কলকাতার বউবাজারে স্থাপিত বিপিন বিহারী গাঙ্গুলীর মূর্তি
বিপিনবিহারী গাঙ্গুলী
(১৮৮৭-১৯৫৪)
ব্রিটিশ ভারতের অন্যতম বিপ্লবী।
১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ৫ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। এঁদের আদি নিবাস ছিল উত্তর চব্বিশ
পরগণা জেলার হালিশহরে।
১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ বিরোধী
বিপ্লবের আদর্শে প্রতিষ্ঠিত আত্মোন্নতি সমিতির সদস্য ছিলেন।
১৯০৮ সালের ৩০শে এপ্রিল রাত ৮টার সময় ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী রাতের
অন্ধকারে, স্থানীয় ইউরোপীয় ক্লাবের গেটের কাছে একটি গাছের আড়াল থেকে
কিংসফোর্ডের গাড়ি ভেবে, একটি ঘোড়ার গাড়িতে বোমা নিক্ষেপ করে। এর ফলে এই গাড়িতে
বসা নিরপরাধ মিসেস কেনেডি ও তার কন্যা মৃত্যুবরণ করেন। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে,
পুলিশ সমগ্র অঞ্চল জুড়ে তল্লাসি চালাতে থাকে। ক্ষুদিরাম বসু হত্যাকাণ্ডের স্থল থেকে
প্রাণ ২৫ মাইল দূরে ওয়েইনি ১লা মে স্টেশনে ধরা পড়েন। এই সময় অপর বিপ্লবী প্রফুল্ল
চাকীকেও ধরার চেষ্টা করা হলে, তিনি নিজের রিভলবারের গুলিতে আত্মঘাতী হন। তিনি বোমা
নিক্ষেপের সমস্ত দায়িত্ব নিজের উপর নিয়ে নেন। কিন্তু অপর কোনো সহযোগীর পরিচয়
দিতে বা কোনো গোপন তথ্য প্রকাশ করতে রাজি হন নি। ভারতীয় দণ্ডবিধি ৩০২ ধারা অনুসারে
তাঁকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়।
ক্ষুদিরামের ধরিয়ে দিয়েছিলেন, বিশ্বাসঘাতক পুলিশ ইন্সপেক্টর
নন্দলাল ব্যানার্জি। এই কারণে বিপ্লবীরা নন্দলাল ব্যানার্জীকে হত্যা করার পরিকল্পনা
করেন। এই হত্যাকাণ্ডে কার্যকর করার দায়িত্ব পেয়েছিলেন- শ্রীশ পাল এবং বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি। ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ৯ নভেম্বর কলকাতার সার্পেন্টাইন লেনে সন্ধেবেলায় তাঁরা নন্দলালকে গুলি করে হত্যা করেন।
তারপর দীর্ঘদিন পুলিশ তাঁদের খোঁজ পায় নি।
পরে তিনি রাজবাড়িতে যোগাদান করেছিলেন রণেন গাঙ্গুলী ছদ্মনামে। সিয়ারজোলে এই বিপ্লবীর
সাথে গোপনে নিবারণ বিপ্লবী দলের কাজ শুরু করেন। এই সময় তিনি
বিপ্লবী অধ্যাপক জ্যোতিষচন্দ্র ঘোষ
(মাস্টার মশাই)-এর সাথে নিয়ে সিয়ারজোল অঞ্চলে বিপ্লবী
দলের জন্য সদস্য সংগ্রহ শুরু করেন। এঁদের প্রচেষ্টায় সিয়ারজোল রাজ স্কুলের শিক্ষক
নিবারণ ঘটকএবং তাঁর মাসিমা সাথে তিনি কয়েকবার সিয়ারজোলে এসে বিপিনবিহারী গাঙ্গুলীর
সাথে দেখা করেন।
১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ আগষ্ট রডা কোম্পানী থেকে ৫০টি জার্মান মসার পিস্তল ও কার্তুজ কলকাতায় পাঠানো হয়।
বিপিনবিহারীর নেতৃত্বে বিপ্লবীরা কলকাতা বিমানবন্দর থেকে এই অস্ত্র লুট করে। এরপর তিনি আত্মগোপনের জন্য
সিয়ারজোল রাজবাড়িতে কর্মচারী হিসেব যোগদান করেন।
তিনি রাজবাড়িতে যোগাদান করেছিলেন রণেন গাঙ্গুলী ছদ্মনামে।
১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে যুগান্তর সমিতি কর্তৃক বার্ড কোম্পানীর গাড়ি লুণ্ঠন করে। এই
লুণ্ঠনে পুলিন বিহারী অংশগ্রহণ করেছিলেন। এছাড়া এ সময় বেলিয়াঘাটার এক চাউল ব্যবসায়ীর অফিসে ডাকাতিতে তিনি যতীন্দ্রনাথের সাহায্যকারী ছিলেন।
১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জানুয়ারি ডাকাতির মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কংগ্রেস আন্দোলনে যোগ দেন।
১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন।
১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে ভারত ছাড়ো আন্দোলনেও যোগ দেন।
১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।