শ্রীশ পাল
১৮৮৭-১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দ
ব্রিটিশ ভারতের বিপ্লবী। তাঁর প্রকৃত নাম শ্রীশচন্দ্র পাল। তিনি ছিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ভক্ত।

১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ এপ্রিল ঢাকার মালিবাগে জন্মগ্রহণ করেনী। ।

১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে হরিদাস দত্ত, গুণেন ঘোষ, রাজেন গুহ, মাখন চক্রবর্তী, খগেন দাস, বিভূতি বসু, নিকুঞ্জ সেন, সুরেন বর্ধন প্রমুখের উদ্যোগে ঢাকায় ব্রিটিশ বিরোধী মুক্তিসংঘ গঠন করেন।

১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতায় মুক্তি সংঘের শাখা পরিচালনার দায়িত্ব পান।

১৯০৮ সালের ৩০শে এপ্রিল রাত ৮টার সময় ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী রাতের অন্ধকারে,  স্থানীয় ইউরোপীয় ক্লাবের গেটের কাছে একটি গাছের আড়াল থেকে কিংসফোর্ডের গাড়ি ভেবে, একটি ঘোড়ার গাড়িতে বোমা নিক্ষেপ করে। এর ফলে এই গাড়িতে বসা নিরপরাধ মিসেস কেনেডি ও তার কন্যা মৃত্যুবরণ করেন। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে, পুলিশ সমগ্র অঞ্চল জুড়ে তল্লাসি চালাতে থাকে। ক্ষুদিরাম বসু হত্যাকাণ্ডের স্থল থেকে প্রাণ ২৫ মাইল দূরে ওয়েইনি ১লা মে স্টেশনে ধরা পড়েন। এই সময় অপর বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকীকেও ধরার চেষ্টা করা হলে, তিনি নিজের রিভলবারের গুলিতে আত্মঘাতী হন। তিনি বোমা নিক্ষেপের সমস্ত দায়িত্ব নিজের উপর নিয়ে নেন। কিন্তু অপর কোনো সহযোগীর পরিচয় দিতে বা কোনো গোপন তথ্য প্রকাশ করতে রাজি হন নি। ভারতীয় দণ্ডবিধি ৩০২ ধারা অনুসারে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়।

ক্ষুদিরামের ধরিয়ে দিয়েছিলেন, বিশ্বাসঘাতক পুলিশ ইন্সপেক্টর নন্দলাল ব্যানার্জি। এই কারণে বিপ্লবীরা নন্দলাল ব্যানার্জীকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন। এই হত্যাকাণ্ডে কার্যকর করার দায়িত্ব পেয়েছিলেন- শ্রীশ পাল এবং  বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি। ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ৯ নভেম্বর কলকাতার সার্পেন্টাইন লেনে সন্ধেবেলায় তাঁরা নন্দলালকে গুলি করে হত্যা করেন। তারপর দীর্ঘদিন পুলিশ তাঁদের খোঁজ পায় নি।

১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ আগষ্ট রডা কোম্পানী থেকে ৫০টি জার্মান মসার পিস্তল ও কার্তুজ কলকাতায় পাঠানো হয়। বিপ্লবীরা কলকাতা বিমানবন্দর থেকে এই অস্ত্র লুট করে। এই অস্ত্র লুণ্ঠনের সময় তিনি অভিনব ভূমিকা রাখেন। তিনি এবং হরিদাস দত্ত গরুর গাড়ির গাড়োয়ান সেজে অস্ত্র আনার জন্য হাজির হন খিদিরপুরে। যাবতীয় মাল তুলে দেওয়া হয় অন্যান্য গরুর গাড়ীতে, আর অস্ত্রের বাক্সগুলো কৌশলে তোলা হয় শ্রীশচন্দ্রের গাড়িতে। গাড়িগুলোকে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বিপ্লবীদের আস্তানায়। এই সময় মুক্তি সংঘের অপর বিপ্লবী (খগেন্দ্রনাথ দাস) ওরফে খগেন দাস এ কাজে তাকে সহায়তা করেন।

১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে গ্রেফতার হন। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অসুস্থ অবস্থায় মুক্তি লাভ করেন।

১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে জগদ্দল এলাকার আলেকজান্ডার জুট মিলের অত্যাচারী ইঞ্জিনিয়ার রবার্ট ও'ব্রায়েন শ্রমিক হত্যা করেছিল। মুক্তি সংঘের বিপ্লবীরা তাঁকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন। এই হত্যা পরিকল্পনা
কার্যকরী করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল খগেন দাস ও শ্রীশ পালকে। তবে এই কাজে ব্যর্থ হলে- তিনি আত্মগোপন করেন।

১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র:
  • বাঙালি সংসদ চরিতাভিধান। প্রথম খণ্ড। সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত (২০০২)।  কলকাতা: সাহিত্য সংসদ।