ্রন্থের শেষ খেয়া কবিতাটিতে ("দিনের শেষে ঘুমের
দেশে") সুরসংযোজন করে গেয়েছিলেন।
ভারতের
প্রথম যুগের ফিল্ম স্টুডিও নিউ থিয়েটার্সের সঙ্গে তিনি ২৫ বছর যুক্ত ছিলেন। প্রথম
নির্বাক্ ছবি 'চাষার মেয়ে' ও 'চোরাকাঁটা'র অর্কেষ্ট্রোতে সুরারোপ করেছিলেন। এরপর
'দেনাপাওনা' ছবিতে প্রথম সঙ্গীত-পরিচালক হিসেবে কাজ করেন।
১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে
প্রমথেশ বড়ুয়ার 'মুক্তি'
ছবিতে গায়ক শিল্পী হিসেবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। বহু ছবির সঙ্গীত পরিচালক
হিসেবে রাইচাঁদ বড়ালের সাথে একত্রে কাজ করেছেন।
১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে 'সঙ্গীত শিক্ষার আসর' থেকে তাঁকে অবসর দেওয়া হয়।
১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৯শে ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সঙ্গীত রত্নাকর উপাধী পান।
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে পদ্মশ্রী উপাধী লাভ করেন।
১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার লাভ করেন।
২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে, ভারতীয় ডাকবিভাগ একটি স্মারক
ডাকটিকেট প্রকাশ করে।
সূত্র :
সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান।
জানুয়ারি ২০০২।
http://www.indiapicks.com/stamps/Gallery/H/G2006.htm