দুকড়িবালা
১৮৮৭-১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দ
ব্রিটিশ ভারতের
নারী বিপ্লবী।
বিপ্লবীদের কাছে তিনি মাসিমা নামে পরিচিতা ছিলেন।
১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ২১ জুলাই ভারতের বীরভূম জেলার নলহাটি থানার ঝাউপাড়া
গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম নীলমণি চট্টোপাধ্যায় এবং মায়ের নাম কমলকামিনী দেবী। স্বামীর নাম ফণিভূষণ চক্রবর্তী।
তাঁর বোনের ছেলে
নিবারণ ঘটকের
সূত্রে তিনি বিপ্লবী দলে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি
নিবারণকে খুব স্নেহ করতেন। ঝাউপাড়া গ্রামের মাইনিং
স্কুলে পাঠকালে নিবারণ প্রায়ই তাঁর স্কুলের বন্ধুদের নিয়ে মাসিমার বাড়িতে আসতেন।
নিবারণ ঘটকের
সূত্রে তাঁর বাড়িতে আসতেন ঝাউপাড়ার
বিপ্লবী গুরু জ্যোতিষচন্দ্র ঘোষের সাথে।
এক সময়
দুকড়িবালা বোনপোর সঙ্গীসাথী ও তাঁর আচরণে সন্দিহান হয়ে পড়েন। একদিন তাঁর হাতে
গণেশ দেউস্করের 'দেশের
কথা' বই দেখে সন্দেহ করেন যে, নিবারণ বিপ্লবী দলে যোগ দিয়েছেন। প্রথম দিকে দুকড়িবালা দেবী
বোনপোকে বিপ্লবী দলের সাথে যোগাযোগ করতে বাধা দিলেও, এক সময় তিনি নিজেই বিপ্লবী হয়ে
যান এবং তিনি নানাভাবে বিপ্লবীদের সাহায্য করতে থাকেন।
এই সময় বিপিনবিহারী গাঙ্গুলী, কলকাতায় ক্ষুদিরামের গ্রেফতারকারী নন্দলাল
ব্যানার্জিকে কলকাতায় হত্যা করে সিয়ারজোল রাজবাড়িতে কর্মচারী হিসেব যোগদান করেন।
তিনি রাজবাড়িতে যোগাদান করেছিলেন রণেন গাঙ্গুলী ছদ্মনামে। সিয়ারজোলে এই বিপ্লবীর
সাথে গোপনে নিবারণ বিপ্লবী দলের কাজ শুরু করেন।
নিবারণ ঘটকের
সাথে তিনি কয়েকবার সিয়ারজোলে এসে বিপিনবিহারী গাঙ্গুলীর
সাথে দেখা করেন।
১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ আগষ্ট রডা কোম্পানী থেকে ৫০টি
জার্মান মসার পিস্তল ও কার্তুজ কলকাতায় পাঠানো হয়। বিপ্লবীরা কলকাতা বিমানবন্দর থেকে
এই অস্ত্র লুট করে। বিপ্লবীরা এই পিস্তল ও
কার্তুজগুলো ভাগ করে, বিভিন্ন স্থানে পাঠান। এর ভিতরে ৭টি
পিস্তল ও প্রয়োজনীয় কার্তুজ দুকড়িবালা দেবী কাছে রাখেন।
উল্লেখ্য এই অস্ত্রলুটের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিপিন গাঙ্গুলি।
এই সময় দুকড়িবালা দেবী, নিবারণ ও তাঁর অন্যান্য সঙ্গীদের কাছ থেকে
অস্ত্রচালনা শিক্ষা শেখেন। ৮ জানুয়ারি ১৯১৭
(মঙ্গলবার, ২৪ পৌষ ১৩২৪)। পুলিশ দুকড়িবালা দেবীর
বাড়ি থেকে এ সকল অস্ত্র উদ্ধার করে। এই সময় সিআইডি অফিসার সুবোধ চক্রবর্তী এর সাথে
জড়িতদের নাম-পরিচয় জানার চেষ্টা করলে, দুকড়িবালা দেবী সমস্ত দায় নিজের উপর নেন।
পুলিশী দুকড়িবালা দেবীকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারের সময় তাঁর
শিশুসন্তানকে সাথে নিয়ে যেতে চাইলে, পুলিশ তাতে বাধা দেয়।
ফলে- এই সন্তানটিকে পরিবারের কাছে রেখে যেতে বাধ্য হন। উল্লেখ্য এই সময় তিনি তিন
সন্তানের জননী ছিলেন। এরপর তদন্তের সূত্রে নিবারণ ও অন্যান্য সহযোগীরা ধরা
পড়েন। পরবর্তী সময়ে নিবারণ চক্রবর্তী সিয়ারজোল থেকে
গ্রেফতার হন- বিচারে নিবারণ ঘটকের পাঁচ বছর এবং দুকড়িবালা দেবীর তিন বছর কারাবাস হয়।
১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে তিনি প্রেসিডেন্সি জেল থেকে মুক্তি লাভ করেন।
১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ জুলাই বঙ্গভঙ্গ ঘোষণা করে ব্রিটিশ সরকার। ওই বছরই ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হলে সারা বাংলার সঙ্গে বীরভূম জেলাও প্রতিবাদে সরব হয়। জেলার বহু গ্রাম ও শহরে পালিত হয়
'অরন্ধন'। ঝাউগ্রামে বসবাসরত দুকড়িবালা দেবী এই আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন।
জেল থেকে মুক্তি লাভের পর দুকড়িবালা দেবী গ্রামের বাড়ি ফিরে আসেন। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের
২৮ এপ্রিল নিজ গ্রামে মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র:
-
নমামি। জিতেশচন্দ্র লাহিড়ী। বিমালরঞ্জন প্রকাশন,
মুর্শিদাবাদ। আশ্বিন ১৩৫৬। শিরোনাম 'মাসিমা'। পৃষ্ঠা: ৬১-৬৯
- সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। প্রথম খণ্ড, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত (২০০২)। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ২০৯।
-
বালিহাঁস। https://balihas.com । পরাধীন ভারতে প্রথম অস্ত্র আইনে দণ্ডিতা মহিলা বিপ্লবী দুকড়িবালা দেবী।
অগ্নিকন্যা দকড়িবালা। তহমীনা খাতুন