সরফরাজ
খাঁ
বাংলার
তৃতীয় নবাব। প্রকৃত নাম মির্জা আসাদুল্লাহ।
এঁর পিতার নাম নবাব
সুজাউদ্দিন খাঁ।
মায়ের নাম জিনাত-উন-নিসা (নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর কন্যা)।
নানা কারণে,
মুর্শিদকুলি
খাঁ জামাতা
সুজাউদ্দিন খাঁ-এর
উপর সদয় ছিলেন না। তাই,
১৭২৭ খ্রিষ্টাব্দে নবাব
মুর্শিদকুলি
খান
অপুত্রক অবস্থায় মৃত্যুবরণের
আগে,
সুজাউদ্দিন খাঁ-এর পরিবর্তে তিনি তাঁর নাতি সরফরাজ খানকে সিংহাসনের উত্তরাধিকার করে যান। এই মনোনয়নকে
সুজাউদ্দিন খাঁ মোটেই
সন্তুষ্ট হন নি। ফলে তিনি কৌশলে দিল্লির সম্রাটের কাছ থেকে বাংলার সুবেদারি
পদের অনুমতি গ্রহণ করেন। এই সময় তাঁর বিশেষ পরামর্শদাতা ছিলেন
আলীবর্দী খান
ও তাঁর ভাই হাজী আহম্মদ। উভয়ের পরামর্শে
তিনি সসৈন্যে মুর্শিদাবাদের পথে রওনা দেন। পিতার এই আচরণে সরফরাজ বিস্মিত
হন। পরে আত্মীয়-স্বজনদের পরামর্শে তিনি পিতার কাছে সিংহাসন হস্তান্তর করেন।
১৭৩৯ খ্রিষ্টাব্দে
সুজাউদ্দিন খাঁ-এর মৃত্যুর পর সরফরাজ খাঁ বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব
হন। রাজ্য শাসনের বিষয়ে তিনি অনভিজ্ঞ ছিলেন। ফলে কিছুদিনের মধ্যে রাজ্যের
প্রদেশিক বন্ধন দুর্বল হয়ে যায়। এই সূত্রে
আলীবর্দী খান
এবং তাঁর ভাই
বাংলার মসনদ দখল করার ষড়যন্ত্র করতে থাকেন। এই ষড়যন্ত্রে উৎসাহ দেন আলম
চাঁদ, জগৎশেঠ-এর মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ। আলীবর্দী খাঁ গোপনে দিল্লীর
সম্রাটের অনুচরদের উৎকোচ দিয়ে বশীভূত করেন। পরে সম্রাটকে পর্যাপ্ত রাজস্ব
দেওয়ার অঙ্গীকার করে, রাজ্য শাসনের জন্য প্রয়োজনীয় আদেশনামা দিল্লীর দরবার
থেকে আদায় করেন। এর ভিতরে তিনি জোরপূর্বক বাংলার মসনদ দখল করার জন্য সামরিক
শক্তি বৃদ্ধিও করেন। অবশেষে তিনি ১৭৪০ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ এপ্রিল সরফরাজের বিরুদ্ধে
যুদ্ধ ঘোষণা করেন। মুর্শিদাবাদের ২২ মাইল উত্তর-পশ্চিমে গিরিয়া নামক স্থানে
উভয় সেনাবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে সরফরাজ পরাজিত ও নিহত হন। এরপর
বিনা বাধায় আলীবর্দী খাঁ মুর্শিদাবাদ দখল করেন এবং তিনি বাংলা ও বিহারে
অধিকার লাভ করেন।
সূত্র: