জ্যোতিষচন্দ্র ঘোষ
(১৮৮৩-১৯৭১)
ব্রিটিশ ভারতের অন্যতম বিপ্লবী। অধ্যাপনার সূত্রে তিনি মাস্টার মশাই নামে বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন।

১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ১১ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুর মহকুমার দত্তপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এম.এ পাশ করে প্রথমে পাটনার বাঁকিপুর কলেজে, পরে হুগলির মহসিন কলেজ, কলকাতার সুরেন্দ্রনাথ কলেজ ও বাঁকুড়া ক্রিশ্চিয়ান কলেজে অধ্যাপনা করেন।  হুগলির মহসিন কলেজ অধ্যাপনার সময় তিনি ছাত্রদের মধ্যে বিপ্লবী ভাবনার সঞ্চার করেন।

১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে অরবিন্দ ঘোষের বিপ্লবী সহযোগী হয়ে ওঠেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অভিযোগে তিনি কয়েক দফায় কুড়ি বৎসর কারাদণ্ড ভোগ করেন।

১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজ সরকারের প্রশাসক হারবার্ট হোপ রিসলে কর্তৃক জারি করা- রিসলে সার্কুলারের বিরোধিতা করেন এবং ছাত্রদের রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার অধিকার অর্জনের আন্দোলনের জন্য ব্রিটিশ শাসকের কাছে অপ্রিয় হয়ে ওঠেন
অরবিন্দ ঘোষের সহযোগী হয়ে

১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি বীরভূম জেলার নলহাটি থানা এবং বর্ধমান জেলার সিয়ারজোল অঞ্চলের তরুণদের মধ্যে বিপ্লবী প্রচারণা চালান।এই সময় তিনি বিপ্লবীদের কাছে মাস্টারমশাই নামে পরিচিত ছিলেন। এই সময়ে তাঁর সহযোগী ছিলেন বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি। এই সময়ের শিষ্যদের মধ্যে ছিলেন- নিবারণ ঘটক এবং তাঁর মাসিমা দুকড়িবালা দেবী

১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ আগষ্ট রডা কোম্পানী থেকে ৫০টি জার্মান মসার পিস্তল ও কার্তুজ কলকাতায় পাঠানো হয়।  বিপিনবিহারী গাঙ্গুলির নেতৃত্বে বিপ্লবীরা কলকাতা বিমানবন্দর থেকে এই অস্ত্র লুট করে। পরে এই অস্ত্র বিভিন্ন বিপ্লবীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এই সূত্রে ৭টি পিস্তল বীরভূম জেলার নলহাটি থানা ঝাউগ্রাম এবং অঞ্চলের বিপ্লবীরা। এই পিস্তলগুলো লুকিয়ে রাখেন জ্যোতিষচন্দ্রে শিষ্যরা দুকড়িবালা দেবী'র বাড়িতে। এই সময় বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি কলকাতায় ক্ষুদিরামের গ্রেফতারকারী নন্দলাল ব্যানার্জিকে কলকাতায় হত্যা করে সিয়ারজোল রাজবাড়িতে কর্মচারী হিসেব‌ কর্মরত ছিলেন। তখন তাঁর ছদ্মনাম ছিল রণেন গাঙ্গুলি। জ্যোতিষচন্দ্রের সাথে তাঁর গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল।

১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি বীরভূম জেলার নলহাটি থানা এবং বর্ধমান জেলার সিয়ারজোল অঞ্চলের তরুণদের মধ্যে বিপ্লবী প্রচারণা চালান। এই বছরেই তিনি গ্রেফতার হন এবং তিনি মান্দালয় জেলে সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে ছিলেন। জেলে অত্যাচারের কারণে তিনি তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন।
১৯২৮  খ্রিষ্টাব্দে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর কিছুদিন বিশ্রাম নেওয়ার পর ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চুঁচুড়া দেশবন্ধু স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হন। ওই বছরেই তিনি চট্টগ্রাম যুক্ত সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন।
১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে ব্রহ্মদেশে যে বিদ্রোহ শুরু হয়। এই আন্দোলনের অনুপ্রেরণায় তিনি বাংলায় বৈপ্লবিক উত্থানের চেষ্টা করে অসফল হন।
১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় বঙ্গীয় প্রাদেশিক রাষ্ট্রীয় সম্মেলনের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। পরে তিনি প্রাদেশিক ফরোয়ার্ড ব্লকের সভাপতি হন।
১৯৪৬ এবং ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি রাজ্য বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ মার্চ তিনি মৃত্যবরণ করেন।
সূত্র: